বাবুনগরীর নেতৃত্বে হেফাজতের আহ্বায়ক কমিটি, পাল্টা কমিটি ঘোষণা শফী পন্থীদের

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার এক ঘন্টার মাথায় নিজ মামা আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে প্রধান উপদেষ্টা করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন সংগঠনটির বিলুপ্ত কমিটির আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব নাসির উদ্দীন মুনীর।
আহবায়ক কমিটির সদস্যরা হলেন- আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, আল্লামা নুরুল ইসলাম, সালাউদ্দিন নানুপুরী ও মিজানুর রহমান চৌধুরী।
নাসির উদ্দীন মুনীর বলেন, 'চলমান অস্থির ও নাজুক পরিস্থিতি বিবেচনায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে উপদেষ্টা কমিটির পরামর্শেক্রমে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই পাঁচ সদস্যের কমিটি অতি দ্রুত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করবেন।'
এই পাঁচ জনের বাইরে আরও কয়েকজনকে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য করা হয়েছে। তাদের নাম আজ প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে হেফাজতে ইসলামের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনার পরপরই তৎপর হয়ে উঠেছে হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির আল্লামা আহমদ শফী পন্থীরা। তারা ঘোষণা করেছেন, খুব শীঘ্রই আসছে আল্লামা আহমদ শফীর আদর্শে গড়া হেফাজতের নতুন কমিটি।
হেফাজতের প্রথম কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী এক ফেসবুক বার্তায় নতুন কমিটির এই ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'হেফাজতের আদর্শ বিচ্যুত তথাকথিত সিন্ডিকেট কমিটি মাত্র সাড়ে চার মাসের মাথায় এসে বাস্তবতা উপলব্ধি করে এ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয়েছে। আমি এই ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। দেশের স্বাধীনতার অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে আল্লামা শফীর নীতি আদর্শের হেফাজতে ইসলাম গঠন করবো। যে হেফাজতে ইসলাম, ইসলামের তাহজিব তামাদ্দুনের সংরক্ষনের জন্য কাজ করবে।'
এর আগে রোববার রাত ১১ টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন সংঘটনটির আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে হেফাজতের যাত্রা শুরু। চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসার তৎকালীন মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা করেন। ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনিই সংগঠনের আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। আহমদ শফীর মৃত্যুর পর ওই বছরের ১৫ নভেম্বর জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির ও নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।
সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে হেফাজত-পুলিশ সংঘর্ষে অন্তত ১৭ জন মানুষের প্রাণহানি হয়। এ সময় নাশকতার পেছনে জড়িত থাকার অভিযোগে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী ও নুরুল ইসলাম জিহাদীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলামের বর্তমান কমিটির অন্তত এক ডজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। একই সঙ্গে এসব নাশকতার পেছনে জড়িত না থাকা ও বিচারের দাবিতে হেফাজতে ইসলাম থেকে ইতোমধ্যে কয়েকজন দায়িত্বশীল আলেম পদত্যাগ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে সংগঠনটি অরাজনৈতিক আলেমদেরকে নিয়ে নতুন করে হেফাজতকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেয়।