মানবাধিকার রক্ষায় সিআরপিসি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার: আসিফ নজরুল

আইন, বিচার ও সংসদ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, 'গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের সময় অধিকতর মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর (সিআরপিসি) আইন-১৮৯৮ সংশোধনের খসড়া প্রস্তুত করেছে সরকার।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাজধানীতে দুই দিনব্যাপী কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের সময় অধিকতর অধিকারভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কঠোর সুরক্ষার জন্য সিআরপিসি সংশোধনের খসড়া প্রস্তুত করেছি। খুব দ্রুতই এটি চূড়ান্ত করা হবে।'
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট 'কমনওয়েলথ চার্টার ইয়ুথ ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ-২০২৫' শীর্ষক এ কর্মশালার আয়োজন করে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, 'কমনওয়েলথ চার্টারের মূল মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকার আইনি সংস্কারের সাহসী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে।'
তিনি বলেন, 'আমরা সিভিল প্রসিডিউর কোড (দেওয়ানি কার্যবিধি) সংশোধন করেছি— যাতে বিচার আরও দ্রুত, সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য হয়।'
বিচার বিভাগের সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগের কথা জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, 'আমরা এ প্রক্রিয়া শুরু করেছি এবং আগামী ছয় মাসের মধ্যে এটির দৃশ্যমান অগ্রগতি নিশ্চিত করতে চাই।'
তিনি আরও জানান, সময়সীমার মধ্যে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা সংক্রান্ত আইন সংশোধন করা হয়েছে এবং বিবাহবিচ্ছেদসহ বিয়ের নিবন্ধনে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, যা লিঙ্গভিক্তিক সমতা রক্ষায় ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অতীতের অন্যতম বিতর্কিত আইন ছিল সাইবার সিকিউরিটি আইন। তবে তা সংশোধনের সময় সরকার ২৩টি খসড়া তৈরি করেছে এবং ব্যাপক পরামর্শের মাধ্যমে সংশোধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।
'আমরা গভীর পর্যালোচনা করে আইনটি সংশোধন করেছি। এমনকি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন, এ আইন খুব একটা খারাপ নয়। তাদের কাছ থেকে এ মন্তব্য পাওয়ার অর্থ, আইনটি যথেষ্ট ভালো হয়েছে,' যোগ করেন আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, অতীতের তুলনায় সাইবার সিকিউরিটি আইনে মানুষের অধিকারের সুরক্ষা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতন থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, 'বিচ্ছিন্নভাবে নয়, সবকটি আইনি পরিবর্তন সরকারের আইনের শাসন, সুশাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং মানুষের মর্যাদা রক্ষার প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন, যা কমনওয়েলথ চার্টারের মূল্যবোধের সঙ্গে মিল রেখে করা হয়েছে।
তিনি বলেন, 'কমনওয়েলথ চার্টার শুধুই ঘোষণাপত্র নয়, এটি আমাদের মধ্যে সীমান্তের বাইরে ঐক্যবদ্ধ রাখার নৈতিক নির্দেশনা।'
কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন পেশা ও সম্প্রদায়ের তরুণরা অংশ নেন এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা হয়।