Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Tuesday
July 22, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
TUESDAY, JULY 22, 2025
পাইরেট প্রজাতন্ত্র: উত্থান এবং পতনের কথামালা 

ইজেল

সৈয়দ মূসা রেজা
28 December, 2024, 02:25 pm
Last modified: 28 December, 2024, 02:34 pm

Related News

  • নিদ্রাহারা রাতের এ গান
  • র‌্যাবের পোশাকে ডাকাতির প্রস্তুতি: গ্রেপ্তার ৫ জন কারাগারে 
  • বুনো বিড়াল থেকে পোষা বিড়াল: রহস্যময় রূপান্তরের অজানা ইতিহাস
  • বিড়াল: বন্ধুত্ব
  • বাগনদীর ধারা

পাইরেট প্রজাতন্ত্র: উত্থান এবং পতনের কথামালা 

১৭১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুলাই। রাত। বাহামার নিকষ কালো রাত্রি হঠাৎ করেই আলোকিত হয়ে উঠল। জলদস্যু সরদার কাপ্তান চার্লস ভেইন নিজ জাহাজে আগুন লাগিয়ে তা ঠেলে পাঠিয়ে দিল ব্রিটিশ নৌবাহিনীর জাহাজগুলোর দিকে। ওইদিন সকালেই এ জাহাজগুলো নতুন গভর্নর উডস রজার্সকে পাহারা দিয়ে নাসাউতে নিয়ে এসেছে।
সৈয়দ মূসা রেজা
28 December, 2024, 02:25 pm
Last modified: 28 December, 2024, 02:34 pm
চীন সাগরের জলদসু। ছবি: হিস্ট্রি এক্সট্রা ডট কম

১৮ শতকের গোড়ার দিক। বাহামার রৌদ্রকরোজ্জ্বল একটি অঞ্চল জলদস্যু বা পাইরেটদের তৎপরতার কেন্দ্রভূমি হয়ে ওঠে। জলদস্যুদের এ দলটিই গোটা ক্যারিবিয়ান অঞ্চলজুড়ে মূর্তিমান বিভীষিকা হয়ে দেখা দিয়েছিল। তাদের তলোয়ারের নিচে কেঁপে ওঠে আমেরিকার আটলান্টিক উপকূলও। হিস্টোরি এক্সটার প্যাট কিনসেলার বয়ানে উঠে এসেছে সেসব গল্পগাথা। 

১৭১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুলাই। রাত। বাহামার নিকষ কালো রাত্রি হঠাৎ করেই আলোকিত হয়ে উঠল। জলদস্যু সরদার কাপ্তান চার্লস ভেইন নিজ জাহাজে আগুন লাগিয়ে তা ঠেলে পাঠিয়ে দিল ব্রিটিশ নৌবাহিনীর জাহাজগুলোর দিকে। ওইদিন সকালেই এ জাহাজগুলো নতুন গভর্নর উডস রজার্সকে পাহারা দিয়ে নাসাউতে নিয়ে এসেছে।

ইস্পাতদৃঢ় মনোবলের মানুষ উডস রজার্স। পূর্বজীবনে ছিলেন প্রাইভেটিয়ার। ভাড়াটে নৌসেনা। জলদস্যুদের দমন করার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বাহামা থেকে নাসাউতে এসেছেন তিনি। জলদস্যুদের উৎপাতে নাসাউ সাগরপথ দিয়ে চলমান দীর্ঘদিনের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় লাটে উঠতে বসেছে। ভয়াবহ এমন জলদস্যুদের আস্তানাই ছিল 'জলদস্যু প্রজাতন্ত্র'। রজার্সের আসার ঘটনায় জলদস্যুদের মনে কাঁপন লেগে যায়। 

