প্রলয়ংকারী হয়ে উঠতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’

আন্দামান সাগর ও সংলগ্ন দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) তৈরি হওয়া লঘুচাপটি আজ শনিবার (২২ অক্টোবর) নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আগামী সোমবার (২৪ অক্টোবর) নাগাদ এই নিম্নচাপ পরিণত হতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলের কাছে পৌঁছাতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। এমনটিই জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টির সম্ভাব্য নাম 'সিত্রাং'।
এর প্রভাবে রোববার (২৩ অক্টোবর) থেকে পরবর্তী দুইদিন বাংলাদেশ ও ভারতীয় উপকূলে ভারী বর্ষণ হতে পারে। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন মডেল থেকে ইঙ্গিত মিলছে, বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এতে আক্রান্ত হতে পারে কুয়াকাটা ও সুন্দরবন উপকূল। এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ঝালকাঠি ও বরিশাল জেলা। মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রাম উপকূল এবং সন্দীপ, হাতিয়া, কুতুবদিয়া, নোয়াখালী উপকূলও প্রবল বাতাসে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রভাব পড়বে ভারতের ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূলেও। ভারতের দক্ষিণবঙ্গের তিন উপকূলীয় জেলায় হতে পারে ভারী বৃষ্টি।
ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিম্নচাপটি আরও শক্তিশালী হয়ে রোববার পূর্ব-মধ্য এবং সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে পরিণত হতে পারে গভীর নিম্নচাপে। এই নিম্নচাপ উত্তরমুখে বেঁকে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সোমবার পশ্চিম-মধ্য এবং সংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে এ থেকে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার পর তা ধীরে ধীরে বঙ্গোপসাগরের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে যেতে পারে। মঙ্গলবার এই ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে যেতে পারে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ উপকূলের দিকে।
তবে, নিম্নচাপটি আদো ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে কিনা বা হলেও তা ভারত-বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়বে কিনা কিংবা কতটা মারাত্মক হতে পারে এই ঘুর্ণিঝড়, সে সম্পর্কে এখনই নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না আবহাওয়াবিদরা। তারা বলছেন, বঙ্গোপসাগরের যেখানে সিত্রাং তৈরি হচ্ছে, সেই অঞ্চলে বর্তমানে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সিত্রাংয়ের অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত না হওয়ারও একটি সম্ভাবনা রয়েছে।
উপকূলে সরাসরি আছড়ে না পরলেও 'সিত্রাং'র প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূল ও ভারতের দক্ষিণবঙ্গের উপকূলবর্তী তিন জেলা— উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কিছু অংশে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
সিত্রাংয়ের প্রভাবে সোমবার বঙ্গোপসাগরে প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। কোথাও কোথাও ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টা প্রতি ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। মঙ্গলবার আরও বাড়তে পারে এই গতিবেগ। সমুদ্রে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। সেই গতিবেগ ১১০ কিলোমিটারের মাত্রাও ছাড়াতে পারে পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
এদিকে, তৈরি হতে চলা এ ঘূর্ণিঝড়ের নামটি আবহাওয়া অফিস থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, সাগরে তৈরি কোনো নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পরেই আনুষ্ঠানিকভাবে নাম ঘোষণা করা হয়। আন্দামান সাগরের নিম্নচাপটি প্রতিনিয়ত শক্তি বাড়ালেও এখনো পর্যন্ত তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়নি। তবে আবহাওয়াবদরা বলছেন, এই নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
'সিত্রাং' নামটি দিয়েছে থাইল্যান্ড। ২০২০ সালে আবহাওয়া দপ্তরের তালিকাভুক্ত ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে একটির নাম দেওয়া হয় সিত্রাং।