Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Thursday
June 05, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
THURSDAY, JUNE 05, 2025
তারা অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান

ইজেল

আন্দালিব রাশদী
22 May, 2022, 10:05 pm
Last modified: 22 May, 2022, 10:05 pm

Related News

  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ
  • শোক হতে শ্লোক
  • আমার স্নিকার্স
  • রং চলিষ্ণু, রঙ্গিলা প্রেমিক...
  • কলম্বো সাহিব কা মকবারা–ফিরছে তার আদিরূপে

তারা অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান

ঢাকার সিনেমার নায়িকা অলিভিয়ার কথা এখনই বিস্মৃত হবার কথা নয়। অলিভিয়া অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান। তার বোন ওলগাও বেশ পরিচিত ছিলেন। সত্তরের দশকের শেষ দিকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান এবং চোরাচালানির সাথে জড়িত অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান নারীর সম্পর্কের রসালো কাহিনি অনেকেই শুনেছেন। অ্যাংলোদের নিয়ে কেচ্ছাকাহিনির শেষ নেই।
আন্দালিব রাশদী
22 May, 2022, 10:05 pm
Last modified: 22 May, 2022, 10:05 pm
বাংলা সিনেমার নায়িকা অলিভিয়া অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান। ছবি: সংগৃহীত

আমার একজন অন্তরঙ্গ ও বিশিষ্ট বন্ধুর কাছে শোনা: তার প্রথম প্রেমিকা ডেবি একজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান তরুণী। ডেবির পুরো নাম ডেবরাহ অ্যাটকিনসন। দুই বছরের শিশু ডেবিকে প্রায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করে তার অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বাবা-মা তখনকার পূর্ব পাকিস্তান থেকে বিদায় নিয়ে ইউরোপের কোনো দেশে চলে যায়। শিশু ডেবির একমাত্র সহায় তখন তার নানি। তিনিই মাতৃস্নেহে তাকে লালন করেন। যখন বেড়ে ওঠে, তার মতো সুন্দর কিশোরী আশপাশে দুর্লভ। আমার বন্ধুটির বয়স তখন পনেরো-ষোলো, ডেবির তেরো কি চৌদ্দ। প্রেমটা খুব বেশি এগোতে পারেনি, ১৯৭৬ সালে ডেবরাহ অ্যাটকিনসনকে অস্ট্রেলিয়া চলে যেতে হয়। এখন পয়ষট্টির কাছাকাছি হবেন তিনি। আমার বন্ধু জানতে না চাইলেও আমারই জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে, কেমন আছেন ডেবরাহ অ্যাটকিনসন?

সত্তরের দশকের প্রথম ভাগের শেষ থেকে সাতাত্তর-আটাত্তর পর্যন্ত আমার নিয়মিত ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরিতে যাবার একটি বাড়তি 'ইনসেনটিভ' ছিল একজন সুশ্রী অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান নারীর উপস্থিতি। তিনি লাইব্রেরির নিয়মিত স্টাফ ছিলেন। শুরুতে তাকে আমি পুরোদস্তুর ব্রিটিশই ভেবেছিলাম। কিন্তু তার মুখে বিষণ্নতায় ভরা একটি বাংলা বাক্য শুনে মুগ্ধ হই এবং পরবর্তী  কয়েক মাসের মধ্যে বুঝতে সক্ষম হই যে তিনি ডেবির মতো একজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান। আমি যখন লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে গেছি, তিনিও তখন বাইরে, একজন সহকর্মীকে বলছেন, আমার মনটা খুব খারাপ।

