দোষী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের হুঁশিয়ারি

রোববার দিনভর মেহেদী হাসান মিরাজ-চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের মধ্যে নাটক চললো, থাকলো নানা মোড়। যদিও দিন শেষে দুই পক্ষই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। সমঝোতার পর চট্টগ্রামেই থেকে যান মিরাজ। তবে দিনের শেষে করা সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অলরাউন্ডার জানিয়ে দেন, এখন চট্টগ্রাম চাইলেও আর অধিনায়কত্ব করবেন না তিনি।
হঠাৎ করে অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়ায় অপমানিত বোধ করা মিরাজ দল ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। বিসিবির প্রধান নির্বাহী ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে চিঠি পাঠিয়ে জানান চট্টগ্রাম ছাড়ার ইচ্ছার কথা। চিঠিতে মায়ের অসুস্থতার কথা জানালেও মিরাজ দল ছাড়তে চেয়েছিলেন ম্যাচের মাত্র তিন ঘণ্টা আগে অধিনায়কত্ব হারানোর কারণেই।
ঢাকার উদ্দেশে চট্টগ্রামের পেনিনসুলা হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়েন মিরাজ। তাকে অনেক বুঝিয়ে ফেরানো হয়, লম্বা আলোচনার পর খেলতে রাজি করানো হয়। এ ঘটনায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখেছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। দুই পক্ষকে শুনানিতে ডাকা হবে। দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এমনই জানিয়েছেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও বিসিবির শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান শেখ সোহেল। দোষী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে। সোমবার মিরপুরে তিনি বলেন, 'মিরাজের এখানে দোষ আছে, ম্যানেজমেন্টেরও দোষ আছে। দুই পক্ষই কিন্তু দোষী সাব্যস্ত হয়। জাতীয় দলের এত বড় মাপের খেলোয়াড় হয়ে এই টুর্নামেন্টের ভেতরে মিরাজের এমন করা ঠিক ছিল না।'
'তার অপেক্ষা করা উচিত ছিল। যেহেতু আমরা ডিসিপ্লিনারি কমিটি ছিলাম, একটু অপেক্ষা করতে পারতো। ফ্র্যাঞ্চাইজিরও এখানে সমস্যা আছে। ফ্র্যাঞ্চাইজিকেও ছাড় দেব না। শুনানি হবে কিছুদিনের মধ্যে। দুই পক্ষকে নিয়ে আমরা শুনানি করব। এখানে ফ্র্যাঞ্চাইজিরও ধৈর্য ধরা উচিত ছিল, নিজেরা আলাপ করে দুই পক্ষই বোঝাপড়া করে একটা কিছু করতে পারত। এটা এত বড় পর্যায়ে যাওয়ার জিনিস ছিল না।'
দুই পক্ষের দোষ দেখছেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিকও। তিনি বলেন, ''ফ্র্যাইঞ্চাজি যেভাবে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে, মিরাজও যেভাবে জৈব সুরক্ষা বলয় ব্রেক করে বাইরে এসে বিবৃতি দিয়েছে, ঠিক কোনভাবেই এটা কাঙ্ক্ষিত নয়। গভর্নিং কাউন্সিল থেকে আমরা যা করতে পারি, আমরাতো টিম ম্যানেজমেন্টের ভেতর ঢুকতে পারি না।'
দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান মল্লিক। তিনি বলেন, 'অবশ্যই প্রত্যেককে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। যদি সেটা কেউ না করে, ভবিষ্যতে সে খেলোয়াড় হোক অথবা ফ্র্যাঞ্চাইজি, আমরা তাকে বিপিএলে রাখব না। এটাই আমরা করতে পারি। নয়তো আমরা কোনো শাস্তি দিতে পারি। কিন্তু এটাতো কোনো সমাধান নয়। আপনাকে এটা দেখতে হবে বড় করে। টুর্নামেন্টের ইমেজের জন্য এটা কিন্তু হ্যাম্পার হয়। আমরা দুই গ্রুপকেই শুনানির জন্য ডেকেছি। দুই পক্ষের কথাই শুনব। কাল কিন্তু আমরা বলাতেই দুই পক্ষ আলোচনা করে এটা সমাধান করেছে।'
বোরবার দুপুরে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুশীলন ছিল চট্টগ্রামের। এদিন দলের সঙ্গে মাঠে যাওয়া বা অনুশীলন, কোনোটাই করেননি মিরাজ। বিকালে সাড়ে ৫টার ফ্লাইটে ঢাকার ফেরার টিকেট কাটেন তিনি। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বিমানবন্দরের উদ্দেশে বিকাল সোয়া চারটার দিকে চট্টগ্রামের পেনিনসুলা হোটেল থেকে বের হয়ে যান মিরাজ।
নিচে গিয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন চট্টগ্রাম অলরাউন্ডার। এ সময় চট্টগ্রামের লজিস্টিক ম্যানেজার হিরক নিচে নেমে মিরাজকে অনেক বুঝিয়ে হোটেলে ফেরান। লবিতে বসে দীর্ঘক্ষণ মিরাজকে অনুরোধ করতে থাকেন হিরক। সোয়া পাঁচটার দিকে মিরাজকে নিয়ে উপরে ওঠেন তিনি। তখনও স্ত্রী-সন্তানকে গাড়িতে বসার কথা বলে যান মিরাজ। এর কিছুক্ষণ পর হিরক নিচে নেমে মিরাজের স্ত্রী-সন্তানকে উপরে নিয়ে যান। দীর্ঘক্ষণ আলোচনার পর দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়।