ফরচুন বরিশালের টানা দ্বিতীয় নাকি চিটাগং কিংসের প্রথম

শক্তিশালী দল গড়া, মাঠে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন, জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা; এসবের হিসাব কষলে এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সবচেয়ে ছন্দময় ও সফলতম দল ফরচুন বরিশাল। প্রত্যাশার পথ ধরে ফাইনালে উঠে গেছে তামিম ইকবালের দল। শিরোপার লড়াইয়ে নাম লেখানো চিটাগং কিংসের পথচলা অবশ্য তেমন নয়। যদিও এই হিসেবে কী-ই বা আসে যায়! একই মঞ্চে বরিশালের পাশে দাঁড়িয়ে তারা। অপেক্ষা এবার শেষ লড়াইয়ের, শিরোপা জয়ের।
বিপিএলের ফাইনালে আজ সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে ফরচুন বরিশাল ও চিটাগং কিংস। বরিশালের সামনে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জেতার হাতছানি। এক যুগ পর বিপিএল ফেরা চিটাগং প্রথম শিরোপার আশায়। ফরচুন বরিশাল নামের ফ্র্যাঞ্চাইজিটির এটা তৃতীয় ফাইনাল, চার বছরের মধ্যেই তিনবার শিরোপার লড়াইয়ে নামছে তারা। দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে চিটাগং। ২০১৩ বিপিএলের ফাইনালে হার মানা দলটি এরপর আর আসরটিতে অংশ নেয়নি।
ফাইনালে ওঠার পথে বরিশালের পথচলা ছিল দুর্বার। জয়ে আসর শুরু করা দলটি মাত্র তিন ম্যাচে হেরেছে। লিগ পর্বের ১২ ম্যাচের ৯টিতে জিতে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে প্লে-অফে পা রাখে তারা। প্রথম কোয়ালিফায়ারে এই চিটাগংকেই ৯ উইকেটে উড়িয়ে ফাইনালের টিকে কাটেন তামিম, মুশফিক, হৃদয়রা। চিটাগংয়ের আসর শুরু হয় হারে, তবে এরপর টানা চার ম্যাচ জেতে মোহাম্মদ মিঠুনের দল। মাঠে ছন্দপতন হলেও দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানো দলটি ৮ জয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করে। এই ম্যাচে হারলেও দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রুদ্ধশ্বাস লড়াই শেষে খুলনা টাইগার্সকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে চিটাগং।
চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে আবারও শিরোপাতেই চোখ বরিশালের। তবে শিরোপার লড়াইয়ের আগে চাপ নিচ্ছে না তারা। তামিমের ভাষায়, ফাইনালে যে দল বেশি শান্ত থাকবে, তাদের হাতেই উঠবে শিরোপা। বরিশাল অধিনায়ক বলেন, 'যে দল বেশি শান্ত থাকবে, তাদেরই জেতার চান্স বেশি। আগেও দুইবার ফাইনাল খেলেছি। অতো বেশি চিন্তিত থাকি না ফাইনালে। আশা করি এই দিনও এভাবে যাক। ফাইনাল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি শান্ত থাকতে না পারেন, চাপে পড়ে যান, তখনই ভুল করবেন। শান্ত থাকা দলই বেশি সুযোগ পাবে।'
ফাইনালে বরিশালকে সমীহ দিচ্ছে চিটাগং, তবে শিরোপা জয়ের ব্যাপারে তারাও আত্মবিশ্বাসী। দলটির অস্ট্রেলিয়ান কোচ শন টেইট বলেছেন, 'অবশ্যই আমরা আত্মবিশ্বাসী। তবে অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে যাচ্ছি না। তবে আত্মবিশ্বাস তো রাখতেই হবে। ফাইনাল দুই দলের জন্যই সমান-সমান। দারুণ একটি ম্যাচ জিতে এসেছি আমরা। দলের মধ্যে তাই বিশ্বাস আছে। অনেকে হয়তো বলবে বরিশাল ফেভারিট, সমস্যা নেই। এটা তো বদলানো যাবে না। তবে আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমি নিশ্চিত, আমরা জিতলেও লোকে অবাক হবে না, আমরাও ভালো দল।'
