Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
August 10, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, AUGUST 10, 2025
এক ঝুমার গল্প যার শুরুটা গভীর নিদ্রা থেকে ফিরে আসার পর

ফিচার

সালেহ শফিক
16 November, 2024, 03:30 pm
Last modified: 16 November, 2024, 03:32 pm

Related News

  • আর চুপ থাকার মতো পরিবেশ-পরিস্থিতি নেই: ঢাকা দক্ষিণ সিটি নিয়ে উপদেষ্টা আসিফ
  • বিভিন্ন সংকটে গত ৬ বছরে ৬৭ হাজার নারী অভিবাসী দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন: ব্র্যাক
  • সরকারি হাসপাতালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সেবা দেওয়ার সুপারিশ
  • কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কোড অব কন্ডাক্ট জারি: অনুমোদন ছাড়া সেবাগ্রহীতার থেকে উপহার নেওয়া যাবে না
  • বিভিন্ন ফরম ও সেবার মূল্য বাড়াল ইপিবি

এক ঝুমার গল্প যার শুরুটা গভীর নিদ্রা থেকে ফিরে আসার পর

বাড়িতে হুদাকে শুনিয়ে শুনিয়ে সারাদিন কথা বলে যান মা। মাসিক ভিজিটে যখন ঢাকায় আসেন, তখন ঝুমা এবিসিডির বই নিয়ে পড়তে বসান। হুদাকে খুব অসহায় আর বিষণ্ণ দেখায়। ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর যিনি, তাকে নতুন করে এবিসিডির বই নিয়ে বসতে হচ্ছে।
সালেহ শফিক
16 November, 2024, 03:30 pm
Last modified: 16 November, 2024, 03:32 pm

ঝুমার অসুখটা সারবার নয়। শুরুটা হয়েছিল ১৯৯১ সালে। তখন জান্নাতুল ফেরদৌস ঝুমার বয়স ছয়। ৯৬ ঘণ্টার জন্য কোমা বা গভীর নিদ্রায় চলে গিয়েছিল। এত ছোট বয়সে ডায়াবেটিস ধরা পড়ায় বিরল রোগ হিসেবে গণ্য করা হলো। ডাক্তাররাও দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন।

শেষ পর্যন্ত ঝুমা যখন নতুন জীবনে ফিরে এল, বারডেমের ডাক্তার, নার্স, আয়া সবাই ভাবলেন, লড়াইটা সবার, সবাই মিলে লড়তে হবে। প্রতিমাসেই ৭–৮ দিন ঝুমা বারডেমে থাকে। কোনো কোনো মাসে ১৫ দিন বা পুরো মাসটাই বারডেমে কাটাতে হয়। বারডেম হয়ে উঠল তার দ্বিতীয় বাড়ি।

এর মধ্যে আবার স্কুলে যাওয়ার কথা উঠল। শহীদ আনোয়ারা গার্লস স্কুলে খুব কড়াকড়ি নিয়ম। তাই ডাক্তারের কাছ থেকে দফায় দফায় সনদ নিতে হয়। বারডেমের অলিগলি, প্রতিটি তলা সব চলে এল ঝুমার নখদর্পণে।

ওপরে উঠতে উঠতে সে পড়তে থাকে, 'শৃংখলাই জীবন'। নীচে নামতে নামতে পড়ে, 'মানবসেবাই ধর্ম'। ডক্টরস রুম বা নার্স স্টেশনেও গিয়ে গল্প করে আসে। শুক্রবার অথবা বুধবার রাতে দেখতে বসে যায় 'ম্যাকগাইভার' বা 'র‌্যাভেন'। হাসিখুশি, চঞ্চল মেয়েটির সর্বত্রই অবাধ অধিকার ছিল।

এভাবেই বারডেমকে সঙ্গে নিয়ে একদিন এসএসসি ও এচএসসি পাশ করে ঝুমা। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পালা। বিশ্ববিদ্যালয় বড় পরিসর, বাড়ি থেকে দূরে যেতে হতে পারে। বাবা-মায়ের ঘুম আসে না। ইচ্ছাশক্তিতে সে বলীয়ান, কিন্তু শরীর মাঝেমধ্যেই বেঁকে বসে।

