ভক্তদের মেলায় পাকিস্তান-ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের ১০ মিনিট

প্রস্তুত মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড। অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহাসিক এই ভেন্যুতে ১৩ নভেম্বর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপার লড়াইয়ে নামবে পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড। এর আগের দিন মাঠের চারপাশে উৎসবমুখর পরিবেশ, সবখানে সাজ সাজ রব। বিশাল আয়তনের মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের বাইরে এদিন ভক্তদের মেলা বসেছিল। আয়োজনটা ছিল আইসিসির, যেখানে হাজির হয়ে পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের সঙ্গে কয়েক মুহূর্ত কাটানোর সুযোগ পেয়েছিল দুই দলের সমর্থকরা।
৯০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের বাইরে সবুজের সমুদ্র। চোখ মেললেই দেখা মেলে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মখমল সদৃশ সবুজ ঘাসের, যেখানে সারি সারিতে ঠায় দাঁড়িয়ে বিশাল আকৃতির নানা জাতের গাছ। এর মাঝেই পার্ক, যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। এখানকার একটা অংশে 'ফ্যান জোন, নামে জায়গা রেখেছে আইসিসি। ফাইনালের আগের দিন এখানে মঞ্চ তৈরি করে হাজির করা হয় দুই দলের কয়েকজন ক্রিকেটারকে, মঞ্চে রাখা হয় ট্রফিও।
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রথম সেমি-ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট কাটে পাকিস্তান। ওই ম্যাচে মাঠ কিংবা মাঠের বাইরে; পুরোটা দখলে ছিল পাকিস্তানী সমর্থকদের। সবুজে ছেযে যায় সিডনির সব গ্যালারি। কিউই সমর্থকদের রীতিমতো খুঁজে বের করতে হয়। ফাইনালের আগে মেলবোর্নেও একই চিত্র। আইসিসির ফ্যানজোনের অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের সমর্থকদেরই বেশি দেখা গেছে।
সিডনির মতো এখানেও ইংলিশ সমর্থকদের খুঁজে বের করতে হয়েছে। ফ্যান জোনের আয়োজনে গান বাজছিল, উপস্থাপক জানাচ্ছিলেন কিছুক্ষণের মধ্যেই মঞ্চে উঠবেন দুই দলের ক্রিকেটাররা। এ সময়ে পাকিস্তানী সমর্থকদের গগন বিদারী চিৎকারে ফেটে পড়ছিল পুরো এলাকা। ইংরেজি ও পাকিস্তানী গানে নেচে গেয়ে বিশেষ ক্ষণের অপেক্ষা করতে থাকেন তারা।
এর মাঝে দেখা মিললো এক ইংলিশ সমর্থকের। কাছে গিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই দুই হাত তুলে তিনি যেন বোঝাতে চাইলেন, 'দেখেছো অবস্থা, সবখানে কেবল পাকিস্তানের সমর্থক।' কিছুটা অসহায়ত্বই প্রকাশ করতে চাইলেন মাইল ফিল্টটন নামের এই ইংলিশ ভক্ত। সব তো পাকিস্তানী ভক্তদের দখলে বলতেই তিনি বলে উঠলেন, 'হ্যাঁ, সেটাই বলছিলাম। আমার সাথে কেউ নেই। এমন কি আমাদের সমর্থক নেই বললেই চলে। সব তো ওরাই।'
এই ক্ষণিকের অসহায়ত্ব অবশ্য ফিল্টটনের কাছে কিছুই নয়। মাঠের লড়াইয়ে নিজের দলকে অনেক এগিয়ে রাখছেন তিনি। মধ্য বয়সী ইংলিশ এই সমর্থক বললেন, 'এখানে রাজত্ব করুক তারা, আমরা মাঠে দাপট দেখাবো। সেমি-ফাইনালে উঠতে কষ্ট হলেও সেখানে কিন্তু আমাদের দল দুর্বার ছিল। ভারতের মতো দলকে ওভাবে স্রেফ উড়িয়ে দেওয়া ছোট ব্যাপার নয়। ফাইনালে অবশ্য চাপ বেশি, তবে আমরা দলের ওপর আস্থা রাখছি। শিরোপা আমাদের হাতেই উঠবে।'

দুই দলের কয়েকজন ক্রিকেটার মঞ্চে ওঠেন, থাকেন মিনিট দশেকের মতো। এ সময় দর্শকদের ভালোবাসার সাড়ায় দেওয়াসহ উপস্থাপকের সঙ্গে কথা বলেন দুই দলের সহ-অধিনয়ক শাদাব খান ও মঈন আলী। এরআগে দুই দলের অধিনায়ক বাবর আজম ও জস বাটলার সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। আইসিসির আনুষ্ঠানিক ফটো সেশনের বাধ্যবাধকতা থাকায় দুই অধিনায়ককে ফ্যান জোনে নেওয়া হয়নি।
দেশ থেকে অনেক দূরে আছেন, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় অনেক সমর্থক আপনাদের। তারা ক্রিকেট নিয়ে পাগলের মতো, কেমন লাগছে? এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো পরিবেশেই ছিলেন শাদাব খানে। পাকিস্তানের এই অলরাউন্ডার বললেন, 'আমার তো মনে হচ্ছে আমি দেশেই আছি। আমরা যেখানে যেখানে গেছি, সেখানেই তারা আমাদের সমর্থন দিয়েছে। তাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। আমরা ভালো শুরু না করার পরও তারা আমাদের সমর্থন দিয়েছে, আস্থা রেখেছে।'
পাকিস্তান নতুন বলে খুবই ভালো। তাদের বিপক্ষে কীভাবে ইংল্যান্ড ম্যাচটা জিততে পারে, কী করতে হবে তাদের। উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তাদের সহ-অধিনায়ক মঈন আলী বলেন, 'আমরা এর আগে ভালো করেছি। এবারও ভালো করবো বলে আশা করছি। আমাদের ভালো ব্যাটি লাইন আপ আছে। তবে দল হিসেবে আমাদের ভালো খেলতে হবে। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলে এসেছি, ফাইনালেও একই লক্ষ্য থাকবে আমাদের।' দর্শকদের পেছনে রেখে ক্রিকেটারদের তোলা সেলফিতে শেষ হয় এই আয়োজন।