Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
June 22, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, JUNE 22, 2025
বইমেলা: এখনো অনেক বাকি, যেতে হবে বহুদূর

ইজেল

সৈয়দ মূসা রেজা
11 February, 2023, 09:25 pm
Last modified: 11 February, 2023, 10:54 pm

Related News

  • ‘স্ক্রিন এন্ড কালচার’ থেকে ‘কারেন্ট বুক হাউজ’: চট্টগ্রামে টিকে থাকা সবচেয়ে পুরোনো বইয়ের দোকান
  • বইয়ের ব্যবসায় ফিরে যেভাবে বাজিমাত করল বার্নস অ্যান্ড নোবল
  • দাদার নেওয়া লাইব্রেরির বই ৯৯ বছর পর ফেরত দিলেন নিউ জার্সির এক নারী
  • ১০ মার্চের মধ্যে সব শিক্ষার্থী বই পাবে: বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা
  • সংসদ ভবনের ফুটপাতে সুলাইমানের ৩০ টাকার বই!

বইমেলা: এখনো অনেক বাকি, যেতে হবে বহুদূর

অতীতে বাংলা একাডেমি প্রচুর বিদেশি বই সংগ্রহ করত। এর মধ্যে একটি বই ছিল ওয়ান্ডারফুল ওয়ার্ল্ড অব বুকস। বইটি পড়তে গিয়ে দুটো শব্দ দেখে পুলকিত হন বরেণ্য সাহিত্যিক সরদার জয়েনউদদীন।
সৈয়দ মূসা রেজা
11 February, 2023, 09:25 pm
Last modified: 11 February, 2023, 10:54 pm

১.

মেলা, হাট-বাজার, আড়ং প্রভৃতি শব্দ বা শব্দগুচ্ছ আমাদের মাতৃভাষায় পুরাতনকাল থেকেই বিরাজমান। কিন্তু, বইমেলা শব্দগুচ্ছের অতীত ঘাটতে গেলে আমাদের খুব বেশি দূর যেতে হবে না। কয়েক দশকের পথ পাড়ি দিতে হবে। বাংলাদেশের বইমেলার সাথে জড়িয়ে গেছে 'ওয়ান্ডারফুল ওয়ার্ল্ড অব বুকস' নামের বইটি।  

বই মানেই মজা। বই একজনকে তার নিজের কাজ সম্পর্কে শেখায়। শেখায় জগৎ এবং সখ সম্পর্কেও। গোটা পরিবারের মধ্যে দুঃসাহসিক সেতুবন্ধন হয়ে উঠতে পারে বই। বই পরিচয় করিয়ে দেয় বিস্ময়কর বন্ধুদের সাথেও। 'ওয়ান্ডারফুল ওয়ার্ল্ড অব বুকস'-এর শেষ মলাটে লেখা আছে এ কথাগুলো। একই বইয়ের প্রচ্ছদপটের লেখায় বলা হয়েছে, এই বই পরিবর্তন করতে পারে আপনার এবং আপনার চারপাশের মানুষের জীবন। এ বইয়ের সহায়তায় পেতে পারেন বৃহত্তর সাফল্য এবং সুখ। বিশ্বের প্রজ্ঞা এবং জ্ঞানের কোষাগার থেকে উপকৃত হতে পারেন। এই বইয়ের মাধ্যমে মনোলোভা রাজ্যে এবং চিত্তাকর্ষক বিনোদন জগতে দুঃসাহসিক অভিযান চালাতে পারেন। বইপাঠের জাদুর মধ্য দিয়ে মূল্যবান বন্ধুবান্ধব গড়ে তুলতে পারবেন।  এই বইকে আনন্দ পাঠের দিকনির্দেশক হয়ে ওঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখে লেখা হয়েছে। পাঠের দিগন্তকে প্রসারিত করার উদ্দেশ্যে ফলিত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এতে।  

বইটির সে ফলিত পরামর্শ-স্বরূপ আজও দেখতে পাই আমরা। বাংলাদেশের বইমেলার সাথে এ বইয়ের যোগসাজশ কীভাবে অনিবার্য হয়ে উঠল, সে কথাই আসার আগে বরং বইমেলার প্রসঙ্গের দিকে তাকাতে হবে।  

১৮৮৬ সালে অলিম্পিয়া লন্ডনে শুরু বই মেলা। সংগৃহীত ছবি

২.

