যে কীর্তিতে মুশফিকই বাংলাদেশের প্রথম

মাইলফলক ডাকছিল মুশফিকুর রহিমকে, যা হবে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম। ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদার ফরম্যাট টেস্টে দারুণ এই মাইলফলক ছুঁতে তার দরকার ছিল ৬৮ রানের। দারুণ ব্যাটিংয়ে তৃতীয় দিনে তুলে নেন ৫৩ রান, বাকি ১৫ রান তুলতে চতুর্থ দিন সোয়া এক ঘণ্টা সময় নিলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। তাতে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ৫ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছে গেলেন মুশফিক।
একই মাইলফলকে অবশ্য তামিম ইকবাল আগে পৌঁছাতে পারতেন। টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি করে ১৩৩ রানে অপরাজিত আছেন বাঁহাতি অভিজ্ঞ এই ওপেনার। ৫ হাজারে পৌঁছাতে তার দরকার আর ১৯ রান। যা হয়ে যেতে পারতো তৃতীয় দিনেই। কিন্তু প্রথমে পায়ে টান লাগা ও পরে হাতে চোট পাওয়ায় স্বেচ্ছায় মাঠ ছাড়েন তামিম। মুশফিকের সামনে সুযোগ আসে প্রথম হিসেবে মাইলফলক ছোঁয়ার। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৬তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে যান তিনি।
মাইলফলকে পৌঁছানোর অপেক্ষা, মুশফিকের জন্য সময়টা নিশ্চয়ই বিশেষ। যেখানে থাকার কথা রোমাঞ্চ, আবার দুশ্চিন্তায়। কিন্তু চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিনেই কিনা তাকে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি অপেক্ষায় থাকতে হলো। খেলা শুরু হওয়ার কথা ১০টায়, কিন্তু চট্টগ্রামে মঙ্গলবার রাতভর বৃষ্টি হয়। সকাল পৌনে ৯টা পর্যন্ত ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়। এদিন আধা ঘণ্টা পিছিয়ে সাড়ে ১০টায় শুরু হয় খেলা।
আগের দিনের অপরাজিত সঙ্গী লিটন কুমার দাসকে নিয়ে মাঠে নামেন মুশফিক। সাবলীল শুরুর পর ধীরে ধীরে অনন্য কীর্তির দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। এদিন কোনো তাড়া নয়, শান্ত-সুন্দর মুশফিকের দেখা মেলে। পুরোপুরি টেস্ট মেজাজে ব্যাটিং করে যেতে থাকেন তিনি। ১২৩তম ওভারে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। লঙ্কান পেসার আসিথা ফার্নান্দোর করা ডেলিভারিটি মুশফিকের গ্লাভস ছুঁয়ে চলে যায় ফাইন লেগে, ২ রান নিয়ে ৫ হাজার পূর্ণ করে নেন মি. ডিপেন্ডেবল।
টেস্ট ইতিহাসের ৯৯তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫ হাজার রানের মাইফলক ছুঁয়েও নির্লিপ্ত মুশফিক, শুরুতে থাকলো না কোনো উদযাপন। সঙ্গী লিটন এগিয়ে গিয়ে জানালেন অভিনন্দন। জহুর আহমেদের ড্রেসিং রুম থেকেও এলো শুভেচ্ছা, জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠলো তার ছবি ও ঘোষণা, 'প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মুশফিকের ৫ হাজার রান। হেলমেট খুলে, ব্যাট উঁচিয়ে সেটার জবার দিলেন মুশফিক। এরপর আবারও আগের ছন্দে ব্যাটিং শুরু।

মাইলফলক ছোঁয়ার তৃপ্তিতে মুশফিক নিশ্চয়ই প্রফুল্ল। একই সঙ্গে স্বস্তির নিশ্বাসও ফেলার কথা তার। গত মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম এই ব্যাটিং কাণ্ডারী। প্রোটিয়াদের মাটিতে চার ইনিংসে ৫৯ রান করেন তিনি, সর্বোচ্চ ছিল ৫১ রান। বাকি তিন ইনিংসে তার রান ৭, ০ ও ১। ঘরের মাঠে এসে খারাপ সময়কে ছুটিতে পাঠালেন মুশফিক, সাগরিগায় গড়লেন কীর্তিও।
৮১তম টেস্ট ও ১৪৯তম ইনিংসে পাঁচ হাজারির ক্লাবে পৌঁছালেন ২০০৫ সালে ১৭ বছর বয়সে লর্ডসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু করা মুশফিক। লর্ডসের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয়েছিল তার। চার হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছাতে মুশফিকের লেগছিল ৬৬ টেস্ট। পরের হাজার রান করতে ১৫ টেস্ট লাগলো তার।