আমার তখনো ইন্টারমিডিয়েট কলেজের ক্লাস শুরু হয়নি। তার মনটা কেন খারাপ, জানতে পারিনি। নারীর বয়স অনুমান করা এমনিতেই ভুল হয়ে থাকে, তবে তিনি যে বয়সে আমার চেয়ে সাত-আট বছরের বড় হবেন, সে হিসাব করেছি মাথা খাটিয়ে— নিশ্চয়ই তিনি অন্তত স্নাতক পাস, তাহলেই কমপক্ষে চার বছরের বড়, যদি স্নাতকোত্তর হয়ে থাকেন, তাহলে ছয় বছর, অন্তত দুই বছর চাকরি করে থাকেন, তাহলে আট বছর। আমি তার মন ভালো করার জন্য কী করতে পারি ভেবে আকুল হই কিন্তু এগোতে সাহস পাইনি। সম্ভবত আটাত্তরের পর তাকে আর দেখিনি। আপনি কোথায় আছেন? আপনার বয়স সত্তর পেরিয়ে গেলেও আমার স্মৃতিতে আপনি পঁচিশ-ছাব্বিশের বেশি নন। 

একজন সুহৃদ স্মরণ করলেন ৭ নম্বর অরফানেজ রোডে তাদের প্রতিবেশী অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ফোলারিত্তম পরিবারের কথা। শাহবাগে পুরোনো রেডিও অফিসের ঠিক উল্টো দিকে তখনকার পিজি হাসপাতালের দেয়ালঘেঁষা কয়েকটি ঘড়ির দোকান ছিল, একটি দোকান ছিল সে পরিবারের অধিকর্তার। গোটা পরিবার অস্ট্রেলিয়াতে অভিবাসী হয়েছে। সে বাড়ির প্যাট্রিশিয়া কয়েক বছর আগে পুরোনো স্বজনদের দেখতে বাংলাদেশে এসেছিলেন।

ঢাকার দিলু রোডে বেশ কটি অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান পরিবারের বাস ছিল। চট্টগ্রামেও বেশ কিছুসংখ্যক বাস করত। তেজগাঁও-ফার্মগেট অঞ্চলেও।

ঢাকার সিনেমার নায়িকা অলিভিয়ার কথা এখনই বিস্মৃত হবার কথা নয়। অলিভিয়া অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান। তার বোন ওলগাও বেশ পরিচিত ছিলেন। সত্তরের দশকের শেষ দিকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান এবং চোরাচালানির সাথে জড়িত অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান নারীর সম্পর্কের রসাল কাহিনি অনেকেই শুনেছেন।

আমি কবি ও প্রবন্ধকার সৈয়দ আলী আহসানের মুখে শুনেছি বিপদাপন্ন এক নারী তাদের আরমানিটোলার বাসায় প্রাতঃকালের গৃহকর্মী (এখনকার ভাষায় ছুটা বুয়া) হিসেবে কাজ করতেন। তার সাথে আসত ফুটফুটে দুই ইংরেজ শিশু, তারা এই নারীর কাজ শেষ হবার অপেক্ষায় থাকত। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, বাচ্চা দুটো কে? তিনি জবাব দেন সাহেবের বাচ্চা।

সাহেব কোথায়? বাচ্চা ফেলে লন্ডন চলে গেছেন।

কিন্তু আপনি সাহেবের বাচ্চাদের বোঝা বইছেন কেন?

এ প্রশ্নের জবাবে মাথা নিচু করে অসহায় স্বরে তিনি বলেছেন, আমার তো কোনো উপায় নাই, আমার পেটেই তো বাচ্চা নিছি (ধারণ করেছি), এখন কী করমু?

তিনি একবারও বলেননি—এ দুটো তারই সন্তান কিংবা ফুটফুটে বাচ্চা দুটোর তিনিই মা।

সাহেব তাকে লন্ডনের কিংবা তার যেখানে গন্তব্য সেখানকার কোনো ঠিকানা দিয়ে যায়নি। তবে যাবার সময় হাতে টাকাপয়সা যা ছিল, বাচ্চাদের জন্য রেখে যান, কিন্তু সেই টাকাও শেষ হবার পথে। 

অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান কে? যে কটা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্যটি হচ্ছে বাবা ইংরেজ, মা ভারতীয় এমন সন্তান। তিরিশের দশকের আরমানিটোলার সেই গৃহকর্মীর সন্তান দুটো অবশ্যই অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান। তাহলে পর্তুগিজ বাবার আর ভারতীয় মায়ের সন্তান? এই ব্যাখ্যা সম্প্রসারিত করে বাবা ইউরোপীয় হলে সন্তান ইউরোপীয় বা অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বলে পরিচিত হতে থাকে।

আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। আমার বাবার বাড়ির কাছাকাছি ইন্দিরা রোড ও সংলগ্ন এলাকায় কয়েক ঘর অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বসবাস করতেন। বিশেষ করে তাদের মেয়েদের মাখনবর্র্ণ ত্বক আমাদের সকলকে মুগ্ধ করেছে। তারা চমৎকার উচ্চারণে ইংরেজি বলতেন, বটমলি হোমস ও হলিক্রসে পড়তেন। নিউমার্কেটের বিপরীতে বলাকা সিনেমায় দেড়টা থেকে ইংরেজি সিনেমার একটা স্পেশাল শো হতো আর গুলিস্তানের নাজ তো ছিল ইংরেজি সিনেমার জন্য। এই দুটো হলে স্কুল ফাঁকি দিয়ে যখনই সিনেমা দেখতে গিয়েছি, অন্তত চেহারায় পরিচিত দু-একজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানের সাথে দেখা হয়েছে। আমার শিক্ষক জন পিটার গোমেজ, অনেক বছর আগেই স্বর্গপ্রাপ্তি ঘটেছে তার। ১৯৬৮-৬৯—এ দুই বছর আমি যখন তেজগাঁওয়ের ইন্টারমিডিয়েট টেকনিক্যাল কলেজে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিলাম। তিনিই ছিলেন হেড মাস্টার, ফার্মগেট এলাকাতেই বসবাস করতেন। তাকে প্রথম দর্শণে ইংরেজই মনে করেছিলাম।

ছবি: সংগৃহীত

ধানমন্ডি মাঠের উত্তর ধারে ছিল ইউএসআইএস লাইব্রেরি, আমরা বলতাম ইউসিস। সত্তরের দশকে এর একজন দারোয়ান ছিলেন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান। আমি সেধে তার সাথে গল্প করতাম এবং তার মতো সাহেবসদৃশ একজন মানুষকে কেন দারোয়ানের চাকরি করতে হচ্ছে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন, সবই নিয়তি। তার বাবার যথেষ্ট টাকাকড়ি ছিল কিন্তু ঢাকার রমনায় হর্সরেসের জুয়া খেলতে খেলতে নিঃস্ব হয়ে যান, তাদের ভাইবোনদের তেমন পড়াশোনাও হয়নি। এর চেয়ে ভালো চাকরি কোথায় মিলবে? তবে তিনি আশ্বস্ত করলেন তার দুঃখের দিন শেষ হয়ে আসছে। বেশ  কয়েক বছর আগে আমেরিকান দূতাবাসে পিয়নের চাকরির সূত্র ধরে তার বড় ভাই নিউইয়র্ক চলে গেছেন। আত্মীয় সূত্রে তাদেরও আমেরিকায় নিয়ে যাবার আবেদন করেছেন। বছর দেড়েকের মধ্যে তারাও চলে যাবেন।

ষাটের শেষভাগ থেকে সত্তরের দশক পর্যন্ত অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের যে কজনকে আমি কাছে থেকে বা দূর থেকে চিনতাম, তাদের মধ্যে যারা বেশি বয়সী, সম্ভবত প্রয়াত; যারা কম বয়সী, তারা ইউরোপ কিংবা আমেরিকা কিংবা অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসী। আশির দশকে প্রেসিডেন্ট এরশাদের শাসনামলে তারই আমন্ত্রণে আগত একজন খ্যাতিমান অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সাংবাদিকের সাথে পরিচিত হবার এবং এক টেবিলে ঘরোয়া খাবার খাওয়ার সুযোগ হয়েছে, তিনি অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস। পূর্বপুরুষ পর্তুগাল থেকে আসা, গোয়াতে বসতি স্থাপন করেন। অ্যান্থনির (প্রিয়জনদের কাছে টনি) জন্ম বোম্বে প্রেসিডেন্সির বেলগাওতে। কিন্তু তার পরিবার স্থিত হয় করাচি শহরে। ১৯৭১-এর মার্চে পাকিস্তানি সৈন্যদের চালানো গণহত্যার বিবরণ তার লেখাতেই পৃথিবীর অনেকে জানতে পারেন। তার দুটি বিখ্যাত বই 'দ্য রেপ অব বাংলাদেশ' এবং 'বাংলাদেশ : আ লিগ্যাসি অব ব্লাড'। অ্যান্থনি ৩ ডিসেম্বর ১৯৮৬ মৃত্যুবরণ করেন।