ইউনেস্কো বইয়ের একটি সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে। সে মোতাবেক বইয়ের দুই প্রচ্ছদ বাদে ৪৯ পাতার মুদ্রিত প্রকাশনা হতে হবে। এটি কোনো সাময়িকী হতে পারবে না। এই সংজ্ঞা নির্ধারণের অনেক আগে থেকেই মানুষ বই পড়েছে। চীনে ৪০২ থেকে ২২১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের গোড়ার দিকে থেকে 'বই'-এর দেখা মিলছে। সে সময় বাঁশ বা কাঠের পোক্ত ফলক কেটে বই লেখা হতো। তারও পরে কালিলেপা কাঠের ফলকের ওপর কাগজ ঘষে বই ছাপার চল শুরু হয়। বই ছাপানোর অত্যাবশ্যকীয় অনুপান কাগজ। চামড়া বা গাছের ছাল থেকে প্রস্তুত লেখনসামগ্রীর বদলে কাগজ ব্যবহার করা একদিকে সস্তা ও সহজলভ্য হয়ে ওঠে। মণ্ড থেকে কাগজ তৈরির প্রক্রিয়ার সাথে জড়িয়ে আছে চীনের প্রযুক্তি। সমরখন্দ দখল করার পর এ প্রযুক্তিকে প্রসার ঘটানোর কাজ করে আরবীয় মুসলমানরা। মণ্ডজাত কাগজ ইউরোপে জনপ্রিয় হতে দীর্ঘ সময় নিয়েছে। চামড়াজাত কাগজ বা পার্চামেন্টই ব্যবহার করেছে তারা দীর্ঘদিন।  

বইয়ের কথা বলতে গেলে এরপর তাকাতে হবে ইউরোপের দিকে ১৬, ১৭ এবং ১৮ শতকের ইউরোপের কেতাব বিক্রেতাদের বিশাল সমস্যার মধ্য দিয়ে চলতে হয়েছে। সে সময় শহরবাসী জনসংখ্যা ছিল অল্প। পাঠকসংখ্যা ছিল অতি সীমিত। বই পরিবহন ছিল আরও দুরূহ। এ ছাড়া চুরি করে বই তৈরি করার বাড়তি ঝুঁকি, গোদের ওপর বিষফোড়া হয়ে বিরাজ করছিল। তৎকালীন ইউরোপে বই বিতরণের কার্যকর পন্থা বের করাকে আজকের দিনের চলতি কথায় বলা যায়, সময়ের দাবি হয়ে দেখা দেয়। পরিবহন খরচ কমানোর জন্য সে সময় বাঁধাই না করে কাগজের বান্ডিল হিসেবেও বই পাঠানোর চল ছিল। তবে এ পথেও কম চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়নি। এ ধরনের বইকে তখনকার দিনে 'হোয়াইট' বা 'শ্বেত' বলা হতো। 'শ্বেত' হাতে পৌঁছানোর পর দোকানমালিক দেখতে পেলেন বইয়ের পাতা ঠিকমতো সাজানো নেই। কিংবা এক বইয়ের পাতা অন্য বইয়ের সাথে মিশে গেছে। কিংবা বইয়ের সব পাতা পাঠানো হয়নি। এ অবস্থাকে মুজতবা আলীর ভাষায় 'গর্ভযন্ত্রণা' ছাড়া আর কীই-বা বলা যায়! এ ধরনের আরও ভুল হয়তো হতো। পুস্তক বিক্রেতাদের সাথে প্রকাশকের এ নিয়ে বিস্তর চিঠি চালাচালির নজির রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে টাকাপয়সা লেনদেনের মহা সমস্যা। ব্যাপক পাঠকের নজরে বইকে নিয়ে আসা।

