স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্রাইভার মালেকের বিলাসবহুল দরজাই তার দুর্নীতির গল্প বলছে

সূক্ষ্ম নকশায় খোদাই করা কাঠের দরজাটি চোখে পড়ে তার শৈল্পিক সৌন্দর্য ও নিপুণ কারুকাজের জন্য, যা একাধারে প্রকাশ করে মালিকের বিত্ত ও রুচির পরিচয় এবং লুকিয়ে থাকা এক গোপন রহস্য।
এই দরজার পেছনেই ছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক গাড়িচালক আবদুল মালেকের বাসস্থান।
প্রশ্ন জাগে—একজন নিম্নপদস্থ সরকারি কর্মচারী কীভাবে রাজকীয় প্রাসাদের মতো এমন বিলাসবহুল দরজার মালিক হতে পারেন? দুর্নীতি ও অসততা ছাড়া এই ঐশ্বর্যের ব্যাখ্যা কী?
আসলে এটি ছিল এক প্রাসাদ—দুর্নীতির রাজত্বে আবদুল মালেকের একখানা প্রাসাদ।
রাজধানীতে মালেকের একাধিক বাড়ি, সাভারে ১৫ কাঠা জমি, একাধিক গাড়ি এবং বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল অঙ্কের টাকার হদিস পাওয়া যায়। এই রাজকীয় দরজাটি ছিল তার মালিকানাধীন একটি বাড়ির।

র্যাবের গোয়েন্দা তথ্যানুসারে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৃতীয় শ্রেণির সাবেক কর্মচারী মালেক ১৯৮২ সালে সাভারের এক স্বাস্থ্য প্রকল্পে গাড়িচালক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে, ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহণ পুলে যোগ দেন।
তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলমের গাড়িচালক ছিলেন। এর আগে তিনি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম ইনায়েত হোসেনের গাড়িচালক ছিলেন।
২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মালেককে একটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বহন এবং জাল টাকা লেনদেনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর পরদিন (২১ সেপ্টেম্বর) দুটি মামলায় তাকে ১৪ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ এক কোটি ১০ লাখ ৯২ হাজার ৫০ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আব্দুল মালেক ও তার স্ত্রী নার্গিস বেগমের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম মামলা করেন।
একই দিন ৯৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪৮ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে মিথ্যাসহ অসাধু উপায়ে অর্জিত ও তার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ এক কোটি ৫০ লাখ ৩১ হাজার ৮১০ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের মালেকের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন নজরুল ইসলাম।
মামলা দুটি তদন্ত করে একই বছরের ২৭ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন নজরুল ইসলাম।
পরবর্তীতে, চলতি বছরের ২৩ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আলোচিত সাবেক গাড়িচালক আব্দুল মালেককে ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক জাকারিয়া হোসেনের আদালত।