আফগানিস্তানকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের

'জায়ান্ট কিলার', 'ডার্ক হর্স', 'নতুন শক্তি'; এ জাতীয় নামসহ আরও কিছু নামে ডাকা হয় আফগানিস্তান ক্রিকেট দলকে। গত কয়েক বছরে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থান শক্ত করা এই দলটি প্রায়ই বিস্ময় উপহার দিয়ে আসছে। ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষেও বিজয় নিশান ওড়ায় তাড়া। ২০২৩ বিশ্বকাপে চারটি ম্যাচ জেতা আফগানরা ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলে সেমি-ফাইনাল। বিশ্বকে চমকে দেওয়া দলটি তালেবানশাসিত, তাই উদীয়মান শক্তি হলেও আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলে (আইসিসি) পাঠানো ই-মেইল বার্তায় আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের সদস্যপদ স্থগিতের আহ্বান জানায় সংস্থাটি। এ ছাড়াও নির্বাসিত আফগানিস্তান নারী ক্রিকেট দলকে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি তাদের অনুশীলন ও খেলার সুযোগ সুনিশ্চিত করার আহ্বানও জানানো হয়েছে। নারী ক্রিকেটের উন্নতির জন্য আইসিসির অর্থনৈতিক সহায়তার আহ্বানও জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
আইসিসির সভাপতি জয় শাহ বরাবর গত ৩ ফেব্রুয়ারি চিঠিটি পাঠানো হয়, যা প্রকাশ্যে আসে ৭ মার্চ। চিঠির বিষয় হিসেবে লেখা হয়, 'আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে স্থগিত করা এবং মানবাধিকার নীতি বাস্তবায়ন।'
স্বাধীন ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচালিত বেসরকারি সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কাজ করে। সংস্থাটি আইসিসিকে দেওয়া ই-মেইলে লিখেছে, 'আইসিসির কাছে আমরা অনুরোধ করছি, যতোদিন পর্যন্ত আফগানিস্তানের নারী ও মেয়েরা শিক্ষা ও খেলাধুলায় সমান সুযোগ পাচ্ছে না, ততোদিন পর্যন্ত দেশটির আইসিসি সদস্যপদ স্থগিত রাখা হোক। একই সঙ্গে আইসিসির উচিত জাতিসংঘের ব্যবসা ও মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণ করে মানবাধিকার নীতি বাস্তবায়ন করা।'
চিঠিতে তালেবান সরকারের অধীনে আফগান নারীদের প্রতি বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। লেখা হয়েছে, '২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর মেয়েদের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। শিক্ষা, চাকরি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, চলাফেরার অধিকারসহ বিভিন্ন মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। এসব নিষেধাজ্ঞা নারীদের জীবন ও জীবিকার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।'
আইসিসির বৈষম্যবিরোধী নীতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ক্রিকেটকে লিঙ্গনির্বিশেষে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত। অথচ ২০২১ সালে আফগান নারী দলের অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়া হলেও দেশটির পুরুষ দল অব্যাহতভাবে আইসিসির অর্থ ও অবকাঠামোগত সুবিধা পেয়ে আসছে। সংস্থাটির মতে, এটা আইসিসির বৈষম্যবিরোধী নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বক্তব্য, 'নারী ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণের সুযোগ না দিয়ে এবং তাদের আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনুমতি না দিয়ে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) স্পষ্টতই বৈষম্যবিরোধী নীতি মানতে ব্যর্থ হয়েছে।'
চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, 'আমরা জানি ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক গেমসে ক্রিকেটকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তালেবানকর্তৃক নারী এবং মেয়েদের খেলায় অংশ নিতে না দেওয়া অলিম্পিক নীতি মারাত্মক লঙ্ঘন, যাতে বলা হয়েছে, "খেলাধুলা হচ্ছে মানবাধিকার।"
২০২১ সালে তালেবান সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর আফগান নারীদের ক্রীড়াঙ্গনে অংশগ্রহণ কঠিন হয়ে উঠেছে। অথচ এর আগে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) ২৫ জন নারী ক্রিকেটারের সঙ্গে চুক্তি করেছিল, যাদের অনেকেই বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাসিত। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে আফগান নারী ক্রিকেটাররা আইসিসিকে একটি চিঠি পাঠিয়ে নিজেদের জন্য সহযোগিতা চায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে মেলবোর্নের জংশন ওভালে আফগানিস্তান উইমেন্স একাদশ ও ক্রিকেট উইথআউট বর্ডারসের মধ্যে প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
আফগানিস্তানের পুরুষ দল বর্তমানে আইসিসির টুর্নামেন্টে অংশ নিলেও ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া তাদের বিরুদ্ধে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আফগান নারী ক্রিকেটারদের একাংশ মনে করে, পুরুষ দলকে নিষিদ্ধ করা সমাধান নয়। ইএসপিএনক্রিকইনফোর এক পডকাস্টে তারা জানান, দেশের পুরুষ দল নিষিদ্ধ হোক, সেটা তারা চান না। তবে তাদের অধিকারের জন্য যেন পুরুষ দল আওয়াজ তোলে।
সবকিছু বিবেচনায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আইসিসিকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি জানতে চেয়েছে, আফগান নারী ক্রিকেটারদের সমর্থনে আইসিসি কী ব্যবস্থা নিচ্ছে। ই-মেইলের শেষে বলা হয়েছে, 'আইসিসির উচিত আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিসহ অন্যান্য ক্রীড়া সংস্থার মতো পদক্ষেপ নেওয়া এবং তালেবান সরকারকে নারী ও মেয়েদের খেলাধুলার সুযোগ দেওয়া ও মানবাধিকার নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করানো।'