বইয়ের ব্যবসা নিয়ে এমন সব যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হওয়ার পথ খুঁজতে গিয়েই বইমেলার উদ্ভব ঘটে।   

বইমেলার কথা উঠলেই ইযোনেস গুটেনবার্গের নাম চলে আসবে। পনেরো শতকে তিনি মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার করেন। সে সময় বইমেলার শুরু হয় বলে অনেকেই বলে থাকেন। কিন্তু জার্মানির লিপজিগ শহরে প্রথম বইমেলা হয়েছিল, এমন দাবিও উচ্চারিত হয়। অন্যদিকে বলা হয় প্রথম বইমেলা বসেছিল ফ্রাঙ্কফুর্টে। কিন্তু লিপজিগ বেশ ঘটা করে বড় মেলার আয়োজন করেছিল বলেই সবাই ও শহরের নামই জানে।

১৮৬২ সালে মিশিগানের একটি বইয়ের দোকান। সংগৃহীত ছবি

লিপজিগের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে ফরাসি শহর লিওনের কথা। এ শহর গোড়ার দিক থেকেই মুদ্রণশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। বিশেষ করে শতবর্ষের যুদ্ধের সমাপ্তির পর নানা সুবিধা ও রাজ আনুকূল্যের সুবাদে শহরটি বিচিত্র মেলার আয়োজনে মেতে ওঠে। উত্থান-পতনের অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়।  একাদশ লুইয়ের (১৪৮৩) শাসনের শেষ আমলে এসে মেলা আয়োজনের বিষয়টি প্রতিষ্ঠা পায়। এদিকে ইতালিতে ফ্রান্সের আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্য চাঙা হয়ে ওঠে। বিশেষ করে লিওর মেলাগুলোর ওপর বর্তায় এর আশীর্বাদ। ষোড়শ শতকের প্রথমার্ধে এভাবে লিওর মেলা শীর্ষ অবস্থানে উঠে আসে।

সে সময়টিতে সাওন এবং রোন নদীপথে প্রচুর পণ্য আনা-নেওয়া হতো। এ ছাড়া লিওর দুটো গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথের সংযোগস্থলও ছিল। এর একটি দিয়ে ইতালিতে যাওয়া যেত। এভাবে নিওর ব্যবসায়িক তৎপরতার ব্যস্ত মৌচাক হয়ে ওঠে। ইতালি এবং ফ্রান্সের সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান থাকায়, সুইজারল্যান্ডের মাধ্যমে জার্মানির সাথে যোগাযোগ থাকায় তৎকালের ইউরোপের সবচেয়ে তিন ধনী ও জনবহুল দেশের নানা পণ্যের গুদাম হয়ে ওঠে লিও। ইউরোপের বাজারে যেসব পণ্য পাওয়া যেত, তার সবই লিওর বেচাকেনা হতো।

লিওর মেলার বাণিজ্যিক গুরুত্ব যে অনেক ছিল তা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। এ কারণেই ফরাসি রাজারা এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এসব মেলায় যোগ দিতে ইচ্ছুক সব দেশকে উদার আনুকূল্য দেখাতেন। ব্যবসায়ীদের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা হতো। ব্যবসায়ীদের নিজেদের হিসাব-কিতাব নিয়ে সরকারি পরিদর্শকদের ঝামেলা পোহাতে হতো না। অর্থ লগ্নি বা হুন্ডি করার অনুমতি ছিল। মেলায় যোগ দিতে ইচ্ছুক বিদেশিরা ঝামেলাহীনভাবে, নিজ প্রয়োজনে পরিচয় প্রকাশ না করেই সেখানে যাতায়াত করার সুযোগ পেতেন। ব্যবসায়ীদের নানা সুযোগ দেওয়া হতো। মালামাল পরিবহনের কর মওকুফ করা হতো।

