জুলাই যোদ্ধা, শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনে থাকছে না ফ্ল্যাট বা চাকরিতে কোটা সুবিধা

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম (বীর প্রতীক) বলেছেন, জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনে ফ্ল্যাট দেওয়া বা চাকরিতে বিশেষ কোটা রাখার কোনো পরিকল্পনা নেই সরকারের। তবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি ও আত্মকর্মসংস্থানমূলক সহায়তার মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু পালন ও মাছ চাষসহ যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন, তা তাদের চাহিদা ও যোগ্যতা অনুযায়ী দেওয়া হবে।
আজ সোমবার (২১ জুলাই) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের কল্যাণে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
উপদেষ্টা জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আহত জুলাই যোদ্ধাদের বিদেশে চিকিৎসা, শহীদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্র এবং আহতদের এককালীন আর্থিক অনুদান বাবদ সরকার ইতোমধ্যে ২৫৯ কোটি ৬৮ লাখ ৪ হাজার ২১২ টাকা ব্যয় করেছে।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তৎকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ওই বছরের ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই আন্দোলন সরকারিভাবে 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান' হিসেবে স্বীকৃত।
২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর শহীদ ও আহতদের কল্যাণ ও প্রশাসনিক দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত করা হয়। পরে ২০২৫ সালের ২৮ এপ্রিল গঠিত হয় 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর'। একই বছরের "জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫"-এর মাধ্যমে শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮৩৪ জন এবং ৩০ জুন পর্যন্ত আরও ১০ জন—মোট ৮৪৪ জন শহীদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। আহতদের গেজেটে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে—'ক' শ্রেণিতে ৪৯৩ জন, 'খ' শ্রেণিতে ৯০৮ জন এবং 'গ' শ্রেণিতে ১০,৬৪২ জন।
সম্প্রতি আরও ১,৭৬৯ জন আহতের নাম স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে পাওয়া গেছে, যাদের যাচাই-বাছাই শেষে গেজেট প্রকাশের প্রক্রিয়া চলছে।
এককালীন অনুদান (শহীদ পরিবার)
প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে এককালীন ৩০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হবে, যার মধ্যে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ইতোমধ্যে ৭৭২টি পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৭২টি পরিবারকে, তাদের ওয়ারিশ ও পারিবারিক জটিলতা নিরসনের পর সঞ্চয়পত্র প্রদানের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
বাকি ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আগামী অর্থবছরের জুলাই মাস থেকে দেওয়া হবে।
এককালীন অনুদান (জুলাই যোদ্ধা)
'ক' শ্রেণির যোদ্ধারা ৫ লাখ টাকা করে পাবেন; ইতোমধ্যে ২ লাখ টাকা করে ৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
'খ' শ্রেণির যোদ্ধারা ৩ লাখ টাকা করে পাবেন; এর মধ্যে ১ লাখ টাকা করে ৯ কোটি ৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
'গ' শ্রেণির যোদ্ধারা এককালীন ১ লাখ টাকা করে পাবেন, যারমধ্যে ১ লাখ করে মোট ১০৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।
এ পর্যন্ত সরকার মোট ২০২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এককালীন অনুদান হিসেবে দিয়েছে। বাকি অর্থ আগামী অর্থবছরে দেওয়া হবে।
মাসিক ভাতা
বিধিমালা অনুযায়ী, শহীদ পরিবার মাসিক ২০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবে।
এছাড়া, 'ক' শ্রেণির যোদ্ধাদের জন্য ২০ হাজার, 'খ' শ্রেণির জন্য ১৫ হাজার এবং 'গ' শ্রেণির জন্য ১০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকার প্রতিমাসে এ খাতে ১৪ কোটি ৬৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় করছে।
চিকিৎসা সহায়তা
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে এখন পর্যন্ত ৭৫ জন জুলাই যোদ্ধাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক ও রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ৪৬ জন বিদেশে চিকিৎসাধীন এবং আরও ৩২ জন অপেক্ষমাণ। এ খাতে এখন পর্যন্ত ৭৮ কোটি ৫২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
পুনর্বাসন কার্যক্রম
বিধিমালার আওতায় শহীদ পরিবার ও আহতদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে পুনর্বাসন করা হবে। অনলাইনে ভাতা প্রদানে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তুলতে 'ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস)' তৈরির কাজ চলমান রয়েছে।