বিশ্বকাপের ২০ বছরের ইতিহাসে এই ৫ ম্যাচের কথা কেন কখনো ভোলা যাবে না!

ফুটবলের ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তগুলো তৈরি হয়েছে বিশ্বকাপের হাত ধরেই। তবে অঘটনের সংখ্যাও একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়। গত ২০ বছরে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা ৫ অঘটন কোনগুলো?
ফুটবল ভক্তরা প্রতি ৪ বছর পর জড়ো হয়, ফুটবলের সেরা খেলোয়াড়দেরকে তাদের দেশের হয়ে খেলতে দেখার জন্য। একবিংশ শতাব্দীতে রোনালদিনহো, মেসি আর রোনালদোরা চমক দেখিয়েছেন মাঠে, অবাক করেছেন সবাইকে। তবে অনেক সময় এই বড় নামের খেলোয়াড়রাই যে বড় প্রভাব রাখতে পেরেছে এমন নয়, অনেক সময় তথাকথিত 'আন্ডারডগ'রাও প্রতিরোধ করে চমকে দিয়েছে ফুটবল বিশ্বকাপকে।
এমএসএন একবিংশ শতাব্দীতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপগুলো থেকে তাদের সেরা ৫ অঘটনকে বাছাই করেছে।
৫. জার্মানি ৭-১ ব্রাজিল, ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ

২০১৪ বিশ্বকাপে বেশকিছু অঘটন ঘটেছে, এর মধ্যে একটি ছিল ১৯৫৮ সালের পর গ্রুপপর্বেই ইংল্যান্ডের বিদায়।
তবে জার্মানি যখন সেমিফাইনালে যখন ব্রাজিলের মুখমুখি হয়, তখন জুয়াড়ি আর ভক্তরা আশা করেছিল যে ব্রাজিলের নিজের মাটিতে ব্রাজিল জয়ী হয়েই মাঠ ছাড়বে। তবে মাঠের খেলায় ফল হলো উল্টো, জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হেরে বসে ব্রাজিল। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এত বড় পরাজয়ের মুখোমুখি হয়নি সেলেসাওরা, তাও আবার নিজের মাটিতে, সেমিফাইনালের মতো পর্যায়ে।
ম্যাচের ২৯ মিনিটের মধ্যেই টমাস ম্যুলার, মিরোস্লাভ ক্লোসা, সামি খেদিরা আর টনি ক্রুসের দুই গোলে ৫-০ গোলে এগিয়ে যায় জার্মানরা। ম্যাচের তিনভাগের দুই ভাগ বাকি থাকতেই ম্যাচের ফলাফল কোনদিকে গড়াবে তা নিশ্চিত হয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলের অবস্থা আরও খারাপ পর্যায়ে চলে যায় আন্দ্রে শুর্লের দুই গোলে। শেষ মুহূর্তে অস্কারের সান্ত্বনাসূচক গোলে স্কোরকার্ড দাঁড়ায় ৭-১ গোলে।
ফাইনালের অতিরিক্ত সময়ে মারিও গোৎজের অসাধারণ ভলিতে ২৪ বছর পর আবারো বিশ্বকাপ জিতে নেয় জার্মানি, জার্সিতে যুক্ত হয় চতুর্থ তারকা।
৪. সুইজারল্যান্ড ১-০ স্পেন, ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ

২০০৮ এবং ২০১২ সালের মধ্যে স্পেন ছিল অপ্রতিরোধ্য, টানা জিতে নেয় ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো। সেই স্পেন দলেরই ২০১০ বিশ্বকাপ মিশন শুরু হয় সুইজারল্যান্ডের কাছে হেরে! চার বছরের মধ্যে স্পেনকে প্রথম পরাজয়ের স্বাদ দেয় সুইজারল্যান্ড, গোল করে গেলসন ফার্নান্দেজ।
তবে গ্রুপ ম্যাচের বাকি দুই ম্যাচে হন্ডুরাসকে ২-০ গোলে এবং চিলিকে ২-১ গোলে হারিয়ে স্পেন গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই গ্রুপ শেষ করে। তারপর নক আউটের প্রতি ম্যাচেই ১-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা, প্রতিপক্ষ ছিল যথাক্রমে পর্তুগাল, প্যারাগুয়ে, জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডস। স্পেন জিতে নেয় নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ।
৩. দক্ষিণ কোরিয়া ২-১ ইতালি, ২০০২ দক্ষিণ কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপ

২০০২ বিশ্বকাপ ছিল প্রচণ্ড মাত্রায় বিতর্কিত, বিশেষ করে রেফারির সুবিধা পাওয়া নিয়ে। তারপরেও গাস হিডিঙ্কের দক্ষিণ কোরীয় শিষ্যদের মাধ্যমে হওয়া অঘটনগুলো বিশ্বকাপের অসাধারণ মুহূর্তে জায়গা করে নেবে।
পর্তুগাল, যুক্তরাষ্ট্র ও পোল্যান্ডের সাথে একই গ্রুপে থাকা দক্ষিণ কোরিয়া তাদের গ্রুপপর্ব শেষ করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে। শেষ ষোলতে মুখোমুখি হয় ইতালির। সেবার ইতালি দারুণ ফর্মে, বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম দাবিদার। মালদিনি, পিয়েরো, টট্টি আর ক্যানাভারোর মতো তারকা খেলোয়াড়দের নিয়ে সাজানো পুরো বিশ্বকাপ দল।
ম্যাচের রেফারি ছিলেন ইকুয়েডরের বায়রন মোরেনো, এবং পুরো ম্যাচজুড়েই প্রতিটি সিদ্ধান্ত যেতে থাকে দক্ষিণ কোরীয়দের পক্ষে। জাম্ব্রোত্তা দুই পা দিয়ে ফাউলের শিকার হন, দেল পিয়েরোর মুখে কনুইয়ের আগাহত লাগে, টট্টিকে বক্সের মধ্যে ফাউল করা হয়, কিন্তু কোনোবারই রেফারির বাঁশি বাজেনি। ইতালীয় খেলোয়াড়রাও রেগে যান, টট্টি রেগে রেফারির সাথে বাদানুবাদে জড়ালে তাকে লাল কার্ড দেখানো হয়।
এদিকে ম্যাচের অতিরিক্ত সময় শেষ হওয়ার মাত্র দুই মিনিট আগে গোল্ডেন গোল করে বসেন দক্ষিণ কোরিয়ার আন জুং-হোয়ান। আজ্জুরিরা বিদায় নেয় বিশ্বকাপ থেকে।
দক্ষিণ কোরীয়রা এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেনকে টাই-ব্রেকারে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠলেও জার্মানির মাইকেল বালাকের একমাত্র গোলে সেমিফাইনাল থেকেই নিজেদের রূপকথা শেষ করে।
২. নেদারল্যান্ডস ৫-১, ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ

২০১৪ সালের গ্রুপ বি-এর প্রথম ম্যাচ ছিল ২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালের অনুরূপ। আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার একমাত্র গোলে নেদারল্যান্ডসকে ফাইনালে হারিয়ে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ জিতে নিলেও চার বছর পর একই পুনরাবৃতিই হয়নি।
ম্যাচের প্রথমেই পেনাল্টি থেকে শাবি আলোনসো গোল করে স্পেনকে এগিয়ে নেন, তবে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে রবিন ফন পার্সি তার 'ফ্লাইং ডাচম্যান' গোল করে সমতায় ফেরান। ফন পার্সির গোল নেদারল্যান্ডসের বাকি খেলোয়াড়দের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দেয়, দ্বিতীয়ার্ধে স্পেনের জালে বল জড়ায় আরও চারবার। ফন পার্সি আর আরিয়েন রোবেনের জোড়া গোলে স্পেনকে ১৯৯৪ সালের পর একই ম্যাচে দুই গোলের বেশি গোলে হারার লজ্জায় ডোবায় ডাচরা।
এই পরাজয়ের পর ইউরোপ আর বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়ে, চিলির কাছে হেরে গ্রুপে তৃতীয় হয়ে।
১. সেনেগাল ১-০ ফ্রান্স, ২০০২ দক্ষিণ কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপ

২০০২ বিশ্বকাপে ফ্রান্স ছিল অন্যতম ফেবারিট। গতবারের বিশ্বকাপ জয়ের তকমা তো ছিলই, সাথে ছিল জিদান, অঁরি, ট্রেজেগুয়েটদের মতো খেলোয়াড়। প্রথম ম্যাচেই সেনেগালের মুখোমুখি হয় ফ্রান্স, তবে শুরুতেই জিদান ইঞ্জুরিতে পড়ে ম্যাচ থেকে বিদায় নেন। সেনেগালের ফরোয়ার্ড এল হাজি দিউফ পুরো ফরাসি রক্ষ্মণশিবির তটস্থ করে রাখেন। তবে ৩০ মিনিটে পাপে বুবা দিওপ গোল করার পর ঐ গোলটিই দুই দলকে আলাদা করে, ফ্রান্স টুর্নামেন্টের প্রথম পরাজয়ের স্বাদ নেয়।
সেনেগাল কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত উঠে যায়, তবে অতিরিক্ত সময়ে তুরস্কের ইলহান মানসিজের গোল্ডেন গোলে ছিটকে পড়ে সেখান থেকেই।
সূত্র: এমএসএন