ভোলা দাসের মাটির ঘরটার উঁচু তাকে যত্নে রাখা ঢাকে তার হাত পড়লো অনেকদিন পর। না, ঠান্ডায় ঢাকের কলকব্জা অকেজো হয়নি। তা হওয়ারও কথা না। ঢাকের যত্নের তো কমতি পড়ে না। এখন শুধু দুর্গাপূজা এলেই ঢাকের খোঁজ পড়ে। তাই আশ্বিন মাসে ভোলা ঢাকির মুখে হাসি ফোটে। শিউলির গন্ধ ফিরিয়ে দেয় পুরোদস্তুর ব্যস্ত দিনের ছবি। ঢাকের তালে তালে নেচে ওঠে এই প্রবীণ ঢাকির কচি কলাপাতার মতন নতুন মনটা।
আশ্বিনের গা শিরশিরে হালকা শীতের ভোরবেলা। নিত্যদিনের মতন রোদ ওঠবার আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়লেন ভোলা দাস। উঠোনে পা দিতে কুয়াশা মেশানো একটা রহস্যের মধ্যে চোখ পড়লো শিউলিতলায়। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে শিউলিতলা। শিউলি ফুলের মিষ্টি গন্ধ জানান দিল সময় সমাগত। মনে পড়লো সাধের ঢাকটার কথা, যে খানা তার ৭০ বছরের সঙ্গী।
ভোলা দাসের মাটির ঘরটার উঁচু তাকে যত্নে রাখা ঢাকে তার হাত পড়লো অনেকদিন পর। না, ঠান্ডায় ঢাকের কলকব্জা অকেজো হয়নি। তা হওয়ারও কথা না। ঢাকের যত্নের তো কমতি পড়ে না। এখন শুধু দুর্গাপূজা এলেই ঢাকের খোঁজ পড়ে। তাই আশ্বিন মাসে ভোলা ঢাকির মুখে হাসি ফোটে। শিউলির গন্ধ ফিরিয়ে দেয় পুরোদস্তুর ব্যস্ত দিনের ছবি। ঢাকের তালে তালে নেচে ওঠে এই প্রবীণ ঢাকির কচি কলাপাতার মতন নতুন মনটা।
এখন ৮৪ বছর বয়স তার। সবাই ডাকে ভোলা ঢাকি। অথচ ঢাক বাদ্যির সেইদিন আর নেই। তবু নামটা, পেশাটা থেকে গেছে। ভোলা ঢাকিও আছেন বটে। ছেলেবেলায় বাবার সাথে ঢাকঢোল বাজানোর কাজ শুরু করেছিলেন ভোলা। তখন একেবারে কম বয়স, তেরো কিংবা চৌদ্দ। এর বেশি কিছুতেই হবে না। ছোটোবেলা থেকেই ঢাকের তালের মধ্যে অন্যরকম একটা আনন্দ খুঁজে পেতেন তিনি। ঢাক বাজলেই বিয়ে, অন্নপ্রাশন কিংবা পূজা... এই আনন্দের বাজনা নিয়েই ঢাক আর ঢাকিরা হাজির হতেন। পাড়ার কচিকাচারা ঢাকের আওয়াজ শুনলেই জমাত ভিড়৷ বাড়ির ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের আমোদের সীমা নেই। কারণ ঢাক বাজলেই পড়াশুনো থেকে কদিনের জন্যে ছুটি, ঢাক বাজলেই নতুন জামা।
ঢাক যেন সব পেয়েছির দেশের সেই ইচ্ছে বুড়ো। ঢাকে কাঠি পড়লেই যা চাওয়া যায় তাই মিলে যায়। বাড়ির সবথেকে রাগী ঠাকুমা, পিসিমার দলেরও মন নরম হয় ঢাকের বোলে। আহা, কীসব দিন! সেইসব দিনে ঢাকিদের বায়নাও ছিল তেমনি৷ অন্তত দুমাস আগে বায়না দিয়ে রাখতে হতো। নইলে পাওয়া মুশকিল। তা হবে নাই বা কেন? এখন যেমন বিয়েবাড়ি মানেই সাউন্ড বক্স, গানবাজনা, ডিজে— তখন ছিল ঢাক-বাঁশি-সানাইয়ের দিন।
