বিয়ের বাদ্যআলা বাজানদাররা কই হারালো?

"ঢাকাইয়া বিয়ে হচ্ছে আর ব্যান্ড পার্টি ছাড়াই নতুন বর 'এন্ট্রি' নেবে, এটা ভাবাই যায় না। আমি যতগুলো ঢাকাইয়া বিয়ে খেয়েছি, সবগুলোতে ব্যান্ড পার্টি ছিল। কী বাহারি রঙের পোশাক তাদের—লাল, নীল, বেগুনি, হলুদ! টুপিতে আবার রঙিন পালক! বাদ্যেরও অভাব নেই। কেউ ড্রামে তুলছেন দ্রিমদ্রিম ধ্বনি, কারও হাতে করতালের ঝমঝমানি, আবার কেউ বাজাচ্ছেন ট্রাম্পেটের 'পোঁ পোঁ' আওয়াজ।
বাজনা বাজাতে বাজাতেই একদল সারি বেঁধে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাদের উপস্থিতিতে পুরো রাস্তা যেন গমগম করছে। আশপাশের বাসাবাড়ির লোকজন বারান্দায় এসে জড়ো হচ্ছেন বর দেখার জন্য। ছুটে আসছে ছেলেপুলের দল, উঁকি দিচ্ছেন বউঝিরাও,"—কথাগুলো বলছিলেন সিবা আক্তার।
ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে তার বেড়ে ওঠা। চাকরির সুবাদে বিয়ের পর এখন থাকছেন চট্টগ্রামে। সেদিন চট্টগ্রামের এক বিয়েতে ব্যান্ড পার্টির বাজনা শুনে তার ঢাকাইয়া বিয়ের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল। সেসব স্মৃতির কথাই তিনি শেয়ার করছিলেন।
শুধু ঢাকায় নয়, গ্রামে-শহরে, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বিয়েতেই একসময় ব্যান্ড পার্টি থাকতো। এমনকি মুসলমানি (সুন্নতে খৎনা) বা কান ফোড়ানোর আয়োজনেও ব্যান্ড পার্টির ডাক পড়ত। বিয়ে বা খৎনা—ঢোল, বাজনা আর কলের গান ছাড়া কল্পনাই করা যেত না। এসব আয়োজনে জমজমাট পরিবেশ তৈরি করত—
'হলুদ বাটো, মেন্দি বাটো, বাটো ফুলের মৌ,'
'মালকা বানুর দেশেরে, বিয়ের বাদ্যআলা বাজেরে…'
হিন্দি-বাংলা নানান সুর তোলা হতো সেসব ব্যান্ডের তালে।
চট্টগ্রামের গবেষক হারুন রশীদ বলেন, "ষাট-সত্তর দশক কিংবা তারও আগে প্রতিটি অভিজাত পরিবারের বিয়েতে ব্যান্ড পার্টি থাকতো। নব্বইয়ের দশক থেকে এটা প্রায় উঠে গেছে। আজকাল খুব সৌখিন কেউ মাঝে মাঝে এই পার্টি ভাড়া করলেও, সেটা এক শতাংশও হবে না।"
ব্যান্ড পার্টির ইতিহাস বেশ পুরনো
ধারণা করা হয়, মোগল সাম্রাজ্যের অনেক আগে থেকেই ধনী পরিবারের বিয়েতে সানাই ব্যবহার করা হতো। বিয়েবাড়িতে সানাইয়ের ব্যবহার ছিল রেওয়াজের মতো। শুধু হিন্দু-মুসলিম নয়, সানাই বাদকের উপস্থিতি ছিল সব ধর্মাবলম্বীর বিয়ের অনুষ্ঠানেই। তাদের এত চাহিদা ছিল যে, অনুষ্ঠানের কয়েক মাস আগেই বুকিং দিতে হতো।
নীহাররঞ্জন রায়ের 'বাঙ্গালীর ইতিহাস' (আদিপর্ব) থেকে জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলে বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকে কিছু যুবক কলকাতায় আসেন ভাগ্যান্বেষণে। উদ্দেশ্য ছিল শহরে বাজনা বাজিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা। এই বাদকদের বলা হতো বাইন। সামন্ত জমিদার বা রাজার ধর্মানুষ্ঠান ও আনন্দানুষ্ঠানে স্থায়ীভাবে যারা বাজনা বাজাতেন, তাদেরই বাইন বলা হতো।