খ্যাতিমান অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের মধ্যে রয়েছেন সংগীতশিল্পী ক্লিফ রিচার্ড। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের সাবেক ক্যাপ্টেন নাসের হুসেইন, অভিনেতা গান্ধীখ্যাত বেন কিংস্লে। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে এয়ার মার্শাল ম্যালকম ওলেন (তখন ডিরেক্টর মিলিটারি অপারেশনস) পূর্ব পাকিস্তানের আকাশপথে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন। তিনি একজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান।

এক সময় অনেক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ায়ে ছিল এখানে। বাংলাদেশকে আবাসভূমি হিসেবে পছন্দ করলেও ১৯৪৭-এ সংখ্যাটি কমে ৪ হাজারে দাঁড়ায়েছিল। সাধারণভাবে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা ইংরেজি ভাষার অনুরক্ত। স্থানভেদে অন্য যেসব ভাষা ব্যবহারে তারা অভ্যস্ত, তার মধ্যে রয়েছে বাংলা, হিন্দি, উর্দু, কন্নড়, মারাঠি, মালয়ালম, পাঞ্জাবি, তামিল, তেলেগু, উড়িয়া ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষা।

তাদের অধিকাংশ খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী, ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট উভয়; হিন্দু, শিখ ও মুসলমান। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান কারা বিবেচিত হবেন এ নিয়ে বিতর্ক এখনো চলমান আছে। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী পিতৃসূত্র হতে হবে ইউরোপে, তবে ভারতীয় নাগরিকত্বপ্রাপ্ত এবং ভারতে জন্মগ্রহণ করা তাদের সন্তান-সন্ততি। ভারতের ২৮ অঙ্গরাজ্যের কোথাও অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, কিংবা এমন কোনো নির্বাচনী এলাকাও নেই, যেখানে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং নিজেদের মধ্য থেকে লোকসভায় প্রতিনিধি নির্বাচন করা সম্ভব। নিখিল ভারতীয় অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সমিতি দর-কষাকষি করে ১৯৫২ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত লোকসভায় তাদের জন্য দুটো আসন সংরক্ষিত রাখতে সমর্থ হয়েছিল। কিন্তু ১৯১৯ সালের ভারতীয় সংবিধানের ১০৪তম সংশোধনীতে এই সংরক্ষিত আসন বাতিল করা হয় এবং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।

অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের প্রধান সংকট ভারতীয় মূলধারা তাদের প্রতি কখনোই বন্ধুসুলভ ছিল না। সিপাহি বিদ্রোহের সময় তারা ইংরেজদের পক্ষ অবলম্বন করেছে (একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধে অবাঙ্গালিদের বড় অংশ যেমন পাকিস্তানের দোসর ছিল)। আবার ইংরেজরা তাদের শংকর বিবেচনা করে কখনো তাদের সমাজের মূলধারায় প্রবেশ করতে দেয়নি। ইংরেজ ক্লাব বা অ্যাসোসিয়েশনে তারা প্রবেশাধিকার পায়নি।

তারা মনে করেন, ব্রিটিশরা তাদের সাথে সবচেয়ে বড় ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ভারতবর্ষে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে ব্রিটেনের ন্যায্য, অন্যায্য সকল ধরনের কার্যক্রমে তারা নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে গেলেও ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় ব্রিটিশরা তাদের স্বার্থের প্রতি আদৌ নজর দেয়নি। তাদের কল্যাণের জন্য ভারতবর্ষে কোনো সাংবিধানিক গ্যারান্টি নিশ্চিত করেনি, এমনকি ব্রিটিশ নাগরিত্বের কোনো প্রতিশ্রুতিও দেয়নি।

