Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Monday
December 15, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
MONDAY, DECEMBER 15, 2025
তাপ সামাল দিতে পারলেই বিজয়ী জীবন!

ইজেল

সৈয়দ মূসা রেজা
09 May, 2024, 02:35 pm
Last modified: 11 May, 2024, 02:24 pm

Related News

  • ফটকাবাজির আদ্যোপান্ত
  • কোক না পেপসি?
  • যুদ্ধ যখন পুঁজির খেলা: লেনিন ও হবসনের চোখে সাম্রাজ্যবাদ
  • আদর্শ পৃথিবীর খোঁজে: অর্থনীতির চোখে মানুষের আকাঙ্ক্ষা আর অসম্ভবকে সম্ভব করার গল্প
  • অদৃশ্য হাত: মানুষের স্বার্থ আর সমাজ গড়ে ওঠার দীর্ঘ অনুচ্চারিত কাহিনি

তাপ সামাল দিতে পারলেই বিজয়ী জীবন!

সৈয়দ মূসা রেজা
09 May, 2024, 02:35 pm
Last modified: 11 May, 2024, 02:24 pm

মরুভূমিতে জীবন যাপনের চমৎকার প্রস্তুতি রয়েছে উটের। উটের চোখের পাতা স্বচ্ছ। সাইমুম বা বালিঝড়ের সময় তাই চোখ বন্ধ রেখেই চলতে পারে। বালি ঠেকাতে এবং পানি টেনে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনে নাকও বন্ধ রাখতে পারে।

মাত্রাছাড়া তাপ বিপদ ডেকে আনে। আজকের দিনে মাত্রাছাড়া তাপের বিপদ বুঝতে হলে অতীতে তাপমাত্রার সাথে কীভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছি আমরা, সে কথা জানতে হবে। শরীরকে তাপ এবং শীতলতার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় চতুর পথ ধরে এগোতে হয়েছে মানুষকে। এতে প্রতিপক্ষের চেয়ে বিবর্তনের ক্ষেত্রে সুবিধাও হাতিয়ে নিতে পেরেছে। বিষয়টা জানা এবং বোঝার জন্য অনেক পেছনে ফিরে যেতে হবে। কারণটাও সহজ। বস্তুর উৎপত্তির ঘটনাক্রম থেকে তাপমাত্রাকে আলাদা করার কোনো উপায়ই নেই। 

১৪ বিলিয়ন বছর আগের কথা। মহাবিশ্ব ছিল অতিঘন একটি পিণ্ড। এ পিণ্ডের তাপমাত্রাও ছিল অকল্পনীয়। এরপর প্রচণ্ড গতিতে সম্প্রসারিত হতে থাকল এ পিণ্ড। সম্প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে শীতলও হতে থাকল। পিণ্ডটির কণিকাগুলোর প্রচণ্ড গতিও কমতে থাকল। সৃষ্টি হলো কিছু গুচ্ছপিণ্ড। কালক্রমে গুচ্ছপিণ্ডগুলোই নক্ষত্র এবং গ্রহরাজির রূপ নিল। সৃষ্টি হলাম আমরাও। 

প্রচণ্ড তাপমাত্রার মহাবিশ্ব থেকে জীবনের বিকাশধারা কীভাবে ঘটেছিল? সে সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণাই কেবল করা যায়। এর মধ্যে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য তত্ত্বকথাটি হলো, পৃথিবী তৈরির কিছু পরই অর্থাৎ প্রথম এক শ মিলিয়ন বছর পরে মহাসাগরে মাথা তুলেছিল যেসব আগ্নেয়গিরি, তারই আশেপাশে জীবনের বিকাশ ঘটতে থাকে। এসব আগ্নেয়গিরিকে ঘিরে ছিল ফুটন্ত পানির ঝরনা এবং গেইসার বা উষ্ণ প্রস্রবণমালা থেকে সৃষ্ট অনেক জলাশয়। গ্রহাণু বা উল্কামণ্ডলী এসে পড়ত এসব অঞ্চলে। এভাবেই হয়তো জৈব উপাদান যোগ হয় এই পানিতে। আগ্নেয়গিরিগুলো রাসায়নিক চুল্লির কাজ করে। তৈরি হয় উষ্ণ মিশ্রণের। কোনোভাবে রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বা আরএনএ অণুরাজি জন্ম নেয়। সময়ের সাথে সাথে আরএনএ আকারে দীর্ঘ এবং প্রকারে জটিল হয়ে সত্যিকার আমিষ বা প্রোটিন বনে যায়। ডিএনএ বা ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিডের দুটি সর্পিল শিকল সৃষ্টি হয়। এর মধ্য দিয়ে অণুজীব জন্ম নেয়। ওই সব জলাশয়ের ঘন আবরণের ওপর ঘোরাফেরা করত এসব অণুজীব বা মাইক্রোব। একসময়ে জলাশয় শুকিয়ে গেলে অণুজীবের রেণু কয়েক কিলোমিটার জুড়ে বায়ুবাহিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। বৃষ্টির তোড়ে একসময়ে মহাসাগরে নিয়ে যায় এসব রেণুকে। বিজ্ঞান লেখক কার্ল জিমমার বলেন, সাগরে এসব অণুজীবের রেণু পৌঁছানোর জন্য গোটা গ্রহ জীবন্ত হয়ে উঠল। 

তাপমাত্রার ওঠা-নামার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য পরবর্তী চাল দিল বিবর্তন। এ লক্ষ্যে প্রথম কৌশলটি হলো, চারপাশের তাপমাত্রার সাথে মিল রেখে শরীরের তাপমাত্রার ওঠানামা হতে থাকল। প্রথম সাড়ে তিন বিলিয়ন বছর ধরে এই কৌশলেই চলল প্রাণিকুল। প্রয়োজন দেখা দিলে গা গরম করতে রোদ পোহাত। কিংবা গরম পাথরের ওপর আশ্রয় নিত। তাপমাত্রা সামাল দেওয়ার এ পদ্ধতি এখন টিকে আছে। মাছ, ব্যাঙ, গিরগিটি, কুমিরসহ সব সরীসৃপ এবং উভচর প্রাণী এখনো এই কৌশলে চলছে। পদ্ধতিটির বৈজ্ঞানিক নাম ইক্টার্থামস বা বহিঃউষ্ণতা। তবে এ নামটি আমজনতা ব্যবহার করেন না। আমরা বলি শীতল রক্ত। 

পদ্ধতি বদলে যাওয়া শুরু হলো ২৬০ মিলিয়ন বছর আগে। তাপ সামাল দেওয়ার নতুন কৌশল দেখা দিল কিছু কিছু প্রাণীর মধ্যে। তারা শরীরের ভেতরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণের কৌশল পেয়ে গেল। এসব প্রাণীকে আর বাহিরের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করতে হলো না। এ ধরনের প্রাণিকুল শরীরে তাপযন্ত্র তৈরি করে নিল। বাইরের তাপমাত্রার মুখ চেয়ে আর তাদের বসে থাকতে হলো না। বরং নিজেরাই শরীরের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারল। বৈজ্ঞানিকভাবে একে এন্ডোথার্মাস বা অন্তঃতাপ বলা হলেও লোকমুখে উষ্ণ রক্ত বলা হয়। কুকুর-বেড়াল-বাঘ-সিংহ থেকে শুরু করে গ্রহের পাখিসহ সব স্তন্যপায়ী প্রাণীই এই কাতারে পড়ে। এ সারিতে মানুষ অর্থাৎ আমরাও আছিÑসে কথা ভুলে গেলে চলবে না। উড়ন্ত ডাইনোসর পাখিও একই সারিতে রয়েছে। পাখি নিয়ে প্রচলিত ভুল শুধরে দিয়ে এক বিজ্ঞানী বলেন, পাখি মোটেও উড়ন্ত ডাইনোসোরের মতো নয়, বরং পক্ষিকুলই উড়ন্ত ডাইনোসর!

প্রথম প্রথম মনে হতেই পারে, শীতল রক্তের প্রাণিকুলের জন্য জীবন বেশ সহজ। শরীরের ভেতর থেকে তাপ নিয়ন্ত্রণের দরকারই নেই। একই আকারের উষ্ণ রক্তের প্রাণীর চেয়ে তারা ত্রিশ গুণ কম শক্তি ব্যয় করে। স্তন্যপায়ী এবং পাখিদের অবিরাম ক্যালোরি পুড়িয়ে শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা বজায় রাখতে হয়। কিন্তু এমন কাজে হিমশিম খেতে হয় না শীতল রক্তের প্রাণিকুলকে। তারা উষ্ণ জায়গা খুঁজে বের করতে পারলেই কর্ম কাবার। সেখানে গা এলিয়ে আরামে থাকতে পারে। খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, শীতল রক্তধারীদের জীবন যদি এতই আরামে ভরপুর হয়, তাহলে স্তন্যপায়ী এবং পাখিরা কেন ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিল?

এ নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কেউ কেউ বলেন, শরীরের তাপমাত্রা সব সময় একই পর্যায়ে থাকলে নানা সুবিধা পাওয়া যায়। হজম এবং পুষ্টি সংগ্রহ করার কাজ ভালোভাবে করতে পারে শরীর। দীর্ঘ সময় ধরে দৈহিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে পারে প্রাণী। এতে ছানাদের দেখাশোনা করার সময় পাওয়া যায়। পাশাপাশি উষ্ণ রক্তের কারণে স্নায়ুতন্ত্র, হৃৎপিণ্ড এবং পেশির কোষগুলো অধিকতর সঠিক ও শক্তিশালী তৎপরতা চালিয়ে যেতে পারে। 

কোয়ালা বাতাসের তাপমাত্রার তুলনায় গাছের ঠান্ডা বাকলকে আঁকড়ে ধরে

রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে এ ক্ষেত্রে আরেকটি সুবিধা হিসেবে গণ্য করা যায়। শরীরে ঢুকে পড়া আগ্রাসী অণুজীবকে ধ্বংস করার জন্য কীটপতঙ্গকে রোদে বসে গা গরম করতে হয়। একই কাজ মানুষ করে জ্বরের মধ্য দিয়ে। শীতল রক্তের প্রাণিকুলকে একই কাজ করতে বাইরের তাপের ওপর নির্ভর করতে হয়। বাইরের আবহাওয়া গরম না থাকলে ঘাসফড়িং তার শরীরে ঢুকে পড়া আগ্রাসী অনুজীবগুলোকে তাপ দিয়ে পুড়িয়ে মারতে পারবে না। এদিকে রয়েছে আরও সমস্যা। রোদ পোহানোর জন্য নতুন জায়গা খুঁজে বের করতে হবে ঘাসফড়িংকে। এ কাজ করতে গিয়ে শিকারির হামলায় পড়তে পারে। উষ্ণ রক্তের প্রাণিকুলের এমন বিপদের আশঙ্কা নেই। প্রয়োজন হলেই তারা নিজ শরীরের তাপযন্ত্রকে চাঙা করে তুলতে পারে। 

তুলনামূলকভাবে উষ্ণ রক্তের প্রাণীদের চলার গতি বেশি। নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী জন গ্রান্ডি মনে করেন, শিকার দ্রুত করতে পারলে প্রতিপক্ষের ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যায়, তাই প্রাণিকুল দ্রুত উষ্ণ রক্তের হয়ে ওঠে। তাপমাত্রা অধিক হওয়া মানে শরীরের ভাঙাগড়া বা বিপাকীয় ক্রিয়ার গতি বেড়ে যাওয়া। দ্রুতগতিসম্পন্ন শিকারি হতে হলে এ জিনিসের দরকার। তিনি আরও বলেন, গরুর মতো বড় ইগুয়ানা ছিল। কিন্তু ওগুলোর চলাফেরার গতি ছিল খুবই কম। তাই আজকের পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারেনি। এ প্রাণীর কাছাকাছি গোত্রের হলো বিশাল আকৃতির কাছিম। কিন্তু তাদের দেহ শক্ত বর্মে ঢাকা। কাজেই কাছিমের দ্রুত গতিশীল হওয়ার প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ শরীর যদি আকারে বড় হয়, তাহলে দ্রুতগামী হওয়া দরকার। দৈহিকভাবে বড় আকারের কিন্তু দ্রুত গতির না হলে প্রাণ খোয়াতে হবে বেঘোরে। 

সুনির্দিষ্ট কারণ যা-ই হোক না কেন, উষ্ণ রক্ত থাকার বিষয়টি স্তন্যপায়ীদের বেলায় খুব ভালোভাবে খাপ খাইয়ে গেছে। গত ৭০ মিলিয়ন বছর ধরে এ ধরনের প্রাণী দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি প্রাণীরই শরীরের ভেতর রয়েছে তাপ উৎপাদনের ব্যবস্থা বা যন্ত্র। স্তন্যপায়ী প্রাণিকুলের এ সফলতা কালক্রমে দুপেয়ে প্রাইমেটের উদ্ভব ঘটায়। এসব প্রাইমেটের মগজ দেহের তুলনায় বড় এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা আরও পরিশীলিত ও আধুনিক। এই উল্লেখযোগ্য প্রাণীকে দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে? তাহলে আয়নার সামনে দাঁড়ান। 

১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ইথিওপিয়ার অওয়াশ নদীর উপত্যকায় কিছু হাড়গোড় পাওয়া যায়। এসব হাড় আবিষ্কার করেন ওহাইওর কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন অধ্যাপক ডোনাল্ড জোহানসন। ৩.২ মিলিয়ন বছর আগে মানুষের এক নারী পূর্বসূরির ছিল এসব হাড়-জীবাশ্ম। আক্কেল দাঁত এবং কোমরের হাড়ের গঠন থেকে অধ্যাপক জোহানসন নিশ্চিত হলেন, মৃত্যুকালে তিনি কিশোর বয়সী ছিলেন। জোহানসন সুদূর অতীতকালের এ কিশোরীরা নাম দিলেন লুসি। বিটলদের গান, লুসি ইন দ্য স্কাই উইথ ডায়মন্ডস থেকে এ নামটি নেওয়া হয়। হাড়গোড় যখন আবিষ্কার করা হয়, সে সময় তাদের শিবিরে এ গানটি বাজানো হচ্ছিল। লুসির আবিষ্কারের ফলে মানব বিবর্তনবিষয়ক একটি শূন্যতা কেটে যায়। 

লুসি এক উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার। এ আবিষ্কারের ফলে মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস নতুন করে লিখতে হয়। তিন মিলিয়ন বা ৩০ লাখ বছর আগে সমাহিত লুসির হাড়গোড় ভালোভাবেই সংরক্ষিত ছিল। লুসির মেরুদণ্ড, পা, শ্রোণি এবং পায়ের হাড়ের সাথে আধুনিক মানুষের হাড়ের মিল রয়েছে। তবে লুসির মগজ আধুনিক মানুষের মতো বড় ছিল না। কিন্তু লুসি যে দুই পায়ে চলাচল করত, এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। ঊরুর হাড়ের নিচের দিক এবং হাঁটুর হাড় থেকে বোঝা যায়, দুই পায়ে হাঁটার অভ্যাস ছিল লুসির। 

লুসি কেনই বা উঠে দাঁড়ালেন এবং দুই পায়ে হাঁটা শুরু করলেনÑপ্রত্নবিদদের মধ্যে এ নিয়ে তর্কের শেষ নেই। কেউ কেউ বলেন, দুই পায়ে হাঁটার কারণে মানুষের আদি পুরুষ অস্ত্র বহনে বিশেষ সুবিধা পেত। কেউ বলেন, দুই পায়ে হাঁটার কারণে গাছের উঁচু দিকে ফল-পাকুর পাড়তে সুবিধা পাওয়া যেত। দুই পায়ে হাঁটার মধ্য দিয়ে একগামিতা এবং পরিবারের ভিত্তি তৈরি হয় বলে যুক্তি দেন কেউ কেউ। তারা বলেন, এতে আদি মানবের খাবার সংগ্রহে সুবিধা পেত বিনিময়ে স্ত্রী জাতির সাহচর্য এবং যৌনতার পুরস্কার বরাতে জুটত। 

কিংবা লুসি হয়তো শরীরকে শীতল রাখার স্বার্থেই দুই পায়ের ব্যবহার করতেন। দুই পায়ে দাঁড়ালে শরীর অনেক বেশি বাতাস পায়। তাতে শরীরের তাপ সহজেই বের হয়ে যেতে পারে। 

উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন, লুসি দুই পায়ে হেঁটেছে। তার এই হাঁটার পরিণামে সবকিছুই বদলে যায়। 

জিরাফের চামড়ার চমৎকার নকশা তাপ বের হওয়ার জানালা হিসেবে কাজ করে। জিরাফের শরীরের উষ্ণ রক্তকে রক্তনালির প্রান্তে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাপ প্রাণীটির শরীর থেকে বের হয়ে যায়।

তাপের শক্তি বুঝতে গেলে কেবল তাপমাত্রার পরিবর্তন নিয়েই মাথা ঘামালে চলবে না। বিবর্তনের বেলায় তাপ একধরনের প্রতিবন্ধক হয়ে দেখা দিয়েছে। তাপকে সামাল দেওয়ার ওপর জীবনে টিকে থাকার বিষয়টি নির্ভর করছে। তাপকে সামাল দেওয়ার জন্য প্রাণিকুল বিচিত্র কৌশল গ্রহণ করেছে। প্রাণিকুলের বৈচিত্র্যময় রঙের চেয়েও কোনো অংশে কম নয় এই সামাল দেওয়ার বৈচিত্র্য। 

এ বাবদ হাতির কথা উল্লেখ করা যায়। হাতি রোদে দীর্ঘ সময় কাটায়। গা ঠান্ডা করার জন্য ছায়ায় যায় এবং পানিতে নামে। হাতির গায়ে কম পশম থাকায় এবং কান বড় হওয়ায় তাপ বের হতে সহায়তা করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হলো, তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে হাতির চামড়ার ছিদ্রপথগুলো বড় হতে থাকে। এতে ঘাম ঝরতে থাকে। যদিও মানুষের মতো ঘামগ্রন্থি নেই হাতির। 

কোয়ালা বাতাসের তাপমাত্রার তুলনায় গাছের ঠান্ডা বাকলকে আঁকড়ে ধরে। ঠান্ডা করার পদ্ধতি হিসেবে ক্যাঙারু নিজ বাহুকে থুথু দিয়ে ভিজিয়ে দেয়। কাঠবিড়ালি ঘন লেজকে ছাতার মতো ব্যবহার করে। জলহস্তী কাদায় গড়াগড়ি খায়। কাদা থেকে পানি বাষ্প হতে বেশ সময় নেয়। তাতে কাদামাখা জলহস্তী অনেক সময় ধরে শীতল থাকতে পারে। বনের রাজা সিংহ তেতে ওঠা ভূমি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গাছে চড়ে। খরগোশ রক্তকে তার বিশাল কানে প্রবাহিত করতে থাকে। কান তাপ বেরিয়ে যেতে সহায়তা করে। শকুন এবং সারস শরীর ঠান্ডা করার জন্য নিজ পায়ে মলত্যাগ করে। পেলিকান, ঘুঘু এবং পেঁচাসহ কিছু পাখি শরীর ঠান্ডা করার জন্য 'গুলার ফ্লাটারিং' নামে পরিচিত একটি কৌশলের আশ্রয় নেয়। অর্থাৎ এসব পাখি গলার ঝিল্লিতে তীব্র কম্পন তৈরি করে। এতে বেশি করে বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে এবং পানিকে বাষ্পীভূত করে শরীরকে ঠান্ডা রাখে। জিরাফের চামড়ার চমৎকার নকশা তাপ বের হওয়ার জানালা হিসেবে কাজ করে। জিরাফের শরীরের উষ্ণ রক্তকে রক্তনালির প্রান্তে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাপ প্রাণীটির শরীর থেকে বের হয়ে যায়। 

এয়ার কন্ডিশনার বা তাপানুকূল যন্ত্রের ব্যবহার কেবল মানুষই জানেÑএ ধারণা ঠিক নয়। অন্যান্য প্রাণীও প্রায় এ জাতীয় পদ্ধতি কাজ খাটিয়ে তাপকে বশে রাখে। হাওয়া চলাচলের সুবন্দোবস্ত করেই উইপোকা টিবি তৈরি করে। তাপমাত্রা বাইরে যা-ই হোক, টিবির ভেতরটা আরামদায়ক শীতল থাকে। মৌমাছি মধু জোগাড়ের পথে পানিও সংগ্রহ করে। মৌচাকে ফিরে এসে মুখে করে এ পানি চাকের মৌমাছিদের দেয়। তারা পানির ফোঁটাকে গোটা চাকে ছড়িয়ে দেয়। অন্যান্য মৌমাছি পাখা দিয়ে পানির ফোঁটাগুলোকে হাওয়া দিতে থাকে। পানি বাষ্পীভূত হয়ে চাককে শীতল রাখে।  

সাহারার মরুভূমি এবং আরব উপদ্বীপের জীবন কাটায় সাহারার রুপালি পিঁপড়া। মরুভূমির গরমে ভাজি হয়ে যাওয়ার কথা এসব পিঁপড়ার। ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় মরুভূমিতে খাবারের তালাশে নামে এ পিঁপড়া প্রজাতি। এমন প্রচণ্ড গরমে গিরগিটি বের হয় না। মরু-গিরিগিটিগুলোর প্রিয় খাবার এসব পিঁপড়া। প্রাণী মরা দেহ থেকে খাবার জোগাড় করে রুপালি পিঁপড়া। তেতে ওঠা বালুর ওপর দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে এক মিটার গতিতে ছোটে তারা। এভাবেই অতি উষ্ণ, তপ্ত তাওয়ার মতো তেতে ওঠা মরুভূমি পাড়ি দেয় এ পিঁপড়া। পিঁপড়ার প্রায় ১২০০ প্রজাতির মধ্যে এরাই সবচেয়ে দ্রুতগামী। এ পিঁপড়ার মতো গতিতে যদি মানুষ ছুটতে পারত, তা হলে ঘণ্টায় ৭২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার সক্ষমতা পেত! এ পিঁপড়ার গায়ের রং চমৎকার রুপালি হয়েছে ত্রিকোনা পশমের কারণে। এটিও তাপ বিকিরণ করে। এই যেমন গরমের দিনে কালোর বদলে সাদা শার্ট পরে বের হলে তুলনামূলকভাবে কম গরম লাগে। 

প্রাণিজগতে গরম সামাল দেওয়া নিয়ে কথা বলতে গেলে অনিবার্যভাবেই আসবে উটের কাহিনি। উটের বিবর্তন মরুভূমিতে ঘটেনি। প্রায় ৪০ মিলিয়ন বছর আগেহ উত্তর আমেরিকায় উটের বিবর্তন ঘটে। উত্তর আমেরিকার শীতকালের প্রেক্ষাপটে এ প্রাণীর চোখের পাপড়ি হয় বেশ বড়। পা হয় চওড়া। পিঠে দেখা দেয় কুজ্ব। প্রায় ১৪ হাজার বছর আগে বেরিং সাগরের মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া ভূমি-সেতু অতিক্রম করে অন্যান্য অনেক স্থানের মতোই আরব উপদ্বীপে গিয়ে পৌঁছায়। হাজার হাজার বছর আগে, প্রায় ঘোড়াকে গৃহপালিত করার সময় থেকেই উটকেও গৃহপালিত হিসেবে লালন করা হয়। 

হাওয়া চলাচলের সুবন্দোবস্ত করেই উইপোকা টিবি তৈরি করে

শীতের দেশ উটের আদি উৎস হলেও তেতে ওঠা মরুভূমিতে জীবন যাপনের চমৎকার প্রস্তুতি রয়েছে উটের। উটের চোখের পাতা স্বচ্ছ। সাইমুম বা বালিঝড়ের সময় তাই চোখ বন্ধ রেখেই চলতে পারে। বালি ঠেকাতে এবং পানি টেনে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনে নাকও বন্ধ রাখতে পারে। গরম মাটিতে শুয়ে থাকলেও মাথা উঁচু করে রাখতে পারে। এ ছাড়া কুজ্বের কারণে শরীরের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাপের ধকল সামলে নিতে পারে। প্রচলিত ধারণা, উট কুজ্বে পানি জমিয়ে রাখে। আসলে পানি নয় বরং জমিয়ে রাখে চর্বি। খাবারের ঘাটতিতে পড়তে এ চর্বি ব্যবহার করে। দীর্ঘদিন খাবার না পেলে উটের কুজ্ব ঝুলে পড়ে। 

প্রচণ্ড গরম অঞ্চলে বেঁচে থাকতে হলে পানি ব্যবহারে বা পানি খরচে খুবই সতর্ক হতে হবে। প্রতি বিন্দু পানি ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার কাজে উটের জুড়ি মেলা ভার। উটের শরীরে রয়েছে অস্বাভাবিক ধরনের রক্ত কোষ। এসব রক্ত কোষ ডিম্বাকার। ঘন রক্তের মধ্য দিয়ে এসব কোষ চলাচল করতে পারে। উট পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে পারলে তখন এসব কোষ দ্রুত সম্প্রসারিতও হতে পারে। শীতকালে এবং ঠান্ডার সময় পানি না খেয়ে মাসের পর মাস কাটাতে পারে উট। প্রচণ্ড গরমকালে প্রতি আট বা দশ দিন পরপর পানি খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে উটের। পানি না খাওয়ার কারণে শরীরের ওজন এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। পানি সংকটে কাতর উট ঘন প্রস্রাব করে। এ প্রস্রাব পেছনের পায় ও ন্যাজে সাদা দাগের মতো দেখা যায়। আসলে এগুলো নুনের স্ফটিক ছাড়া আর কিছুই নয়। উট যেভাবে পেশাবকে প্রক্রিয়াজাত করে, তাতে পানি কম খরচ হয়। অন্যদিকে সাগরের পানির চেয়েও নোনাপানি অনায়াসে পান করতে পারে মরুজাহাজ নামে পরিচিত এ প্রাণী। এ ছাড়া অন্যান্য বেশির ভাগ প্রাণীর জন্য বিষাক্ত এমন নোনা গাছ-লতাপাতাও খেতে পারে উট। উটের মল এতই শুষ্ক যে তা সরাসরি জ্বালানি হিসেবেও কাজে লাগানো যায়।  

তাপকে বিবর্তনের শক্তি হিসেবে ভাবনা করার দলে খুব বেশি মানুষ নেই। এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছেন টেক্সাস স্টেট ইউনিভার্সিটির নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিল প্রুয়েৎজ। পাশাপাশি তিনি একজন প্রাইমাটোলজিস্টও। শিম্পাঞ্জিদের নিয়ে গবেষণা করতে প্রতিবছরের একটি উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় করেন সেনেগালের গ্রাম ফনগোলিতে। উষ্ণ পরিবেশে জীবন যাপন করে এসব শিম্পাঞ্জি। অনেক মা-বাবা নিজ সন্তান সম্পর্কে যা জানেন, জিল প্রুয়েৎজ শিম্পাঞ্জি সর্ম্পকে তার তুলনায় অনেক বেশি জানেন। হালে তিনি ফনগোলি সাভানা শিম্পাঞ্জি প্রকল্প পরিচালনা করেন। সেনেগালের জাতীয় উদ্যানের বাইরে ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৩২টি শিম্পাঞ্জি রয়েছে। 

অধ্যাপক জিল প্রুয়েৎজ বলেন যে অনেক কারণেই শিম্পাঞ্জি নিয়ে গবেষণা করছি। মানুষের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ স্বজন শিম্পাঞ্জি নিয়ে গবেষণা করার এটি প্রধান একটি কারণ। বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে কী ধরনের তৎপরতা চালায় শিম্পাঞ্জি, তা দেখে আদি মানুষের বিকাশ সম্পর্কে জানা যাবে।   

সেনেগালে মার্চ-এপ্রিলে তাপমাত্রা ৪৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে ঠেকে। গাছে থাকে না পাতাও। গরম ঝাপটার মতো গালে এসে লাগে। ওই এলাকায় পানিও পাওয়া যায় কম। এই শিম্পাঞ্জিগুলো সবচেয়ে গরম এবং শুষ্ক এলাকায় জীবন যাপন করে। জঙ্গলে যে সবুজ পরিবেশে থাকে, তার সাথে এ এলাকার কোনো মিল নেই। বরং এ যেন এক মহাদুর্যোগকবলিত ভূমি। 

দীর্ঘদিন এমন অঞ্চলে জীবন কাটানোর ফলে শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে নানা অদ্ভুত আচরণের জন্ম নিয়েছে। এসব আচরণ কখনো জঙ্গলের শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে দেখা যায় না। প্রচুর ফলমূল খায় জঙ্গলের শিম্পাঞ্জিকুল। ফলে পর্যাপ্ত পানি ওই খাবার থেকে পায়। তাদের পানি খাওয়ার তেমন প্রয়োজন পড়ে না। অন্যদিকে ফনগোলির শিম্পাঞ্জিদের দৈনিকই পানির প্রয়োজন পড়ে। এই শুষ্ক অঞ্চলে নির্ভরযোগ্য পানির উৎসের কাছাকাছি তারা থাকে। 

জঙ্গলের শিম্পাঞ্জি দিনভর তৎপর থাকলেও ফনগোলির শিম্পাঞ্জিরা দিনে ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা বিশ্রামে কাটায়। শুকনো মৌসুমে ছোট ছোট গুহায় তারা ঘোরাফেরা করে। কিন্তু বৃষ্টির মৌসুমে ছোট ছোট জলাশয়ে মনের খুশিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভেসে বেড়ায়। 

গোটা মানবজাতির কাহিনির জন্য হয়তো উল্লেখযোগ্য এমন এক আচরণ ফনগোলির শিম্পাঞ্জির মধ্যে দেখতে পেয়েছেন তিনি। তীব্র দাবদাহ চলাকালে ফনগোলির শিম্পাঞ্জিকুল দাঁড়িয়ে হেঁটে বেড়ায়। শীতল অঞ্চলের শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে এমন আচরণ দেখাই যায় না। 

হাতির গায়ে কম পশম থাকায় এবং কান বড় হওয়ায় তাপ বের হতে সহায়তা করে। তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে হাতির চামড়ার ছিদ্রপথগুলো বড় হতে থাকে। এতে ঘাম ঝরতে থাকে।

এবার আবার লুসির কথায় ফিরি। লুসিকেও দ্রুত পরিবর্তনশীল এক পরিবেশে জীবন কাটাতে হয়েছে। আজকের দিনের মতো দ্রুত না হলেও সেদিন সত্যিই বেশ দ্রুত চারপাশ বদলে যাচ্ছিল। জঙ্গল বদলে তৃণাচ্ছাদিত অঞ্চল হয়ে উঠছিল। চিতাবাঘ ও সিংহ সে সময় ঘুরে বেড়াত। হায়না এবং হাতিও ছিল। লুসিকে একই সাথে শিকারি এবং শিকারে পরিণত হতে হয়। টিকে থাকার জন্য নতুন নতুন আচরণ শিখতে হয়। এর মধ্যে অস্ত্র দিয়ে শিকার করার বিদ্যা অর্জন করতে হয়। এতে ফলমূল বা উইপোকানির্ভর খাদ্যের বদলে মাংসকেন্দ্রিক খাবারের দিকে ঝোঁকেন লুসি। হয়তো দলবদ্ধভাবে হরিণ এবং জেব্রা শিকার করত আদি সেই মানবগোষ্ঠী। 

ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক কেভিন হান্ট মনে করেন, দুই পায়ে ভর করে হাঁটতে শিখেছে মানুষ ধীরে ধীরে। এক মিলিয়ন বছর বা সে রকম সময় লেগেছে এই চলন রপ্ত করতে। লুসি হলো এ চলন রপ্ত করার প্রথম দিককার উদাহরণ। হয়তো সে দুই পায়ে ভর করে দাঁড়িয়েছে ফল পাড়ার সুবিধা এবং দাবদাহের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। দ্বিতীয় পর্যায়ে আবির্ভূত হয় হোমো ইরেক্টাস। তাদের হাত-পা লম্বা লম্বা ছিল। ফলে দ্রুত চলাফেরা ও দৌড়াতে পারত তারা। শরীর হালকা-পাতলা হওয়ায় তাপ বের হয়ে যেত তাড়াতাড়ি। আর আগে তুলনায় অধিকতর মাংসখেকো ছিল তারা।

উষ্ণ বিশ্বে টিকে থাকার জন্য এবারে ঘামতে হবে কেমন করে, তা শিখতে হয় মানুষকে। বির্বতনের ধারায় দ্বিপদী হওয়া বেশ জটিল ছিল। তারচেয়ে জটিল হলো ঘামগ্রন্থির অধিকারী হওয়া। জীবাশ্ম হাড় দেখে দ্বিপদী হওয়ার কথা জানা যায়। একই উৎস থেকে ঘামগ্রন্থি তৈরি হওয়ার ধারাবাহিকতা সম্পর্কে জানা সম্ভব নয়। আদি মানুষের আচরণ নিয়ে যেসব তথ্য পাওয়া যায়, তার ওপর ভিত্তি করে ঘামগ্রন্থিসংক্রান্ত বির্বতন আঁচ করা হয়। 

লুসি ও তার প্রজন্মের মানুষকে গাছে থাকার সময় রোদে ঝলসে যেতে হয়নি। গাছ ছাড়ার পর তাদের তাপ সামাল দেওয়ার সমস্যায় পড়তে হয়। রোদের অতিবেগুনি রশ্মি ঠেকানোর জন্য মেলানিন তৈরি করার সক্ষমতা শরীরে তৈরি করেন। না হলে ত্বক এবং ডিএনএ অতিবেগুনি রশ্মিতে ক্ষতিগ্রস্ত হতো।  কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে আমাদের পূর্বসূরিদের গায়ের রং ছিল ঘন কালো। মানুষের আদি বংশধর আফ্রিকা থেকে উত্তরাঞ্চলীয় আবহাওয়ার অঞ্চলে সরে আসার পর গায়ের রং পরিবর্তন হয়। কালো রং দিয়ে রোদ ঢুকতে পারে না। ভিটামিন ডি উৎপাদন তৎপরতা সীমিত হয়ে যায়। এ কারণেই রোদের তীব্রতা যেসব এলাকায় কম, সেসব এলাকায় ফরসা রংই মানুষের জন্য সুবিধা ডেকে আনে। 

তাপ সামাল দেওয়ার তৎপরতা আরও জটিল বিষয়। উষ্ণ রক্তের প্রাণীর ক্ষেত্রে বেশি বেশি রোদ মানে বেশি বেশি তাপ। বেশি বেশি দৈহিক তৎপরতা মানেও বেশি বেশি তাপ। উষ্ণ তাপমাত্রার মধ্যে একটা আহত হরিণকে তাড়া করতে করতে কত দূর যাওয়া সম্ভব, তা নির্ভর করবে এই তাপ সামাল দেওয়ার ওপর। ভালোভাবে নিজ শরীরের তাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হলে এ কাজ থেকে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হবে না। মাত্রাছাড়া উষ্ণ হয়ে উঠলে আফ্রিকার তৃণাঞ্চলে ক্ষুধার্ত থাকতে হবে। এদিকে সে সময় আমাদের আদিপুরুষদের মগজে বিবর্তন ঘটছিল। ক্রমে বড় হচ্ছিল মস্তিষ্ক। বড়সড় মস্তিষ্কও শীতল রাখতে হয়। সব মিলিয়ে যন্ত্রপাতি বা হাতিয়ার তৈরিসহ অন্যান্য দক্ষতাকে এগিয়ে নিতে হলে শরীরে শীতল করার বড়সড় ধরনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।   

সমস্যার সমাধান হয়ে এল শরীরের ভেতর থেকে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা। এতে গরম লাগলে আমাদের ত্বককে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া হয়। পানি বাষ্পীভূত হওয়ার সময় খানিকটা তাপ চুষে নেয়। এতে শরীর শীতল হয় এবং ত্বকের তল দিয়ে প্রবাহিত রক্তও শীতল হয়। শীতল রক্ত প্রবাহিত হতে থাকলে শরীরের তাপমাত্রাকেও শীতল করে। মানুষের বগলতলে এবং যৌন কেশের অংশে বিশেষ ধরনের ঘাম গ্রন্থি রয়েছে। এ গ্রন্থি কেবল গরমে সাড়া দেয় না বরং স্নায়ুর তৎপরতার বেলায় সাড়া দেয়। এ জন্য চাকরির সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বগল ঘামতে শুরু করে। এ ছাড়া গোটা শরীরে ছড়ানো রয়েছে ঘামগ্রন্থি। কোনো কোনো বানর প্রজাতিরও একই রকম ঘামগ্রন্থি রয়েছে। তবে তাদের শরীরজুড়ে দুই ধরনের ঘামগ্রন্থি থাকলেও মানুষের বেলায় শরীরের দুটো জায়গা ছাড়া আর কোথাও ওই দুই ধরনের গ্রন্থির দেখা মেলে না। আজকের দিনে আপনার বা আমার শরীরে প্রায় দুই মিলিয়ন ঘাম গ্রন্থি রয়েছে। শরীরে সমভাবে ছড়ানো নেই এসব গ্রন্থি। এর বেশির ভাগই রয়েছে হাত, পা এবং মুখমণ্ডলে। খুব কম পরিমাণে রয়েছে নিতম্বে। লিঙ্গভেদে ঘামগ্রন্থির পার্থক্য প্রায় নেইই। ঘামের ৯৯.৫ শতাংশই হলো পানি। ঘামের একমাত্র কাজ হলো ত্বককে ভেজা রাখা। গরমের দিনে বেশির ভাগ মানুষ ঘণ্টায় গড়ে এক লিটার বা দিনে ১২ লিটার পরিমাণ ঘামতে পারে। শিম্পাঞ্জির তুলনায় মানুষ দশ গুণ বেশি ঘামে। 

ঘামগ্রন্থির কাজকে আরও সহজ করে দেওয়ার জন্য লুসির সন্তানরা শরীরকে যতটা সম্ভব পশমমুক্ত করেছে। বাষ্পীভূত হওয়ার কাজে পশম বাধা দেয়। মানুষের শরীরের মধ্যে সবচেয়ে ঘন পশম দেখতে পাওয়া যাবে মাথায়। এর কারণ হলো মস্তিষ্ক তাপের প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। মস্তিষ্ককে শীতল রাখার জন্য চুল ছায়ার কাজও করে। এ ছাড়া আঘাত ঠেকাতেও সাহায্য করে।

পশম ঝরে যাওয়া এবং ঘামগ্রন্থির বিকাশকে বিবর্তনের ধারায় অতি গুরুত্বের বিষয় বলে ধরে নেওয়া হয়। হাতিয়ার কিংবা যন্ত্রপাতি এবং আগুন ব্যবহারের মতোই এ দুই ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ। 

তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কৌশল বের করেছে আফ্রিকার তৃণাঞ্চলের অন্যান্য প্রাণীও। এর মধ্যে সবচেয়ে সহজ হচ্ছে হাঁপানো। সিংহ বা হায়না দ্রুতগতিতে ছুটতে পারে। কিন্তু দৌড়ের সময় তাপ কমানোর জন্য হাঁপাতে পারে না। ফলে অল্প সময়ে জন্যেই কেবল প্রচণ্ড গতিতে ছুটতে পারে। শরীরের তাপের ভারসাম্য আনার জন্য তাকে দৌড় থামিয়ে হাঁপাতে হয়। কিন্তু মানুষকে এমন কাজ করার দরকার পড়ে না। এ কারণে মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসে ঘটনাটি বিশাল গুরুত্বের হয়ে ওঠে। শরীরের তাপ সফলভাবে সামাল দেওয়া বা নিয়ন্ত্রণ করার কারণে মানুষকে শিকারের জন্য কেবল জঙ্গলের জলাশয়ের আশেপাশেই ওত পাততে হতো না। বরং পাড়ি দিতে পারত বহুদূর। মানুষের শিকারে পরিধি এ কারণে বাড়তে থাকে।  

এভাবে মানুষ শিকারকে তাড়া করে ফিরতে পারে। শিকার বেচারা দীর্ঘ তাড়ার মুখে তাপাক্রান্ত হয়ে অচল হয়ে যায়। কালাহারি মরুভূমিতে আজও এ পদ্ধতিতে হরিণজাতীয় প্রাণী শিকার করে মানুষ। গরমকালের দুপুরে অতি দ্রুতগামী এ প্রাণী মানুষের ঘণ্টার পর ঘণ্টার তাড়ার মুখে একসময় তাপ-শ্রান্ত হয়ে ঢলে পড়ে।

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের আমাদের পূর্বপুরুষদের নিয়ে ভুল এক ধারণা ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। দাবি করা হয়, মসলাযুক্ত খাবারদাবারের প্রতি টান তারা গড়ে তুলেছিলেন; কারণ, এ ধরনের খাবার খেতে গেলে প্রচুর ঘামতে হয়। অর্থাৎ তাদের ঘামতে সহায়তা করে মসলাযুক্ত খাদ্য। কথাটা ঠিক নয়। মূল কারণ হলো, মসলা খাবার সংরক্ষণে সহায়তা করে। ফ্রিজের ব্যাপক চল ঘটার আগে এ মসলাবহুল খাদ্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলোতে খাবার দ্রুতই নষ্ট হয়ে যায়। রসুন, পেঁয়াজ, কাবাবচিনি, পুদিনাপাতা, দারুচিনি, জিরাসহ সবই ব্যাকটেরিয়ানাশক। বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী পল শেরম্যান বলেন, ব্যাকটেরিয়ানাশক মসলার খাদ্য যারা উপভোগ করেছেন, তারা সবাই, বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলে হয়তো স্বাস্থ্যবান ছিলেন। তারা বেশি দিন বেঁচেছেন এবং অনেক বেশি সন্তান রেখে গেছেন। হস্তী কী করে রান্না করতে হবে, তা-ও সন্তানদের শিখিয়ে গেছেন তারা।

Related Topics

টপ নিউজ

গরম / তাপমাত্রা / আবহাওয়া / ইজেল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ছবি: এএফপি
    ৭,৮০০ কোটি গাছ লাগিয়েছে চীন; তাতেই নষ্ট করেছে নিজেদের পানিচক্রের ভারসাম্য
  • ছবি: সংগৃহীত
    বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পর ৫৭,৫৭৬ কোটি টাকা লোকসান দেখাল ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
  • ছবি: সংগৃহীত
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলাম আযম-নিজামীদের প্রতিকৃতি মুছে দিল প্রশাসন, 'জানেন না' প্রক্টর
  • ছবি: সংগৃহীত
    হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক
  • ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট
    ‘মামলা’ এড়াতে ট্রাফিক কর্মীকে কয়েকশো মিটার টেনেহিঁচড়ে নিয়ে পালালেন সিএনজি চালক
  • পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছবি: বাসস
    ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

Related News

  • ফটকাবাজির আদ্যোপান্ত
  • কোক না পেপসি?
  • যুদ্ধ যখন পুঁজির খেলা: লেনিন ও হবসনের চোখে সাম্রাজ্যবাদ
  • আদর্শ পৃথিবীর খোঁজে: অর্থনীতির চোখে মানুষের আকাঙ্ক্ষা আর অসম্ভবকে সম্ভব করার গল্প
  • অদৃশ্য হাত: মানুষের স্বার্থ আর সমাজ গড়ে ওঠার দীর্ঘ অনুচ্চারিত কাহিনি

Most Read

1
ছবি: এএফপি
আন্তর্জাতিক

৭,৮০০ কোটি গাছ লাগিয়েছে চীন; তাতেই নষ্ট করেছে নিজেদের পানিচক্রের ভারসাম্য

2
ছবি: সংগৃহীত
অর্থনীতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পর ৫৭,৫৭৬ কোটি টাকা লোকসান দেখাল ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক

3
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলাম আযম-নিজামীদের প্রতিকৃতি মুছে দিল প্রশাসন, 'জানেন না' প্রক্টর

4
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

5
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট
বাংলাদেশ

‘মামলা’ এড়াতে ট্রাফিক কর্মীকে কয়েকশো মিটার টেনেহিঁচড়ে নিয়ে পালালেন সিএনজি চালক

6
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছবি: বাসস
বাংলাদেশ

ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net