Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

বন্ধুত্ব, আড্ডা, রাজনীতি-বিজড়িত টিএসসির চায়ের দোকান উচ্ছেদ চেষ্টার নেপথ্যকথা

চায়ের দোকানগুলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ঠিক কতটা আপন, সেটি বুঝতে হলে শুনতে হবে তাদের গল্প। আন্দোলন-সংগ্রাম, আনন্দ-দুঃখ, প্রেম-বন্ধুত্ব ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নানা গল্পের সারথী এই চায়ের দোকানগুলো। স্বপন মামা, দুলাল মামা, শাহাবুদ্দিন ভাই, ফারুক ভাই, রুবেল ভাই, সাকিব-শাহেদের দোকান এসব দোকানের মানুষ শিক্ষার্থীদের কাছে যেমন চিরপরিচিত, তেমনি দোকানের এই মানুষগুলোও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তার মানুষগুলোকে নিজেদের বাড়ির মানুষ হিসেবেই ভালোবাসেন।
বন্ধুত্ব, আড্ডা, রাজনীতি-বিজড়িত টিএসসির চায়ের দোকান উচ্ছেদ চেষ্টার নেপথ্যকথা

ফিচার

নওরীন সুলতানা
17 September, 2024, 05:40 pm
Last modified: 18 September, 2024, 02:54 pm

Related News

  • বেনজীরের ডক্টরেট ডিগ্রি স্থগিত করল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
  • ‘লাঞ্চের পরে আসেন’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলগুলোর সিট বণ্টন যেভাবে চলে
  • ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যা: বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে তিন আসামি
  • সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডাকসু নির্বাচন, তফসিল ঘোষণা ২৯ জুলাই
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের পকেট গেট রাত ৯টার পর বন্ধ

বন্ধুত্ব, আড্ডা, রাজনীতি-বিজড়িত টিএসসির চায়ের দোকান উচ্ছেদ চেষ্টার নেপথ্যকথা

চায়ের দোকানগুলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ঠিক কতটা আপন, সেটি বুঝতে হলে শুনতে হবে তাদের গল্প। আন্দোলন-সংগ্রাম, আনন্দ-দুঃখ, প্রেম-বন্ধুত্ব ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নানা গল্পের সারথী এই চায়ের দোকানগুলো। স্বপন মামা, দুলাল মামা, শাহাবুদ্দিন ভাই, ফারুক ভাই, রুবেল ভাই, সাকিব-শাহেদের দোকান এসব দোকানের মানুষ শিক্ষার্থীদের কাছে যেমন চিরপরিচিত, তেমনি দোকানের এই মানুষগুলোও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তার মানুষগুলোকে নিজেদের বাড়ির মানুষ হিসেবেই ভালোবাসেন।
নওরীন সুলতানা
17 September, 2024, 05:40 pm
Last modified: 18 September, 2024, 02:54 pm
ছবি: হামিদুল হুদা স্তেভান

রোদ পড়ে এসে বিকেল নামছে শহরের বুকে। ঠিক তখনই এক কাপ চা হাতে চলছে তুমুল যুক্তি-তক্কো-গপ্পো, কখনো বা চলছে বন্ধুত্বের আড্ডা, কেউ বা আড়চোখে প্রিয় মানুষটাকে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে দেখছেন, কেউ আবার এ সমস্ত কিছুর বাইরে নিজের একাকিত্বকে এক কাপ চায়ে ডুবিয়ে দিচ্ছেন। এই এত ধরনের আবেগকে একসাথে ধারণ করতে আপনি দেখতে পারেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) এক সারিতে থাকা চায়ের দোকানগুলোতে।  

ঢাবি শিক্ষার্থীদের কাছে এক আবেগের জায়গা টিএসসির এই চায়ের দোকানগুলো। তাই যখন দোকানগুলোকে 'অবৈধ ও ভাসমান' বলে উচ্ছেদের চেষ্টা চালানো হয়, তখন বাধা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই। 

