বিগত ১৫ বছরে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের মধ্য দিয়ে জাতিকে অন্ধ করার চেষ্টা হয়েছে: আব্দুল মঈন খান

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, বিগত ১৫ বছরে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের নীতি নেওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট- যদি শিক্ষা ধ্বংস করা যায়, তবে জাতিকেও ধ্বংস করা যাবে। কারণ তখন মানুষ যুক্তি দিয়ে কথা বলতে পারবে না, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বুঝবে না, প্রতিবাদও করতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড উল্লেখ করে ড. মঈন খান বলেন, 'আমরা শিক্ষকদের বলি মানুষ গড়ার কারিগর। ইতিহাস সাক্ষী, যে দেশ শিক্ষায় উন্নত হতে পারেনি, ভালো শিক্ষক ও ভালো ছাত্র তৈরি করতে পারেনি, সে দেশ কখনোই এগিয়ে যেতে পারেনি।'
তিনি অভিযোগ করেন, 'আগের সরকার পদ্ধতিগতভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করেছে। একটি ফ্যাসিবাদী সরকার সবসময় চায় মানুষ যেন অন্ধ, নির্বাক ও অসচেতন থাকে। তাই তারা শিক্ষাকে ধ্বংস করেছে। এই অবস্থা থেকে বের হতে হলে গণতান্ত্রিক সরকার, ন্যায়ের সরকার, মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।'
ড. মঈন খান বলেন, 'জার্মানির ইতিহাস আমাদের শেখায়- জ্ঞান, শিক্ষা ও শিক্ষক এই ত্রয়ীই জাতির মূল শক্তি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসের পরও তারা শিক্ষার শক্তিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো সময়সীমা ছিল না ডিগ্রি শেষ করার জন্য। উদ্দেশ্য ছিল একটাই- যোগ্য হওয়া এবং সমাজকে আলোকিত করা। সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ক বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয় শেষে ছাত্রদের একটাই উত্তর থাকত- আমি শিক্ষক হব। এটাই ছিল তাদের জাতীয় দর্শন।'
তিনি আরও বলেন, 'একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল আমাদের গর্ব, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল টিউটোরিয়াল সিস্টেম, গবেষণার পরিবেশ, শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক- যা গোটা উপমহাদেশে শিক্ষার আলোকবর্তিকা জ্বালিয়েছিল।'
ড. মঈন খান বলেন, 'বর্তমানে বিশ্বের প্রথম ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৬০–৭০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অনেকে বলেন, সামরিক শক্তির কারণে আমেরিকা শক্তিশালী। আমি বলি, তাদের প্রকৃত শক্তি শিক্ষায়। শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও মেধাবী ছাত্ররা তাদের আসল সম্পদ।'
তিনি বলেন, 'আজ দেশে শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ছোড়া হচ্ছে- এর চেয়ে কলঙ্কজনক ঘটনা আর কিছু হতে পারে না। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি বলছি, এটা শুধু আঘাত নয়- এটা শিক্ষার প্রতি অবমাননা।'
তিনি প্রশ্ন তোলেন, 'সরকার যখন শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা মাত্র ৫০০ টাকা ঘোষণা করে, তখন সেটা আসলে শিক্ষার প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গিই প্রকাশ করে। এ টাকায় কি আজকের বাংলাদেশে কোনো শিক্ষক বাড়ি ভাড়া নিতে পারেন?'
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য আরও বলেন, 'শিক্ষা সংস্কারের নামে অসংখ্য কমিটি গঠন করা হয়েছে, অসংখ্য সভা-সেমিনার হয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে এর কোনো বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায়নি। শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনো বাস্তব পরিবর্তন আসেনি।'
শেষে তিনি বলেন, 'জাতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে, শিক্ষাকে আবার রাষ্ট্রের প্রথম অগ্রাধিকার করতে হবে। শিক্ষককে দিতে হবে সম্মান, ছাত্রকে মানসম্মত শিক্ষা, আর বিশ্ববিদ্যালয়কে ফিরিয়ে দিতে হবে তার হারানো মর্যাদা।'