এই বাদক দলকে কাজে লাগিয়ে রাজা বা সামন্তপ্রভুরা তাদের বংশের ঐতিহ্য, আভিজাত্য, অর্থ-ঐশ্বর্য ও কৌলিন্যের প্রকাশ ঘটাতেন। বাদকরা বংশ পরম্পরায় এই পেশা গ্রহণ করতেন। বিনিময়ে তারা জমিদারদের কাছ থেকে ভরণপোষণের জন্য নিষ্কর জমি পেতেন এবং শাসকদের কাছ থেকে পুরস্কৃতও হতেন। ফলে অল্প সময়েই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই পেশা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই পেশার কদর আরও বাড়ে। বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকে ব্যান্ডের বাজনাদাররা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। পরে বাঙালিরাও এই পেশায় যুক্ত হতে থাকেন, যা ধীরে ধীরে ঢাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে। নবাবি আমলেও নবাবদের নিজস্ব বাদক দল ছিল।
তবে ঢাকার আদি বাদক দলের ইতিহাস আরও পুরোনো। 'ওল্ড ঢাকা' ফেসবুক পেজের তথ্যমতে, বাদশাহ জাহাঙ্গীরের আমলে ঢাকার আলুবাজারে প্রথম বাদক দলের আগমন ঘটে। তখন এ স্থানটি পরিচিত ছিল 'আল্লুর বাজার' নামে। বাদক দলের প্রয়োজন হলে আল্লুর বাজারেই যেতে হতো। ঢাকার আদি বাদক দল তারাই।
বর্তমানে আলুবাজারে টিকে থাকা ব্যান্ড পার্টির সংখ্যা মাত্র তিনটি। ক'দিন আগেও এই সংখ্যা ছিল চারটি, কিন্তু সম্প্রতি নিউ ন্যাশনাল ব্যান্ড পার্টি উঠে যাওয়ায় এখন অবশিষ্ট রয়েছে বাংলাদেশ ব্যান্ড পার্টি, ঢাকা ব্যান্ড পার্টি ও ন্যাশনাল ব্যান্ড পার্টি। বছর পনেরো আগেও এই সংখ্যা ছিল দ্বিগুণ।
এই তিনটি ব্যান্ড পার্টির শেকড় এক জায়গাতেই। এখানকার সবচেয়ে পুরনো দল ঢাকা ব্যান্ড পার্টি, যা স্বাধীনতার আগে পূর্ব পাকিস্তান ব্যান্ড পার্টি নামে পরিচিত ছিল। পরে এর নাম পরিবর্তিত হয়ে মেলোডি ব্যান্ড পার্টি হয় এবং সবশেষে এটি ঢাকা ব্যান্ড পার্টি নামে পরিচিতি পায়।
এই ব্যান্ড পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ খাঁ। বর্তমানে এখানকার অন্যান্য দলগুলো চালাচ্ছেন তার ছেলে ও নাতিরা। ঢাকা ব্যান্ড পার্টির বর্তমান ম্যানেজার মোহাম্মদ পারভেজ জানান, তারাই মূলত বংশ পরম্পরায় এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

মোহাম্মদ খাঁর ভাইয়ের হাত ধরে শুরু হয় বাংলাদেশ ব্যান্ড পার্টি, যা মূলত তিন পুরুষ ধরে চলে আসছে। ব্যান্ডটির কর্ণধার মো. ইব্রাহীমের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানা যায়, তার দাদার হাত ধরে এর যাত্রা শুরু হয় এবং বাবার আমলে এটি জনপ্রিয়তা পায়।
