আকু’র ১.৮৮ বিলিয়ন ডলার বিল পরিশোধ আজ, রিজার্ভ থাকবে ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে

গত মার্চ ও এপ্রিল মাসের আমদানি ব্যয়ের বকেয়া বাবদ আজ মঙ্গলবার (৬ মে) এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকু (এসিইউ)–কে ১.৮৮ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করবে বাংলাদেশ—যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে ২০২২ সালের জুলাই মাসে মে-জুন সময়ের আমদানির বিপরীতে সর্বোচ্চ ১.৯৬ বিলিয়ন ডলার আকু'র বিল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান টিবিএসকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, "এই বিল আজ (মঙ্গলবার) পরিশোধ করা হবে।"
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকু (এসিইউ) হলো তেহরানভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান—যা ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা—এই নয়টি দেশের মধ্যে লেনদেন নিষ্পত্তিতে কাজ করে থাকে।
বাংলাদেশ প্রতি দুই মাস অন্তর আকু'র বিল পরিশোধ করে থাকে। সর্বশেষ ৯ মার্চ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের আমদানির জন্য ১.৭৫ ডলার বিলিয়ন পরিশোধ করা হয়েছিল, যার ফলে বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ নেমে গিয়েছিল ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। তবে এরপরের মাসগুলোতে রিজার্ভ আবারও বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৪ মে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২১.৯৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আজকের পরিশোধের পরও রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে থাকার কথা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২২ সালের জুলাইয়ের পর থেকে বিল পরিশোধের পরিমাণ ওঠানামা করলেও ২০২৩ সালের পুরো বছরজুড়ে প্রতি দুই মাস অন্তর পরিশোধ ১.৩ বিলিয়ন ডলারের নিচেই ছিল। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে আবার পেমেন্টের পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। সর্বশেষ মার্চ-এপ্রিলে তা তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে ১.৮৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
ব্যাংকাররা আমদানির এই ঊর্ধ্বগতিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। তারা বলছেন, এটি ব্যাংকিং খাতে ভালো বৈদেশিক মুদ্রার অবস্থানের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ২০২২ সালের আগেও প্রতি মাসে গড়ে ২ বিলিয়ন ডলার আকু'কে পেমেন্ট করতে হতো। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানিতে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করায় পরিমাণটি কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে আকু সদস্য দেশগুলো থেকে আমদানিও হ্রাস পাওয়ায় পেমেন্ট কমে যায়।
তিনি বলেন, "ফরেক্স রিজার্ভে স্থিতিশীলতা আসা এবং বিনিময় হার কম ওঠানামা করায় আমদানি আবার বাড়তে শুরু করেছে। এর ফলে আকু দেশগুলো থেকেও আমদানি বেড়েছে, যার কারণে আকু'র পেমেন্টও বেড়েছে।"
রিজার্ভ হ্রাস না পাওয়ার ব্যাখ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেক নীতিনির্ধারক বলেন, "২০২৩ সালের জুলাই শেষে বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২০.৩৯ বিলিয়ন ডলার। প্রায় ২০ মাস পর সেটি ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। আজকে আকু'র পেমেন্টের পর কিছুটা কমবে, তবে জুলাইয়ের পর থেকে কখনও ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামেনি, এটি ইতিবাচক।"
তিনি জানান, "এটি সম্ভব হয়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ রেমিট্যান্স ও ১০ শতাংশের বেশি রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে আমদানি এলসি খোলার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪.৭৯ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে ভোক্তা পণ্য, শিল্পের কাঁচামালসহ অন্যান্য আমদানি বেড়েছে।
তবে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে ২৬ শতাংশ এবং মধ্যবর্তী পণ্য ও পেট্রোলিয়াম আমদানিও হ্রাস পেয়েছে।
আকু'র বিল বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, "দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা থাকায় আমদানি করতেই হচ্ছে। আকু'র সদস্য দেশগুলো থেকেই আমাদের একটা বড় অংশের আমদানি হয়—বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও রপ্তানিযোগ্য কাঁচামাল। অন্য দেশগুলো থেকেও এই পণ্য আমদানির সম্ভাবনা যাচাই চলছে, তবে সময় লাগবে।"
তিনি বলেন, "অনেক ওভারডিউ ইমপোর্ট পেমেন্ট ক্লিয়ার করা হয়েছে। এক্সপোর্ট ও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি আমাদের এ পেমেন্ট করতে সহায়তা করেছে। বিশেষ করে রেমিট্যান্সের বাজার সম্পর্কে আমরা এখন আরও ভালোভাবে সচেতন। এই ধারা ধরে রাখতে হবে সামনের দিনগুলোতে।"