বছরে দুবার মেলায় যোগ দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীরা দলবলে আসতেন। ঢাকা গাড়ি নিয়ে আসতেন। মেলাস্থলে ছাদ না থাকায় এসব ছাদওলা গাড়িতে পণ্য সাজিয়ে বসতে পারতেন তারা।

মুদ্রক এবং পুস্তক বিক্রেতারা ছিলেন লিওর বাণিজ্যিক জীবনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। এদের অনেকেই ছিলেন বিদেশি। ১৫০০ দশকের আগে এ ক্ষেত্রে বরং ফরাসিরাই ছিলনে সংখ্যালঘু। ভৌগলিক অবস্থানের সুযোগে লিও সে সময়ে আন্তর্জাতিক বেচাকেনার কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

ইতালির বই আমদানি করত লিও। আমদানি করতে জার্মান ও সুইস বইও। এ ছাড়া বিদেশি বইয়ের নকলও বাজারে ছাড়তে দ্বিধা করত না লিওর ব্যবসায়ীরা। এদিকে ইতালির গিন্তাস, গ্যাবিয়ানি এবং পোর্টোনারির মতো নামজাদা প্রকাশকেরা লিও শাখা খুলতে দ্বিধা করেনি। এসব শাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। পরে তারা নিজেরাই স্বতন্ত্র পুস্তক ব্যবসায়ী সংস্থা বনে যায়। তবে তাদের সাবেক প্রধান দপ্তরের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখা এতে কোনোরকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

গুটেনবার্গের প্রথম ছাপাখানা। সংগৃহীত ছবি

৩.

ষোড়শ শতকে আরেকটি বইমেলার বিকাশ ঘটতে থাকে। কালক্রমে এই মেলা লিওর চেয়েও গুরুত্বের হয়ে ওঠে। হ্যাঁ, আপনার অনুমান সঠিক। এখানে ফ্রাঙ্কফুর্টের বইমেলার কথাই বলা হচ্ছে। ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে মাইনজ যেখানে বসানো হয় গুটেনবার্গ ছাপাখানা, তেমন দূরের পথ নয়। সেখানে যখন ছাপার কাজ চলতে থাকে, তার আগ থেকেই ফ্রাঙ্কফুর্ট হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ মেলার কেন্দ্র। রাইনল্যান্ড নামে পরিচিত ফ্রান্স, বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডসের লাগোয়া গোটা পশ্চিম জার্মানির বাণিজ্যিক নিকাশ-ঘর বা ক্লিয়ারিং হাউস হয়ে ওঠে এটি। প্রাচ্যের মসলাপাতি থেকে শুরু করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মাছ, ঘোড়া, ধাতু,  ইতালি ও সুইজারল্যান্ডের মদসহ গোটা ইউরোপের নানা পণ্যের মেলা বসত ফ্রাঙ্কফুর্টে। ভারতে যাওয়ার রাস্তা সম্পর্কে সামান্য জানাশোনা থাকার আগেই হাতিও দেখতে পাওয়া যেত।

বরং বলা যায় ছাপানো পণ্য বা বই তুলনামূলকভাবে দেরিতে ফ্রাঙ্কফুর্টের মেলায় এসেছে। ১৫৩০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সত্যিকারভাবে বই আসতে শুরু করে এ মেলায়। তবে এর আগে থেকে বড় বড় পুস্তক বিক্রেতাদের প্রতিনিধিরা এ মেলায় আসা-যাওয়া করতেন। যা-ই হোক, মেলা চলাকালে বইয়ের দেখা মিলত  মাইন নদী এবং সেন্ট লিউনার্ড চার্চের মধ্যবর্তী 'বুকস্ট্রিট' বা 'বইপথে'।  মেলা চলাকালীন বিক্রেতাদের মরার ফুরসত পর্যন্ত থাকত না। গাড়ি থেকে বই নামানো, স্টলে বই সাজানো, মেলায় প্রকাশকদের দেওয়া তালিকা থেকে নিজেদের জন্য কেনার উপযুক্ত বই যাচাই-বাছাই করা। ক্রেতাদের কাছে বই বিক্রি করা। প্রকাশকদের সাথে আলাপ করা, বইবিষয়ক খবরাখবর আদান-প্রদান করা। পরবর্তী মেলা বা ভবিষ্যতের ব্যবসার জন্য ক্রয়াদেশ নেওয়া। ছাপাসংক্রান্ত যন্ত্রপাতির বাজার হিসেবে নামযশ কুড়ায় ফ্রাঙ্কফুর্ট। ধীরে ধীরে বইয়ের সাথে জড়িত সবার তীর্থও হয়ে ওঠে।

ষোল শতকে বইয়ের ছাপাখানা। সংগৃহীত ছবি

ফ্রাঙ্কফুর্ট মেলার সবচেয়ে মৌলিক বিষয়টি হলো মেলায় প্রাপ্য বইয়ের তালিকা প্রকাশ। আজকাল যে অসংখ্য গ্রন্থপঞ্জি প্রকাশিত হয়, এসব তালিকা সেসবের পূর্বসূরি। গ্রন্থপঞ্জির দৌলতেই নতুন বই প্রকাশ হওয়া মাত্র সে সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন পাঠকেরা। লাতিন ভাষায় বিশেষ করে ক্যাথলিক খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের জন্য প্রকাশিত বইয়ের আন্তর্জাতিক কেন্দ্র ছিল ফ্রাঙ্কফুর্ট। তবে ষোড়শ শতকে প্রোটেস্টান পুস্তক বিক্রেতাদেরও সমাবেশ কেন্দ্র হয়ে ওঠে এটি। সংশোধন বা সংস্কারমূলক ধারা প্রচারের কেন্দ্র হয়ে উঠতে শুরু করলে ফ্রাঙ্কফুটকে রাজকীয় বিধিবিধানের শিকলে বেঁধে ফেলা হয়। সপ্তদশ শতকের সূচনা থেকেই গ্রন্থবিষয়ক রাজকীয় কমিশন ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। প্রোটেস্টাইন বই বিক্রেতা এবং মুদ্রকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে থাকে। ধীরে ধীরে তারা ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে কেটে পড়তে থাকেন। জড়ো হতে থাকেন লিপজিগে। সেখানে তাদের রাজকীয় জুজুর মোকাবিলা করতে হয়নি।

ত্রিশ বছরের যুদ্ধ (১৬১৮-১৬৪৮) জার্মান বই উৎপাদন কার্যত তলানিতে ঠেকে। ফ্রাঙ্কফুর্ট মেলার জন্য এটি একটি মারাত্মক আঘাত হয়ে দাঁড়ায়। ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানিতে ১৫১১টি বিষয়ে বই প্রকাশিত হয়। আর ১৬৩৫ সালে তা নেমে আসে ৩০৭টিতে। সে সময় বিদেশি পুস্তক বিক্রেতা আসা কমে যায়। ১৬২০ থেকে ১৬২৫-এর পর বলতে গেলে ফরাসি কোনো পুস্তক বিক্রেতাই ছিলেন না। সে সময় আন্তর্জাতিক বইয়ের বাজারের হারানো মর্যাদা আর ফিরিয়ে আনতে পারেনি ফ্রাঙ্কফুর্ট। এমনকি জার্মানির প্রধান বইয়ের বাজারের সম্মানও ধরে রাখতে পারল না।

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা নতুন প্রাণ পেল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর। ১৯৪৯ সালে নতুন কলরবে আবার শুরু হলো ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা। সেবারে ২০৫ জন জার্মান প্রকাশক অংশ নেন। তারপর থেকে জোর কদমে এগিয়ে চলার সূচনা করল এ মেলা।  ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা আজকের দিনের এক বিশাল আন্তর্জাতিক বইমেলায় রূপ নিয়েছে।

বইমেলা, ১৯৮৭। সংগৃহীত ছবি

৪.

বাংলাদেশ বইমেলার ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে বাংলাদেশের একটি দৈনিকে বাংলা একাডেমির সাবেক পরিচালক শামসুজ্জামান খান নতুনভাবে আলোকপাত করেন।  

অতীতে বাংলা একাডেমি প্রচুর বিদেশি বই সংগ্রহ করত। এর মধ্যে একটি বই ছিল ওয়ান্ডারফুল ওয়ার্ল্ড অব বুকস। বইটি পড়তে গিয়ে দুটো শব্দ দেখে পুলকিত হন বরেণ্য সাহিত্যিক সরদার জয়েনউদদীন।

বাংলা একাডেমিতে তখন কর্মরত ছিলেন ফজলে রাব্বি। বইমেলায় তার প্রত্যক্ষ ভূমিকার কথায় আসছি একটু পরেই। তবে ওয়ান্ডারফুল বুকসের,  দুই শব্দ ছিল 'বুক' এবং 'ফেয়ার' অর্থাৎ 'বই এবং 'মেলা'প্রবল ভাবে নাড়া দেয় সরদার জয়েনউদ্দিনকে। শামসুজ্জামান খান জানান, কত কিছুর মেলা হয়। কিন্তু বইয়েরও যে মেলা হতে পারে এবং বইয়ের প্রচার-প্রসারের কাজে এই বইমেলা কতটা প্রয়োজনীয়, সেটি তিনি এই বই পড়েই বুঝতে পারেন। ওই বইটি পড়ার কিছু পরেই তিনি ইউনেসকোর শিশু-কিশোর গ্রন্থমালা উন্নয়নের একটি প্রকল্পে কাজ করছিলেন। কাজটি শেষ হওয়ার পর তিনি ভাবছিলেন বিষয়গুলো নিয়ে একটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করবেন। তখন তাঁর মাথায় আসে, আরেহ, প্রদর্শনী কেন? এগুলো নিয়ে তো একটি শিশু গ্রন্থমেলাই করা যায়। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। তিনি একটি শিশু গ্রন্থমেলার ব্যবস্থাই করে ফেললেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি) নিচতলায়। যত দূর জানা যায়, এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম বইমেলা। এটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬৫ সালে। ১৯৬৫ সালের কোন সময়ে, সে কথা উল্লেখ করা হয়নি। সেটি পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের আগে না পরের ঘটনা, হয়তো জানতে চাইবেন অনেকেই।

ষাটের দশকের প্রথম দিকে, আইয়ুবি আমলে গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক নিয়োগ পদে নিয়োগ পান সরদার।

এখানেই থেমে থাকেননি সরদার জয়েনউদদীন। আরও বড় পরিসরে বইমেলা করার সুযোগ খুঁজছিলেন। এবারে আয়োজন করা হলো নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহযোগিতায়। সেখানে আলোচনারও আয়োজন ছিল। তাতে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৎকালীন প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল হাই, শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ও সরদার ফজলুল করিম।

এ বইমেলায় বেশ একটি মজার কাণ্ডও করেন সরদার। বইমেলার ভেতর একটি গরু বেঁধে রেখে তার গায়ে লিখে দেওয়া হয়, আমি বই পড়ি না। তার এই ইঙ্গিতধর্মী তামাশা দর্শকদের বইমুখো করতে সহায়তা করেছিল হয়তো।
এদিকে বাংলাদেশের বইমেলার কথা বলতে গেলে আসবে যশোরের নামও। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে যশোরে বই মেলার যাত্রা শুরু হয়। আর এ সাথে জড়িত ছিলেন অধ্যাপক শরীফ হোসেন। এ মেলা বৃহত্তর যশোরে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় নেয়নি। জনপ্রিয় গানের মতোই তার বিস্তার ঘটে।

১৯৭২ সালকে ইউনেসকো আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে। তখন গ্রন্থকেন্দ্রর পরিচালক সরদার জয়েনউদদীন। এ সুযোগে ১৯৭২'এর ডিসেম্বরে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন। শামুজ্জামান খান জানান, সে থেকেই বাংলা একাডেমিতে বইমেলার সূচনা।

শামুজ্জামান খানের লেখা থেকে আরও জানতে পারি, ১৯৭২ সালে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানে কোনো বইমেলা হয়নি। তবে বাংলা একাডেমির দেয়ালের বাইরে স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্সের রুহুল আমিন নিজামী তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রগতি প্রকাশনীর কিছু বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন। তাঁর দেখাদেখি মুক্তধারা প্রকাশনীর চিত্তরঞ্জন সাহা এবং বর্ণমিছিলের তাজুল ইসলামও ওভাবেই তাঁদের বই নিয়ে বসে যান। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে একটি বিশাল জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই মেলার উদ্বোধন করেন। সে উপলক্ষে নিজামী, চিত্তবাবু এবং বর্ণমিছিলসহ সাত-আটজন প্রকাশক একাডেমির ভেতরে পূর্ব দিকের দেয়াল ঘেঁষে বই সাজিয়ে বসে যান। সে বছরই প্রথম বাংলা একাডেমির বইয়েরও বিক্রয়কেন্দ্রের বাইরে একটি স্টলে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়।

এভাবেই বিচ্ছিন্ন বই বিক্রির উদ্যোগের ফলে ধীরে ধীরে বাংলা একাডেমিতে একটি বইমেলা আয়োজনের জন্য গ্রন্থমনস্ক মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। ১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা সাহেব যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, তখন তিনি বাংলা একাডেমিতে প্রথম 'অমর একুশে গ্রন্থমেলা'র আয়োজন সম্পন্ন করেন। কিন্তু স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষা ভবনের সামনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে ট্রাক তুলে দিলে দুজন ছাত্র নিহত হয়। ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর সেই বছর আর বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়। এরপর প্রতিবছর বইমেলা বিশাল থেকে বিশালতর আকার ধারণ করে। মেলা উপলক্ষে বিপুল বই প্রকাশিত হয়। বলা চলে এই মেলা উপলক্ষ করেই বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে গেছে। এখন অনেক নতুন প্রকাশক এই শিল্পে এসেছেন। পাঠকের সংখ্যাও প্রতিবছর বাড়ছে। এই মেলা এক মাস ধরে চলে। পৃথিবীতে আর কোনো বইমেলাই এত দিন ধরে চলে না। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে এটি পৃথিবীর দীর্ঘদিনব্যাপী আয়োজিত একটি বইমেলা।

(বইমেলা পুস্তকবিষয়ক সব সমস্যার সমাধান হয়ে দেখা দেয়নি। এখন বইমেলা নিয়ে গর্ব করা যায়। কিন্তু বই পাঠ নিয়ে গর্ব করার কিছু সত্যিই আছে কি? বই বিক্রি হয় না। লেখকেরা বইয়ের টাকা পান না। প্রকাশক-মুদ্রকেরা নানা কারসাজি করেন। এসব অভিযোগে 'আকাশ-বাতাসে ওঠে ধ্বনি'।

বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে বই কেনার ধুম পড়েছে, এমন বাক্য কি লিখতে পারবেন কল্প-কাহিনির দুঃসাহসিক কোনো লেখক? বিয়ে, বিয়েবার্ষিকী, জন্মদিন বা জীবনের বিশেষ দিনে প্রিয়মুখ, প্রিয়জনকে বই উপহার দেওয়ার ধারা সাহসিকতার সাথে আজও বজায় রেখেছেন, এমন কজন আছেন এ দেশে? গোটা দেশে পাঠাগারসংখ্যা কত?

বইয়ের আজকের স্বরূপ নানা রূপান্তরের মধ্য দিয়ে এসেছে। মাটির বা পাথরের ফলক, চর্ম, প্যাপিরাস, ভূর্জপত্র, কাগজ, ধাতব বা কাঠের তৈরি অক্ষর থেকে কম্পিউটার ব্যবহার করে বই ছাপানোর প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে এগিয়েছে। প্রযুক্তির বিজয় সড়ক ধরে চলেছে উন্নতির এই ধারাবাহিকতা। থেমে থাকেনি কখনো। এই ধারাবাহিকতার সর্বশেষ সন্তান ই-বই। এ ছাড়া রয়েছে অডিওবুক বা শ্রুতি বই। বাংলায় পড়াশোনা বলতে কী এই অডিওবইয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে? পড়তে পড়তে শোনা বা শুনতে শুনতে পড়া! এমন মজা হয়তো অনেকেই করেন। তা যাক, গ্রন্থজগতের এই সর্বশেষ সন্তান, ই-বুককে স্বাগত জানানোর জন্য বাংলাভাষী প্রকাশক, মুদ্রক বা পাঠকেরা কতটা প্রস্তুত- সে প্রশ্ন বইমেলাকে কেন্দ্র করে উঠতেই পারে।

 

 

Related Topics

টপ নিউজ

বইমেলা / বই

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ইরানের ৩ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, ফোরদো ‘ধ্বংস’
  • ইরানে মার্কিন হামলায় যেভাবে বি-২ বোমারু বিমান অংশ নিল
  • মার্কিন হামলায় ‘একরকম নিশ্চিত’ হয়ে গেল এক দশকের মধ্যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হবে: বিশ্লেষক
  • যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাংকার-বাস্টার’-এ 'ধ্বংস' ইরানের ফোরদো, কতটা ভয়ানক এই বোমা?
  • ফোরদো আগেই খালি করে ফেলা হয়েছে, আশপাশের বাসিন্দাদের কোনো ‘বিপদ নেই’: ইরান
  • সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তিনজনের নাম জানিয়েছেন খামেনি: নিউইয়র্ক টাইমস

Related News

  • ‘স্ক্রিন এন্ড কালচার’ থেকে ‘কারেন্ট বুক হাউজ’: চট্টগ্রামে টিকে থাকা সবচেয়ে পুরোনো বইয়ের দোকান
  • বইয়ের ব্যবসায় ফিরে যেভাবে বাজিমাত করল বার্নস অ্যান্ড নোবল
  • দাদার নেওয়া লাইব্রেরির বই ৯৯ বছর পর ফেরত দিলেন নিউ জার্সির এক নারী
  • ১০ মার্চের মধ্যে সব শিক্ষার্থী বই পাবে: বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা
  • সংসদ ভবনের ফুটপাতে সুলাইমানের ৩০ টাকার বই!

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

ইরানের ৩ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, ফোরদো ‘ধ্বংস’

2
আন্তর্জাতিক

ইরানে মার্কিন হামলায় যেভাবে বি-২ বোমারু বিমান অংশ নিল

3
আন্তর্জাতিক

মার্কিন হামলায় ‘একরকম নিশ্চিত’ হয়ে গেল এক দশকের মধ্যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হবে: বিশ্লেষক

4
আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাংকার-বাস্টার’-এ 'ধ্বংস' ইরানের ফোরদো, কতটা ভয়ানক এই বোমা?

5
আন্তর্জাতিক

ফোরদো আগেই খালি করে ফেলা হয়েছে, আশপাশের বাসিন্দাদের কোনো ‘বিপদ নেই’: ইরান

6
আন্তর্জাতিক

সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তিনজনের নাম জানিয়েছেন খামেনি: নিউইয়র্ক টাইমস

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net