ধুমপায়ীদের ফুসফুস ভালো রাখার উপায়

সিগারেট খাওয়া যাদের নেশা, তারা সহজে তা ছাড়তে পারেন না, এ কথা আমরা সবাই জানি। তা সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে এবং বিজ্ঞাপনে যতই সতর্কবার্তা লেখা থাকুক।
তবু শুরুতেই মনে করিয়ে দিতে চাই, তামাকজাতদ্রব্য সেবনের ফলে যে ক্ষতি মানবদেহে হয়ে থাকে, তা অপূরণীয়। তবে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চললে অনেকখানি উপকার পাওয়া যাবে।

ভাঁপ
জার্নাল অব পালমোনারি অ্যান্ড রেসপিরেটরি মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় ফুসফুস ভালো রাখতে গরম পানির ভাঁপ কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে।
১৬ জন পুরুষের ওপর গবেষণাটি চালানো হয়- যারা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজে (সিওপিডি) আক্রান্ত ছিলেন। এ ব্যাধিতে আক্রান্তরা ঠিকভাবে নিশ্বাস নিতে পারেন না।
গবেষকরা পরীক্ষাটি করার আগে ওই ১৬ জনের হৃদকম্পন ও শ্বাসপ্রশ্বাসের হার অনেক কম দেখতে পান।
গবেষণা চলাকালে রোগীরা নিয়মিত গরম পানির ভাঁপ নিতে থাকেন। পরবর্তীকালে দেখা যায়, তাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের হার অনেকটাই বেড়েছে। তাই ফুসফুস ভালো রাখতে নিয়মিত ভাঁপের ব্যবহার খুব উপযোগী।
নিয়মিত গরম পানির ভাঁপ ফুসফুসের নালায় জমে থাকা শ্লেষ্মা গলিয়ে ভালোভাবে নিশ্বাস নিতে সাহায্য করে।

গ্রিন টি
শারীরিক সুস্থতায় গ্রিন টির বিকল্প বিরল। এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ অনেক, যা ফুসফুস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
ফুসফুসের টিস্যুগুলো ধূমপানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্রিন টিতে থাকা উপাদানগুলো সেই ক্ষতি থেকে ফুসফুসকে বাঁচায়।
দ্য জার্নাল অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষণায় গ্রিন টির এমন সক্ষমতার কথা জানানো হয়েছে। এক হাজার প্রাপ্তবয়স্ক কোরিয়ানের ওপর গবেষণাটি চালানো হয়। তারা নিয়মিতভাবে দিনে দুইবার গ্রিন টি পান করতেন। এরপর গবেষকরা দেখতে পান, গ্রিন টি না খাওয়া ব্যক্তিদের ফুসফুসের তুলনায় যারা নিয়মিত খেয়েছেন, তাদের ফুসফুস বেশি কার্যকর।

অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাবার
শ্বাসকষ্ট বা বুকে চাপ কমাতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাবার অনেক উপকারী। এজন্য খাদ্যতালিকায় হলুদ, সবুজ শাক-সবজি, চেরি, ব্লুবেরি, জলপাই, আখরোট, মটরশুটি ও মসুর ডাল রাখতে হবে।

শরীরচর্চা
ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে শারীরিক কসরতের বিকল্প নেই। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায়। ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের মতো কঠিন রোগের ঝুঁকি কমে।
ফুসফুসের সুস্থতায় নিশ্বাসের ব্যায়ামগুলো করার বিকল্প নেই। ব্রিদিং এক্সারসাইজের মাধ্যমে ফুসফুসের জটিলতা দূর করা সম্ভব। বুক ভরে শ্বাস নেওয়ায় শরীরে অক্সিজেনের সাপ্লাই বাড়ে। যারা সিওপিডি, সিসটিক ফাইব্রোসিস বা অ্যাজমার সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য ব্রিদিং এক্সারসাইজ সবচেয়ে কার্যকরি।

মধু
কাশি কমাতে মধুর উপকার অনেক। ফুসফুসে জমা শ্লেষ্মা দূর করতে এটি সাহায্য করে। কুসুম গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খেলে কাশির প্রকোপ কমে।
মধুতে থাকা জীবাণুনাশক উপাদানগুলো সংক্রমণ রোধেও সাহায্য করে।