তবে ঢাক যে শুধু আনন্দের বাজনা তা কিন্তু নয়। ঢাকের আনন্দময় শব্দের পেছনে লুকিয়ে আছে সতীদাহ প্রথার নির্মম ইতিহাস। আছে নাবালিকা অসহায় বিধবার বাঁচতে চাওয়ার আকুল আর্তনাদ চাপা দেওয়ার চেষ্টা। আশ্চর্য হচ্ছেন? আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি বটে।
প্রাচীন ভারতবর্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এক ধরনের কুসংস্কারাচ্ছন্ন লৌকিক প্রথা চালু ছিল, যেখানে স্বামীর চিতায় স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হতো এবং এই প্রথার সপক্ষে রটিয়ে দেওয়া হয়েছিল, স্বামীর সাথে স্ত্রীর সহমরণ মানে নিশ্চিত স্বর্গলাভ। অথচ ভেতরকার উদ্দেশ্য ছিল বিধবার সম্পত্তি ও স্ত্রীধন আত্মসাৎ। যতই পরলোকে স্বর্গপ্রাপ্তির প্রলোভন দেখানো হোক না কেন, খুব কম নারীই নিজ ইচ্ছায় গনগনে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়তে সম্মতি জানাতেন। আর যখনই অসম্মতি, তখনই শুরু হতো জোরজবরদস্তি। যারা সহমরণে যেতে চাইতেন না, তাদের প্রতি চলতো জোর-জুলুম। জীবিত অবস্থায় চিতায় ওঠার আগে এই সমস্ত নারীর কান্না আর আর্তচিৎকারে সৃষ্টি হতো এক ধরনের গোলমেলে পরিস্থিতি। এই হইহট্টগোল ধামাচাপা দেওয়ার জন্যেই সতীদাহের সময় আয়োজন করা হতো ঢাকের মতন বাদ্যযন্ত্রের। উৎসবের আওয়াজের আড়ালে এমনিভাবে চলেছে মধ্যযুগীয় বর্বরতাও।
ঢাকা শহরের নামকরণ নিয়ে নানা ধরনের গল্প প্রচলিত আছে। এরমধ্যে একটি দল মনে করে, সুবাদার ইসলাম খাঁ এর আমলে 'ঢাকা' নামটি দেওয়া হয়েছিল। এবং নামকরণের পেছনে একখানা জনশ্রুতিও আছে। সম্রাট জাহাঙ্গীরের সুবাদার ইসলাম খাঁ জিনজিরা থেকে বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে ঢাকা আসবার পথে বিভিন্ন জায়গায় দেখতে পান, আশেপাশের অধিবাসীরা ঢাকঢোল পিটিয়ে উৎসব পালন করছেন। ইসলাম খাঁ পূর্বাঞ্চলের সংস্কৃতির সাথে তেমন পরিচিত ছিলেন না। তাই প্রথমে ঢাকের আওয়াজ শুনে বিস্মিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি নতুন রাজধানীর সীমানা নির্ধারণের জন্যে সম্রাট জাহাঙ্গীরের তিন কর্মকর্তাকে পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তর দিকে পাঠান।
নির্দেশনা ছিল এই যে, বুড়িগঙ্গাকে দক্ষিণে রেখে যতদূর অব্দি ঢাকের শব্দ শোনা না যায়, সেই সীমানায় হবে নতুন রাজধানী। এইজন্যই কেউ কেউ মনে করেন, ঢাকের আওয়াজের ওপর ভিত্তি করে জায়গা নির্ধারিত হয়েছে; তাই নতুন রাজধানীর নাম হয়েছে ঢাকা।
ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী/টিবিএস
ঢাক যেমন করে এলো