১৯৪৭-এর স্বাধীনতার আগেই অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা সাম্রাজ্যবাদের প্রতীক এবং ভারতীয় স্বার্থের শত্রু বিবেচিত হতে থাকে। সে সময় তাদের সম্পর্কে যে ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়, তার সারাংশ হচ্ছে :

ক. তারা ব্রিটিশদের তল্পিবাহক।

খ. তাদের নারীরা নৈতিক চরিত্রের অধিকারী নয়।

গ. তারা বিশ্বাসঘাতক, এটা প্রমাণিত।

ঘ. তারা সুযোগসন্ধানী।

এই সারাংশ গবেষক রেজিনাল্ড মাহের এবং অন্যদিকে কেনেথ ওয়ালেস নামের একজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান গবেষক লিখেছেন:

তারা ইংরেজদের কাছ থেকে উন্নাসিকতা পেয়েছে, নিজেদের গায়ের রং ফর্সা হবার কারণে তারা সকলকে হেয় চোখে দেখেছে; তারা শিক্ষিত হলেও উচ্চ শিক্ষিত অতি সামান্য কজন; এই সম্প্রদায় অন্য কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মতো সংঘবদ্ধ নয়। তাদের আত্মোন্নয়নের তাগিদ নেই; প্রকৃতপক্ষে তারা সামাজিকভাবে হীনমানের এবং আত্মবিশ্বাসের অভাবগ্রস্ত। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের মধ্যে যারা সুশিক্ষিত, তারাও পরিচিতি সংকটে ভুগতেন। কলকাতার একটি অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান স্কুলের প্রিন্সিপাল তার ভারতীয় নাগরিকত্ব ও পাসপোর্টে মোটেও সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি বিবৃতি দিয়েছেন: মাই হার্ট ইজ ইন ইংল্যান্ড বাট মাই রেসপন্সিবিলিটিজ আর ইন ইন্ডিয়া। (আমার আত্মা ইংল্যান্ডে কিন্তু দায়িত্ব ভারতে।) শেষ পর্যন্ত তিনি তার আত্মাকে অনুসরণ করে ইংল্যান্ডে চলে যান। 

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মাদ্রাজে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার পরই সেখানে প্রথম অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান প্রজন্মের সূচনা। সম্ভবত ওয়ারেন হ্যাস্টিংস সবার আগে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান কথাটি বলন, কারও মতে তিনি নন, রুডিয়ার্ড কিপলিং এই কৃতিত্ব নিতে পারেন। ১৯১৯ সালে ভারতীয় আদমশুমারিতে পৃথকভাবে তাদের গণনা করা হয়, আর ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে তাদের একটি সংজ্ঞা দেওয়া হয়—এতে বাবাকে অবশ্যই ইউরোপিয়ান হতে হবে।

বাস্তবতা হচ্ছে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা এখন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। তাদের সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে মিশে যাচ্ছে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাথে। নতুন প্রজন্মের তাদের সংস্কৃতির ও স্বাতন্ত্র নিয়ে মাথাব্যথা নেই। এখনো যারা ভারতবর্ষে আছেন, তারা কেউই আন্তরিকভাবে শেকড় গাড়তে পারেননি।

কিন্তু অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান না হয়েও শেকড় গেড়েছিলেন অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি। 

অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি

হ্যানসম্যান অ্যান্থনিকে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বলা যায় না, কিন্তু তার আগে তার সময় ও তার পরে পর্তুগাল থেকে এসে যেসব পর্তুগিজ গোয়া, দমন ও দিউতে বসতি স্থাপন করেছেন, ভারতীয় নারীসঙ্গে সন্তান উৎপাদন করেছেন, তাত্ত্বিকভাবে তারাও অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান।

হ্যানসম্যান অ্যান্থনি (১৭৮৬-১৮৩৬) হচ্ছেন কবিয়াল অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি। তিনি ভারতবর্ষে এসে বিশেষ করে বাংলার প্রেমে পড়ে যান। ব্রাঙ্কনের এক বিধবা সৌদামিনীকে বিয়ে করেন, পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগরের ফরাসডাঙ্গায় সংসার পাতেন। তার পেছনে সংস্কারাচ্ছন্ন ভারতের কবিয়াল ও গ্রামীণ বুদ্ধিজীবীরা লেগেই ছিলেন। অ্যান্টনির ভূমিকায় যারা উত্তম কুমারকে দেখেছেন, তাদের স্মৃতিতে সজীব কবিয়াল ভোলা ময়রা আর অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির কাব্য বাহাস:

'বল হে অ্যান্টনি আমি একটি কথা জানতে চাই

এসে এ দেশে এ বেশে তোমার গায়ে কেন কোর্তা নাই।'

অ্যান্টনির জবাব: বাঙ্গালির বেশে এ বাংলায় ভালোই আছেন, বাঙ্গালি কন্যা বিয়ে করে তাতেও মজে আছেন। 

তখন কবিয়াল ভোলা ময়রার প্রশ্ন:

'সাহেব! মিথ্যে তুই কৃষ্ণপদে মাথা মুড়ালি

ও তোর পাদরি সাহেব শুনতে পেলে গালে দেবে চুনকালি।'

তার কথা শুনে ফিরিঙ্গি কবিয়ালের যে জবাব তাতে মাথা সবারই হেট হয়ে যায়:

'সৃষ্ট আর কৃষ্টে কিছু ভিন্ন নাইরে ভাই।

শুধু নামের ফেরে মানুষ ফেরে এ-ও কোথাও শুনি নাই।

আমার খোদা যে হিন্দুর হরি সে

ঐ দেখ শ্যাম দাঁড়িয়ে আছে

আমার মানব জনম সফল হবে যদি ঐ রাঙ্গা চরণ পাই।'

ভোলা ময়রা তাকে শ্রীরামপুরের গির্জায় গিয়ে খ্রিষ্টের ভজনা করতে বলেন আর ফিরিঙ্গি শুনিয়ে দেন খ্রিষ্ট আর কৃষ্ণ উভয়ই একই রকম আরাধ্য, প্রার্থনাগৃহ কোনটা, তাতে কী আসে-যায়।
 

Related Topics

টপ নিউজ / ফিচার

অ্যাংলো / অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান / বাংলায় অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান / ফিচার / ইজেল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • নিরাপত্তা উদ্বেগে ১২ দেশের নাগরিকের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা
  • আঞ্চলিক পরমাণু জোট নিজ দেশে হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করবে ইরান
  • ডিজিটাল ওয়ালেটের লাইসেন্স পেল গ্রামীণ টেলিকমের প্রতিষ্ঠান 'সমাধান'
  • টাকার নতুন নোটের খোলাবাজারে দ্বিগুণ মূল্য, গ্রাহক হয়রানি চরমে
  • দোকানে হানা দিলো হাতি, খাবার খেয়ে ‘টাকা না দিয়েই’ পালালো!
  • সাভার ট্যানারির কঠিন বর্জ্য থেকে জেলাটিন ও শিল্প প্রোটিন গুঁড়া উৎপাদন করবে চীনা কোম্পানি

Related News

  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ
  • শোক হতে শ্লোক
  • আমার স্নিকার্স
  • রং চলিষ্ণু, রঙ্গিলা প্রেমিক...
  • কলম্বো সাহিব কা মকবারা–ফিরছে তার আদিরূপে

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

নিরাপত্তা উদ্বেগে ১২ দেশের নাগরিকের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা

2
আন্তর্জাতিক

আঞ্চলিক পরমাণু জোট নিজ দেশে হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করবে ইরান

3
বাংলাদেশ

ডিজিটাল ওয়ালেটের লাইসেন্স পেল গ্রামীণ টেলিকমের প্রতিষ্ঠান 'সমাধান'

4
অর্থনীতি

টাকার নতুন নোটের খোলাবাজারে দ্বিগুণ মূল্য, গ্রাহক হয়রানি চরমে

5
অফবিট

দোকানে হানা দিলো হাতি, খাবার খেয়ে ‘টাকা না দিয়েই’ পালালো!

6
অর্থনীতি

সাভার ট্যানারির কঠিন বর্জ্য থেকে জেলাটিন ও শিল্প প্রোটিন গুঁড়া উৎপাদন করবে চীনা কোম্পানি

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net