সম্প্রতি 'বহিরাগত' নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে  চায়ের দোকানগুলো উচ্ছেদের ব্যাপারে কথা ওঠে, প্রশ্ন ওঠে দোকানগুলোর বৈধতা নিয়ে। টিএসসির দোকানগুলো তবে কি অবৈধ? শোনা যাক, কতটা ভালোবাসা জড়িয়ে আছে এই দোকানগুলোকে ঘিরে।

লেবু চা, দুধ চা, আদা চা, মাল্টা চা, তেঁতুল চা, মরিচ চা, মালটোভা চা— হরেক রকম চায়ের স্বাদের মতো হরেক রকম মতাদর্শের হরেক রকম মানুষের দেখা মেলে টিএসসির এই চায়ের দোকানগুলোতে। বছরের পর বছর ধরে তাই এই চায়ের দোকানগুলো হয়ে উঠেছে টিএসসির অন্যতম অনুষঙ্গ। 

চায়ের দোকানগুলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ঠিক কতটা আপন, সেটি বুঝতে হলে শুনতে হবে তাদের গল্প। আন্দোলন-সংগ্রাম, আনন্দ-দুঃখ, প্রেম-বন্ধুত্ব ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নানা গল্পের সারথী এই চায়ের দোকানগুলো। স্বপন মামা, দুলাল মামা, শাহাবুদ্দিন ভাই, ফারুক ভাই, রুবেল ভাই, সাকিব-শাহেদের দোকান এসব দোকানের মানুষ শিক্ষার্থীদের কাছে যেমন চিরপরিচিত, তেমনি দোকানের এই মানুষগুলোও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তার মানুষগুলোকে নিজেদের বাড়ির মানুষ হিসেবেই ভালোবাসেন।

স্বপন মামা ১৯৮৪ সাল বা তারও আগে থেকে টিএসসিতে চা বিক্রি করছেন। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে চলছে তার এই দোকান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রথমে ফেরি করে চা বিক্রি করতেন। একসময় টিএসসির পাঁচিল ঘেঁষে একটি চায়ের দোকান দেন তিনি। এই চায়ের দোকানের উপার্জন থেকেই স্বপন মামা তার চার মেয়ে আর এক ছেলেকে পড়িয়েছেন, চালিয়েছেন সংসার। এরশাদ আমল থেকে শুরু করে জুলাই গণঅভ্যুত্থান- দু'চোখে তিনি দেখেছেন একটি দেশ, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেড়ে ওঠা। স্বৈরাচারী দেখেছেন, দেখেছেন ছাত্র-জনতার ঢেউয়ের সামনে স্বৈরাচারীদের  অহংকারের পতন। তার দোকানে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কয়েক দশকের অসংখ্য শিক্ষার্থী বিপ্লবের স্বপ্নে বুক বেঁধেছে।

ছবি: হামিদুল হুদা স্তেভান

স্বপন মামা যেমন শিক্ষার্থীদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসেন, তেমনি শিক্ষার্থীরাও ভালোবাসেন এই চা দোকানীকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আদনান আজিজ চৌধুরীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি ছবিতে দেখা যায়, নিজের সমাবর্তনের পোশাকে স্বপন মামাকে তিনি জড়িয়ে ধরে আছেন। তিনি ও তার মা দুজনেই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, দুজনেই পেয়েছেন স্বপন মামাকে। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা, 'আমার মা যখন ক্যাম্পাসে আসলেন ইতিহাস বিভাগে পড়তে, মামাও তখন আসলেন ক্যাম্পাসে চা নিয়ে। আর আমি যখন আসলাম, শেষ করলাম– মামা তখনও আছেন। আমরা সবাই তারই অতিরিক্ত চিনি দিয়ে চা খাওয়া মানুষ।'

শাহাবুদ্দিন মামা ছোট থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় হয়েছেন। আশির দশকে তার বাবার চায়ের দোকান ছিল শামসুন্নাহার হলের সামনে। আশির দশকে মূলত তিনটি দোকান হয়েছিল টিএসসির এই প্রাঙ্গণে। তখন দোকান ছিল হলগুলোর পাশের রাস্তায়, পরে তিনপাশে তিনটি দোকান বসে। ধীরে ধীরে দোকান বাড়তে থাকে, তবে ২০০৮ সালের আগে দোকান ছিল ১০টি, তার পরবর্তী সময়ে আরও বেশ কয়েকটি দোকান বসেছে। মোট ছয়টি দোকান ২০ বছরের বেশি সময় ধরে চা বিক্রি করছে। 

গত মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এস্টেট অফিস, প্রক্টরিয়াল টিম ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে টিএসসিসহ ক্যাম্পাস এলাকায় সকল ভাসমান দোকান উচ্ছেদের অভিযান পরিচালনা করা হয়। জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত সকল চা, সিগারেটসহ সকল ভাসমান দোকান উচ্ছেদ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের কর্মচারীরা। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদসহ প্রক্টরিয়াল বডির অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। মূলত এ অভিযান পরিচালনা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মুস্তাফার তত্ত্বাবধায়নে। তাদের সাথে ছিলেন কিছু শিক্ষার্থী। তাদের বক্তব্য, দোকানগুলো অবৈধ ও ভাসমান।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয় চা দোকানদারদের কাছে। তারা জানান, দোকানগুলো তারা নিজেরাও বৈধকরণের জন্য নিবন্ধন করে নিতে চান, এর আগেও চেয়েছেন পূর্ববর্তী প্রক্টরের কাছে। কিন্তু এতদিন নিবন্ধন প্রক্রিয়া না থাকায় তারা সেটা করতে পারেনি। 

দোকানদাররা আরও দাবি করেন, তাদেরকে দোকান বন্ধের বিষয়ে আগে জানানো হয়নি। প্রক্টরিয়াল টিম মাইকিং করেছিল, কিন্তু সেটি অন্য ভাসমান দোকানগুলোর জন্য; বিশেষ করে, উদ্যানের দোকানগুলোর ব্যাপারে; চায়ের দোকানীদের কিছু বলা হয়নি। 

গত ১০ সেপ্টেম্বর দোকানগুলো উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে আসে এস্টেট অফিস ও প্রক্টরিয়াল টিম। জানায়, রাত ৯টার মধ্যে দোকান বন্ধ না করলে পরেরদিন সকালে সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হবে। এক্ষেত্রে তখন কোনো পুনর্বাসনের উদ্যোগের কথাও তাদের জানানো হয়নি। এক নিমেষে নিজেদের উপার্জনের একমাত্র উৎস হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন তারা। তখন এই উচ্ছেদ প্রক্রিয়ায় উপস্থিত কিছু শিক্ষার্থী বাঁধা দেয়।

বাঁধাদানকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী রেহনুমা আহমেদ নিরেট। নিরেট জানান, "আমি সেদিন বিকালে টিএসসি এসে দেখতে পাই স্বপন মামারা দোকান বন্ধ করে দিচ্ছে, কারণ প্রক্টরিয়াল টিম নাকি নির্দেশ দিয়েছে। একটু পর দেখি সাথে অনেকগুলো ছেলেমেয়ে নিয়ে প্রক্টরিয়াল টিম এসেছে, হ্যান্ড মাইক নিয়ে ঘোষণা দিচ্ছিল তারা।" 

তিনি জানান, "আমরা কয়েকজন তখন হুট করে দোকান তুলে দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে, প্রক্টরিয়াল টিমের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থীরা উচ্চস্বরে বাকবিতণ্ডা শুরু করেন; তারা বলেন, দোকানই অবৈধ, এগুলো তুলে দিতে আবার কোনো নিয়ম লাগবে নাকি। এগুলো প্রক্টরিয়াল টিম ও এস্টেট ম্যানেজারের উপস্থিতিতেই হয়।"

ছবি: সাকলাইন রিজভী

নিরেট বলেন, "এসময় প্রক্টরিয়াল টিমের সাথে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, 'আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি দোকানগুলো থাকবে না।' এসময় আমিও নিজেকে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে দাবি করে এর বিরোধিতা করি। এরপরই তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়।" 

এ সময় নিরেটরা চায়ের দোকানগুলোকে টিএসসির সংস্কৃতির অংশ বলে উল্লেখ করা হলে অপরপক্ষ থেকে বলা হয়, এসব অবৈধ দোকান কোনো সংস্কৃতির অংশ হতে পারে না। 