সংস্কৃত শব্দ ঢক্কা থেকে ঢাক শব্দটি এসেছে। প্রাচীনকালে যুদ্ধের সময় সৈন্যদের মনোবল অটুট রাখতে বাজানো হতো ঢাক। মহাভারতে উল্লেখিত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধেও ঢাক বাজানোর প্রমাণ মেলে। আবার হিংস্র পশুপাখির হাত থেকে বাঁচতে ঢাক ব্যবহার করা হতো। এমন কী, বলিদানের অনুষ্ঠানে বাজানো হতো ঢাক। ঢাকের নানা ধরন-ধারণও ছিল। জয় ঢাক থেকে শুরু করে বাওতি ঢাক, বৌ ঢাক, বীর ঢাক, মেঠো ঢাক ছিল প্রচলিত। শুধু যে নামের বাহার তা কিন্তু নয়, একেক ঢাকের বোল একেকরকম, বানানোর ও বাজানোর রীতিতেও আছে বিস্তর ফারাক।
মনে করা হয়ে থাকে, ঢাকের ইতিহাস প্রায় তিন হাজার বছরের পুরোনো। ঢাকের উৎপত্তিস্থল হিসেবে মনে করা হয় মূলত বাংলা ও আসামকে। পূর্ববঙ্গে জন্ম হলেও আস্তে আস্তে প্রাচীন ভারতবর্ষের নানান লৌকিক উৎসবে প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে এই ঢাক। পলাশী যুদ্ধে জয়লাভের জন্য লর্ড ক্লাইভের সম্মানে শোভাবাজার রাজবাড়িতে রাজা নবকৃষ্ণ দেব আয়োজন করেছিলেন বিজয় উৎসবের। সেই উৎসবে ঢাক বাজিয়েছিলেন নদীয়ার ঢাকিরা।
আমাদের ছোটোবেলায় 'আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে ডাক, ঢোলঢোল ঝাঁঝর বাজে' ছড়াখানা ছিল বেশ জনপ্রিয়। মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া এই ছড়াতেও ঢাকের উল্লেখ বাঙালির নিত্যজীবনের সাথে ঢাকঢোলের নিবিড় সম্পর্ককে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। গ্রামবাংলার লাঠিখেলা, কবিগানসহ নানা ধরনের আয়োজনে ঢাক ঢোল কাঁসা থাকবেই। শুধু কী তাই? যাত্রাপালাতেও বিভিন্ন দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতে ঢাক বাজানো হতো৷ ঢাকঢোল পেটানো, নিজের ঢাক নিজে পেটানোর মতন নানা প্রচলিত প্রবাদে বাঙালি সংস্কৃতিতে ঢাকের সম্পৃক্ততা ঠিক কতখানি তা আন্দাজ করা যায়।
ঐতিহ্যবাহী সেই ঢাকের প্রচলন রয়ে গেছে আজও। তবে কমেছে ঢাক আর ঢাকির সংখ্যা। পেশাদার ঢাকিদের পেটের প্রয়োজনে নিতে হয়েছে অন্য পেশা। এমনই একজন ভোলা ঢাকি, যাকে সাতক্ষীরা অঞ্চলের সবচেয়ে পুরোনো ঢাকি বলা চলে। তিনি তার ৭০ বছরের ঢাকি জীবনে বিভিন্ন বাড়িতে বায়না পেয়েছেন। ভোলা দাসের বাবাও ছিলেন একজন পেশাদার ঢাকি। ছোটোবেলায় বাবার সাথে ঢাক বাজাতে যেতেন স্থানীয় জমিদার বাড়িতে। তখনও বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি।
কাগজে কলমে ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ ঘটলেও ব্রিটিশের তৈরি এই সামন্ত প্রভুরা তখনও বাংলাদেশের (পূর্ব বাংলা) আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। জমিদারবাড়ির উৎসব মানে জাঁকজমক থাকা চাই, বাজনা বাদ্যি থাকা চাই। বায়নার টাকা তো আছেই, পাশাপাশি যে-কদিন ঢাক বাজানোর চুক্তি, সে-কদিন থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত। খই, নাড়ু, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি, ঘিয়ে ভাজা লুচি, আরো কত কী খাবার!
