নবীন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব সেরার তালিকায় নেই বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব

৫০ বছর বা তার কম বয়সী এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নবীন হিসাবে গণ্য করে তৈরি করা বিশ্বসেরার র্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থান অধিকার করেছে এশিয়ার দুটি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। কিন্তু টাইমস হায়ার এডুকেশন ইয়ং ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংস ২০২০' শীর্ষক এই তালিকায় স্থান পায়নি বাংলাদেশের কোনো উচ্চতর শিক্ষার প্রতিষ্ঠান।
গত বুধবার প্রকাশিত এ তালিকায় এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং আফ্রিকা মহাদেশের ৬৬টি অঞ্চলের ৪১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। এই নিয়ে টানা নবমবার নবীন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বসেরার তালিকাটি প্রকাশ করা হলো।
চলতি বছরের তলিকা প্রণয়নে অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৯ সালে ৬০টি অঞ্চলের উচ্চতর শিক্ষার কেন্দ্র এতে স্থান পেয়েছিল।
নবীন ও প্রবীণ মিলিয়ে বিশ্বসেরার সার্বিক র্যাংকিংয়ের মানদণ্ড নির্ধারণে ১৩টি বিষয় বিবেচনা করে 'দ্য ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিংস। তবে নবীন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা নির্বাচনে খ্যাতির প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
চলতি বছরের তালিকায় প্রথমবারের মতো শীর্ষ দুটি নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায় এশিয়ার দুই বিদ্যাপীঠ। এছাড়া, সবার সেরা হিসেবে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রথম স্থান ধরে রেখেছে হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।
আর গতবারের তৃতীয় স্থান থেকে উঠে এসে এবার প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় হয়েছে সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি।
গত বছর দ্বিতীয় স্থান অধিকার করা সুইজারল্যান্ডের ইকোল পলিটেকনিক ফেডারেল ডে লুসানে বিশ্ববিদ্যালয় চলতি বছর ৫১ বছরে পা দেওয়ায়, এবারের র্যাংকিংয়ে স্থান পায়নি।
বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেরা নবীন বিদ্যাপীঠের বৈশ্বিক তালিকায় স্থান না পাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়য়- শাবিপ্রবির অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, বৈশ্বিক র্যাংকিংগুলোয় স্থান পাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হয় না। কিন্তু, বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাংকিংয়ে উন্নতির লক্ষ্যে আলাদা করে একটি বিভাগ থাকে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এমন কোনো বিভাগ নেই। তাই র্যাংকিং নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে এতে যোগ দেওয়ার কোন চিঠিও দেয় না।
'এছাড়াও র্যাংকিং অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে এমন পর্যাপ্ত জনবলের সঙ্কট রয়েছে। এনিয়ে আমরা একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও চালু করেছিলাম। কিন্তু, দেশে কোভিড-১৯ মহামারি এ উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করেছে' যোগ করেন তিনি।
প্রফেসর ফরিদ্দ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, 'আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য খুব কম বিদেশি শিক্ষার্থী আসে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের কম উপস্থিতির পেছনে সঠিক প্রচারণা এবং উন্নত আবাসন ব্যবস্থার সঙ্কটও অন্যতম কারণ।'
তার সঙ্গে অনেকাংশে একমত পোষণ করেন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জি.এম. রাকিবুল ইসলাম। পাশাপাশি তিনি 'আন্তর্জাতিক র্যাংকিং' দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে কতটুকু প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্যপূর্ণ, তা নিয়েও প্রশ্ন রাখেন।
রাকিবুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং-এ স্থান নিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তখনই মাথা ঘামাবে, যখন এর সাথে তাদের লাভ-ক্ষতির একটা সম্পর্ক থাকবে। এই র্যাংকিং সিস্টেমে আমাদের থাকা কিংবা না থাকা কোথাও কি কোন গুরুত্ব বহন করে? আর্থিক বরাদ্দ, গবেষণা বরাদ্দ, শিক্ষার্থী ভর্তি কিংবা অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্ব পায় না। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে এই আলোচনা প্রাসঙ্গিকতা হারাবে না কেন?
'এই র্যাংকিংগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থানের কারণে যদি কোন প্রণোদনা কিংবা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা থাকে তাহলে একটি ইতিবাচক প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ ব্যাপারে মনোযোগী হবে। আমি মনে করি বর্তমানের অবস্থান থেকেই বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং- এ আসার যোগ্য। শুধু দরকার একটু মনোযোগ সহকারে নির্ধারিত ক্রাইটেরিয়া অনুসারে তথ্য হালনাগাদ করা। কিন্তু সেটা করলে যদি কোন লাভ না হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এব্যাপারে উদাসীন থাকবে এটাই স্বাভাবিক' যোগ করেন তিনি।
এদিকে নবীন বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় প্রথম দুটি স্থান এশিয়ার দুটি বিদ্যাপীঠ থাকলেও, সেরা দশের বাকি স্থানগুলো এশিয়া এবং ইউরোপের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় পূরণ করে।
ফ্রান্সের প্যারিস সায়েন্সেস এট লেট্টারস, ইতালির সেন্ট' আনা স্কুল অব অ্যাডভান্সড স্ট্যাডিজ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউড অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি যথাক্রমে; তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে এবারের র্যাংকিংয়ে।
সবচেয়ে বেশি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পায় যুক্তরাজ্যের, ৩৬টি। ২৭টি নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ফ্রান্স। প্রতিবেশী ভারত থেকে ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয় তালিকায় উঠে আসে।