এরপর টিএসসির সংগঠনগুলোর সদস্যসহ অনেকে প্রক্টর অফিসে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে সহকারী প্রক্টর পরেরদিন ১০টায় আলোচনার সময় দেন এবং আশ্বস্ত করেন। পরেরদিনের এ আলোচনায় প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ ২০০৮ সালের পূর্ববর্তী দোকানগুলোকে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে বলেন এবং ২০০৮ সালের পরবর্তী দোকানগুলোর ব্যাপারে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানান। 

এ সময় প্রক্টর অফিসেও দুপক্ষের মধ্যে বাক্যবিনিময় হয় এবং অপর পক্ষের শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, তারা গতদিন কোনো খারাপ আচরণ করেননি। এ সময় নিরেট এও দাবি করেন, অপর পক্ষের শিক্ষার্থীদের তরফ থেকে তাদেরকে গণহারে 'বাম সংগঠনের নেতাকর্মী' এর তকমা দেওয়াসহ, কোনো ধরনের তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে নানান রকমের অভিযোগ আনা হয়।

যদিও অপরপক্ষের শিক্ষার্থীরা বিষয়গুলো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে জানান। শিক্ষার্থী রিদুয়ান ইসলাম রানা জানান, "ওখানে সামান্য বাকবিতণ্ডা হয় দোকানগুলোর বৈধতা নিয়ে, এমন কোনো বড় ধরনের কিছুই হয়নি।" 

ছবি: হামিদুল হুদা স্তেভান

এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদের সাথে। তিনি জানান, আগেরদিন প্রক্টরিয়াল টিমের তরফ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে দোকান সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে এবং পরেরদিন যারা সরিয়ে নেয়নি তাদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রক্টরিয়াল টিম সেখানে উপস্থিত ছিল। এ সময় প্রক্টর জানান তারা দোকানগুলোকে বৈধকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালনায় ইচ্ছুক। এ বিষয়ে ট্রেজারারের নেতৃত্বে একটি মিটিং ডাকা হয়েছে এবং মিটিং এ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। 

প্রক্টর বলেন, "আমাদের কারো সাথে বৈরীতা নেই, তবে পক্ষপাতিত্ব আছে শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও নিরাপত্তার প্রতি। আর টিএসসির দোকানগুলোর সাথে আমার নিজেরও বহু বছরের সখ্যতা। ক্যাম্পাসে বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ চেষ্টার অংশ হিসেবে ভাসমান দোকানগুলো উচ্ছেদ করার সিদ্ধনাত নেওয়া হয়, এ বিষয়ে আরও নানান পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।" 

ট্রাফিক পুলিশ, সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে বলেও জানান প্রক্টর।

এ সময় গতদিন প্রক্টরিয়াল টিমের সামনে হওয়া ঘটনা সম্পর্কে এবং এখানে কোনো ছাত্র ক্ষমতা চর্চা করছে কিনা প্রক্টরিয়াল টিমের সাথে উপস্থিত থেকে— এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, "আমি মনে করি, সেদিন উভয়পক্ষ স্বেচ্ছায় অংশ নিয়েছে এবং এ বিষয়ে আমাদের নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হয়নি। তবে প্রক্টর অফিসে আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করেছি। এখানে আমরা কাউকে ক্ষমতা দেইনি।"

চায়ের দোকানগুলোকে টিএসসির সংস্কৃতির অংশ বলে উল্লেখ করা হয়। এক চুমুক চায়ের সাথে এখানে আড্ডা জমে, চুমুকে চুমুকে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের পক্ষে–বিপক্ষে আলাপ জমে। তৈরি হয় বন্ধুত্বের গল্প, নতুন গানের সুর। বাড়ি থেকে দূরে থাকা শিক্ষার্থীদের কাছে ক্লান্ত দিনের শেষে এক কাপ চায়ের সাথে প্রিয় বন্ধুদের একটুখানি আড্ডা যেন তাদের কাছে বাড়ির মত একটু শান্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিম তানহার তৃণ ভালোবাসেন বন্ধুত্ব আর চায়ের আড্ডা। টিএসসির দোকানগুলো নিয়ে তৃণ বললেন, "আমার কাছে টিএসসির চায়ের দোকানগুলো খুবই আপন। আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অবসর সময়গুলো কাটিয়েছি এই দোকানগুলোতে বসে। অনেক প্রিয় মুখ, যারা আমার জীবনের সাথে অতপ্রোতভাবে জড়িত এমন অনেক মানুষকে পেয়েছি এই দোকানগুলোতে বসে চা খেতে খেতে। ক্লাসের ফাঁকে একটু শান্তির নিঃশ্বাস নিতে আমি এখানেই ছুটে আসি, এখানকার মামারাও আমাদের অনেক আপন।"

চায়ের দোকানগুলোকে বলা হয়ে থাকে মিনি পার্লামেন্ট বা ক্ষুদ্র সংসদ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ কথাটি খুব বেশি প্রযোজ্য, আমাদের দেশের রাস্তার পাশের ছোট্ট চায়ের দোকানেও চায়ের কাপে ঝড় ওঠে। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হচ্ছে রাজনীতির আঁতুরঘর, চায়ের কাপে ঝড় না উঠে উপায় কী! বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন মতদর্শের শিক্ষার্থীরা টিএসসির এই চায়ের দোকানগুলোতে আড্ডার পাশাপাশি রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক করে থাকেন। 

ছবি: নওরীন সুলতানা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইশা মালিহা বলেন, "চায়ের স্বাদ আহামরি কিছু না, কিন্তু এখানে এক কাপ চায়ের বিনিময়ে পাওয়া যায় অনেকগুলো বন্ধুত্বের, প্রেমের, রাজনীতির, বিদ্রোহের গল্প। সিনিয়রের ট্রিট মানে টিএসসির চা, ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে বন্ধু ঘুরতে এলে টিএসসির চা, সদ্য চান্সপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর আত্মপরিচয়ের প্রধান অনুষঙ্গও এই টিএসসির চা।"

২০২২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিরীন আক্তার শিলাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর উদ্যোগে  'চায়ের কাপে রিকশাচিত্র' আয়োজন করা হয় এবং টিএসসির চায়ের দোকানগুলোকে রিকশাচিত্রের মাধ্যমে আরও নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়, নতুন সাজে রঙিন হয় টিএসসি প্রাঙ্গণ। 

চায়ের দোকানগুলোর মামাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা দেখেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান রাজনৈতিক শাসনমল, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান পরিবর্তন। দেখেছেন, মানুষের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন, পরিবেশের পরিবর্তন, রাজনীতির পট পরিবর্তন। 

স্বপন মামার মতো পুরোনো মানুষেরা নিজ চোখে দেখেছেন ৯০ এর স্বৈরাচার পতন থেকে ২৪ এর স্বৈরাচার পতনের গণঅভ্যুত্থান, তৈরি হতে দেখেছেন সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য। দেখেছেন মৃত্যু, কখনো শহীদ ড. শামসুল আলম খান মিলনের মৃত্যু, কখনো অভিজিৎ রায়ের মৃত্যু। 

২৪ এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার সাক্ষীও হয়েছেন তারা। 

১৫ জুলাইয়ের হামলা নিয়ে তারা বলেন, "আমরা নিজের চোখে যা দেখছি মানুষের হাতে, এগুলো দেখে আর মনে হয়নি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দোকান চালাই। এখানেই ছাত্রলীগ হাতে দা থেকে শুরু করে লাঠিসোঁটা সব নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আমরা পড়ে গিয়েছিলাম মাঝখানে। পালাতে গিয়ে হামলার মধ্যেও পড়ে যাই, কোনোভাবে বেঁচে গেছি। কিন্তু আন্দোলনের সময় প্রতিদিনই আমরা ক্যাম্পাসে এসেছি।"

দীর্ঘদিন জনশূন্য ক্যাম্পাসে এসেছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন। কারণ এখানে তাদের অস্তিত্ব পড়ে আছে, তাদের এসব ফেলে যাওয়ার জায়গা নেই কোথাও। 

