চার ঘণ্টা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ছিলেন দুর্বার রাজশাহীর মালিক

পারিশ্রমিক পরিশোধে আলোচনা বা কথা বলার পর্ব শেষ, এবার ব্যর্থ হলে দুর্বার রাজশাহীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে; দুদিন আগেই এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এমন হুঁশিয়ারির পরও ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দেয়নি বিপিএলের দলটি। এবার তাই আইনি ব্যবস্থাই নেওয়া হলো রাজশাহীর স্বত্ত্বাধিকারী শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। হেফাজতে নিয়ে তাকে জিজ্ঞসাবাদ করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নতুন করে আরও একবার পারিশ্রমিক পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
রোববার দিবাগত রাত ১২টার দিকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয় শফিকুর রহমানকে। পারিশ্রমিক ইস্যুতে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় তাকে। চার ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের দায় মেনে নেন তিনি। নতুন আশ্বাস দেওয়ার পর সোমবার ভোর ৪টার দিকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজত থেকে মুক্ত হন তিনি। রাজশাহীর মালিক জানিয়েছেন, তিনটি কিস্তিতে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ক্রিকেটারদের সব পারিশ্রমিক (৭৫ শতাংশ) পরিশোধ করবেন তিনি। সোমবার যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক বিবৃতিতে এটা জানানো হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, ২৫ শতাংশ হারে আজ সোমবার প্রথম কিস্তি, ৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় এবং ১০ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় কিস্তিতে বাকি থাকা ৭৫ শতাংশ পাওনা পরিশোধ করবেন তিনি। প্রতি কিস্তিতে খেলোয়াড় ছাড়াও দল সংশ্লিষ্ট সবাই অর্থ বুঝে পাবেন বলেও নিশ্চয়তা দেন তিনি। অন্যথায়, তার বিরুদ্ধে যেকোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে মর্মে জানিয়েছেন তিনি।
প্রথম কিস্তিতে আজ ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক দিয়েছে রাজশাহী। তবে ২৫ শতাংশ দেওয়ার কথা থাকলেও পুরোপুরি দেয়নি টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়া দলটি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহীর একজন ক্রিকেটার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আজ আমাদের ২৫ শতাংশ পাওনা দেওয়ার কথা ছিল, তবে পুরোপুরি ২৫ শতাংশ পাইনি আমরা। কারও ১০ লাখ পাওয়ার কথা থাকলে তাকে আট বা কারও ছয় লাখের জায়গায় পাঁচ লাখ দেওয়া হয়েছে। ৭ তারিখ দ্বিতীয় কিস্তিতে ২৫ শতাংশের সাথে আজ কম দেওয়া অংশ দিয়ে দেবে বলে জানিয়েছে। এখন দেখা যাক কী হয়, টাকা পেলেই হবে আমাদের। কারণ রাজশাহী এবার যে শিক্ষা দিয়েছে, সারা জীবন মনে থাকবে।'
চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) পারিশ্রমিক নিয়ে যতো আলোচনা-সমালোচনা; সেটার বেশিরভাগ জায়গাজুড়ে দুর্বার রাজশাহী। বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও নিয়ম মেনে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক দেয়নি দলটি। পারিশ্রমিক না পেয়ে চট্টগ্রামে একদিন অনুশীলন করেননি রাজশাহীর ক্রিকেটাররা। দলটির দেওয়া চেক দুবার বাউন্স হয়, পারিশ্রমিক না পেয়ে একটি ম্যাচে খেলেননি তাদের বিদেশি ক্রিকেটাররা। হোটেলেও আটকা ছিলেন বিদেশি ক্রিকেটাররা।
এমন ধারাবাহিকতায় গত শনিবার মিরপুর স্টেডিয়ামে রাজশাহীর মালিকের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। আসিফ মাহমুদকে ২ তারিখের মধ্যে ৫০ শতাংশ পারিশ্রমিক পরিশোধের কথা দেন শফিকুর, কিন্তু এই প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করেননি তিনি। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'উপদেষ্টা মহোদয়কে ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দলের ৫০ শতাংশ পাওনা পরিশোধের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি, বরং গণমাধ্যমে উঠে এসেছে অনিয়মের নানা অভিযোগ।'
শফিকুর রহমানকে বিজ্ঞাসাবাদ করার বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'সংশ্লিষ্ট সকলের পাওনা বুঝিয়ে দিতে ৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় দলটির বিতর্কিত মালিক শফিকুর রহমানকে। সংকট নিরসনে সমাধান জানতে চাইলে, নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়ে ২৫ শতাংশ হারে ৩, ৭ এবং ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তথা তিন কিস্তিতে দলের সব পাওনা পরিশোধ করবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।'