ঝুমাই বিজ্ঞাপনটি দেখেছিল। সিআরপি (সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড) দিয়েছিল সে বিজ্ঞাপন। চেষ্টা চলছিল আরও আগে থেকেই স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি নিয়ে একটি ইনস্টিটিউট খোলার।

শিশুদের সঙ্গে আনন্দেই দিন কাটান ঝুমা।

সিআরপি এমন মানুষদের নিয়েই কাজ করে, যারা দুর্ঘটনায় বা গাছ থেকে পড়ে গিয়ে, স্ট্রোক করে অথবা মারামারির ফলে চলৎশক্তি হারিয়েছেন। এ অবস্থায় অন্তত তাদের ভাষা যদি ফিরিয়ে আনা যায়, তবে তারা যোগাযোগ পুনরায় শুরু করতে পারেন।

ঝুমা বলছিলেন, ভয়েস, স্পিচ, ল্যাঙ্গুয়েজ—সবই আলাদা বিষয়। মস্তিষ্কের যেসব কোষ বিকল্প বা অকার্যকর নয়, সেগুলোকে সক্রিয় করা গেলে ভাষা ও শব্দ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আর এ চিকিৎসা পদ্ধতির সাফল্যের হার নব্বই শতাংশের বেশি।

এ চিকিৎসা পদ্ধতির শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আহত সৈনিকদের জন্য। তারা চলৎশক্তি হারিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতেন। পরে যখন ভাষা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল, তারা আবার সজীব হয়ে উঠেছিলেন।

এখানে ঝুমার একজন ক্লায়েন্টের কথা প্রাসঙ্গিক। তার নাম আল নূর হুদা। ঘটনাটি ২০১২ সালের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষে তিনি বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। 

প্রিলিমিনারি শেষ, লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রতিদিনই রাত জাগতেন। থাকতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসীমউদ্দিন হলে। ঘটনার দিন সকাল ১০টায় ঘুম থেকে উঠে চোখ-মুখ ধুয়ে নীচের দোকানে নাস্তা করতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎই অনুভব করলেন তার ডান হাতটিকে আর ওপরে তুলতে পারছেন না। 

রুমমেটকে বলতে চাইলেন, কিন্তু মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হলো না। অদ্ভুত ব্যাপার! হুদা কিছুই বুঝতে পারছেন না। ডান পা তখনো কাজ করছে। রুমমেটকে সঙ্গী করে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে গেলেন। শিক্ষানবীশ ডাক্তার স্ট্রোকের মাত্রা বুঝতে পারেননি, চিকিৎসা শুরু করতে দেরি করলেন।

সিএস কেয়ার-এর চেয়ারপারসন জান্নাতুল ফেরদৌস ঝুমা।

একসময় হুদার পাও অসার হয়ে গেল। তারপর দীর্ঘদিন হুদাকে যুদ্ধটা চালিয়ে যেতে হলো; শরীরের সঙ্গে যতটা, মনের সঙ্গে ততটাই। হুদা শুধু ভাবতেন, 'আমার দোষটা কী? আমার সঙ্গেই কেন এমন হলো।' 

ঘটনার মাসখানেক পর হুদার মা তাকে ঝুমার কাছে নিয়ে আসেন। ঝুমা তখন মিরপুর সিআরপিতে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপির প্র্যাক্টিস করছেন। খুব অল্প জায়গা নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে বিভাগটি চালু হয়েছে। 

হুদা একজন আবাসিক পেশেন্ট। তার জিহ্বা এতটাই ভারী হয়ে গিয়েছে যে, চামচ দিয়ে ওপরে তুলতে হয়। মা সারাক্ষণ জায়নামাজে বসে থাকেন। ঝুমা সকাল বিকাল এসে ঘণ্টা দুই তাকে শব্দ শোনান বা ছবি দেখান। একদিন হুদা সত্যি সত্যি 'বাবা' শব্দটি বলতে সমর্থ হন।

