ডাকসু নির্বাচনে নীলক্ষেতে ব্যালট ছাপানো নিয়ে বিতর্ক, তদন্ত করছে কমিশন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ব্যালট নীলক্ষেতে ছাপানো নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, অরক্ষিত পরিবেশে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে। এ নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে নির্বাচনে 'ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের' অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ সমর্থিত প্যানেল, স্বতন্ত্র প্যানেলের সহসভাপতি প্রার্থী উমামা ফাতেমা এবং বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ।
যেভাবে বিতর্কের সূত্রপাত
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে এক পোস্টে ডাকসুর জিএস পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আরাফাত চৌধুরী অভিযোগ করেন, নীলক্ষেতের গাউসুল আজম সুপার মার্কেটে অরক্ষিত অবস্থায় ব্যালট ছাপানো হয়েছে এবং তাতে কোনো সিরিয়াল নম্বর ছিল না। তিনি এ বিষয়ে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছেও লিখিত অভিযোগ করেন।
পরবর্তীতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত সচেতন শিক্ষার্থী সংসদের জিএস প্রার্থী খায়রুল আহসান মারজানও একই অভিযোগ তোলেন।
এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্যালট মুদ্রণ একটি বিশেষায়িত প্রক্রিয়া এবং তা কঠোর তত্ত্বাবধানে হয়েছে। ওএমআর মেশিনে ব্যালট স্ক্যানিং ও মুদ্রণের কারণে এটি নীলক্ষেতের কোনো দোকানে ছাপানো সম্ভব নয় বলে দাবি করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ব্যালট পেপার ছাপানোর পরে নির্দিষ্ট পরিমাপে কাটিং করে তা ওএমআর মেশিনে প্রি-স্ক্যানিংপূর্বক মেশিনের পাঠযোগ্যতা নিশ্চিত করে সিলগালাকৃত প্যাকেটে সরবরাহ করেছে বলেও জানানো হয়।
তবে গত বৃহস্পতিবার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের জালাল প্রিন্টিং প্রেসে ডাকসুর ৯৬ হাজার ব্যালট ছাপানো হয়েছে। একই মার্কেটের মক্কা পেপার কাটিং হাউসে কাটা হয়েছে ৮৮ হাজার ব্যালট। প্রতিবেদনে ৮ হাজার ব্যালটের হিসাবের গরমিলের কথাও উল্লেখ করা হয়।
জালাল প্রিন্টিং প্রেসের স্বত্বাধিকারী মো. জালাল গণমাধ্যমকে জানান, ফেরদৌস ওয়াহিদ নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ব্যালট ছাপানোর অর্ডার পান এবং তিন দিনে ৯৬ হাজার ব্যালট ছাপান।
এর প্রেক্ষিতে ২৫ সেপ্টেম্বর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বিজ্ঞপ্তিতে জানান, অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে এবং শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।
তদন্ত করছে কমিশন
প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য ৩৯ হাজার ৭৭৫ ভোটারের বিপরীতে ৫টি করে ব্যালট নেওয়া হয়েছে। হল সংসদের জন্য প্রতিটি ভোটারের বিপরীতে একটি করে ব্যালট ছাড়াও সতর্কতার জন্য অতিরিক্ত এক হাজার ৪০টি ব্যালট ছাপানো হয়েছে। সব ব্যালটের হিসাব চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সংরক্ষিত আছে।
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন শনিবার দ্য বিজনেজ স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এ বিষয়টি আমরা এখনো খতিয়ে দেখছি। বিস্তারিত আপডেট বিশ্ববিদ্যালয় জানাবে।'
প্রতিদ্বন্দ্বীদের দাবি
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ তানভীর বারী হামিম বলেন, 'প্রশাসন আমাদের আস্থাহীনতার জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। তবুও আমরা বারবার আস্থা রাখতে চাচ্ছি। প্রশাসন এ বিষয়ে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে, দায়সারা আচরণ করছে। শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক আচরণ দিনে দিনে প্রতিহিংসায় পরিণত হচ্ছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত সুস্পষ্ট জবাব চাই।'
ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল কাদের ফেসবুকে লিখেছেন, গাউসুল আজম মার্কেটে অরক্ষিত অবস্থায় ব্যালট থাকার বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অফিসিয়ালি তা অস্বীকার করছে, যা শিক্ষার্থীদের সন্দেহ আরও বাড়াচ্ছে।