ফাইনালে ওঠার পথে বরিশালের পক্ষে ব্যাট হাতে বড় অবদান রেখেছেন তামিম। অভিজ্ঞ বাঁহাতি এই ওপেনার যোগ্য নেতার মতোই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৩ ম্যাচে তিনটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৫.৯০ গড়ে দলের সর্বোচ্চ ৩৫৯ রান করেছেন তিনি। প্রথম দিকে ম্যাচ না পাওয়া ডেভিড মালানের অবদান আরও বেশি। সুযোগ পেয়েই নিয়মিত রান করে এসেছেন ইংলিশ এই ব্যাটসম্যান। আট ম্যাচে তিন হাফ সেঞ্চুরিসহ ৭৮.৭৫ গড়ে তার রান ৩১৫।
শুরুর দিকে রান না পাওয়া তাওহিদ হৃদয় ছন্দে ফিরেছেন, কোয়ালিফায়ারে চিটাগংয়ের বিপক্ষে তার খেলা ৮২ রানের ইনিংসটি বরিশালের জন্য স্বস্তির ব্যাপার। প্রয়োজনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও রেখেছেন অবদান। তবে মুশফিকুর রহিমকে তার মতো করে পায়নি বরিশাল। শুরুর কয়েকটি ম্যাচ খেলে চলে যাওয়া কাইল মেয়ার্স ফিরেছেন। ক্যারিবীয় এই অলরাউন্ডারও পেয়েছেন রানের দেখা।
বোলিংয়ে বরিশালের নেতা ছিলেন ফাহিম আশরাফ। পাকিস্তানি এই ডানহাতি এই পেসার ১১ ম্যাচে নেন দলের সর্বোচ্চ ২০ উইকেট। যা এখন পর্যন্ত বিপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই পারফরম্যান্স দিয়ে জাতীয় দলে ডাক পাওয়া ফাহিম ফিরে গেছেন দেশে। ১১ ম্যাচ খেলা স্পিনার তানভীর ইসলামের শিকার ১০ উইকেট। মোহাম্মদ নবী, রিশাদ হোসেনরাও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বরিশালের হয়ে এক ম্যাচ খেলা পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আলী চিটাগংয়ের বিপক্ষে নেন ৫ উইকেট। রান করার পাশাপাশি বোলিংয়েও অবদান আছে মেয়ার্সের, ছয় ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
শুরুর দিকে চিটাগংয়ের ব্যাটিং ভরসা ছিলেন উসমান খান ও গ্রাহাম ক্লার্ক; দুজনই পান সেঞ্চুরির দেখা। তবে সেই ধারাবাহিকতা তারা ধরে রাখতে পারেননি। ৮ ম্যাচে ২৮৫ রান করে জাতীয় দলের দলে ডাকে দেশে ফেরেন পাকিস্তানি ওপেনার উসমান। ইংলিশ ব্যাটসম্যান ক্লার্ক এখনও চিটাগংয়ের ভরসার জায়গা। ১৩ ইনিংসে একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরিতে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮৭ রান করেছেন তিনি। শেষ দিকে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দারুণভাবে দায়িত্ব পালন করা শামীম হোসেন পাটোয়ারী ১৪ ইনিংসে দুই হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৩৫০ রান।
প্রথম দিকে ব্যাটকে কথা বলাতে না পারলেও শেষ দিকে রানে ফিরেছেন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে বরিশালের বিপক্ষে ৭৫ রানের দুর্বার এক ইনিংস খেলেন তিনি। ব্যাট হাতে অধিনায়ক মিঠুন, হায়দার আলীরাও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বোলিংয়ে চিটাগংয়ের কাণ্ডারী খালেদ আহমেদ। ডানহাতি এই পেসার ১৩ ম্যাচে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ও আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ উইকেট নিয়েছেন। স্পিনার আলিস আল ইসলাম ১৩ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়ে দলের দ্বিতীয় সেরা। শরিফুল ইসলাম, আরাফাত সানিদের ভূমিকাও উল্লেখ করার মতো।
দীর্ঘ ৩৯ দিনের লড়াই শেষে ফাইনালের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফরচুন বরিশাল ও চিটাগং কিংস, আর মাত্র একটি ধাপ; এরপরই ধরা দেবে সোনালী শিরোপা। শিরোপা ধরে রাখার চাপ জয় করে বরিশাল টানা দ্বিতীয়বার উল্লাসে মাতবে, নাকি বিপিএল পাবে নতুন চ্যাম্পিয়ন; আর কয়েক ঘণ্টা পরই মিলবে এই উত্তর।