আবার 'এ ফর অ্যাপেল'

সে থেকে হুদার সাহস বাড়ে। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা ও শিক্ষকরা তাকে উৎসাহ দিয়ে চলেন। তৈরি হয় ইচ্ছাশক্তি, হুদা বুঝতে পারেন তিনি পারবেন। মিরপুর থেকে একসময় হুদা কুমিল্লার বাড়িতে ফিরে যান। 

ঝুমা বলে দেন মাসে অন্তত একবার তিন–চার দিনের প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকায় আসতে। বাড়িতে হুদাকে শুনিয়ে শুনিয়ে সারাদিন কথা বলে যান মা। মাসিক ভিজিটে যখন ঢাকায় আসেন, তখন ঝুমা এবিসিডির বই নিয়ে পড়তে বসান।

সিএস কেয়ার-এর ফিজিওথেরাপি সেন্টার।

হুদাকে খুব অসহায় আর বিষণ্ণ দেখায়। ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর যিনি, তাকে নতুন করে এবিসিডির বই নিয়ে বসতে হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন কিছু নয়, এবিসিডি নিয়মমাফিক না চিনলে হুদা আগের মতো অ্যাপেল, বুক, এলিফ্যান্ট কোনোটাই চিনবেন না।

এভাবে চলতে চলতে দুই বছর পার হওয়ার পর হুদার জিহ্বার জড়তা কাটতে থাকে। পুরো একটি বাক্য বলায় তিনি পারদর্শী হয়ে ওঠেন। আরও কিছুকাল পরে একাধিক বাক্য বলতে সমর্থ হন। এর মধ্যে হুদাকে ঝুমা টিউশনি করানোর পরামর্শ দেন। একসঙ্গে ১০–১৫ জন বাচ্চাকে পড়িয়ে হুদা অনেকটাই সড়গড় হয়ে ওঠেন। 

তারপর তিনি একটা কলেজে পড়ানোর জন্য দরখাস্ত করে নির্বাচিত হন। হুদার কথাবার্তা এখন ৯৫ ভাগ ঠিক হয়ে গেছে। ঝুমা বললেন, 'গত মাসে যখন দেখা হলো, হুদা সব কথা সঠিক মাত্রায়, সঠিক বিরতিতে, সঠিক উচ্চারণে বলতে পারছিলেন। নিজেই জানতে চাইলেন, "কতটা ঠিক হয়েছে আমার কথা?" বললাম, 'শতভাগ প্রায়।'

হুদার হাত ও পা ঠিক হয়নি এখনো, তাকে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলতে হয়। প্রবল ইচ্ছাশক্তিতে ভর করে ১২ বছর ধরে এভাবেই চলছেন হুদা। চলতে চলতে একদিন সত্যি সব ঠিক হয়ে যাবে, এমনই আশা রাখেন হুদার মা।

হঠাৎই একটা বড় লাফ দেওয়া হয়ে গেল ঝুমার গল্পে। ফাঁক রয়ে গেল ঝুমা কীভাবে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট হয়ে উঠলেন সে গল্পে। আর সেটিও কম বড় বা কম মজার নয়। সিআরপির বিজ্ঞাপন দেখার পর ঝুমার বিষয়টি নিয়ে খুব আগ্রহ হলো।

তিনি দেশবরেণ্য এক চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ চাইলেন। চিকিৎসক দেশে ও বিদেশে তার বন্ধুদের কাছে জানতে চাইলেন, এটি কী বিষয়ক পড়াশোনা আর এর ভবিষ্যৎ কী। প্রায় সবাই উত্তর পাঠালেন, উন্নত দেশগুলোতে এ বিষয়টির ভালো চাহিদা রয়েছে, এতে মানবসেবার সুযোগ যথেষ্ট। তবে খুব ধৈর্য রাখতে হয়। ঝুমার মনে পড়ল বারডেমের ডা. তারিন আহমেদের কথা।

সিএস কেয়ার-এর ১২ বছর উদযাপন।

প্রেরণার নাম তারিন আহমেদ

একদিন আউটডোরে রোগী দেখার প্রায় শেষ সময়। শেষ অপেক্ষমাণ রোগীটি একজন বৃদ্ধ, পোশাক-আশাকে মনে হলো তিনি গ্রাম থেকে এসেছেন। তারিন আহমেদ তাকে দেখে নিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাপত্র দিলেন। কিন্তু চিকিৎসাপত্র দেখে তিনি কিছু বুঝলেন বলে মনে হলো না। তখন তারিন আহমেদ তাকে কখন কোন ওষুধ নিতে হবে, কতটা কী খাওয়া যাবে বা যাবে না, কতটা পথ নিয়ম করে হাঁটতে হবে তা বুঝিয়ে দিলেন। 

বুঝেছেন কি-না তা পরীক্ষা করার জন্য তারিন আহমেদ নিয়মকানুনগুলো জানতে চাইলেন। কিন্তু বৃদ্ধ মানুষটি কিছুই বোঝেননি। তারিন আহমেদ আবার বোঝালেন, তারপর আবার বোঝালেন, তারপর আবার। এভাবে ২০ বার বুঝিয়ে তবে তিনি বৃদ্ধকে বিদায় দিলেন।

ঘটনাটি মনে পড়ে যাওয়ার পর ঝুমা ভাবলেন, 'তাহলে আমি কেন ধৈর্য রাখতে পারব না।' এরপরই তিনি ভর্তি হয়ে গেলেন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিতে। সেখানে আবাসিক হওয়ার সুযোগ থাকায় ঝুমাকে ঢাকা থেকে যাতায়াতের ধকলও পোহাতে হয়নি। 

সাইকোলজি, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি, লিঙ্গুয়িস্টিক্স, অ্যানাটমি, ফিজিওলজি ইত্যাদি ছিল তাদের পড়ার বিষয়। শিক্ষকদের প্রায় সবাই ছিলেন বিদেশি। পড়াশোনা যতটা থিওরিটিক্যাল ছিল, প্রাকটিক্যালও ছিল ততটা। ফলে ঝুমা ও তার সতীর্থদের প্রচুর ক্লায়েন্টদের সঙ্গে প্রতিদিনই মিশতে হয়েছে, তাদের সমস্যা জানতে হয়েছে, শিক্ষকদের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলাপ করতে হয়েছে, সমাধানের উপায় বের করতে হয়েছে।

তবে মুশকিল ছিল, বিষয়টি অধিকাংশ মানুষের জানা ছিল না। ঝুমারা তাই সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে গিয়ে ফর্ম দিয়ে আসতেন, আর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে আসতেন যদি কথা বলার সমস্যাজনিত কোনো রোগী আসে তবে তার নাম আর ফোন নম্বরটি যেন নিয়ে রাখে।

নিয়মিত ক্লায়েন্টদের খোঁজখবর নেন ঝুমা।

সপ্তাহান্তে সেসব ফর্ম আবার সংগ্রহ করতেন, তারপর ফোন দিয়ে বলতেন, 'আমরা অমুক হাসপাতাল থেকে জানতে পেরেছি আপনার কথা বলাজনিত সমস্যা আছে। আপনি আমাদের এখানে আসুন, আপনার সমস্যা কাটানোর চেষ্টা করব।'

আরেকটা সমস্যা এখনো রয়েছে এবং তা শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সেটি হলো, আস্থার অভাব। লোকে ভাবে, থেরাপি দিয়ে আসলে কোনো কাজ হয়? এছাড়া অনেকে মনে করেন, থেরাপি শুধু শিশুদের জন্যই। ঝুমা জানালেন, আসলে থেরাপি শিশু বা বয়স্ক উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। তবে শিশুদের যেহেতু নিয়ন্ত্রণ করা সহজ তাই তাদের ক্ষেত্রে কার্যকরিতার হার বেশি। ঝুমার গড়া প্রতিষ্ঠান সিএস কেয়ারে ১০০ জনের মধ্যে ৯৬ জন থেরাপি নিয়ে সুফল পেয়েছেন।

