প্রথমবারের মতো দেশের ৪ জেলায় পানি সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা

পানি আইনের আওতায় দেশে প্রথমবারের মতো চার অঞ্চলকে 'অতি উচ্চ পানি সংকটাপন্ন এলাকা' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে টাঙ্গুয়ার হাওর ও হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় 'হাওর প্রতিবেশ সুরক্ষা আদেশ'-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে ঢাকার গ্রিন রোডের জাতীয় পানি সম্পদ পরিষদের নির্বাহী কমিটির ১৮তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সভায় শিল্পখাতে পানি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে 'পানি ব্যবস্থাপনা নীতি ২০২৫'- এর খসড়া প্রস্তুত চূড়ান্ত করা হয়।
সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩ এর ধারা ১৭ ও ১৯ এর আলোকে বিস্তারিত জরিপ ও অনুসন্ধান শেষে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম হাইড্রোলজিক্যাল অঞ্চলের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার মোট ২৫টি উপজেলার ২১৫টি ইউনিয়ন (৪,৯১১টি মৌজা)-এর মধ্যে ৪৭টি ইউনিয়নকে (১,৫০৩টি মৌজা) অতি উচ্চ পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বলা হয়, একইভাবে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন (১০৪টি মৌজা) ও ১টি পৌরসভা (৮টি মৌজা)-এর মধ্যে ৩টি ইউনিয়ন (৭টি মৌজা) এবং ১টি পৌরসভাকে (৫টি মৌজা) অতি উচ্চ পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এসব এলাকায় পানি আইন অনুযায়ী পানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হবে এবং খাবার পানি, গৃহস্থালি কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে একটি কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে করণীয় চূড়ান্ত করবে।
সভায় পানির প্রাপ্যতা যাচাই করতে নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচরে প্রয়োজনীয় সমীক্ষা চালানোর সুপারিশ করা হয়। একই সাথে চলমান ৫০ জেলায় ভূগর্ভস্থ পানির প্রাপ্যতা যাচাইয়ে যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে তা বাকি ১৪ জেলাতে শুরু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এছাড়া, নির্বাহী কমিটির সভায় আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দুটি জলাভূমি—টাঙ্গুয়ার হাওর ও হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩- এর ধারা ২২ ও ২৭ এর ক্ষমতাবলে প্রথমবারের মতো 'হাওর প্রতিবেশ সুরক্ষা আদেশ' জারির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এই সুরক্ষা আদেশের অধীনে হাওর দুটিতে পর্যটন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কৃষি, মৎস্য ও বনায়ন খাতে করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
সভায় পানি আইন, ২০১৩- এর দুর্বল কার্যকারিতার উপর আলোকপাত করে আইনটির প্রয়োজনীয় সংশোধনের সিদ্ধান্ত ও গৃহীত হয়।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জনাব ফরিদা আখতার। এছাড়াও, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব মো. মোকাব্বির হোসেনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব/সচিবগণ ও অন্যান্য সংস্থার প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।