অবশেষে বিদ্রোহ শেষ, অনুশীলনে ফিরতে রাজি নারী ফুটবলাররা

অনেকদিন ধরেই উত্তাল বাংলাদেশের নারী ফুটবল। কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ এনে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুনসহ ১৮ ফুটবলার। অবশেষে সেই বিদ্রোহ শেষ হলো। ইংলিশ কোচ বাটলারের অধীনেই অনুশীলনে ফিরতে রাজি হয়েছেন ১৬ দিন ধরে নিজেদের অবস্থানে অটল থাকা ফুটবলাররা। রোববার সাংবাদিকদের এটা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
বাটলারের বিরুদ্ধে মানসিক হয়রানি ও উৎপীড়নসহ আরও অনেক অভিযোগ এনে তার অপসারণ দাবি করেন বিদ্রোহ করা নারী ফুটবলাররা। সাবিনারা জানান, বাটলারের অধীনে তারা খেলবেন না, কোচকে অপসারণ না করলে গণ অবসরে যাবেন। এই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন হুমকি দেওয়া ফুটবলাররা। নারী উইংয়ের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেন তারা।
বিদ্রোহ থেকে সরে এলেও এখনই অনুশীলনে ফিরছেন না বাটলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা ফুটবলাররা। বাফুফের ক্যাম্পে থাকা ফুটবলাররা ২৪ ফেব্রুয়ারি ছুটিতে যাবেন। ছুটিতে যাবেন সাবিনারাও, ছুটি কাটিয়ে ফিরে বাটলারের অধীনে অনুশীলনে ফিরবেন তারা। তাদের সঙ্গে চুক্তিও করা হবে বলে জানিয়েছেন নারী উইংয়ের প্রধান কিরণ। বিদ্রোহ করা ১৮ ফুটবলারের সঙ্গে আজ আলোচনায় বসেছিলেন তিনি।
সাবিনা-ঋতুপর্ণারা অনুশীলনে ফিরতে এবং চুক্তি করতে নিশ্চয়তা দিয়েছেন জানিয়ে কিরণ বলেন, 'সভাপতি ও আমার পক্ষ থেকে মেয়েদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলাম। ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা করেছি আমরা। আজকেও তাদের সাথে বসেছিলাম আমি। আজকে বসার পরে আমি যেটা বলতে পারি, মেয়েরা ফিরবে, ট্রেনিংয়ে ফিরবে; কিন্তু এখন ফিরবে না। কেননা, আমাদের ক্যাম্প বন্ধ হয়ে যাবে ২৪ ফেব্রুয়ারি, যেহেতু আমরা আরব আমিরাতে যাব দুটি ম্যাচ খেলার জন্য।'
'দল চলে যাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ফলে ক্যাম্প বন্ধ হবে। ক্যাম্প বন্ধ মানে পুরোটাই বন্ধ। সিনিয়র মেয়েরাও একটা ব্রেক চাচ্ছে, এই সুযোগে তারা একটা ব্রেক পাবে, এরপর ফিরে তারা অনুশীলন শুরু করবে। ওরা যখন অনুশীলন শুরু করবে, তার আগে আমরা যেটা করব, আমরা ও বাফুফের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ, সভাপতি মেয়েদের, কোচ-সবার সাথে বসে তাদের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, সেটা মিটিয়ে দেওয়া হবে।' যোগ করেন তিনি।
গত ৩০ জানুয়ারি বাফুফে ভবনের নিচে সংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিন পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বিদ্রোহ করা ১৮ ফুটবলার। ছিল 'গালিগালাজ করা', 'বডি শেমিং', 'মানসিক নির্যাতন'- এর মতো ভয়াবহ অভিযোগও। এদিন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়তেও দেখা যায় সাবিনা, মাসুরাদের। সেদিন কোচের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেন সর্বশেষ সাফ জয়ের নায়ক ঋতুপর্ণাও।
কিন্তু পুরো বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি বলে মনে করেন কিরণ। তার ভাষায়, 'তারা বুঝতে পেরেছে যে, ভুল বোঝাবুঝি ছিল। তো সেখান থেকে তারা বেরিয়ে আসছে। তারা একসাথে অনুশীলন করবে, ক্যাম্পে থাকবে, যদি তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এবং অসন্তোষ থাকে, তাহলে তো কাজগুলো ঠিক ভালোভাবে হবে না। এ জন্য দুই পক্ষের সাথে একসাথে বসে সেগুলো সমাধান করা হবে। মেয়েরা আমাকে বলেছে ফিরে এসে তারা অনুশীলন করবে, চুক্তি স্বাক্ষর করবে। এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক।'
আলোচনায় ১৮ জন ফুটবলারই অনুশীলনে ফেরার কথা জানিয়েছেন বলে দাবি কিরণের। কোচ থাকলে খেলবেন না বা অবসরে যাবেন, ফুটবলাররা এই অবস্থান থেকেও সরে এসেছেন বলে জানান তিনি। কিরণ বলেন, 'আমি ১৮ জনের সাথে বসেছি। এটা ১৮ জনেরই মুখের কথা, একজনের কথা না। তাদের এটাও বলেছি, আমি প্রেস কনফারেন্স করবো, তখন ফেরার বিষয়টি অধিনায়ক এবং বাকি সবাই বলেছে। এখানে কোনো শর্ত নেই, মেয়েরা (কোচ থাকলে ফিরব না) এমন কোনো শর্ত দেয়নি।'
বিদ্রোহ করা ১৮ ফুটবলারের হুমকির পর নিজের অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন বাটলারও। ইংলিশ এই কোচ জানান, নির্দিষ্ট কয়েকজন থাকলে এই দলে আর কোচিং করাবেন না তিনি। তার বক্তব্য ছিল, 'হয় ওরা, নয় আমি।' কোচের এমন মন্তব্য নিয়ে কিছ বলেননি কিরণ। তিনি বলেন, 'আমি কোচের সাথে কোন কথা বলিনি, এ কারণে এটা নিয়ে বলতে পারবো না। ছুটি শেষ করে ওরা যখন ক্যাম্পে ফিরে আসবে, তখন আমরা বসব। দুই পক্ষের সাথে আবার বসব, যার যা ভুল-ভ্রান্তি আছে, কথা বলে মিউচুয়াল করে ওরা চুক্তি করবে, ট্রেনিংয়ে যাবে।'