সারারাত পলিথিনের উপর খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়ে ছিলেন তারা

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার ট্রেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. মজিবর রহমান। রংপুরে বিএনপির গণসমাবেশে এসেেছন গতকাল সকালে। সারাদিন মাঠেই নেতাকর্মীদের নানান বক্তব্য শুনেছেন। দিন শেষে রাতে মাঠেই পলিথিনের উপর ঘুমিয়েছেন। দলীয় নেত্রীর খালেদা জিয়ার মুক্তি আর ভোটাধিকার ফিরে পেতে মজিবর এমন অসংখ্য রাত খোলা আকাশের নিচে কাটানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, খালেদা জিয়ার মুক্তি, দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদসহ নানান দাবিতে দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার রংপুরে কালেক্টরেট মাঠে বিভাগীয় গণসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। কিন্তু গণসমাবেশের ডাক দেওয়ার পর এখানে 'পরিবহন রাজনীতি' শুরু হয়।
সমাবেশের দুদিন আগে জেলা মোটর মালিক গ্রুপ রংপুর বিভাগের আট জেলায় মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয়। ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ৬ টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে রংপুর বিভাগ কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবুও পঞ্চগড়ে আটকানো যায়নি মজিবরদের।
ট্রেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মজিবর এই সমাবেশ থেকেই সরকার পতনের স্বপ্ন দেখেন। সারারাত কুয়াশাচ্ছন্ন মাঠে ঘুমানোর পরে সকালে তিনি বলেন, 'এখন এক মিনিটের জন্যও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার থাকার যোগ্যতা নেই। দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার সর্বোচ্চ খেলা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপর খেলেছেন।'
বিএনপির এই নেতা শুধু একই নন, গতকাল এই মাঠে অন্তত ৫০ জন মানুষ পলিথিনের উপর ঘুমিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন। অনেকে কম্বল, শীতের পোশাকসহ মাঠে এসেছেন।

মজিবরের সাথে সারারাত ঘুমিয়ে সকালে একই ইউনিয়নের এক বিএনপির সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, 'কোনো অর্জনই অল্প কিছু দিয়ে হয় না। এর জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। আমরা নেত্রীর মুক্তি ও দ্রব্যমূল্যের দামের কারণে এখন অসহায়। এভাবে শুয়ে থাকা আমাদের কাছে কেনো বিষয় নয়। বড় বিষয় হচ্ছে আমরা ভোট চোর সরকারের অনিয়মের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ করে যাচ্ছি।'
এদিকে। সমাবেশ উপলক্ষে রংপুরের হোটেলগুলোতে থাকার ব্যবস্থা অনেকেরই হয়নি। কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনের বাসায় রয়েছেন। তবে মাঠে গান-বাজনা করে নির্ঘুম রাতও পার করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী কোচাকাটা থানার কেদার ইউনিয়ন ৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম তাদের মধ্যে একজন। অনেকবার ভ্যান-রিকশা-অটোরিকশা বদল করে সভাস্থলে এসেছেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে শামিল হতে।
এই নেতার ভাষ্য, 'সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে নানান ভোগান্তি শেষ করে সন্ধ্যায় মাঠে এসেছি। একজন নেতা কতটুকু স্বেচ্ছাচারী হলে মানুষ এভাবে রাতের পর রাত খোলা আকাশের নিচে পলিথিনের উপর ঘুমাতে পারে! এখন আওয়ামী লীগ সরকারের টাকা পাচার, ব্যাংক লুট, বিদ্যুৎ ধ্বংস করে সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। বিনা দোষে নেত্রী খালেদা জিয়াকে করাগারে আটকে রেখেছে। এসব কিছুর সুবিচার পাওয়ার জন্য বিএনপির ক্ষমতায় আসা দরকার। তাহলে সাধারণ মানুষ লুটপাটের বিচার পাবে। তখন আমাদের নির্ঘুম রাত কাটানো সফল হবে।'

বেগম খালেদা জিয়াকে নয়, আওয়ামী লীগ সরকার তার জনপ্রিয়তাকে ভয় পায় বলে মনে করেন সমাবেশের মাঠে সারারাত আধোঘুম আধো জেগে থাকা আব্দুল জলিল। দেবীগঞ্জ উপজেলার ট্রেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়নের বিএনপি নেতা জলিল বলেন, 'নেত্রীর মুক্তির দাবিতে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। আজকের সমাবেশ ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের আন্দোলন শুরু। এই যাত্রা সরকার পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।' রংপুরে তার থাকার মতো কেউ নেই। এ কারণে তিনি আসার সময় পলিথিন আর কম্বল সাথে নিয়ে এসেছেন।
তিনি আরও বলেন, গতকাল রাতের অধিকাংশ সময়ে কলেক্টরেট মাঠে বিএনপির শত শত নেতাকর্মীদের ব্যাপক সমাগম ছিল। রাত গভীর হওয়ার সময় অনেকে চলে যান।
আজ শনিবার দুপুরে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে গণসমাবেশ শুরু হবে। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।