নারাইন ঝড়ে বিপিএলের ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স

ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে সামনে মাঝারি লক্ষ্য। ওপেনিংয়ে পরিবর্তন এনে এদিন লিটন কুমার দাসের সঙ্গে সুনীল নারাইনকে পাঠালো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এই এক পরিবর্তন আনার পর কুমিল্লাকে আর কিছুই ভাবতে হলো না। উইকেটে গিয়ে ব্যাটকে তরবারিতে পরিণত করা নারাইন গড়লেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড। বাকি কাজটুকু সারলেন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস, ফাফ ডু প্লেসি ও মঈন আলী। চট্টগ্রামকে উড়িয়ে ফাইনালে উঠে গেল কুমিল্লা।
বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। প্রথম কোয়ালিফায়ারে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ১০ রানে হার মানা কুমিল্লা দ্বিতীয় চেষ্টায় হয়ে উঠেছিল অপ্রতিরোধ্য। প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিপিএলের ফাইনালে উঠলো তারা।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। দারুণ শুরুর পর মাঝে দিক হারিয়ে ফেলে দলটি। সেখান থেকে দলকে পথ দেখিয়ে এগিয়ে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও আকবর আলী। শেষে মৃতুঞ্জয়ের ছোট ইনিংসের পরও ১৯.১ ওভারে ১৪৮ রানে অলআউট হযে যায় চট্টগ্রাম। জবাবে ম্যাচসেরা নারাইনের খুনে ব্যাটিংয়ের পর ইমরুল, ডু প্লেসি ও মঈনের ব্যাটে ১২.৫ ওভারেই (৪৩ বল হাতে রেখে) ৩ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই উইকেট হারায় কুমিল্লা। কিন্তু দলকে উইকেট হারানোর চাপ বুঝতেই দেননি নারাইন। শুরুতেই ঝড় তোলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই অলরাউন্ডার। ইমরুল কায়েসকে এক পাশে রেখে তাণ্ডব চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। চট্টগ্রামের বোলারদের গলির বোলারে পরিণত করে মাত্র ১৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন নারাইন।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) এটা রেকর্ড। নারাইনই এখন বিপিএলের দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির মালিক। ১৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা বরিশাল বুলসের পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান আহমেদ শেহজাদ এতদিন রেকর্ডটি দখলে রেখেছিলেন। কেবল বিপিএলেই নয়, স্বীকৃতি টি-টোয়েন্টিতে এটা দ্বিতীয় দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি। ১২ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে যৌথভাবে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ডটি দখলে রেখেছেন ভারতের যুবরাজ সিং, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল ও আফগানিস্তানের হযরতউল্লাহ জাজাই। এরপরই নারাইন, ১৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে যৌথভাবে দুই নম্বরে আছেন মার্কাস ট্রেসকথিকও।
১৬ বলে ৫টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৫৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে আউট হন নারাইন। কুমিল্লা ৫.৪ ওভারে ততোক্ষণে পৌঁছে গেছে ৭৯ রানে। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে কুমিল্লার সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৮৪ রান। যা বিপিএলের ইতিহাসের সেরা পাওয়ার প্লে। নারাইন ঝড় তুলে বিদায় নেওয়ার পর অধিনায়ক ইমরুলও বেশি সময় টিকতে পারেননি। ২৪ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ২২ রান করেন তিনি।
এরপর দাপুটে ব্যাটিং করেন ডু প্লেসি ও মঈনও। ডু প্লেসি ২৩ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন। মাত্র ১৩ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩০ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন মঈন। কুমিল্লার শরিফুল ইসলাম, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ও বেনি হাওয়েল একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে শুরুটা দাপুটে হয় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের। সুস্থ হয়ে মাঠে ফেরা উইল জ্যাকসের সঙ্গে এদিন শুরু থেকে মারকুটে মেজজে ব্যাটিং শুরু করেন জাকির হাসানও। ৩ ওভারে স্কোরকার্ডে ৩০ রান যোগ করেন তারা। জ্যাকস-জাকিরের ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে চট্টগ্রাম শিবির যখন উদ্বেলিত, তখনই আঘান হানেন শহিদুল ইসলাম।
৯ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ১৬ রান করা ইংলিশ ব্যাটসম্যান জ্যাকসকে ফিরিয়ে দেন কুমিল্লার ডানহাতি এই পেসার। প্রথম উইকেট পতনের পরই দিক হারিয়ে ফেলে দারুণ শুরু করা দলটি। দলীয় ৩৯ রানে থামেন আগের ম্যাচের নায়ক চ্যাডউইক ওয়ালটন। এদিন ২ রান করেই ফিরে যান তিনি।
চট্টগ্রামের ইনিংসে সবচেয়ে বড় আঘাতটি হানেন মঈন আলী। কুমিল্লার এই ইংলিশ অলরাউন্ডার টানা দুই বলে ফিরিয়ে দেন ২০ রান করা জাকির হাসান ও শামীম হোসেন পাটোয়ারীকে। ৩ ওভারে ৩০ রান তোলা দলটিই ১২ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে।
৪৩ রানেই নেই ৪ উইকেট, চট্টগ্রামে যখন মাঝ দরিয়ায়; তখন তাদের বিপদ আরও বাড়ে আফিফ হোসেন ধ্রুবর বিদায়ে। ৫০ রানে ৫ উইকেট হারানো দলকে পথ দেখানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও আকবর আলী। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে খাদের কিনারে চলে যাওয়া দলকে ঠিক পথে ফেরান তারা।
ষষ্ঠ উইকেটে ৬১ রানের জুটি গড়েন তারা। দারুন ব্যাটিংয়ে ২০ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ৩৩ রান করে আউট হন আকবর। এরপর আরও কিছুটা পথ পাড়ি দেন মিরাজ। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৩৮ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন। শেষ দিকে ঝড় তুলে ৮ বলে ২ ছক্কায় ১৬ রান করেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। নাসুম আহমেদ প্রথম বলেই আউট হওয়ায় ১৯.১ ওভারে অলআউট হয়ে যায় চট্টগ্রাম।