সেই আমলে অত্যাচারী জমিদার যেমন ছিলেন, তেমনি শিল্প সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক জমিদারও ছিলেন। এসব শিল্প সমঝদার জমিদার শিল্পীর মর্যাদা দিতে জানতেন। তাই শিল্পী সে যেই হোক, দিতেন যোগ্য সম্মানী। সমাদর তো আছেই। এসব গল্প করতে করতে ভোলা দাসের চোখ ঝলমল করে উঠছিল। ভোলা দাসের সাথে দেখা হলো সাতক্ষীরা মায়ের বাড়ি মন্দিরের চাতালে। সেখানে নিজের দল নিয়ে ঢাক বাজাচ্ছিলেন তিনি। এবারের দুর্গা পূজায় ৩০ হাজার টাকা বায়নায় ঢাক বাজাতে এসেছেন। যদিও ঢাক বাজানো এখন তার মৌসুমি পেশা, তবু ঢাকে কাঠি পড়লেই ফিরে পান নিজেকে, নিজের সত্তাকে। সেসব এত কাগুজে ভাষায় বলতে পারলেন না অবশ্য। বুঝিয়ে দিলেন হাবেভাবে, আর কথা বলার ভঙ্গিতে।
ভোলা দাস একা নন, এমন আরো কিছু ঢাকি দলের সন্ধান মিললো বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে। নানা ধরনের বই কিংবা সিনেমায় ঢাক আর ঢাকিকে যত ঐশ্বর্যমণ্ডিত করে দেখানো হয়, এদের অবস্থা ঠিক তেমন নয়। খুবই সাধারণ এই ঢাকিরা। তবে এই ঢাকিদের বাদ্যি আছে, বাজনা আছে, হাতের এলেম আছে। মনের মধ্যে ঢাকের তাল আছে। আগে উৎসব এলেই ঢাকের জামা বদলাতো, উৎসবের রঙে সেজে উঠতো ঢাক। পূজা এলেই ঢাকের সাথে কাশফুল জুড়ে ঢাকের নয়া শারদ সাজ। এখন ঢাকেরও নেই সেই সাজপোশাকের বালাই। ইচ্ছে থাকলেও উপায় তো নেই। ঢাক সাজিয়ে তোলবার মতন টাকাও থাকা চাই।
সাতক্ষীরার বড়ো বাজার পূজা মণ্ডপে ঢাকি পরিতোষ দাসকে দেখা গেল ঢাকসমেত। ঢাক তখন বোল তুলছে কেবল কেবল। ঢাকের শব্দে বড় বাজারের স্থানীয় মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছোচ্ছে শারদ উৎসবের। চারজনের এই দলের দলপতি পরিতোষ দাস। ঢাকের বাজনা শুনে শুনে যার সিংহভাগ ঢাক বাজানো শেখা। পাশাপাশি টুকটাক পাড়াতুতো দাদাদের থেকে তালিম নেওয়া। বাজাতে বাজাতে একটা সময় হাত খোলে। তবে শেখবার আগ্রহ ছিল অদম্য। পারিবারিকভাবে ঢাকি পরিবারের ছেলে না হয়েও ঢাকি পেশায় এসেছিলেন স্রেফ ভালোবাসার টানে।
ধুলিহর গ্রামের এই ঢাকি পেশাগতভাবে ঢাকে বোল তোলেন তেরো বছর ধরে। পাশাপাশি ঝুড়ি বোনবার কাজও অবশ্য করতে হয়। সারা বছর ঢাকের কাজ জোটে না। শুধু মনের খোরাক যোগালে আবার অনাহার। পরিবারে ১০ জন সদস্য। তাই পেট চালানোর অন্য উপায় বের করতে হয়েছে পরিতোষের মতন অসংখ্য ঢাকিদেরকে। কেউ বা খেতখামারে মজুরের কাজ করেন, কেউ রিকশা–ভ্যান চালান, কেউ জুতো সেলাই করেন। ঢাকে কাঠি পড়লে একটা মৌসুমি রোজগার যদিও বা হয়, তাতে মন যত ভরে পেট ঠিক ততটা ভরে না। ঢাক বাজানোর কাজ এখন অনেকটা শৌখিন পেশার মতোই। এতে আর যাইহোক, পরিবারের সারা বছরের অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান হয় না। তারপর অসুখ-বিসুখ তো আছেই।