রজার্সের সাহসিকতা এবং নাম বেশ ছড়িয়ে পড়েছিল। দূরবর্তী এই ঔপনিবেশিক ঘাঁটির প্রতি আর চোখ বন্ধ রাখতে পারছিল না ব্রিটিশ সরকার। এবারে তাদের শায়েস্তা করার সিদ্ধান্ত নিল। বন্দরে একসময় জলদস্যুদের নিশান পতপত করেই উড়ত। এবারে চাপের মুখে পড়তে থাকল তাদের অবাধ আনাগোনা, তৎপরতা।  
কুখ্যাত জলদস্যু কাপ্তানদের একটি দলকে সামগ্রিকভাবে 'ফ্লাইং গ্যাং' বলা হতো। এক দশকের বেশি সময় ধরে তারা বাহামার গোটা অঞ্চলে নিজেদের দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছিল। নতুন গভর্নর রজার্স এসেই রাজক্ষমার ঘোষণা শোনালেন। 'ফ্লাইং গ্যাং'য়ের কাপ্তানদের বেশির ভাগই ফাঁসির দড়িতে জান খোয়ানোর বদলে তা কবুল করতে প্রস্তুত হলে গেল। 

চালর্স ভেইন এ প্রস্তাবে সাড়া দিল না। ভেইনের দলে তার নিজের চেয়েও নিষ্ঠুর এবং ভয়ংকর জলদস্যু ছিল। কিন্তু যথাযথ প্রস্তুতির আগেই রজার্স এসে পড়ায় ঝামেলায় পড়ল ভেইন। ভেইন এবারে কালক্ষেপণের কৌশল নিল। লুট করা সম্পদ নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার পরই ক্ষমার সুযোগ গ্রহণের মতলব করল। 

সে রাতে বুঝতে পারল, কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সামনে মাত্র দুটি পথই খোলা–  হয় আত্মসমর্পণ, না হয় লড়াই করে ভেগে যাওয়া। 

এ ফাঁকে নাসাউ কী করে 'জলদস্যু প্রজাতন্ত্র' হয়ে উঠল, সে ইতিবৃত্ত দেখে নিই। হ্যাঁ, ১৬৯৫ খ্রিষ্টাব্দে নিউ প্রভিডেন্স দ্বীপের প্রধান বন্দরের আশেপাশের বসতির নাম বদলে নাসাউ রাখা হয়েছিল। আদিতে স্থানটির নাম ছিল চালর্স টাউন। ঔপনিবেশিক সংঘাত চলাকালে স্পেনীয়রা গোটা এলাকাকে পুড়িয়ে তামা বানিয়ে ফেলেছিল। ইউরোপের ৯ বছরের যুদ্ধের পুরো সময়ই নাসাউ দুর্বল এবং অরক্ষিত দশায়ই পড়ে রইল। সে সময় নাসাউর গভর্নর ছিলেন স্যার নিকোলাস ট্রট। 

১৬৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ জলদস্যু হেনরি অ্যাভেরি নানা সম্পদে পরিপূর্ণ ভারতীয় 'জাহাজ গানজ-ই-সাভাই' (ফারসি এ শব্দের অর্থ অকল্পনীয় ধন-সম্পদ) লুটপাট করে। নাম ভাঁড়িয়ে এবং উদার হাতে ঘুষ ছড়িয়ে ট্রর্টের কাছ থেকে বন্দরটিতে ঢোকার অনুমতি আদায় করল এ জলদস্যু। নাসাউর পুরুষ জনসংখ্যার থেকেও অ্যাভেরির লোক-লস্করের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি ছিল। সে সময় ফরাসিদের সাথে ইংরেজদের লড়াই চলছিল। ট্রর্ট ভেবেছিলেন, হেনরির জলদস্যুসহ এত লোক-লস্কর দেখে হয়তো ফরাসিরা নাসাউয়ে হামলা করতে সাহস পাবে না। 

কিন্তু 'গানজ-ই-সাভই' লুটের ঘটনা ব্রিটিশ রাজ এবং ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক চাপ আসতে থাকে। ট্রর্ট শেষ পর্যন্ত নাসাউ ছাড়তে অ্যাভেরিকে বাধ্য করে। অ্যাভেরিকে তার লুটপাটের মালামাল সহিসালামতেই নিয়ে যেতে দেন তিনি। 

অ্যাভেরি চলে গেলেও নাসাউর কপাল খুলল না। অঞ্চলটি অরক্ষিতই রয়ে গেল। সেখানকার বসতির ওপর ধারাবাহিক হামলা অব্যাহত রইল। ১৭০১ থেকে ১৭১৪ পর্যন্ত স্পেনের উত্তরাধিকার লড়াইয়ের সময় ফ্রান্স এবং স্পেনীয় নৌবহরের হামলা চলতেই থাকল। ট্রট এর আগেই দ্রুত সরে গিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে ইংরেজ কর্তৃপক্ষও এ এলাকা ছেড়ে ভেগে যায়। পরিণামে প্রাইভেটিয়ার নামে পরিচিত ভাড়াটে নৌসেনারা এবং জলদস্যুরা নাসাউয়ে আস্তানা গাড়তে থাকে।  

যুদ্ধ চলাকালে নৌবাহিনীর খরচ কমানোর জন্য ভাড়াটে নৌসেনা বা প্রাইভেটিয়ারদের লেটার অব মার্ক দিত ইংরেজ সরকার। এই পত্রাধিকারবলে তারা ইংরেজদের শত্রুপক্ষের নিশানবাহী জাহাজে হামলা ও লুটপাটের বৈধ অনুমতি পেত। তবে লুটের ভাগ ব্রিটিশ রাজকে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতেই হতো। নটে গাছ মুড়ানোর মতোই যুদ্ধও একসময় শেষ হয়ে যায়। সাথে সাথেই লেটার অব মার্কেরও আর কোনো মূল্য থাকে না। এবারে প্রাইভেটিয়ারদের সামনে দুটো পথ খোলা রইল। হয় সব ছেড়ে ছুড়ে ভালো হয়ে যাওয়া, আর না হয় আইনের পথ থেকে সরে গিয়ে খাঁটি জলদস্যুর জীবন যাপন করা। বেশির ভাগই পরের পথকে নিজেদের জীবনযাপনের জন্য বেছে নেয়। 

কাপ্তান বা মাঝিমাল্লার দলের সবাই দক্ষ নাবিক এবং নৌবাহিনীতে নিয়মিত কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। এ সত্ত্বেও তাদের আর নৌবাহিনীর জীবনে ফিরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। তৎকালীন নৌবাহিনীতে জীবনযাত্রা ছিল খুবই কঠোর এবং একঘেয়ে। সামান্য অপরাধে মারাত্মক শাস্তি ভোগ করতে হতো। বছরের পর বছর নোনা দরিয়ায় জীবন কাটাতে হতো। নারীসঙ্গ লাভের সুযোগ প্রায় হতোই না। বিপদ-আপদ তাদের সাথে ছায়ার মতোই লেগে থাকত। অল্প বয়সে মারা যাওয়াই যেন তাদের বিধিলিপি ছিল। এত কিছুর পরও বেতন জুটত সামান্য। 

পাইরেট শিপ ও বাণিজ্যিক জাহাজ মুখোমুখি। ছবি: হিস্ট্রি এক্সট্রা ডট কম

১৯ শতকের ব্রিটিশ রাজকীয় নৌসেনাদের বেতন দুই বছর পর্যন্ত বকেয়া থাকত। নাবিকেরা যেন ভেগে যেতে বা বিদ্রোহ করতে না পারে, সে জন্য অন্তত ছয় মাসের বেতন বকেয়া রাখা হতো। এদিকে যুগের পর যুগ ধরে তাদের বেতনের পরিমাণ ছিল একই। ১৬৫৩ থেকে ১৭৯৭ পর্যন্ত দেড় শ বছরে ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর নাবিকদের বেতন বাড়েনি। 

অন্যদিকে ভাড়াটে নৌসেনা বা প্রাইভেটিয়ার থেকে জলদস্যুতায় নাম লেখানো ব্যক্তিরা লুট করা জাহাজের সম্পদের ন্যায্য হিস্যা পেত। এমনকি সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো অবাক করা স্বাধীনতাও ভোগ করত। অন্যদিকে নাসাউয়ের মতো জায়গা জুটলে বেশির ভাগ সময় ডাঙায় কাটাতে পারত। মদ এবং নারীসঙ্গের সুযোগ থাকত। পাশাপাশি কম বয়সে মৃত্যুর আশঙ্কা তখনো থাকত। তবে নিজের শর্তে সে ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা তাদের থাকত। তাকে চোখ-কান বন্ধ করে এ ধরনের ঝুঁকিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার হুকুম তামিল করতে হতো না।

নাসাউর জলদস্যুদের মধ্যে যারা 'খ্যাতি'র শিখর স্পর্শ করেছিল, তাদের অন্যতম কাপ্তান বেঞ্জামিন হর্নিগোল্ড এবং হেনরি জেনিংস। এক সময়ে তার দুজনেই দুজনার প্রতিপক্ষ বা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রাইভেটিয়ার ছিল। পরবর্তী সময়ে ভাগ্যের মোড় ঘুরে যায়। জলদস্যু প্রজাতন্ত্রের নেতা বনে যায় তারা। নিজেদের সময়ের অনেক জলদস্যুকে মেরেপিটে গড়ে তোলে বা প্রশিক্ষণ দেয়। ওস্তাদদের মতোই এসব শিষ্যের কেউ কেউ 'খ্যাতি' কুড়ায়। 

হর্নিগোল্ড ১৭১৩ থেকে ১৭১৪ খ্রিষ্টাব্দের শীতে নাসাউয়ের কাছাকাছি সাগরে জলদস্যুর কাজে নামে। তার হুকুমের আওতায় ছিল একটিমাত্র ছোট জাহাজ। আর কয়েকটি নৌকা। ব্যস এই বহর দিয়েই নিউ প্রভিডেন্সের জলপথে যাতায়াতকারী বাণিজ্য বহরে হামলা চালাত। তিন বছরের মধ্যেই জলদস্যু বহর গড়ে তোলে। এ বহরে ছিল ৩০ কামানসজ্জিত রেঞ্জার নামে একটি জাহাজ। হর্নিগোল্ডের বহরে ছিল সাড়ে তিন শ সদস্য। এডওয়ার্ড টিচ নামের এক জলদস্যু তার ডান হাত হয়ে ওঠে। টিচ পরে ব্ল্যাকবিয়ার্ড নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।

স্প্যানিশ লক্ষ্যবস্তুতে অবৈধ হামলার মধ্য দিয়ে ১৭১৫ খ্রিষ্টাব্দে জলদস্যুর 'খ্যাতি' লাভ করে জেনিংস। পরে জ্যামাইকা ছেড়ে নাসাউতে পাড়ি জমায় এবং হর্নিগোল্ডের সাথে জোট বাঁধে। হর্নিগোল্ড ও জেনিংসের প্রশিক্ষিত অন্যান্য 'বিখ্যাত' জলদস্যুর মধ্যে রয়েছে চার্লস ভেন, 'ব্ল্যাক স্যাম' বেলামাই, স্টিড বোনেট এবং 'ক্যালিকো জ্যাক' র্জাকহাম। জলদস্যুর এ গোষ্ঠীকে একত্রে 'ফ্লাইং গ্যাং' নামে ডাকা হতো। তাদের দুঃসাহসিক এবং রোমহর্ষক অপরাধগুলো জলদস্যুদের কথিত 'সোনালি যুগকে' চিহ্নিত করেছে। এ গালগল্পকে কেন্দ্র করেই জলদস্যুদের কাহিনি নিয়ে বই, নাটক এবং চলচ্চিত্র তৈরিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। 

জলদস্যু প্রজাতন্ত্রের পালের গোদা বা নেতা কিসিমের দস্যুরা সামগ্রিকভাবে 'ফ্লাই গ্যাং' নামে পরিচিত ছিল। এসব জলদস্যু তাদের গোষ্ঠী বা সমাজকে কঠিন নিয়মের নিগড়ে বাধা জাহাজি জীবনের অনুকরণে চালাত। সাগরে থাকার সময় জলদস্যুরা যেসব হুকুম মেনে চলত, এখানেও তা-ই চালানো হতো। 

চলচ্চিত্র বা নাটকে ক্যারিবিয়ান জলদস্যুদের নিয়ে যেসব কাহিনি দেখানো হয়, তার পুরোটাই বানোয়াট বা কল্পগাথা নয়। জলদস্যু প্রজাতন্ত্রের নিশানে খুলি এবং হাড়ের ক্রুস ছিল। জলদস্যুদের নিয়মনীতি অনুযায়ী এ প্রজাতন্ত্র শাসন করা হতো। এই নিয়মনীতি জলদস্যুর সেই সমাজকে তখনকার তথাকথিত সভ্য সমাজগুলোর চেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক ও সমতাভিত্তিক করে তুলেছিল!

বারমুডার গভর্নরের মতো পড়শি ঔপনিবেশিক কর্মকর্তারা নাসাউ নিয়ে উদ্বেগে থাকতেন। তাদের বয়ান থেকে জানা যায়, নাসাউর দিনকাল যখন সবচেয়ে ভালো ছিল, তখন এই প্রজাতন্ত্রে এক হাজারের বেশি জলদস্যু কাজ করত। সংখ্যাটি কয়েক শ আইন মানা বাসিন্দার তুলনায় অনেক বেশি। কোনো কোনো প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ওখানে সে সময় সমসংখ্যক বারবণিতা ছিল। এদিকে মদের দোকানগুলো সব সময় রমরমা থাকত। 

জলদস্যুদের এ গোষ্ঠী খুব সুসংগঠিত ছিল। তাছাড়া নিয়মকানুন মেনেও চলত। জেনিংস 'কমোডর' হিসেবে কাজ করত। এদিকে ভয়ংকর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ব্ল্যাকবিয়ার্ডকে আইন প্রয়োগের দায়িত্বশীল ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচন করা হয়েছিল। 

ব্রিটিশ জাহাজ আক্রমণ করা হবে কি হবে না, তা নিয়ে রেষারেষির জেরে জলদস্যু প্রজাতন্ত্রের পতনের সূচনা হয়। ব্রিটিশ নিশানবাহী জাহাজে হামলা চালানোর বিরোধিতা করে হর্নিগোল্ড। এ ধরনের হামলার পরিণতি কী হতে পারে, হর্নিগোল্ডের তা ভালো করেই জানা ছিল। কিন্তু দলের অন্যান্য নাবিক ও মাঝিমাল্লারা এমন হামলার গো থেকে সরে এল না। ১৭১৬-এর নভেম্বরে হর্নিগোল্ডকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হলো। জলদস্যুরা তাদের নতুন নেতা হিসেবে বেছে নিল 'ব্ল্যাক সাম' বেলামাইকে। 

জলদস্যুদের নিয়ম অনুযায়ী হর্নিগোল্ড নিজ অনুগত সঙ্গী-সাথিদের নিয়ে ওই জায়গা থেকে পাততাড়ি গোটায়। বেলামাই খুব কম সময়ের মধ্যেই নাম করে। দাসবাহী ব্রিটিশ জাহাজ হুইডাহ গ্যালি দখল করাই ছিল বেলামাইয়ের জলদস্যু জীবনের চূড়ান্ত সফলতা। কেবল দাস নয়, জাহাজটিতে সোনা-রুপাও ভর্তি ছিল। ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দে ঝড়ে বেলামাই প্রাণ হারায়। 

হর্নিগোল্ডের আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয়। বাণিজ্য স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর ব্রিটিশ আর জলদস্যু প্রজাতন্ত্রকে উপেক্ষা করেনি। এবারে তারা উডস রজার্সকে গভর্নর হিসেবে পাঠায়। নাসাউ থেকে জলদস্যুদের হটিয়ে দিয়ে সেখানে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করার জন্যই।

দায়িত্ব নেওয়ার জন্য রজার্স আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে এসে পৌঁছালেন। রাজা প্রথম জর্জের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হলো– ১৭১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারির মধ্যে দস্যুবৃত্তি ছেড়ে ভালো হয়ে যাবে, তাদের মাফ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া জলদস্যুদের পাকড়াও করতে যারা সহায়তা করবে, তাদের মোটা পুরস্কার ব্যবস্থা করা হবে। 

ব্রিটিশ এই চাতুর্যপূর্ণ ঘোষণা 'ফ্লাইং গ্যাং'-এর মধ্যে ফাটল ধরায়। ক্ষমা ঘোষণাকে মেনে নেয় হর্নিগোল্ডসহ কয়েকজন। এবার তারাই নিজেদের সাবেক সহযোগীদের পাকড়াও করার বা জলদস্যু শিকারের কাজে সহায়তা করতে থাকে। সাধারণ ক্ষমার সুযোগকে গ্রহণ করে জেনিংসও। জেনিংসের অধস্তন হওয়া সত্ত্বেও চালর্স ভেইন ক্ষমার আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করে। জলদস্যুদের অনেকে চলে যাওয়ার পরও নাসাউয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় ভেইন। হঠাৎ করে রজার্স এসে পড়ায় তাকে নাটকীয় পদক্ষেপ দিকে ঝুঁকতে হয়।

নাসাউ বন্দর ব্রিটিশ নৌবাহিনী অবরোধ করে ফেললে বিপাকে পড়ে ভেইন। পালাবার পথ নেই। কিন্তু রাস্তা বের করে ফেলে ভেইন। লার্ক নামের একটি জাহাজে বারুদভর্তি করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। জ্বলন্ত জাহাজটি এবারে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর জাহাজগুলোর দিকে ঠেলে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। জাহাজটিতে বিস্ফোরণ ঘটলে এবারে নিজেদের জাহাজের নোঙর কেটে পালানোর আয়োজনে লেগে যায় রাজকীয় নৌবাহিনীর জাহাজগুলো। ভেইন এ সুযোগকে কাজে লাগায়। নিজ নাবিক ও মাঝিমাল্লাদের নিয়ে দ্রুতগামী জাহাজ রেঞ্জার করে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় নৌবাহিনীকে তাক করে বেশ কিছু গুলি বর্ষণ করে। 

'ফ্লাইং গ্যাং'-এর বেশির ভাগ সদস্য হারিয়ে গেলেও ভেইন জলদস্যু পেশা থেকে সরে দাঁড়ায়নি। বাহমার জাহাজগুলোয় সুযোগমতো হামলা অব্যাহত রাখে। ভেইনের তৎপরতা রজার্সকে ভালোই বিপাকে ফেলে দেয়। ব্ল্যাকবিয়ার্ডকে আবার জলদস্যু জীবনে ফিরিয়ে আনার কোশেশ করে ভেইন। এতে সফল তো হয়নি, বরং তার ওপর নজরদারি বাড়িয়ে দেয়। ভেইনের মোলাকাতের পরপরই ভার্জিনিয়ার গভর্নরের পাঠানো বাহিনী ব্ল্যাকবিয়ার্ডের ওপর চড়াও হয় এবং তাকে হত্যা করে। 

আর বড়সড় ফরাসি যুদ্ধজাহাজে হামলা করতে রাজি না হওয়ায় ভেইনের নাবিকেরা তার বিরুদ্ধে খেপে যায়। ১৭১৮ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে ভেইনের জাহাজের কোয়ার্টার মাস্টার জন ক্যালিকো জ্যাক জার্মহ্যাম তাকে কাপুরুষ বলে অভিযোগ করে। ভেইনকে সরিয়ে নিজেই দায়িত্ব হাতে তুলে নেয়। ভেইন ছোট জাহাজ নিয়ে সরে যেতে বাধ্য হয়। মধ্য আমেরিকার উপকূলে জাহাজডুবি হয়। বাণিজ্যিক জাহাজ ভেইনকে উদ্ধার করে। তবে তার পরিচয় ফাঁস হয়ে যায় এবং জ্যামাইকায় কর্তৃপক্ষের কাছে ভেইনকে তুলে দেওয়া হয়। ২৯ মার্চ ১৭২০ খ্রিষ্টাব্দে ভেইনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

ক্যালিকো জ্যাকের পরিণতিও ভালো হয়নি। ১৭১৯-এ ক্ষমা চেয়ে নাসাউতে ফিরে আসে। এরপর রজার্সের এক নাবিকের স্ত্রী অ্যান বোনির সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটা জানাজানি হওয়ার পর একটি জাহাজ চুরি করে ফের জলদস্যু জীবনে ফিরে যায়। এবারে তার সাথে আরেক নারী জলদস্যু মেরি রিডও ছিল। কিন্তু দুজনকেই পাকড়াও করে এক জলদস্যু শিকারি। পোর্ট রয়্যালের ফাঁসিকাষ্ঠে তাদের জীবন দিতে হয়।

১৬ ও ১৭ শতকে ওয়াকো জলদসু ̈রা মিং ডাইন্যাস্টির জন্য বিরাট হুমকি হয়ে ওঠে। ছবি: হিস্ট্রি এক্সট্রা ডট কম

হর্নিগোল্ড জলদস্যু শিকারি বনেছিল। জেনিংস অবসরে চলে যায়। 'ব্ল্যাক সাম' বেলমাই, ব্ল্যাকবিয়ার্ড, ভেইন এবং ক্যালিকো জ্যাকের মৃত্যু ঘটে। সব মিলিয়ে ১৭২১-এ এসে 'ফ্লাইং গ্যাং'-এর প্রায় 'রইল না আর কেউ'। জলদস্যু প্রজাতন্ত্রকে ইতিহাসের পাতায় ঠেলে দিতে সার্থকভাবেই সক্ষম হলেন উডস রজার্স।

জলদস্যু প্রজাতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেওয়ার মতো কাজ নতুন কিছু নয় রজার্সের কাছে। দুঃসাহসিক অভিযান যেন উডস রজার্সের রক্তে লেখা রয়েছে।  

প্রাইভেটিয়ার হিসেবে উইলিয়াম ডাম্পিয়ারের সাথে ১৭০৮ থেকে ১৭১১ পর্যন্ত সাগর-অভিযান চালিয়েছেন রজার্স। এ সময় স্পেনীয় জাহাজ তাড়া করতে গিয়ে জনমানবহীন হুয়ান ফারেনাদেজ দ্বীপে চার বছর ধরে আটকে পড়া আলেকজান্ডার সেলকির্ককে উদ্ধারও করেন রর্জাস। সেলর্কিকের কাহিনিই ড্যানিয়েল ডিফোকে রবিনসন ক্রুসো লিখতে উদ্বুদ্ধ করে। 

রজার্স এরপর বাহামাকে জলদস্যু মুক্ত করবে এবং বিনিময়ে উপনিবেশের লাভের একটা অংশ পাবে– এ রকম একটি চুক্তি করে ইংল্যান্ডের রাজ প্রথম জর্জের সাথে। ১৭২০-এ কাজে সফল হলেন রর্জাস। নিউ প্রভিডেন্সের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকেও ফিরিয়ে আনে। এত কিছুর পরও ঋণের দায়ে কারাগারে যেতে হয় রজার্সকে। 

এর মধ্যে 'এ জেনারেল হিস্টোরি অব দ্য রবারিজ অ্যান্ড মার্ডারস অব দ্য মোস্ট নোটোরিয়াস পাইরেটস' নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। ক্যাপ্টেন চালর্স জনসন ছদ্মনামে প্রকাশিত এ বইয়ের প্রকৃত লেখক ড্যানিয়েল ডেফো বলে মনে করা হয়। এর মধ্য দিয়ে রজার্সকে ইংল্যান্ডের জাতীয় নায়কের কাতারে নিয়ে আসা হয়। রজার্সকে রাজা দ্বিতীয় জর্জ অবসর ভাতা দেন। ফের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৭৩২ খ্রিষ্টাব্দে নাসাউতে মারা যান রর্জাস। 

 

Related Topics

টপ নিউজ

জলদস্যু / পাইরেটস / ডাকাত / ইজেল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ল উত্তরার বিমান বিধ্বস্তের দৃশ্য
  • মাইলস্টোনে আহত ছোট বোনকে একাই ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এল কলেজপড়ুয়া রোহান
  • জামিন দিলে সব টাকা শোধ করে দেব, পালিয়ে যাব না: এক্সিম ব্যাংকের নজরুল ইসলাম
  • ৬ দফা দাবিতে মাইলস্টোন কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন
  • মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করা সেই শিক্ষক ১০০% দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন
  • সাবেক আইজিপি বেনজীরের ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিলামে তোলা হচ্ছে

Related News

  • নিদ্রাহারা রাতের এ গান
  • র‌্যাবের পোশাকে ডাকাতির প্রস্তুতি: গ্রেপ্তার ৫ জন কারাগারে 
  • বুনো বিড়াল থেকে পোষা বিড়াল: রহস্যময় রূপান্তরের অজানা ইতিহাস
  • বিড়াল: বন্ধুত্ব
  • বাগনদীর ধারা

Most Read

1
বাংলাদেশ

সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ল উত্তরার বিমান বিধ্বস্তের দৃশ্য

2
বাংলাদেশ

মাইলস্টোনে আহত ছোট বোনকে একাই ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এল কলেজপড়ুয়া রোহান

3
বাংলাদেশ

জামিন দিলে সব টাকা শোধ করে দেব, পালিয়ে যাব না: এক্সিম ব্যাংকের নজরুল ইসলাম

4
বাংলাদেশ

৬ দফা দাবিতে মাইলস্টোন কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

5
বাংলাদেশ

মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করা সেই শিক্ষক ১০০% দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন

6
বাংলাদেশ

সাবেক আইজিপি বেনজীরের ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিলামে তোলা হচ্ছে

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net