মুলার কেজি আড়াই টাকা, করলার কেজি ৩

ফতেআলীসহ বগুড়ার বিভিন্ন খুচরা বাজারে করলা প্রতি কেজি ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হলেও মহাস্থান পাইকারি সবজি বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র তিন টাকায়। বেগুন প্রতি কেজি ৫/৬ টাকা, আর মুলার দাম নেই বললেই চলে; প্রতিকেজি মাত্র আড়াই টাকা। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও সবজি দুটো বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজিতে।
চাষীদের পাশাপাশি স্থানীয় পাইকাররা বলছেন, লকডাউনের কারণে পরিবহন সংকট আর দেশের অন্যান্য এলাকার পাইকাররা সবজি না কেনায় আলু ছাড়া সব ধরনের সবজির দাম পড়ে গেছে। তবে আশার কথা শুনিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বাজারে চাহিদা কমায় সবজি বিক্রি কমে গেছে। এই সবজিগুলো কৃষকদের থেকে কিনে সরকারি ত্রাণের সঙ্গে যুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। তাতে কৃষকও বাঁচবে, মানুষও পর্যাপ্ত খাবার পাবে।
উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় সবজির পাইকারি বাজার মহাস্থান হাটের মতোই পুরো উত্তরবঙ্গের চিত্র একই। রাজশাহী, দিনাজপুর ও রংপুরসহ প্রায় সব জেলাতেই কমেছে সবজির দাম।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার জরি গ্রাম থেকে ২০০ কেজি করোলা নিয়ে মহাস্থান হাটে এসেছেন আবদুল আলিম। প্রতি কেজি করলা তিনি বিক্রি করেছেন তিন টাকায়।
"পরিবহন, হাটের ইজারাসহ সব খরচ বাদ দিয়ে হাতে এসেছে মাত্র ৭৫ টাকা। এ টাকা দিয়েই আমাকে সংসারের সব জিনিসপত্র কিনতে হবে। তিন সপ্তাহ আগেও এই হাটে করোলা বিক্রি করেছি ১২/১৫ টাকায়।'' যোগ করেন তিনি।
গাবতলী উপজেলার পাঁচ পাইকা গ্রাম থেতে আড়াইশ টাকা ভ্যানভাড়া দিয়ে শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থানহাটে ৮০ কেজি মুলা আনেন সাজু মিয়া। সবগুলো মুলা তিনি ২০০ টাকায় বিক্রি করতে চাইলেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো ক্রেতার দেখা পাননি।
তিনি বলেন, "বাড়ি ফিরে গিয়ে ফেলে দেওয়ার চেয়ে এখন যা দাম পাব তাতেই বিক্রি করবো।''

শিবগঞ্জ উপজেলার আবদুর রহমানের বয়স ৬৮ বছর। দীর্ঘদিন ধরে সবজি বিক্রির অভিজ্ঞতায় তিনি এত কম দামে সবজি বিক্রি করতে দেখেন নি, শোনেওনি।
তিনি বলেন, ''তিন কেজি ওজনের একটি মিস্টি কুমড়া আট টাকায় বিক্রি করতে চেয়েছি। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত কেউ নিতে আসেনি।
এ বাজারে বেগুন খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৮/৯ টাকা কেজি, ঢেরশ ১৪/১৫ টাকা টমেটো ১০ টাকা অর পটলসহ অনেক সবজির দরই এখন ১৫ টাকার নিচে। তবে আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকা দরে।
পাইকারি আলু বিক্রেতা রব্বানী হোসেন জানান, গত দুই সপ্তাহে আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত।
''ত্রাণ হিসেবে চালের সঙ্গে আলু দেওয়ায় এ সবজির দাম কিছুটা বাড়ছে।''
চাহিদার তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় রংপুরে সবজির দাম নি¤œমুখি বলে জানিয়েছেন কৃষকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন, জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি সবজির বাজার সঠিবাড়ি হাটে কমেছে সব ধরনের সবজির দাম।
ওই হাটের ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগে প্রতিদিন ৪০-৫০ ট্রাক সবজি সরবরাহ করা হলেও এই হাট থেকে প্রতিদিন মাত্র ৪-৫ ট্রাক সবজি যাচ্ছে।
রাজশাহীতে পাইকারি বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকায়। লকডাউনের আগে গত মাসে যা বিক্রি হয়েছে ১৭ থেকে ১৮ টাকা দরে। করোলা মার্চ মাসে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হলে বর্তমানে এর দাম অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। সমানুপাতিক হারে কমেছে অন্যান্য সবজিরও দাম।
নগরীর সাহেব বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা সবুজ বলেন, সবজির আমদামি বেশি হওয়ায় বাজারে সব সবজির দাম কমে গেছে। শুধুমাত্র আলুর দাম বেশি।
বগুড়া মহাস্থান হাটের ইজারাদার মোশাররফ হোসেন জানান, এ হাট থেকে রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সবজি সরবরাহ করা হয়। করোনার কারণে গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে আর কোন পাইকার সবজি কিনতে আসেননি। ফলে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
"একমুখী ভাড়া হওয়ার কারণে ট্রাক চালকরা ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় সবজি পরিবহনে আগ্রহ হচ্ছেন না। এ অবস্থায় বিপুল পরিমান সবজি নষ্ট হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বললেন মোশাররফ হোসেন।
তবে ভিন্ন তথ্য যোগ করেছেন বগুড়া ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান আকন। একমুখি চলাচলের কারণে ট্রাক চালক সবজি নিয়ে ঢাকা চট্টগ্রামে গেলে তাদের লোকসান হলেও তারা বর্তমান পেক্ষাপট বিবেচনা করে যেতে চায়।
''দূরবর্তী এলাকায় যেতে চালকদের আপত্তি নেই। কিন্তু কোথাও খাবারের হোটেল খোলা পাওয়া যায় না। চালকরা রাস্তায় খাবার খেতে না পারলে গাড়ি চালাবে কীভাবে?'' যোগ করেন তিনি।
গত বুধবার মহাস্থান হাট থেকে এক ট্রাক সবজি কিনে তার এলাকার নাগরিকদের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করেছেন বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নু। এর ফলে একদিকে যেমন কৃষকের সবজি বিক্রি হয়েছে, অন্যদিকে অভুক্ত মানুষের খাবারেও ব্যবস্থা হয়েছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর কবীর বলেন, শাহজাহানপুর চেয়ারম্যানের গৃহিত পদক্ষেপ আমাদেও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। সবজি কিনে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।