পরিতোষ দাস জানালেন, এখনো অব্দি দূর্গাপুজার পাশাপাশি বিয়েবাড়িগুলোতেও ডাক পান তিনি। আগে অন্নপ্রাশনেও বায়না হতো। এখন আর হয় না। ৮ জনের ব্যান্ড পার্টির দল আছে পরিতোষের। বিয়েবাড়ির জন্যে ব্যান্ডপার্টির এই বিশেষ দল। এছাড়াও আছে ঢোল পার্টি। ঢোল পার্টির জন্যে ৪ জনের দল। যাদের বাজেট কম, তারা মূলত ঢোল পার্টি নেয়।
তবে সেই যে বরযাত্রী আর বরের গাড়ির সাথে নানা সাজপোশাক ধরে ব্যান্ডপার্টির দলেরা যেতেন কনের বাড়িতে, বাজনায় জানান দিতেন বর এসেছে- সেই রেওয়াজ আর নেই। সেইসব দিন হারিয়েছে। তাই কমেছে রোজগারও।
বাংলাদেশে সারাবছর ঢাকিরা অবহেলিত, অনাদৃত হয়ে পড়ে থাকেন। থাকেন আলোচনার বাইরে। শারদ উৎসব এলে তখন তাদের ডাক পড়ে। সে প্রয়োজন উৎসব শেষে ফুরিয়েও যায়। বিসর্জনের সাথে সাথে বিদায় ঘণ্টা বেজে যায় ঢাকিদের। আবার আরেকটা বছরের অপেক্ষা। তবু অনিশ্চয়তা.. কারণ লাইটিং আর সাউন্ডবক্সের জন্যে বাজেট অনেকটা থাকলেও ঢাকের বেলায় আর পয়সা থাকে না।
শিল্পীর সম্মান আমরা দিতে পারি না। আলোর রোশনাইয়ে অস্পষ্ট হতে থাকে ঢাকিদের বায়না। উৎসবের বাইরে র্যালি, শোভাযাত্রায় ঢাকের ব্যবহার এখনো ঢিমেতালে টিকে আছে বটে, তবে উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। এসবের বাইরে গিয়ে ঢাকের ব্যবহার এখন পহেলা বৈশাখের শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে এঁকে বছরে একটা দিন সেই জামা গায়ে চাপিয়ে ঘোরবার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
শহর থেকে শিউলি গাছ কমছে। হারাচ্ছে শেফালির গন্ধ। কাশফুলের শুভ্র ঝোপ আগের মতো দেখা যায় না। ভোরবেলা শীত শিরশিরে ভাবটা থাকলেও সেই ঘন কুয়াশাও আর নেই। যে শিউলির গন্ধে ভোলা দাসের মতন ঢাকিরা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবার লড়াই করে চলেছেন প্রতিনিয়ত, সে গন্ধ পুরোপুরি না হারালেও হারাতে শুরু করেছে।
অদূর ভবিষ্যতে হয়তো ঢাক থাকবে না আর থাকবে না ঢাকির মতন পেশাও। ঢ্যাং কুরাকুর বাদ্যি বাজবে না উৎসবে। তবু ছেলেবেলার গল্পে, মানুষের মুখে মুখে, সাহিত্য আর শেষ অব্দি বাঙালির অন্তরে ঢাক রয়ে যাবে অনন্ত-যৌবনা হয়ে।
While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.