গাজর
গাজরের রস শুধু ফুসফুস নয়, শরীরের নানা দূষিত পদার্থকেও বের করে দেয়। প্রতিদিন অল্প পরিমাণ গাজরের রস খেলে শরীর অনেক চাঙা থাকে।
গাজরের সঙ্গে আপেল বা আঙুরের রস যোগ করলে আরও উপকার পাওয়া যায়।

পুদিনা পাতা
ফুসফুস পরিষ্কারের জন্য খাদ্য তালিকায় পুদিনা পাতা রাখা যেতে পারে। এ পাতায় যে উপাদান রয়েছে, তা ফুসফুসের যেকোনো সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম। নানা ধরনের ফুসফুসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে পুদিনা-তুলসী, এমনকি বাসক পাতার রস বেশ উপকারী।

আনারস
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি- এ দুটি উপাদান প্রাকৃতিকভাবেই ফুসফুস পরিষ্কার করে। এক্ষেত্রে আনারস বা নানা ধরনের বেরি, পেয়ারা ইত্যাদি ফল দারুণ কাজ দেবে। এসব ফলের রসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি রয়েছে।

আদা
ঠাণ্ডায় নাক বন্ধ হওয়া রোধে ঘরোয়া দাওয়াই হলো আদা। তবে এর পাশাপাশি, ধূমপায়ীদেরও ফুসফুস পরিষ্কার করতে পারে এটি। প্রতিদিন এক টুকরো আদা চিবুলে শ্বাসতন্ত্র ও ফুসফুস থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়ে যায়।
আদাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা শ্বাসযন্ত্রের ভেতরে থাকা বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করতে সহায়তা করে। এতে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বিটা ক্যারোটিন ও জিংকসহ অনেকগুলো ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে।
এছাড়া ফুসফুসের ক্যানসার কোষ মেরে ফেলতেও আদার উপকার বেশ পরিচিত।
রান্নায় কিংবা ভেষজ হিসাবে অনেক খাবারে আদা যোগ করা যেতে পারে। আদার চা করে খেলেও বেশ উপকার পাওয়া যায়।

লেবুর শরবত
লেবুর শরবত প্রতিদিন খেলে ফুসফুস শক্তিশালী হয় এবং বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়।

যোগব্যায়াম
গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়। নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে ফুসফুস শক্তিশালী হয় এবং প্রাকৃতিকভাবে ফুসফুস পরিষ্কার হয়।

দুগ্ধ জাতীয় খাবারে মানা
ফুসফুস পরিষ্কার রাখতে হলে দুগ্ধজাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। কারণ দুধ জাতীয় খাবার পরিষ্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।

হলুদ
হলুদের মনকাড়া উজ্জ্বল রঙের জন্য এর অন্য নাম 'সোনালি মশলা'। এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যের জন্য ফুসফুস শক্তিশালী হয় এবং বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়।

আপেল
প্রবাদ আছে: 'প্রতিদিন একটা আপেল আপনাকে ডাক্তার থেকে দূরে রাখবে।' এই ফলে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাভোনয়েডস, ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস ও ভিটামিন সি- যা ফুসফুসকে রোগের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়াই করতে সহায়তা করে।

রসুন
রসুনে থাকা এলিসিন নামের একটি যৌগ বেশ দাপুটে অ্যান্টিবায়োটিক এজেন্ট হিসাবে কাজ করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সংক্রমণগুলো কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে। এটি প্রদাহ কমাতে, হাঁপানি উন্নত করতে এবং ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে।
আরও...
প্রাকৃতিকভাবে ফুসফুস পরিষ্কার করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে, যা ধূমপানের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে এবং দেহকে ভেতর থেকে ডিটক্সাইফাই করার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে কাজে দেয়। তাই এ জাতীয় আইটেমগুলো আমাদের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
শুধু ধূমপায়ীরাই নয়, অন্যদের বেলাতেও এই পরামর্শগুলো খুবই উপকারী। তবে ফুসফুসকে একেবারেই পরিষ্কার করতে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না।
- সূত্র: ইন্টারনেট
ছবি: সংগৃহীত