ছোটদের কাছে লেখাপড়া শিখছেন বড়রা
গৃহ শিক্ষকের পাশাপাশি বাড়িতে মা-বাবার কাছে সন্তানেরা লেখাপড়া শেখে। সাধারণত এমনটাই হয়ে থাকে। কিন্তু মাগুরার শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলায় দেখা গেছে ব্যতিক্রম চিত্র। পারিবারিক স্বাক্ষরতা কর্মসূচির মাধ্যমে সন্তানের কাছে লেখাপড়া শিখছেন বাবা-মা। আবার কোথায়ও নাতি-নাতনীর কাছে লেখাপড়া শিখছেন দাদা-দাদী।
শুধু অক্ষর জ্ঞান ও স্বাক্ষরতার মাঝেই এ শিক্ষা সীমাবদ্ধ নয়। ছোটদের কাছ থেকে বড়রা শিখছেন ধর্মীয় ও নীতি-নৈতিক শিক্ষাও। এরই মধ্যে উপজেলা দুটির ঘরে-ঘরে পারিবারিক স্বাক্ষরতা কর্মসূচি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
মাগুরা উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচির উপ-পরিচালক সরোজ কুমার দাস জানান, বিগত দিনে জেলায় স্বাক্ষরতা কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও ধারাবাহিকতার অভাবে এ কার্যক্রম অনেক ক্ষেত্রে সফলতা পায়নি। মূলত নিরক্ষরতা ঘোচাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে পরিবারের সদস্যরা। এ রকম চিন্তা থেকেই তিনি পারিবারিক স্বাক্ষরতা কর্মসূচির উদ্ভাবন করেন।
এ কর্মসূচিতে পরিবারের নিরক্ষর সদস্যের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন পরিবারের সদস্যরাই। সেক্ষেত্রে শুধু জ্যেষ্ঠ সদস্যই শিক্ষকের ভূমিকায় থাকবেন না। বয়োজৈষ্ঠ্য কেউ নিরক্ষর থাকলে পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্যও তাকে পড়াতে পারে। এই শিক্ষার মাধ্যমে যৌতুক, বাল্য বিবাহ, মাদকাসক্তিসহ সমাজের বিভিন্ন অসংগতির কু-ফল সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে। এতে লুডু, ক্যারাম বোর্ড, বাগাডুলিসহ খেলাধুলার বিভিন্ন সামগ্রীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে গুনতে শেখানো হয়।
মাগুরার দু’টি বেসরকারি সংস্থা রোভা ফাউন্ডেশন ও ইসাডোর মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে দুটি উপজেলায় এ কর্মসূচি চালু হলেও উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় এখন এটি প্রায় পুরো জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।
শালিখার আড়পাড়া সদরের গৃহবধূ নাসরিন বেগম বলেন, ‘আগে সম্পূর্ণ নিরক্ষর ছিলাম। আমার মেয়ে এখন আমাকে পড়ায়। এখন আমি লিখতে ও পড়তে পারি।’
একই উপজেলার হরিশপুর গ্রামের আশি বছর বয়সী মনু মণ্ডল বলেন, ‘জীবন জীবিকার কারণে সারাজীবন পড়াশুনা করতে পারিনি। শেষ জীবনে এসে নাতির কাছ থেকে শিখতে পারছি।’
অন্যদিকে মহম্মদপুর উপজেলার ঘুল্লিয়া গ্রামের গৃহবধূ নাসিমা বেগম বলেন, ‘ছোট সময়ে নাম সই করতে পারলেও পরে ভুলে গিয়েছিলাম। স্কুল পড়ুয়া সন্তানের কাছে এখন লেখা ও পড়া দুই-ই শিখেছি।’
মাগুরার সহকারী শিক্ষা অফিসার আলমগীর কবির জানান, পারিবারিক শিক্ষাদান পদ্ধতি অনেক দেশেই রয়েছে। বিশেষ করে আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও জাপানে এটি খুব জনপ্রিয়। মাগুরার শালিখা উপজেলায় এ পদ্ধতিতে শিক্ষাদান কর্মসূচি চালু হওয়াটা খুব আনন্দের ব্যাপার।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফরিদ হোসেন বলেন, পরিবারই প্রতিটি মানুষের আসল পাঠশালা। শুধু স্বাক্ষরতা বা লেখাপড়া নয়, সকল সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতি মানুষ পরিবার থেকেই প্রথম শেখে। উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলায় যে পারিবারিক শিক্ষাদান পদ্ধতি চালু হয়েছে, তা গোটা দেশে চালু করা গেলে অল্প সময়ের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা সম্ভব হবে।
