ক্লাব ফুটবলে ম্যারাডোনার রাজত্ব

পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে ওপারে পাড়ি দিলেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। মৃত্যুকালে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির বয়স হয়েছিল ৬০ বছর।
৮৬'র বিশ্বকাপ জয়ী ম্যারাডোনাকে বিবেচনা করা হয় ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে। আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের হয়ে তার অর্জন যেমন ভূরি ভূরি তেমনি ক্লাব ফুটবলও মাতিয়েছেন তিনি। নিজ দেশের ক্লাব আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স এবং বোকা জুনিয়র্স মাতিয়ে পাড়ি জমান ইউরোপে৷ খেলেছেন বার্সেলোনা, নেপোলি, সেভিয়ার মতো ক্লাবে৷ ইউরোপ মাতিয়ে আবার ফিরে আসেন নিজ দেশের বোকা জুনিয়র্সে।
এই পর্বে থাকছে ম্যারাডোনার ক্লাব ফুটবলের গল্প।
আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স এবং বোকা জুনিয়র্স
১৯৭৬ সালের ২০ অক্টোবর, নিজের ষোলতম জন্মদিনের দশ দিন আগে আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের হয়ে ম্যারাডোনার অভিষেক হয়। সেখানে তিনি ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ছিলেন এবং ১৬৭ খেলায় ১১৫টি গোল করেন। এরপর তিনি ১ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বোকা জুনিয়র্সে পাড়ি জমান। ১৯৮১ মৌসুমের মাঝামাঝি সময় বোকায় যোগ দিয়ে ১৯৮২ সালে তিনি প্রথম লীগ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেন।
বার্সেলোনা
১৯৮২ বিশ্বকাপের পর ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বার্সেলোনায় যোগ দেন ম্যারাডোনা। ১৯৮৩ সালে, কোচ সিজার লুইস মেনত্তির অধীনে বার্সেলোনা এবং ম্যারাডোনা রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে কোপা দেল রে এবং অ্যাথলেটিক বিলবাওকে হারিয়ে স্পেনীয় সুপার কাপ জিতে। তবে, বার্সায় ম্যারাডোনা কিছুটা খারাপ সময় কাটিয়েছেন। প্রথমে তাকে হেপাটাইটিসের সাথে লড়তে হয় এরপর তাকে পড়তে হয় গোড়ালির ইনজুরিতে। অবশ্য, চিকিত্সা শেষে দ্রুতই মাঠে ফিরে আসেন তিনি।
বার্সেলোনায় ম্যারাডোনা ৫৮ ম্যাচে ৩৮টি গোল করেন। বার্সেলোনায় থাকাকালে ম্যারাডোনা ক্লাব পরিচালকদের সঙ্গে ঘনঘন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন, বিশেষ করে ক্লাব প্রেসিডেন্ট ইয়োসেপ লুইস নুনেজের সাথে। ১৯৮৪ সালে, আরেকটি রেকর্ড স্থানান্তর ফি-তে (৬.৯ মিলিয়ন ইউরো) সিরি এ ক্লাব নাপোলিতে যোগ দেন তিনি।
নাপোলি
নাপোলিতে ম্যারাডোনা তার পেশাদার ক্যারিয়ারের শিখরে পৌঁছান। তিনি খুব দ্রুত ক্লাবের সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এবং সেই সময়টিই ছিল নাপোলির ইতিহাসের সফলতম যুগ। ম্যারাডোনার অধীনে নাপোলি ১৯৮৬–৮৭ ও ১৯৮৯–৯০ মৌসুমে সিরি এ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে এবং ১৯৮৯–৮৮ ও ১৯৮৮–৮৯ মৌসুমে তারা রানার-আপ হয়। এছাড়া তার সময়ে নাপোলি একবার কোপা ইতালিয়া জিতে (১৯৮৭) এবং একবার রানার-আপ (১৯৮৯) হয় এবং ১৯৯০ সালে ইতালীয় সুপার কাপ জিতে। ১৯৮৭–৮৮ মৌসুমের সিরি এ-তে ম্যারাডোনা সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন।

ইতালিতে থাকাকালে ম্যারাডোনার ব্যক্তিগত সমস্যা বৃদ্ধি পায়। তার কোকেইন নেশা বহাল থাকে। অনুশীলনে অনুপস্থিত থাকায় ক্লাবের পক্ষ হতে তাকে ৭০,০০০ মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়। ইতালিতে তাকে পুত্রসন্তান সংক্রান্ত কেলেঙ্কারির মুখোমুখি হতে হয়।
পরবর্তীতে, ম্যারাডোনা এবং নাপোলিতে থাকাকালে তার অর্জনসমূহের প্রতি সম্মান জানিয়ে নাপোলির ১০ নম্বর জার্সিটি দাপ্তরিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সেভিয়া, নিওয়েলস ওল্ড বয়েজ এবং বোকা জুনিয়র্স
ড্রাগ টেস্টে ধরা পড়ে ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে ১৯৯২ সালে ম্যারাডোনা নাপোলি ছেড়ে দেন। স্পেনীয় ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ এবং ফরাসি ক্লাব অলিম্পিকে মার্শেই তার প্রতি আগ্রহী হলেও তিনি স্পেনীয় ক্লাব সেভিয়াতে যোগ দেন। সেখানে তিনি এক বছর ছিলেন। ১৯৯৩ সালে তিনি লিওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলেন এবং ১৯৯৫ সালে তিনি বোকা জুনিয়র্সে ফিরে আসেন এবং সেখানে দুই বছর খেলেন। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কিছু পূর্বে ম্যারাডোনা টটেনহাম হটস্পারের হয়েও মাঠে নামেন ইন্টারন্যাজিওনালের বিপক্ষে। খেলায় টটেনহাম ২–১ গোলে জয় লাভ করে। তিনি গ্লেন হোডেলের সাথে খেলেন, যিনি ম্যারাডোনার জন্য তার ১০ নম্বর জার্সিটি ছেড়ে দিয়েছিলেন।
সূত্র: উইকিপিডিয়া ও গোল ডট কম