"হয়তো আমার হাতেই এটি শেষ হয়ে যাবে,"—বলছিলেন ইব্রাহীম। কারণ, পুরনো শিল্পীরাই এখনো এই ব্যবসা ধরে রেখেছেন, নতুনেরা কেউ আর এই পেশায় আসতে চান না।
নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম দেওভোগের চাচার দোকান মোড়ে একসময় ১০-১২টি ব্যান্ড পার্টির দোকান ছিল। এখন টিকে আছে মাত্র ছয়-সাতটি।
সেখানকার প্রাচীন দল বাংলাদেশ ব্যান্ড পার্টির কর্ণধার হারুন চন্দ্র দাসের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানা যায়, ৪০ বছর আগে বাবা যোগেশ চন্দ্র দাসের হাত ধরে তিনি এই ব্যবসায় আসেন। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে থাকলেও কাউকেই আনেননি এই পৈতৃক ব্যবসায়।
"দিন দিন অবস্থা খারাপ হচ্ছে,"—আক্ষেপের সুরে বলেন হারুন।
তার দলের বাদকরা এখন কেউ হোসিয়ারি শ্রমিক, কেউ রিকশাচালক, কেউ মুচির কাজ করেন। কোনো অনুষ্ঠানের বায়না হলে তখন তাদের খবর দেওয়া হয়। হারুন এখনো তার দলের মাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি খুব একটা আশাবাদী নন।
'প্রাচ্যের রানী' চট্টগ্রামে বিয়েশাদির অনুষ্ঠান ধুমধামে পালিত হলেও ব্যান্ড পার্টির মানুষেরা এখন কাস্টমারের আশায় দিন কাটান।

শহরের পুরোনো অঞ্চলগুলোর মধ্যে পাথরঘাটা অন্যতম। এখানেই সারিসারি দাঁড়িয়ে আছে ব্যান্ড পার্টির দোকান—সংখ্যায় প্রায় বিশটির বেশি। এছাড়া, লালখান বাজারেও টিকে আছে ১০-১২টি ব্যান্ড পার্টি, তবে অনেকটাই নিভু নিভু অবস্থায়।
কাস্টমার নেই, তবু প্রতিদিন তীর্থের কাকের মতো দোকান খুলে বসে থাকেন বাদকরা। কাজ বলতে—বাজনাগুলো পরিষ্কার করা, ধুয়ে-মুছে রাখা আর অপেক্ষা করা, এইটুকুই।
পাথরঘাটার দ্য লায়ন ব্যান্ড পার্টির মালিক মো. শহীদের সঙ্গে কথা হয়। বাবার হাত ধরেই তিনি এ পেশায় আসেন।
"পড়ালেখায় মনোযোগ ছিল না, তাই একটু বড় হতেই বাবার সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে শুরু করি,"—বলছিলেন শহীদ।
ছোট ছিলেন, তাই হাতেখড়ি হয়েছিল ঝুনঝুনি দিয়ে। আর এখন? যে কোনো অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব তিনিই দেন। ব্যান্ডের ভাষায়, তিনি হলেন 'মাস্টার'।
বাংলা পঞ্জিকাতেই ভরসা
শহীদের দলে নির্দিষ্ট কোনো সদস্য নেই। অনুষ্ঠান বুঝে তিনি দল তৈরি করেন—কখনো পাঁচজন, আবার কখনো পঞ্চাশজন পর্যন্ত।
এখন আর কেউ শুধু এই কাজ করেই জীবিকা চালাতে পারেন না। দলটির বেশিরভাগ সদস্যই পার্ট-টাইম বাদক; কেউ রিকশা চালান, কেউ সিএনজি চালক, কেউ দোকানের স্টাফ হিসেবে কাজ করেন। কোনো অর্ডার এলে অনুষ্ঠান একদিন আগে থেকেই তারা রিহার্সাল শুরু করেন। কাজ শেষ হলে আবার ফিরে যান নিজেদের মূল পেশায়।
তবে শহীদ অন্য কোথাও যাননি।
"বাদ্য বাজানোর আনন্দ আমি আর কোথাও পাই না,"—বলছিলেন তিনি।