তাদের চোখে কতটা বদলে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়? এ প্রশ্নের জবাবে তারা ক্যাম্পাসে জনপরিসর ও আড্ডার জায়গা কমে গিয়ে টিএসসির ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, "আগে এত মানুষ ছিল না, অনেক গাছ ছিল, পরিষ্কার ছিল, পরিবেশটা সুন্দর ছিল। রোকেয়া হল থেকে শুরু করে অনেকগুলো দোকান এখানে এক সারিতে  ছিল, ফুলার রোড, মলচত্বরেও অনেকে আড্ডা দিত। ১৮ সালে মেট্রোস্টেশন হওয়ার পর থেকে পরিবেশ আরো খারাপ হয়েছে। এত মানুষ ছিল না, একটু শান্ত শান্ত ছিল।"

ছবি: ফাহিম রহমান প্রত্যয়

শাহাবুদ্দিন মামা বলেন, "আমার পুরো পরিবার এই দোকানের উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল, আমার বাবাও এই দোকানদারির টাকাতেই আমাদের বড় করেছেন, এখন আমার পুরো পরিবার এই দোকানের ওপর নির্ভরশীল। আমরা বাঁচি আর মরি এখানেই থাকতে চাই।" 

তাদের মধ্যে অনেকেরই জন্মের পর বোঝার বয়স হওয়ার পর থেকে এই দোকানগুলোকে ঘিরেই বড় হওয়া; বাবার পর সংসারের হাল ধরেছেন এই দোকানগুলোর ওপর নির্ভর করেই। তারা জানেন না হুট করে উৎখাত করা হলে কোথায় যাবেন তারা। সাকিব-শাহেদদের খেলার বয়স, পড়াশোনার বয়স, কিন্তু দুর্ভাগ্যের ছকে আটকা পড়ে তারাও আছে দোকানের কাজে। ওদের পরিবারের একমাত্র 'উপার্জনক্ষম' ওরাই। দোকানগুলো উঠে গেলে কোথায় কী করবেন, তা জানেন না তারা। 
 

Related Topics

টপ নিউজ

চায়ের দোকান / টিএনসি / ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • নেই বাংলাদেশি পর্যটক, কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশের’ ব্যবসায় ধস, এক বছরে ১,০০০ কোটি রুপির লোকসান
  • ১০ মডেলের হার্টের রিংয়ের দাম ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত কমাল সরকার
  • ৩৮৯ কোটি টাকা ঋণখেলাপি: এক্সিম ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ক্রোকের নির্দেশ
  • মাহফুজ আলম হয়তো ঘণ্টাখানেক পর পোস্টটি ডিলিট করবেন: সালাহউদ্দিন
  • রেজ হাউস: পয়সা খরচ করে ভাঙচুর করা যায় যেখানে!
  • ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন করে জুলাইয়ের চেতনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে: রাষ্ট্রপতি

Related News

  • বেনজীরের ডক্টরেট ডিগ্রি স্থগিত করল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
  • ‘লাঞ্চের পরে আসেন’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলগুলোর সিট বণ্টন যেভাবে চলে
  • ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যা: বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে তিন আসামি
  • সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডাকসু নির্বাচন, তফসিল ঘোষণা ২৯ জুলাই
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের পকেট গেট রাত ৯টার পর বন্ধ

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

নেই বাংলাদেশি পর্যটক, কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশের’ ব্যবসায় ধস, এক বছরে ১,০০০ কোটি রুপির লোকসান

2
বাংলাদেশ

১০ মডেলের হার্টের রিংয়ের দাম ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত কমাল সরকার

3
বাংলাদেশ

৩৮৯ কোটি টাকা ঋণখেলাপি: এক্সিম ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ক্রোকের নির্দেশ

4
বাংলাদেশ

মাহফুজ আলম হয়তো ঘণ্টাখানেক পর পোস্টটি ডিলিট করবেন: সালাহউদ্দিন

5
ফিচার

রেজ হাউস: পয়সা খরচ করে ভাঙচুর করা যায় যেখানে!

6
বাংলাদেশ

ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন করে জুলাইয়ের চেতনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে: রাষ্ট্রপতি

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab