২০২১-২২ অর্থবছরে শ্রম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে বাংলাদেশ

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মহামারি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পাশাপাশি শ্রম আমদানি আবার শুরু করায় ২০২১-২২ অর্থবছরে জনশক্তি রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুসারে, বিগত অর্থবছরে প্রায় ৯ লাখ ৮৮ হাজার কর্মী বৈদেশিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেছেন। আগের অর্থবছরের তুলনায় এর পরিমাণ বেড়েছে ২৫৩ শতাংশ।
তবে, আগের অর্থবছরের চেয়ে ২০২১-২২ এ রেমিট্যান্স ইনফ্লো কমেছে ১৫ শতাংশ।
এই সেক্টরের সাথে সংশ্লিষ্টরা বৈদেশিক কর্মসংস্থানের প্রত্যাবর্তনকে জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি, মহামারি পরিস্থিতির স্বাভাবিককরণ এবং বিধিনিষেধ শিথিল করার ফলাফল হিসেবে দেখছেন।
এছাড়া, সৌদি ফার্মগুলোতে বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য কোটা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করার ফলেও শ্রম রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে।
গত অর্থবছরে সৌদি আরব মোট রপ্তানিকৃত শ্রমিকের ৬৬ শতাংশকে কাজে নিয়োগ করেছে বলে জানিয়েছে তারা।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ সোমবার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ লক্ষ। কিন্তু আমরা সেই সীমা অতিক্রম করে প্রায় ১০ লক্ষ লোককে পাঠাতে সক্ষম হয়েছি।"
"মহামারি-পরবর্তী সময়ে কারখানা খোলার কারণে বিদেশে শ্রমিকদের চাহিদাও বেড়েছে," তিনি বলেন।
মালয়েশিয়া বন্ধ হওয়া শ্রমবাজার পুনরায় চালু করায় চলতি অর্থবছরে আরো বেশি কর্মী বিদেশে যেতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, "আমরা মালয়েশিয়াকে বোনাস হিসেবে দেখছি। দীর্ঘ তিন বছর বিরতির পর আমরা জুন থেকে সেখানে কর্মী পাঠানোর পরিকল্পনা করলেও নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে খুব শিগগিরই এ প্রক্রিয়া শুরু হবে।"
এ বছর ১০ লাখ কর্মী পাঠানোর আশা করছে মন্ত্রণালয়।
এদিকে, কুয়েতে স্বাস্থ্যকর্মীও পাঠাতে শুরু করেছে দেশ। এসব কাজের মাসিক বেতন ১ লাখ টাকারও বেশি।
প্রাথমিক পর্যায়ে ১ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী পাঠানোর চুক্তির অংশ হিসেবে প্রায় ১০০ জন নার্স কুয়েতে পৌঁছেছেন।
মহামারি সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে যেসব বিদেশি চাকরিতে মানুষ নেওয়া ২০২০ সালে বন্ধ হয়ে যায়, সেগুলো ২০২১ এর আগস্টে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।
মহামারির আগে গড়ে ৬-৭ লাখ বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অভিবাসী হিসেবে থাকতেন।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির বলেন, গত অর্থবছরে মহামারির জন্য দেওয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কারণে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হন আগের অর্থবছরে আটকে পড়া অভিবাসীরা।
সৌদি আরব বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য শীর্ষ গন্তব্য। তারপরেই রয়েছে ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), সিঙ্গাপুর, জর্ডান এবং কাতার।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক সভাপতি আবুল বাশার বলেন, "গত দুই বছর হজ ও ওমরাহ পালনের জন্য কেউ সৌদি আরবে যেতে পারেনি। এবার দেশটিতে যেতে পারছেন হজযাত্রীরা। ফলে, হোটেল এবং রেস্টুরেন্টে বেড়েছে নতুন কর্মীদের চাহিদা।"
"মূলত পরিচ্ছন্নতাকর্মী, গৃহকর্মী এবং হসপিটালিটি কর্মীরা অপেক্ষাকৃত কম বেতনের কাজে দেশটিতে যাচ্ছেন," তিনি বলেন।
এছাড়া, ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা মাসিক বেতনে অনেকেই নিরাপত্তারক্ষী, ড্রাইভার এবং নির্মাণশ্রমিক হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাজ করছেন বলে জানান বাশার।
তিনি আরো বলেন, কিছু দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মী ওমানের মতো বিভিন্ন দেশে প্লাম্বার, ইলেকট্রিশিয়ান, রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনারের টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন।
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট অনুসারে, ২০২১ সালে মাইগ্রেট করা শ্রমিকদের প্রায় ৭৪ শতাংশ অদক্ষ।
প্রতিষ্ঠানের চেয়ার ডক্টর তাসনিম সিদ্দিকী টিবিএসকে বলেন, "একদিকে, আমরা বেশি অদক্ষ কর্মী পাঠাচ্ছি। অন্যদিকে, তাদের একটি বিশাল অংশ প্রতারণার শিকার হচ্ছে এবং দেশে ফিরে আসছে। ফলে ব্যর্থ হছে অভিবাসন।"
"মালয়েশিয়ার ২৫টি এজেন্সির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লোক পাঠানোর ফলেও সেটি একটি ব্যর্থ অভিবাসন হতে পারে," তিনি যোগ করেন।
ক্রমহ্রাসমান রেমিট্যান্স প্রবাহ সম্পর্কে তিনি বলেন, "একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রেমিট্যান্সের পরিমাণ সাধারণত সেই সময়ের মধ্যে বিদেশে যাওয়া শ্রমিকদের উপর নির্ভর করে না। পরিমাণটি মূলত স্টক অভিবাসীদের উপর নির্ভর করে।"
"২০২১ অর্থবছরে রপ্তানিকৃত শ্রমিকের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমেছে। তাই পরের বছরে রেমিট্যান্স কিছুটা কমেছে। তবে, শ্রম রপ্তানিতে গত অর্থবছরের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব আগামী মাসগুলোতে লক্ষ্য করা যাবে," যোগ করেন তিনি।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ১.৩ কোটি বাংলাদেশি বিদেশে নানা কাজে যোগ দেন। ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ ১০ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে কর্মরত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসীরা অফিসিয়াল চ্যানেলের মাধ্যমে ২১.০৩ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছে যা আগের অর্থবছরে ছিল ২৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার।