সরকারি হাসপাতালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সেবা দেওয়ার সুপারিশ

স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা, বেসরকারি চিকিৎসার ওপর নির্ভরতা কমানো এবং জনগণের চিকিৎসা ব্যয় সাশ্রয় করতে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর আউটডোর, ফার্মেসি ও ডায়াগনস্টিক ল্যাব বিভাগে সেবা দেওয়ার সময়সীমা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য খাত বিষয়ক সংস্কার কমিশন। প্রস্তাবিত এই সময়সীমা সপ্তাহে পাঁচদিন কার্যকর থাকবে।
সম্প্রতি প্রকাশিত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত সময়সীমা চালু হলে কর্মজীবী মানুষ অফিস শেষ করেও চিকিৎসা নিতে পারবেন, ফলে তাদের ছুটি নেওয়ার প্রয়োজন কমবে। এতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভিড় ও অপেক্ষার সময় কমে আসবে এবং সরকারি স্বাস্থ্যসেবা আরও মানুষকেন্দ্রিক ও ব্যয়-কর্মক্ষম হয়ে উঠবে।
প্রতিবেদনে কেনিয়া ও তানজানিয়ার অভিজ্ঞতার উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, সেসব দেশে সরকারি সেবার সময় বাড়ানোর ফলে বেসরকারি চিকিৎসার ওপর নির্ভরতা কমেছে এবং বিদ্যমান অবকাঠামোর দক্ষ ব্যবহারে অগ্রগতি হয়েছে।
কমিশনের মতে, বাংলাদেশেও এই ব্যবস্থা চালু করা গেলে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমবে, স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে টেকসই বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হবে।
প্রতিবেদনে মহামারি, জলবায়ু দুর্যোগ ও অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দিতে একটি স্বতন্ত্র 'ইমারজেন্সি হেলথ কার্ড' চালুরও প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।
প্রেসক্রিপশন নিরীক্ষা ও জবাবদিহিতা
প্রতিবেদনে সব সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন নিরীক্ষা চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা চিহ্নিত করে চিকিৎসা মানোন্নয়ন ও অর্থ অপচয় রোধের ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
কমিশন বলছে, নিরীক্ষার ফল চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন, অর্থায়ন, পেমেন্ট ও ওষুধ ক্রয় সিদ্ধান্তে ব্যবহৃত হতে হবে, যাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।
এটি অবিলম্বে চালু করার পক্ষে মত দিয়ে কমিশন বলেছে, এতে ওষুধ ও ডায়াগনস্টিক ব্যবহারে যুক্তিসঙ্গততা আসবে এবং একটি জবাবদিহিমূলক, ব্যয়-কর্মক্ষম চিকিৎসা সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। পাশাপাশি প্রতি রোগীর জন্য গড়ে ১০ মিনিটের পরামর্শ সময় নির্ধারণ এবং সাপ্তাহিক প্রেসক্রিপশন যাচাই ব্যবস্থা চালুর সুপারিশও করা হয়েছে।
দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের প্রায় ২০ শতাংশ জনগণ যারা অতিদরিদ্র, তারা যেন সব সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পান—এ লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
জরুরি বিভাগ ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সুপারিশ
সব সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি সরকারি হাসপাতালের জরুরি সেবা, রক্ত সঞ্চালন, ল্যাব এবং ফার্মেসি বিভাগ ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার সুপারিশ করেছে কমিশন।
অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ: প্রাপ্যতা ও মূল্য সহনীয় করার প্রস্তাব
অত্যাবশ্যকীয় ওষুধকে মৌলিক স্বাস্থ্য অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করে কমিশন বলেছে, এসব ওষুধ প্রাথমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে বা ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সরকারি ওষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানসমূহকে আধুনিকায়নের সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া, সব সরকারি হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টা খোলা ফার্মেসি চালু করতে জাতীয় ফার্মেসি নেটওয়ার্ক গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে অ্যান্টি-ক্যান্সার, অ্যান্টি-ডায়াবেটিক, অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ এবং অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের ওপর থেকে ভ্যাট ও শুল্ক মওকুফের পাশাপাশি স্বাস্থ্য-সম্পূরক, ভিটামিন, মিনারেলস ও বিলাসবহুল ওষুধের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর সুপারিশও করা হয়েছে।