সঠিক সানগ্লাস ব্যবহার করছেন বুঝবেন কিভাবে? সানগ্লাসও চোখের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে তাপপ্রবাহ। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে নাস্তানাবুদ হলেও থেমে নেই মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম। প্রতিনিয়ত কাজের উদ্দেশ্যে বাইরে ছুটছেন লাখো মানুষ। এসময় বাইরে প্রখর রৌদ্র থেকে নিজের চোখকে বাঁচাতে অনেকের কাছেই অত্যাবশ্যকীয় একটি অনুষঙ্গ হলো সানগ্লাস বা রোদ চশমা। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চোখকে সুরক্ষা দেয় সানগ্লাস। এই সানগ্লাসের লেন্স আবার বিভিন্ন রঙ এ পাওয়া যায়- বেগুনি, পার্পল, গোলাপি, বাদামি, নীলের বিভিন্ন শেড; চশমার দোকানে ঢুকলেই নানা শেডের সানগ্লাস চোখে পড়ে আমাদের। কিন্তু সানগ্লাসের বিভিন্ন রঙের লেন্সের অর্থ কী? কেনই এভাবে সানগ্লাসগুলো তৈরি করা হয়, আর এর উপকারিতাই বা কী?
একজন ব্যক্তির দৃষ্টিতে বা তাকিয়ে থাকার সময় চোখে আরাম দেওয়া, গ্লেয়ার রিডাকশন (চোখে আলো পড়ার মাত্রা কমিয়ে আনা), কালার পারসেপশন এবং সার্বিকভাবে চোখকে সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে সানগ্লাস লেন্সের রঙ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সানগ্লাস কেনার সময় লেন্সের রঙ নির্বাচনে মনোযোগী হওয়ার মাধ্যমে আপনি সানগ্লাসের মাধ্যমেও বেশকিছু সুবিধা লাভ করতে পারবেন।

চলুন দেখে নেওয়া যাক কি কি রঙের লেন্স প্রচলিতভাবে দেখা যায় সানগ্লাসে এবং এগুলো চোখকে সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি আপনার দৃষ্টিশক্তিকে কিভাবে প্রভাবিত করে।
বাদামি বা অ্যাম্বার
বাদামি বা অ্যাম্বার রঙের মতো গাঢ় রঙগুলো সানগ্লাসে খুবই প্রচলিত এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য ভালোই কাজ করে বলে জানিয়েছে আরইআই। বাদামি রঙের এত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। এটা সূর্যের আলো চোখে কম পড়তে দেয় এবং চোখের উপর চাপ কমিয়ে আনে, অর্থাৎ চোখের ক্লান্তি আসতে দেয় না। এছাড়াও এটি উষ্ণ রঙের তীব্রতা বৃদ্ধি করে এবং দৃষ্টিকে উজ্জ্বল করে।
এর বাইরেও, ভিএসপি ভিশন কেয়ার সূত্রে জানা যায়, বাদামি লেন্সের হাই-কনট্রাস্টের ফলে সামনে থাকা বস্তু আরও স্পষ্ট দেখা যায়, এমনকি দূর থেকেও। সে কারণেই খেলাধুলা এবং আউটডোরে কাজ করার সময় এই রঙ এর সানগ্লাসের ব্যবহার বেশি, কারণ এসব ক্ষেত্রে স্পষ্ট ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তির প্রয়োজন হয়; যেমন- শিকার বা গলফ খেলার সময়।
হলুদ বা কমলা
হলুদ বা কমলা রঙের সানগ্লাসগুলো মাঝারি থেকে হালকা আলোর পরিবেশে ব্যবহারের জন্য আদর্শ বলে মনে করে আরইআই। কুয়াশাচ্ছন্ন বা ঝাপসা বা মেঘলা আবহাওয়ায় দেখার জন্য এই সানগ্লাসগুলো বেশ উপকারী; কারণ এগুলো কনট্রাস্ট এবং স্বচ্ছতা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া, চলমান কোনো বস্তুর ওপর দৃষ্টি স্থির রাখতেও সাহায্য করে এই রঙের সানগ্লাস। গেমার, পাইলট, শিকারী এবং উইন্টার অ্যাথলেটরা হলুদ বা কমলা টিন্টের সানগ্লাস বেশি পছন্দ করেন।
নীল বা পার্পল
নীল বা পার্পল আভার সানগ্লাসগুলো উজ্জ্বল দিবালোকে চোখে অতিরিক্ত আলো পড়া প্রতিরোধ করে; উজ্জ্বল আলোর প্রতিফলে চোখে যে অস্বস্তি তৈরি হয় তা কমিয়ে আনে। রঙ এবং কনট্যুরের বিষয়ে দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে বলেও জানিয়েছে ফ্রেমস ডিরেক্ট।

এসব সুবিধা থাকার ফলেই ওয়াটার স্পোর্টস এবং তুষারে বা কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্যে কাজ করার সময় এই রঙের সানগ্লাস ব্যবহার করা ভালো।
সবুজ
সবুজ রঙের সানগ্লাস বিভিন্ন পরিবেশে ব্যবহারোপযোগী। এটিও কালার পারসেপশন এবং কনট্রাস্ট বৃদ্ধি করে, চোখে সূর্যের আলো কম পড়তে দেয় এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন জিনিসকে উজ্জ্বল দেখায়।

রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে বাইরে কাজকর্ম করার সময়, যেমন- গলফ খেলা, মাছ ধরা,হাইকিং এর সময় এই শেডের সানগ্লাস ব্যবহার করা উচিত। তবে কম আলোতে বা মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়াতেও এগুলো একই রকম কার্যকর।
গোলাপি বা লাল
গোলাপি বা লাল রঙের বিভিন্ন শেডের সানগ্লাস 'ডেপথ পারসেপশন' এর জন্য আদর্শ বলে জানায় হান্টিং অ্যান্ড ফিশিং। ডেপথ পারসেপশন হলো কোনো বস্তুকে তিনটি মাত্রায় দেখার ক্ষমতা; সেই বস্তুর আকার এবং আপনার দৃষ্টি থেকে কতটা দূরে রয়েছে। চোখের এবং মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ একইসঙ্গে কাজ করতে থাকে ওই তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, বস্তুটির দূরত্ব অনুমান এবং সেটি দেখার মতো ইমেজ তৈরি করার জন্য।

গোলাপি বা লাল রঙের সানগ্লাস উইন্টার স্পোর্টসে ব্যাপক জনপ্রিয় কারণ সাদা পটভূমিতে এটি খব ভালো কনট্রাস্ট তৈরি করে। আবার এই লেন্সগুলো চালকদের জন্য এবং আলোর প্রতি যারা সংবেদনশীল বা চোখে কোনো সমস্যা আছে, তাদের জন্যও উপকারী হতে পারে। কারণ এই রঙের সানগ্লাস ব্যবহার করলে চোখের উপর চাপ কম পড়ে এবং এক ধরনের প্রশান্তি দেয় চোখে।
ধূসর
ধূসররঙা সানগ্লাস নিরপেক্ষ কালার পারসেপশন তৈরি করে এবং রং বিকৃত না করেই সার্বিকভাবে উজ্জ্বলতা কমিয়ে আনে বলে জানায় ভিএসপি। এগুলো বহুমুখী পরিস্থিতিতে ব্যবহারোপযোগী, ফলে প্রতিদিনই ব্যবহার করা যায়। উজ্জ্বল সূর্যালোকে এগুলো চোখে আলো কম পড়তে দেয় এবং চোখের ক্লান্তি কমায়। আবার মেঘলা আবহাওয়ায় বা কম আলোতেও চোখকে প্রশান্তি দেয়। দৌড়ানো, সাইক্লিং, সমুদ্রসৈকতে ঘুরাফেরা বা গাড়ি চালানর সময় ধূসর রঙের সানগ্লাস ব্যবহার করা যায়।
চশমা কেনার ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়
চোখকে সুরক্ষা দেয় এমন সানগ্লাস কেনার সময় শুধু রঙ এবং স্টাইলই নয়, আরও অনেক বিষয় বিবেচনা করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, লেন্স কোটিং, লেন্স কি দিয়ে তৈরি, ফ্রেম কি দিয়ে তৈরি সেসবও মাথায় রাখা উচিত। পোলারাইজড লেন্স যেমন চোখে সূর্যের আলো কম পড়তে দেয়, তেমনই আবার মিররড বা ফ্ল্যাশ কোটিং ভিজুয়াল কমফোর্ট দেয় বেশি।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হলো সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে চোখকে সুরক্ষা দেওয়া। আপনি যে সানগ্লাস কিনছেন তা এই রশ্মিকে প্রতিহত করতে পারে কিনা সেটি অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি আমাদের চোখের নানা ক্ষতি করতে পারে, এমনকি চোখে ছানি বা ক্যান্সারও হতে পারে। আর এই সবগুলো বিষয় মাথায় রেখেই একটা ভালো, আদর্শ সানগ্লাস ব্যবহার কর উচিত যা একইসঙ্গে সুরক্ষা এবং আরাম, দুটোই দেবে।
(এ নিবন্ধে শুধুমাত্র সাধারণ কিছু তথ্য দেওয়ার উদ্দেশ্যে, স্বাস্থ্য বা চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শের উদ্দেশ্যে নয়। স্বাস্থ্য বা চিকিৎসা সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।)