স্মরণীয় জয় তুলে নিয়ে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে দিলো আফগানিস্তান

ইব্রাহিম জাদরানের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রান পাহাড় গড়েও স্বস্তিতে ছিল না আফগানিস্তান। দুর্দান্ত সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া জো রুটের ব্যাটিংয়ে একটা সময়ে হারের শঙ্কাও জাগে। কিন্তু খেই হারায়নি আফগানরা। রুটকে ফিরিয়ে খেলার মোড় ঘোরানো আজমতউল্লাহ উমরজাই সাজঘর দেখিয়ে দেন হুমকি হয়ে ওঠা জেমি ওভারটনকেও। শেষ ওভারেও নায়ক আইসিসির ওয়ানডে বর্ষসেরা ক্রিকেটার, আদিল রশিদকে তিনি ফেরাতেই উল্লাসে মেতে ওঠে আফগানরা। ততোক্ষণে যে জয় মুঠোবন্দী হয়ে গেছে, মিলে গেছে স্মরণীয় জয়।
বুধবার পাকিস্তানের লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ইংল্যান্ডকে ৮ রানে হারিয়েছে আফগানিস্তান। আফগানদের বিপক্ষে হেরে আসর থেকে বিদায় নিলো ইংলিশরা, প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে যায় জস বাটলারের দল। এ নিয়ে আইসিসির বড় দুটি টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডকে হারালো আফগানিস্তান। ২০২৩ বিশ্বকাপে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো জয়ের স্বাদ পায় তারা। ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয়বার বিজয় নিশান ওড়ালো আফগানরা। এই জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমি-ফাইনালে খেলার আশা বেঁচে রইলো তাদের। গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারলেই মিলবে শেষ চারের টিকেট।
প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা করে নেওয়া আফগানিস্তান টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে। দুঃস্বপ্নের শুরুর পর রান তুলতেই হিমশিম খাওয়া দলটি দিশা পায় ম্যাচসেরা জাদরানের ব্যাটে। অসাধারণ ব্যাটিংসে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান খেলেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসের সেরা ব্যক্তিগত ইনিংস। সঙ্গে অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি, আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও মোহাম্মদ নবীর চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংসে ৭ উইকেটে ৩২৫ রান তোলে আফগানরা, যা ওয়ানডেতে তাদের পঞ্চম সেরা ইনিংস। জবাবে বিপর্যয় কাটিয়ে দারুণ এক সেঞ্চুরিতে জয়ের আশা জাগিয়েও কাজটা সারতে পারেননি রুট। শেষ দিকে আশা জাগানো ওভারটনও দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যেতে পারেননি। এক বল বাকি থাকতে ৩১৭ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড।
লক্ষ্য তাড়ায় ইংল্যান্ডের কাণ্ডারী ছিলেন রুট। বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান দায়িত্বশীলন ব্যাটিংয়ে ১১১ বেলে ১১টি চার ও একটি ছক্কায় ১২০ রানের ইনিংস খেলেন। এটা তার ১৭তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ছয় বছর পর এই ফরম্যাটে সেঞ্চুরির দেখা পেলেন তিনি। বেন ডাকেট ৩৮, হ্যারি ব্রুক ২৫, অধিনায়ক জশ বাটলার ৩৮, ওভারটন ৩২ ও জফরা আর্চার ১৪ রান করেন। ৯.৫ ওভারে ৫৮ রানে ৫টি উইকেট নেন ওমরজাই, যা এই ফরম্যাটে তার সেরা বোলিং। নবি ২টি এবং ফজলহক ফারুকী, রশিদ খান ও গুলবাদিন নাইব একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করা আফগানিস্তানের ইনিংসে সবচেয়ে বড় ও ঝলমলে নামটি জাদরানের। ডানহাতি এই ওপেনার ব্যাট হাতে আফগানিস্তানের ত্রাতা হয়ে ইংলিশ বোলারদের রীতিমতো শাসন করেন। ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে শেষ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করা জাদরান ১৪৬ বলে ১২টি চার ও ৬টি ছক্কায় ১৭৭ রানের মহাকাব্যির ইনিংস খেলেন। চা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। কদিন আগেই ১৬৫ রানের ইনিংস খেলে রেকর্ডটি দখলে নিয়েছিলেন ডাকেট। দলের স্মরণীয় জয়ে ব্যাট হাতে অবদান রাখা শহিদি ৪০, ওমরজাই ৪১ ও নবি ৪০ রান করেন। ইংলিশ পেসার আর্চার ১০ ওভারে ৬৪ রানে ৩টি উইকেট নেন। ২টি উইকেট পান লিয়াম লিভিংস্টোন। একটি করে উইকেট নেন ওভারটন ও আদিল রশিদ।