আগের মতো এখন বিয়েতে ডাক পড়ে না। মূলত অগ্রহায়ণ, মাঘ, ফাল্গুন—এই তিন মাসই ব্যান্ডের মৌসুম। ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কিছুটা কাজ থাকে, এরপর পুরো বছর প্রায় বসে থাকতে হয়।
এই চার মাসে বিয়ে, ওরশ, নির্বাচন, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য কিছু কাজ আসে।
"গত ডিসেম্বরেই ছয়টা কাজ পেয়েছি। জানুয়ারিতে ওরশের জন্য কয়েকটা জেলায় যেতে হয়েছে। বিয়ে আর ওরশ মিলিয়ে ১০-১৫টা কাজ পেয়েছি,"—জানান শহীদ।
এরপরের আট মাসে হয়তো মোট ২-৩টা অর্ডার আসে। শারদীয় দুর্গাপূজার সময়ও কিছু ডাক পড়ে।
প্রতিটি অনুষ্ঠানে তারা ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক নেন। তবে ধনী পরিবারের বিয়েতে কিছু বকশিশ বেশি পাওয়া যায়। তিথি ও লগ্নের ওপর নির্ভর করে পারিশ্রমিকের ওঠানামা করে। পূজা ও বিয়ে একই সময়ে পড়লে মজুরি কিছুটা বেশি হয়।
এ কারণেই ব্যান্ডের লোকেরা ইংরেজি ক্যালেন্ডারের বদলে বাংলা পঞ্জিকা অনুসরণ করেন।
মুসলিম বিয়ের চেয়ে হিন্দু বিয়েতেই লাভ বেশি
পাথরঘাটায় বাংলাদেশ ব্যান্ড পার্টি চালান মো. আরিফ। একই নামে চট্টগ্রাম, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও বরিশালেও ব্যান্ড পার্টি ছিল।
কেন সবাই এই নাম রাখেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, "দেশ স্বাধীন হওয়ার পরই এই ব্যান্ড পার্টির যাত্রা শুরু। তাই অনেকেই 'বাংলাদেশ' শব্দটি নামের সঙ্গে রেখেছেন।"
মূলত, তার দাদার হাত ধরে শুরু হয় এই ব্যবসা। আরিফ নিজেও নিউ মার্কেটের এক দোকানে স্টাফ হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি দাদার রেখে যাওয়া ব্যান্ড পার্টির ব্যবসাও দেখেন।
নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি মোট ৯টি কাজ পেয়েছেন। এরমধ্যে আনোয়ারার এক ওরশেই পেয়েছেন ৪০ হাজার টাকা। সেখানে ১১ জনের দল নিয়ে গিয়েছিলেন।
তবে মুসলিম বিয়েতে তেমন লাভ হয় না, বরং হিন্দু বিয়েতেই বেশি ভাড়া নেওয়া যায়, কারণ লগ্নের বিষয় থাকে।
"শুধু বাঁশির জন্যই ১০-১২ হাজার টাকা পাওয়া যায়,"—জানান আরিফ।
কারণ, বাঁশি সবাই বাজাতে পারে না, তাই চাহিদা বেশি।
এছাড়া, বিগ ড্রাম বাজানোও কঠিন কাজ। যারা এ ক্ষেত্রে সিনিয়র হয়ে যান, তারাই এই দায়িত্বে থাকেন।
তিনি আরও জানান, চিকন কালো ক্ল্যারিওনেট এবং থলের মতো ব্যাগপাইপ বাজানোর মতো শিল্পীও এখন আর নেই। যারা বাজাতে জানতেন, তাদের অনেকেই আর বেঁচে নেই।

ব্যান্ড পার্টির হয়ে আরিফ এখন পর্যন্ত নোয়াখালী, চাঁদপুর, রংপুর ও বরিশাল পর্যন্ত গিয়েছেন। তবে কুমিল্লা ও চট্টগ্রামেই এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি বলে জানান তিনি।
