দেশ ও অর্থনীতিকে চিবিয়ে খেয়েছে আওয়ামী লীগ: মির্জা ফখরুল

আজ (২৯ অক্টোবর) দুপুরে রংপুরে শুরু হওয়া বিএনপির সমাবেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশ ও এর অর্থনীতিকে চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়েছে আওয়ামী লীগ।
"একটাই কথা এই সরকার আমাদের উপর নির্যাতন করছে। আমাদের দেশের অর্থনীতিকে চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়েছে। এখন বাংলাদেশেকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। গত ১৫ বছর আমাদের সব ক্ষেত্রে চুরি করছে আওয়ামী লীগ। এমনি আশ্রয়ণ প্রকল্পেও চুরি করছে। তারা সর্বলুট করছে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক মিডিয়া এই সমাবেশের দিকে তাকিয়ে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, "সরকার নাকি জনগণকে ভয় পায় না। ভয় না পেলে গাড়ি কেন বন্ধ করতে হয়। কেন আমাদের নেতাদের গুলি করে মারছে?
"আমাদের ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম করেছে এই সরকার। সহশ্রাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। আলেম ওলামাদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে। এদের কী আর ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া যায়...?
জনসমাবেশ শুরু হওয়ার পর দলের যুগ্ম -মহাসচিব হারুন অর রশিদ আগামী ১০ তারিখ নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দেন।
এর আগে, ভোর থেকেই দলের নেতাকর্মীরা মাঠে জড়ো হতে থাকেন।
সকাল থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো ব্যানার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে কালেক্টরেট মাঠে প্রবেশ করেন।

বিএনপি চেয়াপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, "হাজার হাজার মানুষ তিনদিন ধরে রংপুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হরতাল তো দেয় বিরোধী দল। কিন্তু সরকার এখন হরতাল দিচ্ছে। তাহলে বুঝতে হবে অবস্থা কোথায়?
"আসলে ব্যাপার হচ্ছে আওয়ামী লীগের সাথে বাংলাদেশের মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের নির্ভরশীলতা পেটুয়া বাহিনীর ওপর।"
রংপুর বিভাগীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক বিএনপি নেতা আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, "সাধারণ মানুষের চোখে স্ফুলিঙ্গ আছে। এই স্ফুলিঙ্গের কারণে শেখ হাসিনার গদি তছনছ হয়ে যাবে।"
তিনি আরো বলেন, "রংপুরের মানুষের আন্দোলনের ইতিহাস আছে। যারা সারা রাত শুয়ে থাকা। তারা গণতন্ত্রের জন্য আরও অনেক সময় শুয়ে থাকবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেন। শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হওয়ার আগে গদি ছাড়ুন।"
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ বলেন, "আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রের মাকে মিথ্যা মামলায় বন্দী করেছে। তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। নাটক বন্ধ করুন।"
"কাদের ভাই জোকারি বন্ধ করুন। ১০ তারিখে বিএনপির নতুন কমর্সূচি নিয়ে মাঠে আসছি। আমাদের ৪ বিভাগীয় সম্মেলন বলে, এই সরকারের কাছে মানুষ, দেশ, অর্থ কিছুই নিরাপদ নয়। মানুষের জীবন এখন বিপন্ন। দেশের স্বাধীন পতাকাকে নিয়ে খেলছেন। এই খেলা বাদ দেন। বাংলাদেশের মানুষ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলনে নেমেছে। দেশের মানুষ পতাকার মর্যদা রক্ষার আন্দোলনে নেমেছে," যোগ করেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, "যুদ্ধে জয়লাভ করলাম আমরা। ক্ষমতায় বসল আওয়ামীলীগ। দেশ তারা ফাঁকা করে দিয়েছিলেন। এরপর জিয়াউর রহমান দেশের দায়িত্ব নিয়েছে৷ বর্তমান দেশের ভিত জিয়াউর রহমান করে করেছেন।
"আওয়ামী লীগ বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করেছিল। পরে তিনি (জিয়া) বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এই বাকশালী আওয়ামী লীগ আবার একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। হাসিনার সরকার দিনের ভোট রাতে করে জোর করে ক্ষমতায় থেকে জনগণকে নাকি উন্নয়ন দেখাবে। কিন্তু, এর আড়ালে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করছে।"
"সারা বাংলাদেশকে অচল করে দিব। মানুষের অধিকার ফিরিয়ে এনে ঘরে ফিরব, যোগ করেন তিনি।

এদিকে, ট্রেনে করে পুরো পথ দাঁড়িয়ে খুলনা থেকে রংপুরে এসেছেন খুলনা জেলা মহিলা দলের সদস্য শাহানা রহমান।
তার ভাষ্য, "এই দানব সরকার ভয় পেয়েছে। তারা বুঝে গেছে নিশিকালীন চুরি করে আর ভোট করা সম্ভব নয়। এখন জনগণ রাজপথ দখল করছে।"

তিনি জানান, বিএনপির শতশত নেতাকর্মী রংপুরের মহাসমাবেশে একই পথে দাঁড়িয়ে থেকে এসেছেন।
অনেকেই গত রাতে আবাসনের ব্যবস্থা করতে না পেরে সমাবেশস্থলেই রাত কাটিয়েছেন। পলিথিনের ওপর শুয়ে রাত কাটিয়েছেন তারা। কেউ কেউ কম্বল ও শীতবস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত হয়েই আসেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা বেগম সেলিমা রহমান বলেন, "রংপুর সারা শহর মুখরিত। রংপুর প্রমাণ করেছে জনতা বিক্ষুব্ধ হলে কোনো শক্তি দমিয়ে রাখতে পারে না। তারা জানান দিচ্ছে আওয়ামী লীগের সময় শেষ।"
"বিনা ভোটে ক্ষমতায় আছেন। আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছে। জ্বালানি ঘোড়ার মতো ছুটছে। আমরা জনগণের পাশে থেকে কাজ করব।"
এদিকে, ধর্মঘটের কারণে রংপুরগামী আন্তঃজেলা বাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে অন্য জেলার বাসগুলো রংপুরে প্রবেশ করতে পারেনি।
মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ এবং প্রশাসনিক হয়রানি বন্ধের দাবিতে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘট পালন করেছে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতি।

গত সপ্তাহে খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগেও একই ধরনের ধর্মঘট কার্যকর করা হয়। সেবারও দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী বাধা অতিক্রম করে কর্মসূচিতে অংশ নেন।
বিএনপি তার চলমান আন্দোলনের গতি অব্যাহত রাখার অংশ হিসেবে ২৭ সেপ্টেম্বর ১০টি বিভাগীয় শহরে ধারাবাহিক জনসভার কর্মসূচি ঘোষণা করে।
সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আজকের সমাবেশটি বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির চতুর্থ সমাবেশ। প্রথমটি অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামে, দ্বিতীয়টি ময়মনসিংহে এবং তৃতীয়টি খুলনায়।

পরবর্তী বছরের শেষের দিকে বা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরবর্তী নির্বাচনের জন্য সমর্থন জোগাতে অন্যান্য বিভাগীয় সদর দপ্তরেও অনুরূপ সমাবেশের পরিকল্পনা করেছে বিএনপি।
ডিসেম্বরে ঢাকা মহানগরীতে গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপি তাদের বিভাগীয় সমাবেশ শেষ করবে।