পেশেন্ট নয়, ক্লায়েন্ট

শেষ বর্ষে ঝুমা ও তার সতীর্থরা ৪৮০ ঘণ্টা ক্লিনিক্যাল থেরাপি প্র্যাকটিস করেছেন। ফলে অনেক রকমের ক্লায়েন্ট দেখার সুযোগ তার হয়েছে। ঝুমাকে জিজ্ঞেস করলাম, পেশেন্ট না বলে ক্লায়েন্ট বলছেন কেন? ঝুমা বললেন, 'আমাদের এখানে কেউ পেশেন্ট নন। এখানে কেউ রোগের শিকার নন বরং অবস্থা বা পরিস্থিতির শিকার। আমরা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা করে থাকি।'

২০০৪ সালে অধ্যয়ন শুরু করে ২০০৯ সালে সনদপত্র নিয়ে বের হলেন ঝুমা। মিরপুর ১৪ নম্বর সিআরপি শাখায় স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপির বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হলেন। খুব অল্প পরিসরে জনাকয় স্টাফ নিয়ে শুরু হলো সেবাপ্রদান। কিছু প্রশিক্ষণ নেওয়ারও সুযোগ পেয়েছিলেন।

এর একটি যেমন দিনাজপুরের ল্যাম্ব হাসপাতালে। আমেরিকান সাঁওতাল মিশনের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ১৯৮৩ সাল থেকে পরিচালিত হচ্ছে। এটি দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য নিবেদিত একটি জেনারেল হাসপাতাল। ট্রেনিং এবং ওয়ার্কশপও আয়োজিত হয়।

থেরাপি প্রক্রিয়াকে উপভোগ্য করে তোলার চেষ্টা থাকে সিএস কেয়ারে।

ল্যাম্ব হাসপাতালে দেখা মেয়েটি 

অপারেশন ক্লেফটের পরিচালনায় একটি প্রশিক্ষণে যোগ দিয়েছিলেন ঝুমা। ক্লেফট মানে কাটা বা ফাঁকা (তালু কাটা, গাল কাটা)। সেখানে ঝুমা একটি ১৫ বছরের মেয়েকে দেখেছিলেন, যার কপাল, চোখ, নাক, মুখ সব একসঙ্গে চ্যাপ্টা হয়েছিল। তাকে দেখতে এতটাই ভয়ংকর দেখাত যে বাবা-মা তাকে নানীর কাছে রেখে চলে গিয়েছিলেন।

মেয়েটি পানি খেত প্রাণীদের মতো করে। ৮–৯টি অপারেশনের পরে যখন তার গাল, ঠোঁট কিছুটা আকৃতি পেল, তখন নিজেকে চিনতে পারল না। নতুন গড়নের মুখ দিয়ে খাবার খেতে গিয়ে সে ভারসাম্য রাখতে পারছিল না। স্বাভাবিক হতে অনেকদিন লেগেছিল তার। থেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করতে গিয়ে অনেকরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে ঝুমার, যা তিনি জীবনের পাথেয় বলে ভাবেন।

দিনকয় আগেও ঝুমা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে অফিসে ফিরে আসতে অবশ্য তিনদিনের বেশি সময় নেননি। কারণ, কাজ পড়ে থাকে অনেক। অভিভাবকেরা তাকে না দেখতে পেলে অসহায় বোধ করেন। নতুন যেসব সমস্যা তৈরি হয়, তা কাকে জানাবেন, বুঝে উঠতে পারেন না।

মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় 

২০১২ সাল থেকে ঝুমা সিআরপির কাছের আরেকটি ভবনে বিকালবেলায় প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করলেন। তখন তার একজন মাত্র সাহায্যকারী ছিল। কোনো কোনোদিন একজন ক্লায়েন্টও আসত না। তবে ঝুমার স্বপ্ন ছিল, ছিল আত্মবিশ্বাস। সিএস কেয়ার নামটি তখনই দেওয়া।

২০১৬ পর্যন্ত তিনি সিআরপিতে ছিলেন। ওই বছরই মিরপুর ৬ নম্বরে 'স্কুল ফর স্পেশাল কেয়ার' নামে একটি স্কুল করেন, যাতে ওয়ান টু ওয়ান (একজন ছাত্রের জন্য একজন শিক্ষক) পদ্ধতিতে পড়াশোনা করানো হয়।

তার আগে থেকেই মিরপুর ১০ নম্বরে সিএস কেয়ারকে বড় পরিসরে নিয়ে আসেন। প্রথমে একটি ফ্ল্যাট নিয়েছিলেন, তারপর একটি ফ্লোর, তারপর একই ভবনের দুটি ফ্লোর। কিন্তু কিছু বিশেষ প্রয়োজন অনুভব করতে থাকেন, যেমন শিশু ও বয়স্কদের জন্য আলাদা ফ্লোর, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের জন্য একটি বিশেষ দল ইত্যাদি।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এক শিশুর সঙ্গে ঝুমা।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মিরপুর ১১ নম্বরের মেট্রো স্টেশনের কাছে ৩৫ হাজার স্কয়ার ফুটের ১০ তলা দৈর্ঘ্যের একটি পুরো ভবন নিয়ে নেন। মানুষ যে তার স্বপ্নের সমান বড়, তা আবারও প্রমাণিত হলো। ১০০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট থেকে এখন ৩৫ হাজার বর্গফুটের জায়গা নিয়ে কাজ করছেন ঝুমা।

স্টাফ সংখ্যাও ১০০ ছাড়িয়েছে। স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, বিহেভিয়ার থেরাপি, এবং ফিজিওথেরাপির জন্য আলাদা আলাদা তলা বরাদ্দ করা হয়েছে। অবসর সময় ঝুমা রিসেপশনে গিয়ে বসেন, যেন অভিভাবকেরা সহজেই তাকে খুঁজে পান। ভবনে ঢোকার মুখে বেশ খোলামেলা জায়গা রাখা হয়েছে।

ঝুমা বলছিলেন, 'চেয়েছিলাম এমন একটা পরিবেশ হোক যা কিছুটা হলেও স্বস্তি দেয়। ক্লায়েন্ট যেন দোরগোড়ায় এসে অন্তত ফিরে না যান, এটুকু চেয়েছি।'

আকবর সাহেবের স্বাক্ষর

এ কাজ করতে এসে অনেক কিছু পেয়েছেন যার তুলনা চলে না। আকবর হোসেন সাহেবের ঘটনাটাই বলা যাক। তিনি অবসরে যাওয়ার কিছু আগে স্ট্রোক করেন এবং স্বাক্ষর দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। অথচ ব্যাংকে তার বেশ কিছু টাকা জমা পড়ে আছে। স্বাক্ষর দেওয়া একটি জটিল প্রক্রিয়া, এটি সাধারণ অক্ষরও নয়। 

স্ট্রোক করার আগে তিনি স্বাক্ষর দিতেন ডান হাতে, কিন্তু ডান হাত যেহেতু নাড়তে পারছেন না, তাই ঝুমা তার বাঁ হাত সক্রিয় করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যান। একসময় তাকে বাঁহাতি করার চেষ্টা সফল হলো। স্বাক্ষর বড় করে প্রিন্ট নিয়ে তার ওপর দিয়ে সহস্রবার হাত ঘোরানোর ফলে তিনি অনেকটাই কাছাকাছি চলে এলেন। এর জন্য অবশ্য তার স্ত্রীর অবদানকেও বড় কৃতিত্ব দেন ঝুমা।

ঝুমাকে জিজ্ঞেস করলাম, থেরাপিউটিক চিকিৎসা কি অনেক ব্যয়বহুল? ঝুমা বললেন, 'আমরা ভর্তুকি দেওয়ার পক্ষে। তবে ততটা নয়, যতটা হলে মানুষ সস্তা ভাবে এবং আগ্রহ হারায়। কিছু একটা টোকেন মানি নিলে মানুষ আন্তরিকও থাকে।'

মানুষের কষ্ট ঝুমাকে অনেক কষ্ট দেয়। তিনি দেখেছেন, সন্তানের জন্য মা কষ্ট পাচ্ছে, স্বামীর জন্য স্ত্রী, পিতার জন্য পুত্র। কিছু একটা না বোঝাতে পারার কষ্ট কতটা তা ভুক্তভোগী এবং তার নিকটজনই জানেন। অঢেল খাবার আশপাশে, অথচ বাবাকে খাওয়াতে পারছেন না—সন্তান ভেতরে গুমরে মরছে কেবল। এমন একটা পৃথিবীতে দু'চারজনকে কথা ফিরিয়ে দেওয়ার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারেন না জান্নাতুল ফেরদৌস ঝুমা। যদিও প্রতিদিন দুটি ইনসুলিন নিতে হয়, কিন্তু অফিসে আসতে দেরি করেন না।

তার দেরি হলে যে আরও অনেকের দেরি হয়ে যায়।


ছবি সৌজন্য: সিএস কেয়ার

Related Topics

টপ নিউজ

স্পিচ থেরাপি / থেরাপি / স্ট্রোক / প্যারালাইজড / প্যারালাইসিস / সেবা / বাকশক্তি

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ড্যাপ সংশোধন: ঢাকার কিছু এলাকায় ভবন নির্মাণে ফ্লোর এরিয়া রেশিও দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে
  • প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে টাইফয়েডের টিকা পাবে ৫ কোটি শিশু, কার্যক্রম শুরু সেপ্টেম্বরে
  • “স্ত্রীকে মেরে ফেলছি, আমাকে নিয়ে যান”: হত্যার পর ৯৯৯-এ স্বামীর ফোন
  • সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে বিপর্যস্ত ব্যাংক খাতের রোগ নিরাময় করছে
  • গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার
  • মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বিরল মৃত্তিকা উত্তোলন ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যাচ্ছে চীনে

Related News

  • আর চুপ থাকার মতো পরিবেশ-পরিস্থিতি নেই: ঢাকা দক্ষিণ সিটি নিয়ে উপদেষ্টা আসিফ
  • বিভিন্ন সংকটে গত ৬ বছরে ৬৭ হাজার নারী অভিবাসী দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন: ব্র্যাক
  • সরকারি হাসপাতালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সেবা দেওয়ার সুপারিশ
  • কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কোড অব কন্ডাক্ট জারি: অনুমোদন ছাড়া সেবাগ্রহীতার থেকে উপহার নেওয়া যাবে না
  • বিভিন্ন ফরম ও সেবার মূল্য বাড়াল ইপিবি

Most Read

1
বাংলাদেশ

ড্যাপ সংশোধন: ঢাকার কিছু এলাকায় ভবন নির্মাণে ফ্লোর এরিয়া রেশিও দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে

2
বাংলাদেশ

প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে টাইফয়েডের টিকা পাবে ৫ কোটি শিশু, কার্যক্রম শুরু সেপ্টেম্বরে

3
বাংলাদেশ

“স্ত্রীকে মেরে ফেলছি, আমাকে নিয়ে যান”: হত্যার পর ৯৯৯-এ স্বামীর ফোন

4
অর্থনীতি

সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে বিপর্যস্ত ব্যাংক খাতের রোগ নিরাময় করছে

5
বাংলাদেশ

গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার

6
আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বিরল মৃত্তিকা উত্তোলন ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যাচ্ছে চীনে

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net