এখন ব্যান্ড পার্টির চাহিদা অনেক কমে গেছে। সেই সঙ্গে কমেছে কর্মঘণ্টাও।
আগে একেকটি বিয়েতে ব্যান্ড দলের সদস্যরা চিরযাত্রী হয়ে বাস, ট্রেন বা নৌকায় যাতায়াত করতেন। পুরো জার্নিতে মাঝেমাঝেই তুলতেন সুর। আশপাশের যাত্রীরাও কখনো কখনো এই আনন্দে শামিল হতেন।
কিন্তু এখন বিয়েগুলো ক্লাবে হয়ে যাওয়ায়, বাদ্য বাজানোর সময়ও সীমিত হয়ে গেছে। এখন মূলত বাড়ি থেকে বর গাড়িতে ওঠার সময়, বর ক্লাবে পৌঁছে গাড়ি থেকে নামার সময় এবং ক্লাবে ঢোকার সময় বাদ্য বাজানো হয়। ফলে আগের মতো দীর্ঘসময় বাজানোর সুযোগ আর থাকে না।
শহীদ জানান, মাঝেমধ্যে পাহাড়িদের কঠিন চীবর দান উৎসব বা পাহাড়ি অঞ্চলের বিয়ের জন্য ডাক আসে। তখন দু-তিনদিন থাকতে হয়। তবে এই সফরগুলোও উপভোগ করেন তারা। কাজের ফাঁকে দলবদ্ধ হয়ে ঘুরতে বের হন, আড্ডা দেন, গল্প করেন আর আনন্দের সঙ্গে বাজনা বাজান।
শহীদ বলেন, "কাজ শেষে, বিশেষ করে হিন্দু বিয়ের পর, আমাদের অনেক রাতে বাড়ি ফিরতে হয়। কিন্তু মজার বিষয় হলো, পুলিশ বা আর্মি আমাদের কখনো চেক করে না বা বিরক্ত করে না। তারাও বোঝে, আমরা আসলে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্যই বের হই।"
খারাপ অভিজ্ঞতাও কম নয়
আল মদিনা ব্যান্ড পার্টির কর্ণধার হুমায়ূন কবির (ছদ্মনাম) বলেন, "বিয়েশাদিতে যেমন সম্মানের আসন পেয়েছি, তেমনি অপমানও কম পাইনি। অনেক বড়লোকের ধুমধামে করা বিয়েতে গেছি। নিজেরা খেয়েছে খাসির মাংস, বড় বড় মাছ। আমাদের দিয়েছে ভাত, মাংস আর বেগুন ভাজা। আবার এমনও দেখেছি—আমার পাশে বসা লোকের প্লেটে আছে দুই ধরনের মাছ, আর আমার প্লেটে মাত্র এক পিস। কষ্টও পেয়েছি অনেক এই কাজ করতে গিয়ে।"

একসময় ব্যান্ড পার্টির ব্যবসা বেশ রমরমা ছিল। কিন্তু মানুষের রুচির পরিবর্তন ও করোনার প্রভাবে এখন দোকানভাড়া তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে মালিকদের। এ পেশার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই জীবিকার তাগিদে অন্য কাজে চলে গেছেন। আর যারা এখনো টিকে আছেন, তারা মূলত বাবার-দাদার ঐতিহ্যের টানেই আছেন।
একসময় বিয়েশাদি ব্যান্ড পার্টি ছাড়া কল্পনাই করা যেত না। কিন্তু সহজলভ্য ডিজে ও সাউন্ড সিস্টেমের যুগে এখন ব্যান্ড পার্টির কথা অনেকের মনেই থাকে না। তাই বিয়ের মৌসুমের অপেক্ষায় না থেকে ব্যান্ড পার্টির সদস্যরা ঝুঁকছেন অন্যদিকে—ওরশ, স্কুল-কলেজের অনুষ্ঠান, র্যালি, জাতীয় দিবস বা ভোটের সময় কাজের আশায় দিন গুনছেন তারা।
বিয়ের আনন্দময় পরিবেশ না পেলেও অন্তত জীবিকার চাকা সচল রাখতে পারছেন।
ছবি: রাফিয়া মাহমুদ প্রাত/দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড