Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Thursday
June 05, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
THURSDAY, JUNE 05, 2025
ডিসেম্বরের ঢাকা: নিয়াজির ডায়েরি থেকে

ইজেল

আন্দালিব রাশদী
16 December, 2023, 11:05 am
Last modified: 16 December, 2023, 11:06 am

Related News

  • সব দল নয়, শুধু একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইছে: প্রধান উপদেষ্টা
  • ‘আমি এটাও মনে করি ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন করা সম্ভব’: তারেক রহমান
  • চীনের যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে জয় এনে দিয়েছে
  • ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন সম্ভব: বিএনপি
  • স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার নতুন স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন

ডিসেম্বরের ঢাকা: নিয়াজির ডায়েরি থেকে

আন্দালিব রাশদী
16 December, 2023, 11:05 am
Last modified: 16 December, 2023, 11:06 am

গ্রাফিক্স: ইজেল

লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি (জন্ম পাঞ্জাবের মিয়ানওয়ালি ১৯১৫, মৃত্যু ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৪) একাত্তরের ৪ এপ্রিল থেকে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান। পরে প্রিজনার অব ওয়ার। তারই নেতৃত্বে পাকিস্তান ভূলুণ্ঠিত হয় ঢাকার ধুলোতে। পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত তাকেই করে স্কেপগোট; আর বালুচিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানের কসাই হিসেবে চিহ্নিত জেনারেল টিক্কা খান লাভ করেন প্রধান সেনাপতির পদ। একাত্তরের ডিসেম্বরে লেখা ও গ্রন্থভুক্ত তার ডায়েরির ডিসেম্বর তুলে ধরা হচ্ছে। প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে নভেম্বর, ১৯৭১-এর কয়েকটি দিনও অন্তর্ভুক্ত করতে হয়েছে।


১৯ নভেম্বর ১৯৭১
খবর এল ঈদের দিন ভারত পূর্ণোদ্যমে আক্রমণ চালাবে। আটটি ব্যাটালিয়ন, রাওয়ালপিন্ডির ১১১ ব্রিগেড ও ইঞ্জিনিয়ারিং রেজিমেন্ট এসে পূর্ব পাকিস্তান প্রতিরক্ষায় অংশ নেবে, এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১১১ ব্রিগেড পাঠানোর আদেশ বাতিল হলো। ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটাতে এই ১১১ ব্রিগেডকে কাজে লাগানো হয়েছে। পরের চার দিনে ঢাকা পৌঁছেছে কেবল দুই ব্যাটালিয়ন। আর সব ব্যাটালিয়ন পাঠানোর আদেশও বাতিল হয়ে গেল। ঢাকার প্রতিরক্ষার জন্য চিহ্নিত করে রাখা বাহিনী কখনো ঢাকায় পৌঁছেনি।

২১ নভেম্বর ১৯৭১
ভারতীয়রা পূর্ব পাকিস্তান আক্রমণ কওেছে। এ খবরটা জানানোর জন্য কেবল একজনকেই পাওয়া যায়, ভাইস চিফ অব জেনারেল স্টাফ। চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল গুল হাসান। তিনি লাহোরে ঈদের ছুটি কাটাচ্ছেন। ঈদের দিন আসন্ন যুদ্ধ, এটা ভালো করে জানার পরও তিনি ছুটিতে চলে গেছেন!

২২ নভেম্বর ১৯৭১
প্রেসিডেন্ট ও চিফ অব আর্মি স্টাফ শিয়ালকোট এলাকায় শিকার করতে বেরিয়ে গেলেন। সেনা সদর দপ্তরের ব্রিফিং নিতেও অস্বীকার করলেন। সে সময় প্রেসিডেন্টের কুখ্যাত উক্তি, 'পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আমি কী করতে পারি? আমি শুধু দোয়া-দরুদ করতে পারি।'
পাকিস্তান আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় আগ্রাসন ঠেকাতে প্রেসিডেন্ট নিরাপত্তা পরিষদের কোনো উদ্যোগ গ্রহণের চেষ্টা করছেন না। এমনকি আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ভারতেও আক্রমণ চালানো হচ্ছে না। অথচ তারা বলেছেন, 'পূর্বের যুদ্ধটা হচ্ছে পশ্চিমে।'

২২ নভেম্বর ১৯৭১ থেকে ২ ডিসেম্বর ১৯৭১
ঘাটতি পূরণ করে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে কোনো উদ্যোগই নেই; কূটনৈতিক, রাজনৈতিক উদ্যোগও না। ভুট্টো লাহোর এয়ারপোর্টে বিবৃতি দিয়েছেন, 'ভারতীয় আগ্রাসনের বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদে নিয়ে যাওয়া পাকিস্তানের সমীচীন হবে না।' এটাই সম্ভবত একমাত্র উদাহরণ, যেখানে ভিকটিম তার আক্রান্ত হওয়ার প্রতিকারের দাবি নিরাপত্তা পরিষদে তুলছে না।

বিধ্বস্ত গভর্নর হাউস

৩ ডিসেম্বর ১৯৭১
ইস্টার্ন কমান্ডকে কোনোভাবে অবহিত না করে পাকিস্তান অতর্কিত স্থল আক্রমণের বদলে ভারতে বিমান আক্রমণ শুরু করে দেয়।

৪ ডিসেম্বর 
নিরাপত্তা পরিষদে পোল্যান্ডের প্রস্তাবে অস্ত্রবিরতি ও রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলা হয়, তবে পাকিস্তান তা প্রত্যাখ্যান করে।

৫ ডিসেম্বর 
সেনা সদর দপ্তর থেকে হুকুম দেওয়া হয় যেন আমরা ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের সৈন্যদের এখানেই ব্যস্ত থাকতে বাধ্য করি, যাতে তাদের পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠানো না যায়। 

কাজেই আমাকে পর্যাপ্তসংখ্যক সৈন্য দিনাজপুর, রংপুর, খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধবিরতির পূর্ব পর্যন্ত। ভারতীয়দের ব্যস্ত রাখার জন্য অবস্থান করাতে হচ্ছে, যা রাজশাহী সেক্টরে আমার আক্রমণ পরিকল্পনাকে ব্যাহত করে। সেনা সদর দপ্তর থেকে আমাকে জানানো হয় যে আমরা শিগগিরই চীনের সাহায্য পেতে যাচ্ছি। 

এটা ছিল একটা প্রহসন, আমাদের ভুল পথে পরিচালিত করার একটি চিত্র; বাস্তবে এর কিছুই ঘটেনি।

৬ ডিসেম্বর 
ভারতের বিরুদ্ধে এয়ার মার্শাল রহিম পাকিস্তান বিমানবাহিনীকে কাজে লাগালেন না, জেনারেল টিক্কা খান পরিকল্পনা অনুযায়ী আক্রমণ চালালেন না এবং ভারতীয় নৌবাহিনী যখন আমাদের নৌদুর্গ করাচি আক্রমণ করল, আমাদের নৌবাহিনী কোনো ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলল না। 

৭ ডিসেম্বর 
গভর্নর হাউস (ঢাকা) থেকে একটি আতঙ্কজনক সিগন্যাল প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো হলো: পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড ভেঙে পড়ার পথে। কিন্তু সত্য হচ্ছে যশোর থেকে প্রত্যাহারের পর ব্রিগেডিয়ার হায়াত ও ব্রিগেডিয়ার মঞ্জুর দুই ডিভিশন শত্রুসৈন্য খুলনা ও কুষ্টিয়ায় টেনে এনেছেন। শত্রুর দুটি কোর লক্ষ্যের সঙ্গে সংশিষ্টতা হারিয়েছে। যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত। সিলেট, ভৈরব বাজার, ময়নামতি, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, চালনা, খুলনা, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, নাটোর, রাজশাহী সবই আমাদের অধিকারে ছিল।

হিলিতে তীব্র লড়াই হয়েছে, পশ্চিম সীমান্তেও লড়াই চলছিল। এটা স্পষ্ট, গভর্নর হাউস থেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফরমানের (রাও ফরমান আলী) করা খসড়া অনুযায়ী পাঠানো সিগন্যাল বার্তায় বলা হয়েছে, ইস্টার্ন কমান্ড ধসে যাচ্ছে। বাস্তবে বিষয়টি ছিল ঠিক উল্টো। আমরা কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান ধরে রেখেছি এবং পশ্চিম গ্যারিসন ধসে পড়েছে বা পড়তে যাচ্ছে। 

ঢাকার গভর্নর হাউস

ভারতীয় বাহিনী সেখানে আমাদের জমিনে, আমাদের আকাশে ও আমাদের সমুদ্রে যথেচ্ছ বিচরণ করছে। সেনা সদর দপ্তর ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের কাছে যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, আমাকে তার কিছুই জানানো হয়নি।

৮ ডিসেম্বর 
সেনা সদর দপ্তরের একটি প্রহসনমূলক সিগন্যাল আমার কাছে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, চীন তার কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। যুদ্ধের মতো একটি বিষয়ে এর চেয়ে বড় ধরনের কোনো ঠান্ডা মাথার প্রহসন কল্পনা করা যায় না। পশ্চিম পাকিস্তানের আক্রমণ ব্যর্থ হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ৮ ডিসেম্বর ভুট্টোকে জাতিসংঘে পাঠালেন, যুদ্ধের ১৮তম দিনে। 

ভুট্টো নিউইয়র্ক পৌঁছতেই তিন দিন লাগিয়ে দেন। তারপর অসুস্থতার ভান করে পড়ে থাকেন (কোনো ডাক্তার তাকে দেখতে যাননি, এমনকি বেনজিরও না; তিনিও একই হোটেলে অবস্থান করছিলেন)।

৯ ডিসেম্বর
ফরমান আলী খান প্রস্তাব করলেন, ঢাকাকে মুক্ত ও নিরাপদ শহর ঘোষণা করা হোক। নিজেকে বাঁচিয়ে ইস্টার্ন কমান্ডের ওপর দোষারোপ করার এ আরেকটি পাঁয়তারা। আমার সৈনিকেরা ঢাকার ভেতরে ও বাইরে পরিত্যক্ত হয়ে থাকবে, অনাকাক্সিক্ষত শক্তির ঢাকায় প্রবেশের এ এক অবারিত আমন্ত্রণ, আমি একটি গুলিও করতে পারব না। সৈনিকদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার এবং পূর্ব পাকিস্তান আর প্রতিরক্ষার উপযোগী নেই, মানুষকে এ কথা বোঝানোর এটি একটি সুপরিকল্পিত আয়োজন।

ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাবসংবলিত আরেকটি সিগন্যাল গভর্নর হাউস থেকে প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো হয়। আমি তাতে সম্মত নই। আমি গভর্নরের মাধ্যমে সেই সিগন্যালেই জানাই যে আমি শেষ পর্যন্ত। লড়াই করে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কিন্তু প্রেসিডেন্ট আমাকে গভর্নরের নির্দেশ মেনে নেওয়ার আদেশ দেন। 

রাজনৈতিক কার্যক্রমসহ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তিনি গভর্নরকে অর্পণ করেন। রাজনৈতিক বিষয় তার আয়ত্তের বাইরে। কারণ মুজিব তখন পশ্চিম পাকিস্তানে।

১০ ডিসেম্বর 
জাতিসংঘের প্রতিনিধির কাছে যুদ্ধবিরতি, ক্ষমতা হস্তান্তর, পশ্চিম পাকিস্তানি সৈনিকদের পশ্চিম পাকিস্তানে প্রত্যাবাসন-সংক্রান্ত একটি নোট হস্তান্তরের জন্য গভর্নর মালিক প্রেসিডেন্টের অনুমোদন চান। 

প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের তোয়াক্কা না করে ফরমান অত্যন্ত গোপনীয় এ বার্তা জাতিসংঘ প্রতিনিধির হাতে তুলে দেন, আর সেই প্রতিনিধি বিষয়টি জাতিসংঘকে জানান। ফরমান ফ্রান্স, ব্রিটেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ঢাকা এবং পূর্ব পাকিস্তানের দায়িত্ব গ্রহণের কথা বলেন। চীনের প্রতিনিধিকেও তাদের সঙ্গে যোগ দিতে বলেন। 

আমাকে কিংবা গভর্নরকে না জানিয়েই ফরমান ভারতীয় কমান্ডার ইন চিফের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেন। জাতিসংঘের জন্য বর্ণিত সিগন্যালটি আমাকে কিংবা গভর্নরকে না জানিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এমনকি রুশ কনসাল জেনারেলের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি নিয়েও আমাদের দুজনের কেউই অবহিত ছিলাম না।

১১ ডিসেম্বর 
সেনাবাহিনীপ্রধান আমাকে গভর্নরের আদেশ মেনে নেওয়ার নির্দেশ দেন। অন্যভাবে বলা যায়, আমাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। আত্মসমর্পণের প্রশ্ন উঠলে সৈন্যদের নিরাপত্তার কথা উঠবে, অস্ত্রশস্ত্র ধ্বংস করার কথা উঠবে। 

জাতিসংঘকে পাঠানো গত দিনের নোটের ওপর ভিত্তি করে বেশ সকালেই রুশ কনসাল জেনারেল এটিতে সম্মত হওয়ার কথা ফরমানকে জানান। ফরমান গভর্নরও নন, ট্রুপসের কমান্ডারও নন। তারা তাকে কনস্যুলেটে আশ্রয় ও নিরাপত্তা প্রদান এবং পশ্চিম পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন।

১২ ডিসেম্বর 
লেফটেন্যান্ট জেনারেল গুল হাসান আরেকটি ভুয়া চিত্র আমার সামনে তুলে ধরেন। তিনি পশতু ভাষায় আমাকে বলেন, 'উত্তর থেকে হলুদ এবং দক্ষিণ থেকে সাদা' আসছে। আমাকে পূর্ব পাকিস্তান আর ৩৬ ঘণ্টা ধরে রাখার জন্য বলা হয়, কারণ উত্তর দিক থেকে চীন এবং দক্ষিণ দিক থেকে আমেরিকা আসছে। এ এক ডাহা মিথ্যা। 

আমি কখনো তাদের বলিনি যে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, প্রকৃতপক্ষে আমার প্রতিটি সিগন্যাল বার্তায় শেষ পর্যন্ত। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা বলেছি। আমার ওপর দায় ফেলে দেওয়ার এ আরেক চতুরতা।

পরে টেলিফোনে আমি গুল হাসানকে জানাই, দয়া করে আর মিথ্যা বলবেন না, আমি সাহায্যও চাইনি, তার প্রয়োজনও নেই। আমি আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি, পশ্চিম পাকিস্তানের যুদ্ধটার দিকে নজর দিন, সে যুদ্ধটা জেতা দরকার। আমারটা আমি বুঝব।

এর পর থেকে তিনি আমার সঙ্গে কথা বলা এড়িয়ে যান। পরিকল্পনা অনুযায়ী মেজর জেনারেল কাজী মজিদকেও ঢাকায় শেষ অবলম্বন হিসেবে রাখা হয়নি।

১৩ ডিসেম্বর 
আমি সেনা সদর দপ্তরে সিগন্যাল পাঠাই: ঢাকা প্রতিরক্ষা ব্যূহ সুগঠিত, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। লড়াই করে ঢাকা প্রতিরক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি একটি প্রেস বার্তাও পাঠাই। তাতে বলা হয়, আমার মৃতদেহের ওপর দিয়ে ট্যাংক যাবে।

সে রাতে আমি আরও একটি সিগন্যাল পাঠাই: 'চূড়ান্ত যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছি।' আর শেষ সৈন্যটি জীবিত থাকা পর্যন্ত। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আদেশ জারি করি। ওদিকে সরকার কিংবা আমার সঙ্গে কোনো রকম সংশিষ্টতা ছাড়াই ফরমান প্রস্তাব করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালকে আন্তর্জাতিক নিরাপদ এলাকা (ইন্টারন্যাশনাল সেফ জোন) ঘোষণা করা হোক।

রাত ১৩/১৪ ডিসেম্বর 
আত্মসমর্পণ করার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে একটি খোলা, অশ্রেণিবিন্যস্ত (আনক্ল্যাসিফায়েড) সিগন্যাল আসে। আমি তাদের বলি, 'আমার যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে।' গভর্নরের পক্ষে ফরমান যে সিগন্যাল পাঠিয়েছে, প্রেসিডেন্টের সিগন্যাল তারই জবাব। অথচ ফরমানের পাঠানো সিগন্যাল সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। 

সেনাবাহিনীর প্রধান কিংবা পীরজাদা কাউকে পাওয়া গেল না। গুল হাসান এ সম্পর্কে কিছু না জানার ভান করলেন, যদিও তিনি চিফ অব জেনারেল স্টাফ এবং মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স ও সিগন্যাল ডিরেক্টরেটের প্রধান।

গভর্নর মালিক ও তার মন্ত্রিপরিষদ পদত্যাগ করলে আমি নিঃসঙ্গ হয়ে যাই এবং চাপের মুখে পড়ি। কারণ, আমি আত্মসমর্পণে অনিচ্ছুক ছিলাম। একই সঙ্গে গভর্নরও আত্মসমর্পণ দলিল সই করা এড়িয়ে যেতে চাইলেন।

১৫ ডিসেম্বর 
রাশিয়ার সমর্থনে পোল্যান্ড জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করে, যাতে শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার এবং প্র্রাথমিকভাবে ৭২ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়া হয়। 

সেনাপ্রধান জেনারেল হামিদের একান্ত সচিব ব্রিগেডিয়ার জানজুয়া আমার চিফ অব স্টাফ ব্রিগেডিয়ার মালিককে বর্ণিত সিগন্যালটি পাঠানো হচ্ছে বলে জানান। আমি সেনা সদর দপ্তরে আবার সিগন্যাল পাঠিয়ে জানিয়ে দিই, 'শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। যুদ্ধ করার আমার সিদ্ধান্ত বহাল আছে।'

জেনারেল হামিদ ও এয়ার চিফ মার্শাল রহিম ফোন করে ১৪ ডিসেম্বরের সেনা সদর দপ্তরের সিগন্যাল মান্য করার নির্দেশ দিলেন; কারণ, পশ্চিম পাকিস্তান বিপজ্জনক অবস্থায়। ভারতের কমান্ডার ইন চিফের কাছে রুশদের মাধ্যমে, আমেরিকানদের নয়, বার্তা পাঠাতে ফরমান পীড়াপীড়ি করেন। আমি যুদ্ধবিরতি এবং সৈন্য ও অনুগত পাকিস্তানিদের নিরাপত্তা চেয়ে বার্তা পাঠাই।

১৬ ডিসেম্বর 
আমাদের ট্রুপস আত্মসমর্পণ করবে এ শর্তে ভারতের কমান্ডার ইন চিফ (জেনারেল মানেকশ) সম্মত হন। আমি তার জবাব সেনাপ্রধানকে জানাই, তিনি তা গ্রহণ করার এবং আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন।

শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেওয়ার জন্য এবং সেনাবাহিনীর সম্মান রক্ষা করার জন্য আমি প্রেসিডেন্টকে একটি সিগন্যাল পাঠাই। তিনি আমার সিগন্যালের ওপর লেখেন: এনএফএ (নো ফারদার অ্যাকশন), আর কিছু করার নেই।

আমি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে চাই, কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। সেনাপ্রধান কোথায় আছেন, তা-ও বের করা যাচ্ছে না। জেনারেল পীরজাদা বেলা আড়াইটাই স্কোয়াশ খেলতে গেছেন এবং আমার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না।

পোলিশ প্রস্তাব গ্রহণ করার বদলে ইস্টার্ন কমান্ডের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলো অসম্মানজনক আত্মসমর্পণ। এভাবেই নিশ্চিত করা হলো পূর্ব পাকিস্তান কোনো উত্তরাধিকারী সরকার ছাড়াই থাকবে।

১৬ ডিসেম্বরের পরে
এ অবমাননাকর পরিস্থিতির জন্য জাতি ক্ষিপ্ত এবং এর তিক্ত প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। জেনারেল হামিদ যখন সেনা সদর দপ্তরে অফিসারদের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন, ব্রিগেডিয়ার ফজলে রাজিক খানের নেতৃত্বে তাকে লক্ষ্য করে গালাগাল করা হয়। ফজলে রাজিক গুল হাসানের ঘনিষ্ঠ সহচর। 

এয়ার মার্শাল রহিম ব্যক্তিগতভাবে প্রেসিডেন্ট হাউসের ওপর উড়োজাহাজ চালিয়ে (বোমাবর্ষণের ভয় দেখিয়ে) ইয়াহিয়াকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার প্রচেষ্টা চালান।

এখানে জুলফিকার আলী ভুট্টো, এয়ার মার্শাল রহিম ও গুল হাসানের পরিকল্পিত অভ্যুত্থান স্পষ্ট। ভুট্টো প্র্রায় সব জেনারেল ও অনেক ব্রিগেডিয়ারকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করলেন, কিন্তু রেখে দিলেন জেনারেল টিক্কা খানকে। 

দাপ্তরিক কাজে টিক্কা খানকে সাহায্য করার জন্য মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীকেও রেখে দিলেন। ইস্টার্ন কমান্ড ও আমার ওপর সম্পূর্ণ দোষ চাপিয়ে ইলেকট্রনিক ও প্র্রিন্ট মিডিয়ায় সেনাবিরোধী প্রচারণা চলতে থাকে। আমার কমান্ডের পক্ষে বলার জন্য কিংবা ভুট্টোর ষড়যন্ত্র এবং গুল হাসান ও টিক্কা খানের অপকর্ম তুলে ধরার জন্য সেখানে তো আমি ছিলাম না।

২০ ডিসেম্বর
দ্য নাইট অব দ্য জেনারেলস। কার কাছে ক্ষমতা হস্তাস্তর করা হবে, এ নিয়ে আলোচনা করতে গুল হাসানের বাড়িতে বৈঠক বসল। বৈঠকে থাকলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল গুল হাসান। 

অদক্ষতা ও কাপুরুষতার জন্য যাকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বিদায় করা হয়েছিল, সেই মেজর জেনারেল শওকত রাজা, আর যার ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনার কারণে তিনি তার মেধাবী বিমান বাহিনীকে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছেন, এবং পশ্চিমের আকাশ ভারতীয় বিমান বাহিনীর কাছে উন্মুক্ত হয়ে গেছে সেই এয়ার মার্শাল রহিম। ক্ষমতা থেকে ইয়াহিয়াকে সরানোর জন্য যিনি নিজেই প্রেসিডেন্ট হাউজের উপর উড়োজাহাজ নিয়ে ঘুরপাক দিয়েছেন। সেই এয়ার মার্শাল রহিম, শাকিরউলাহ দুররানি ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাসির উল্লাহ—সবাই গুল হাসানের বাড়িতে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন কার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে সেই আলোচনায়। 

দুররানি আসগর খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে, কিন্তু গুল হাসান ও রহিম বাধা দিলেন। সিদ্ধান্ত হলো, ক্ষমতা ভুট্টোর কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ঠিক সে সময় আরেকটি দল ইয়াহিয়া, হামিদ, ওমর, মিটঠা খান ইয়াহিয়ার বাড়িতে বসে বৈঠক করছে, কেমন করে ক্ষমতা ধরে রাখা যায়। 

কিন্তু গুল হাসানের গ্রুপ বন্দুকের নলের মুখে ইয়াহিয়াকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে।

২১ ডিসেম্বর 
জনগণের কাছে আমাকে, আমার ইস্টার্ন কমান্ডের ট্রুপসকে এবং সার্বিকভাবে সেনাবাহিনীকে হেয় করার জন্য কলুষিত প্রচারণা চালানো হতে থাকে। বিশেষ করে আমার বিরুদ্ধে এমন বিষাক্ত প্রচারণা চালানো হয়, যেন আমিই প্রধান অপরাধী, ইয়াহিয়া কিংবা ভুট্টো কিছুই নয়। ষড়যন্ত্রের এটাই ছিল চূড়ান্ত অধ্যায়, তাতে নিশ্চিত করা হয়, মূল অপরাধী ভুট্টোর মুখোশ যাতে খুলে না যায়।

Related Topics

টপ নিউজ

ডিসেম্বর / বিজয় / বিজয় দিবস / নিয়াজি / পাকিস্তানের পরাজয়

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • নিরাপত্তা উদ্বেগে ১২ দেশের নাগরিকের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা
  • আঞ্চলিক পরমাণু জোট নিজ দেশে হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করবে ইরান
  • ডিজিটাল ওয়ালেটের লাইসেন্স পেল গ্রামীণ টেলিকমের প্রতিষ্ঠান 'সমাধান'
  • টাকার নতুন নোটের খোলাবাজারে দ্বিগুণ মূল্য, গ্রাহক হয়রানি চরমে
  • দোকানে হানা দিলো হাতি, খাবার খেয়ে ‘টাকা না দিয়েই’ পালালো!
  • সাভার ট্যানারির কঠিন বর্জ্য থেকে জেলাটিন ও শিল্প প্রোটিন গুঁড়া উৎপাদন করবে চীনা কোম্পানি

Related News

  • সব দল নয়, শুধু একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইছে: প্রধান উপদেষ্টা
  • ‘আমি এটাও মনে করি ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন করা সম্ভব’: তারেক রহমান
  • চীনের যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে জয় এনে দিয়েছে
  • ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন সম্ভব: বিএনপি
  • স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার নতুন স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

নিরাপত্তা উদ্বেগে ১২ দেশের নাগরিকের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা

2
আন্তর্জাতিক

আঞ্চলিক পরমাণু জোট নিজ দেশে হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করবে ইরান

3
বাংলাদেশ

ডিজিটাল ওয়ালেটের লাইসেন্স পেল গ্রামীণ টেলিকমের প্রতিষ্ঠান 'সমাধান'

4
অর্থনীতি

টাকার নতুন নোটের খোলাবাজারে দ্বিগুণ মূল্য, গ্রাহক হয়রানি চরমে

5
অফবিট

দোকানে হানা দিলো হাতি, খাবার খেয়ে ‘টাকা না দিয়েই’ পালালো!

6
অর্থনীতি

সাভার ট্যানারির কঠিন বর্জ্য থেকে জেলাটিন ও শিল্প প্রোটিন গুঁড়া উৎপাদন করবে চীনা কোম্পানি

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net