Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

‘স্ক্রিন এন্ড কালচার’ থেকে ‘কারেন্ট বুক হাউজ’: চট্টগ্রামে টিকে থাকা সবচেয়ে পুরোনো বইয়ের দোকান

আমিন দেখতেন, বড় বড় গাড়ি হাঁকিয়ে নানাজন আসতেন শুধু তার বড় ভাইয়ের থেকে এই পত্রিকাগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য। ব্যাপারটা বেশ নজর কাড়ল তার। এত বড় বড় ধনী ব্যক্তিরাও তার ভাইয়ের কাছে আসছেন কেবল এই পত্রিকাগুলো সংগ্রহ করতে! সেই থেকেই মাথায় চিন্তা বেঁকে বসল—বই, পত্রিকা, ম্যাগাজিনের দোকান দিলেই বা কেমন হয়? বাবা সায় না দিলেও বড় ভাই সায় দিয়েছিলেন ঠিকই।
‘স্ক্রিন এন্ড কালচার’ থেকে ‘কারেন্ট বুক হাউজ’: চট্টগ্রামে টিকে থাকা সবচেয়ে পুরোনো বইয়ের দোকান

ফিচার

রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
30 May, 2025, 09:30 pm
Last modified: 30 May, 2025, 10:02 pm

Related News

  • চট্টগ্রামে দ্রুত ছড়াচ্ছে চিকুনগুনিয়া, চিকিৎসা নিতে আসা প্রতি ১০ জনের ৭ জন আক্রান্ত
  • চট্টগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে আগুন
  • আমরা অনেক ডিফিকাল্টির মধ্যে আছি: নাহিদ ইসলাম
  • পার্বত্য চুক্তির সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • চট্টগ্রামে উড়ালসড়কের নিচ থেকে রেলিং চুরি: নির্বিকার কর্তৃপক্ষ

‘স্ক্রিন এন্ড কালচার’ থেকে ‘কারেন্ট বুক হাউজ’: চট্টগ্রামে টিকে থাকা সবচেয়ে পুরোনো বইয়ের দোকান

আমিন দেখতেন, বড় বড় গাড়ি হাঁকিয়ে নানাজন আসতেন শুধু তার বড় ভাইয়ের থেকে এই পত্রিকাগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য। ব্যাপারটা বেশ নজর কাড়ল তার। এত বড় বড় ধনী ব্যক্তিরাও তার ভাইয়ের কাছে আসছেন কেবল এই পত্রিকাগুলো সংগ্রহ করতে! সেই থেকেই মাথায় চিন্তা বেঁকে বসল—বই, পত্রিকা, ম্যাগাজিনের দোকান দিলেই বা কেমন হয়? বাবা সায় না দিলেও বড় ভাই সায় দিয়েছিলেন ঠিকই।
রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
30 May, 2025, 09:30 pm
Last modified: 30 May, 2025, 10:02 pm

ছবি: রাফিয়া মাহমুদ প্রাত/টিবিএস

তালুকদারি বংশ, বাবার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা, জমিজমা সবকিছু ফেলে সুদূর চট্টগ্রামে পা বাড়িয়েছিলেন ঝালকাঠির ছেলে মোহাম্মদ আমিন।

কলকাতার সঙ্গে তখন তাদের জমজমাট ব্যবসা। সাম্পানে করে কলকাতা থেকে সেসব পণ্য প্রথমে ঝালকাঠিতে এসে পৌঁছাত। পরে সেগুলো খুলনা, চট্টগ্রামে পৌঁছে দিতেন তারা। সে আমলেই লাখ টাকার ব্যবসা।

এরই মধ্যে ছোট ছেলে মোহাম্মদ আমিন বাবার কাছে এলো বইয়ের ব্যবসার আবদার নিয়ে। বাবা কিছুতেই রাজি হলেন না—বইয়ের মতো সামান্য লাভের ব্যবসায়। কিন্তু আমিন বইয়ের ব্যবসাই করবেন।

শেষমেশ ১৯৫১ সালে বাড়ি থেকে ১৭/১৮ টাকা চুরি করে রওনা দিলেন চট্টগ্রামের উদ্দেশে। পাহাড়ের ঢালুতে ছড়ার উপরে শুরু করেন বইয়ের কারবারি। দোকানের নাম দিলেন 'স্ক্রীন এন্ড কালচার'।

বইয়ের প্রতি এই আগ্রহ তার এসেছিল বড় ভাইয়ের কাছ থেকে। বড় ভাই পত্র-পত্রিকা পড়তে খুব ভালোবাসতেন। তাই ব্যবসার কাজে কোথাও গেলে সেখানকার পত্রিকা, ম্যাগাজিন সংগ্রহ করে আনতেন।

ব্যবসার জন্য বড় ভাইকে চট্টগ্রামে আসতে হতো। সেখানে যে বাড়িটায় তিনি থাকতেন, সেখানে ছিল দেশি-বিদেশি নানা ধরনের পত্রিকা-ম্যাগাজিনের সংগ্রহ।

আমিন দেখতেন, বড় বড় গাড়ি হাঁকিয়ে নানাজন আসতেন শুধু তার বড় ভাইয়ের থেকে এই পত্রিকাগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য। ব্যাপারটা বেশ নজর কাড়ল তার। এত বড় বড় ধনী ব্যক্তিরাও তার ভাইয়ের কাছে আসছেন কেবল এই পত্রিকাগুলো সংগ্রহ করতে!

সেই থেকেই মাথায় চিন্তা বেঁকে বসল—বই, পত্রিকা, ম্যাগাজিনের দোকান দিলেই বা কেমন হয়? বাবা সায় না দিলেও বড় ভাই সায় দিয়েছিলেন ঠিকই।

বাড়ি ছাড়ার পর এই ভাই-ই গোপনে সাহায্য পাঠিয়ে পাশে ছিলেন ছোট ভাই আমিনের।

শুরুটা ১৯৫০ থেকে হলেও, ১৯৫১-তে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। চট্টগ্রামের কোর্ট হিল এলাকায় অবস্থিত সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের নিচে সাইনবোর্ড টাঙ্গানো হলো, 'স্ক্রিন এন্ড কালচার'।

এরপর সিডিএ (চিটাগং ডেভেলপমেন্ট অথরিটি) প্রতিষ্ঠিত হলে শহরের উন্নয়নের কারণে দোকানটি উচ্ছেদ হয়। ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হয় সিডিএ ভবনের মধ্যেই ছোট একটি ঘর। দোকানের নাম রাখতে হলো 'সিডিএ বুক হাউজ'।

তবে এভাবে বেশিদিন না—চললো ১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত। এরপর মোহাম্মদ আমিন তার বইয়ের সাম্রাজ্য নিয়ে ১৯৬৭ সালে চলে এলেন জলসা সিনেমা হলের নিচে।

মোহাম্মদ আমিন চেয়েছিলেন এমন একটি দোকান হবে, যেখানে দোকানের দরজা সবসময় খোলা থাকবে। পথচারীরা চলতে ফিরতে বই দেখতে পাবেন।

তেমনটিই পেয়েছিলেন। নতুন করে নাম রাখা হলো 'কারেন্ট বুক হাউজ'। এখনকার দোকানের প্রায় দশটির সমান ছিল সেই দোকানটি।

মোহাম্মদ আমিনের ছোট ছেলে মোহাম্মদ শাহীন বলেন, "আমাদের সমস্ত অর্জন, প্রচার, ভালোবাসা ওই জলসাকে ঘিরেই। পুরোনো বিল্ডিং ভেঙে ফেলায় সরে আসতে হয়েছিল। এরপর একনাগাড়ে প্রায় ৬০ বছর ওখানেই।"

আস্তে আস্তে সুনাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে পুরো শহরজুড়ে।

১৯৭৪ সাল থেকে 'বই হোক নিত্য সঙ্গী' স্লোগান নিয়ে কাজ শুরু করে দোকানটি—যা ছিল বইয়ের দুনিয়ায় প্রথম।

প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম সিদ্দিক আহমেদ তার এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, 'এই সীলমোহরটি কোনো বইতে পাওয়া গেলে ধরে নেওয়া যেত যে বইটি কারেন্ট বুক সেন্টার থেকে নেওয়া। এমনতর স্লোগান কিংবা আহ্বান জানিয়ে বইতে সীল মারার ধারা বাংলাদেশে বলতে গেলে কারেন্ট বুক সেন্টারই চালু করে।'

কারা কারা আসতেন এই দোকানে?

"বরং জিজ্ঞেস করুন কে আসেননি এখানে!"—পাল্টা জবাব দেন মোহাম্মদ শাহীন।

সত্তর-আশির দশকে এই বইয়ের দোকানে নিয়মিত আসতেন হুমায়ূন আহমেদ, শওকত ওসমান, আল মাহমুদ, মোহাম্মদ রফিক কিংবা মুনতাসীর মামুনের মতো লেখক ও সাহিত্যিকেরা।

চট্টগ্রামের এখন যারা সংসদ সদস্য কিংবা মন্ত্রী ছিলেন, তারাও ঢুঁ মারতেন এখানে।

আড্ডা দিতেন নাট্যকার মমতাজউদ্দীন আহমেদ, সাহিত্যিক আবুল ফজল, ড. আনিসুজ্জামান, আহমেদ শরীফ, হুমায়ূন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ, আল মাহমুদ কিংবা কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেনের মতো ব্যক্তিরা।

মোহাম্মদ আমিন। ছবি সৌজন্যেপ্রাপ্ত

প্রতিদিন আসতেন আবদুল মান্নান, আবু ইউসুফ, মোহাম্মদ আলী, ড. অনুপম সেনের মতো শিক্ষাবিদেরা। তাদের আড্ডায় জমজমাট থাকত সন্ধ্যেবেলার কারেন্ট বুক সেন্টার। বিক্রিও ছিল চোখে পড়ার মতো। একসময় হুমায়ুন আজাদের বই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি খুচরো বিক্রি হতো এই দোকান থেকেই।

এরপর ১৯৮৮ সালে মিমি সুপার মার্কেটে আরেকটি বুক স্টল খোলা হয়। সেই বছরই, ৩০ নভেম্বর, মোহাম্মদ আমিন মৃত্যুবরণ করেন।

তখন আন্দরকিল্লার পর থেকে শুরু করে, পুরো বহদ্দারহাট ঘুরে, নাসিরাবাদ হয়ে আগ্রাবাদের কাঠগড় পর্যন্ত নিউ মার্কেট ছাড়া দ্বিতীয় আর কোনো বইয়ের দোকান ছিল না।

মিমিতে প্রথম বইয়ের দোকান ছিল তাদেরই। প্রচুর মানুষ আসতেন বই কিনতে, বই পড়তে। মার্কেটের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা দেখতেন, লোকজনের হাতে কারেন্ট বুক সেন্টারের প্যাকেট।

তাদের দেখাদেখি তখন মিমিতেই গড়ে উঠল দশ-বারোটা নতুন বইয়ের দোকান। কিন্তু বছর দুই-চারেকের মধ্যেই সেগুলো পড়ে গেল।

শাহীন বলেন, "সবাই ভাবল, বইয়ের দোকান দিলেই বুঝি এতো লাভ। কিন্তু আমরা জানি লাভ খুব সীমিত—কখনো ক্ষতি, কখনো বা বরাবর লাভ।"

"লাভ নিয়ে ভাবিনি। বইয়ের সঙ্গে থাকতে চেয়েছি। হয়তো সেজন্যই টানা বিশ বছর টিকে ছিল দোকানটি," বলেন শাহীন।

দেশ পত্রিকাতেও এসেছিল 'কারেন্ট বুক সেন্টার' স্মৃতিচারণ

মোহাম্মদ আমিন নিজে যতটা না বই পড়তেন, বইপ্রেমীদের তার চেয়ে অনেক বেশি কদর করতেন।

দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায় বেগম মুশতারী শফি (১৯৯০) লিখেছেন—'কথা প্রসঙ্গে তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম, এত ব্যবসা থাকতে আপনি এই ব্যবসায় এলেন কেন, আমিন ভাই?

আমার এই প্রশ্নে তাঁর মুখ কী এক আনন্দে উদ্ভাসিত হয়েছিল! তিনি বলেছিলেন, 'আপা, একটি দেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যবসা আর ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার মাধ্যমে বিত্তে সমৃদ্ধ হতে পারে। কিন্তু জাতীয় গৌরব অর্জিত হয় শিক্ষিত সমাজ গড়ে তোলার মাধ্যমে। তার নিজস্ব ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিক ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিস্তার ঘটানোর মধ্য দিয়ে। আর এই বিরাট কাজটির একটি অংশ হচ্ছে গ্রন্থ রচনা, প্রকাশ ও পাঠক সৃষ্টি করা।'

এই ইতিহাস-সংস্কৃতির বিস্তার ঘটাতে গিয়েই আজ পর্যন্ত কারেন্ট বুক সেন্টার সৃজনশীল বইয়ের বাইরে টেক্সটবুক আনেনি।

ছবি: রাফিয়া মাহমুদ প্রাত/টিবিএস

মুসলিম হাইস্কুলের পাশে যখন দোকান ছিল, তখনও পাঠ্যবই বা গাইড বই ঢুকতে দেননি।

জানতেন, টেক্সটবইয়ের ব্যবসা করলে লাভ হতো অনেক, তবু পাঠকের জন্য সংগ্রহে রেখেছেন শুধু দেশ-বিদেশের সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শনসহ নানা রকমের বইপত্র, ম্যাগাজিন ও পত্রিকা।

আনন্দবাজার, দেশ, রোববার, সানন্দা, টাইম ম্যাগাজিন, দ্য ডন, দ্য ইকোনমিস্ট, ডওনের মতো পত্রিকা-ম্যাগাজিনের চট্টগ্রাম থেকে একমাত্র এজেন্ট ছিলেন তারাই।

কবি ও প্রাবন্ধিক হাফিজ রশিদ খান এক স্মৃতিচারণে লিখেছেন—'একমাত্র কারেন্ট বুক সেন্টারেই বাংলাদেশের অন্তত সর্বশেষ বইটির খোঁজ মেলে। সবচেয়ে মূল্যবান পত্রিকা বা বইটির ব্যাপারেও তারা প্রয়োজনীয় আগাম তথ্য দিয়ে পাঠককে সাহায্য করে।'

এমনকি জানা যায়, করাচির সব বিখ্যাত পত্রিকা-ম্যাগাজিনের সংগ্রহ দেখে একবার নাকি পাকবাহিনীও তাকে গ্রেপ্তার করে পরে ছেড়ে দেয়।

দেশ পত্রিকাতেও একবার এসেছিল কারেন্ট বুক সেন্টারের স্মৃতিচারণ।

পশ্চিমবঙ্গের লেখক সবিতেন্দ্রনাথ রায় একবার ঢাকার বইমেলা পরিদর্শন করেছিলেন, সাথে চট্টগ্রামেরও। কিন্তু দুটো বইমেলাই তাকে হতাশ করেছিল। পুরো লেখনীতে তার অসন্তোষ, হতাশার কথাই লেখা বারবার। শুধু প্রশংসা করেছেন চট্টগ্রামের 'কারেন্ট বুক সেন্টার'-এর।

লিখেছেন—'তবে চোখ জুড়িয়ে গেল চট্টগ্রামের "কারেন্ট বুক সেন্টার" নামের বইয়ের দোকানে ঢুকে। মনে হলো কলকাতার বইমেলার কোনো একটি বড়সড় প্যাভিলিয়ন।

কিন্তু সেখানেও কি থাকে বইয়ের সঙ্গে এত রকম লিটল ম্যাগাজিন?

এক মিনিটের মধ্যে স্টলে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে যেন আমাদের বইয়ের সর্বঙ্গরাজ্যে প্রবেশ ঘটলো। চট্টগ্রামের অনেকে বলেন, এই দোকানটি না থাকলে না হতো আমাদের রাজনীতিক হয়ে ওঠা, না খুলত আমাদের চোখ।

এমনকি সাকা চৌধুরী (সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী) ও তার চাচাতো ভাই ফজল করিম (চট্টগ্রাম-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য) স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় গাড়িতে করে একসাথে ধরে অনেকগুলো কমিক্স নিয়ে যেতেন।

''এদের বাড়ি ছিল গুডস হিলের ওখানে। পড়তেন সেন্ট প্লাসিডস স্কুলে। পড়া শেষ হলে আবার এসে দিয়ে যেতেন। বলতেন, আমরা যে এত ইংরেজিতে পটরপটর করি, এই তো এখান থেকেই বই নিয়ে পড়ে পড়ে," বললেন শাহীন।

চট্টগ্রামের বইপাড়া

ঢাকার স্টেডিয়াম মার্কেট, নিউমার্কেট, নীলক্ষেতের মতো, একসময় চট্টগ্রামের নিউমার্কেট, জলসা সিনেমা হল কিংবা আন্দরকিল্লা ছিল বইপাড়া নামে খ্যাত অঞ্চল।

নিউমার্কেটের দ্বিতীয় তলায় যেমন ছিল 'বইঘর'। সৈয়দ মোহাম্মদ শফির হাত ধরে এটি চালু হয় ১৯৬১ সালে।

বইঘর থেকে বের হয়েছিল হাসান হাফিজুর রহমান ও শহীদ কাদরীর মতো লেখকের কাব্যগ্রন্থ। আসা-যাওয়া বেশি ছিল কবি শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদের।

নিচতলায় ছিল নিউজফ্রন্ট। সেখানে ইংরেজি সাহিত্য ও দর্শনের পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার কাগজ পাওয়া যেত।

ছিল গল্প ও উপন্যাসের সমাহার 'উজালা বুক সেন্টার'।

এছাড়া স্টেশন রোডে, হোটেল গ্রিনের নিচে 'পিপলস বুক এজেন্সি' নামে একটি ছোট্ট দোকান ছিল। ছোট হলেও সাহিত্যের আড্ডা, বইয়ের সংগ্রহ কোনোকিছুতেই কম ছিল না।

'কথাকলী'তে ছিল বাম ঘরানার সবার আনাগোনা। দোতালায় রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুলজয়ন্তীতে নানা আড্ডা বা বই উৎসব বসত।

চট্টগ্রাম সিটি কলেজের পাশে আরেকটি দোকান ছিল, সেবা প্রকাশনীর বিশেষত সিরিজ বইগুলো বেশি রাখত।

ছবি: রাফিয়া মাহমুদ প্রাত/টিবিএস

ছিল কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি। জুবিলী রোডে এখনও সাইনবোর্ড দেখা যায়। জানা যায়, একসময় যার নিচতলাজুড়ে কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটির প্রায় ৫০টি দোকান ছিল। পাকিস্তান-বাংলাদেশে এত বড় বইয়ের দোকান আর দ্বিতীয়টি ছিল কি-না সন্দেহ। এটি ছিল একটি সমবায় সমিতির দোকান। এখন বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে।

অমর বই ঘর প্রতিষ্ঠিত হয় ৫৪ বছর আগে, ১৯৭০ সালের দিকে। বর্তমানে তাদের চারটি শাখা রয়েছে। এখন বেশি গাইডবই, টেক্সটবই। তবে বই ভাড়া দেওয়ার অভ্যাস এখনও রয়েছে।

এর বাইরেও ছিল চলন্তিকা, পাঠক-বন্ধু, মনীষা, ডি রোজিওর মতো আরও অনেক বইয়ের দোকান।

অন্যদিকে, ঢাকার বাংলাবাজারের আদলে আন্দরকিল্লার বইয়ের পসরা। আন্দরকিল্লার মসজিদ মার্কেটে এক সময় ২৮০টি বইয়ের দোকান ছিল, এখন আছে মাত্র ১৫০টির মতো। আন্দরকিল্লায় কোহিনূর লাইব্রেরি, ইসলামিয়া লাইব্রেরি ছিল পাঠকদের পছন্দের ঠিকানা। সত্তর থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত খুব জমজমাট পরিবেশ ছিল এই দোকানগুলোতে।

বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই আজ হারিয়ে গেছে। টিকতে না পেরে কোনো দোকান বই সরিয়ে চমৎকার জুতোর পসরা সাজিয়েছে। কেউ হয়তো সৃজনশীল বইয়ের জায়গায় বসিয়েছে টেক্সট আর গাইডবুক।

কিন্তু একদম আপোষহীনভাবে এখনও বইকে (সৃজনশীল) আগলে ধরে আছে একমাত্র কারেন্ট বুক সেন্টার।

মোহাম্মদ শাহীনের কাছ থেকে জানা যায়, লেখক হুমায়ূন আজাদ একবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে গিয়ে বলেছিলেন—'তোমরা খুব সৌভাগ্যবান, কারণ তোমাদের কাছেই আছে কারেন্ট বুক সেন্টার। ঢাকা শহরে এক কোটি মানুষ বসবাস করে, কিন্তু আজ পর্যন্ত কারেন্ট বুক সেন্টারের আদলে একটি দোকানও গড়ে ওঠেনি।'

কারেন্ট বুক সেন্টারের বর্তমান অবস্থান কাজীর দেউড়ির ভিআইপি টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায়।

ঢাকা এবং খুলনাতেও ছিল কারেন্ট বুক সেন্টারের শাখা। ঢাকার দৈনিক বাংলার মোড়ে (এখন হকার্স সমিতির অফিস ভবন) এবং খুলনায় পিকচার প্যালেসের মোড়ে ছিল কারেন্ট বুক সেন্টারের স্টল।

যদিও দুটোই এখন কেবল স্মৃতি। ভাড়ার চাপ সামলাতে না পেরে মিমি সুপার মার্কেটের দোকানটিও বন্ধ হয়ে যায়। তবে তা টিকেছিল প্রায় ২০ বছর।

কোর্ট রোডে প্রায় ১৭ বছর, এরপর জলসার নিচে ৫০ বছরেরও বেশি সময়, মিমি সুপার মার্কেটের পরে ২০১৮ থেকে বর্তমান ঠিকানায় পাঠকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

অতীতের ফেলে আসা দোকানগুলোর তুলনায় আজকের দোকান খুবই সাধারণ, আগের সেই আড্ডা, বিকিকিনি নেই।

তবু অর্থ বা লাভের সঙ্গে আপোষ করেননি। হয়তো গাইডবইয়ের জায়গায় কিছু স্টেশনারি পণ্য যুক্ত হয়েছে, কিন্তু এখনও বাবা মোহাম্মদ আমিনের রেখে যাওয়া পথেই হেঁটে চলেছেন তার দুই ছেলে মোহাম্মদ মুবিন এবং মোহাম্মদ শাহীন।

১৯৫১ সাল থেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যে যাত্রা শুরু, ৭৪ বছর ধরে তা এখনও চলছে। তাই, যদি নগরীর সবচেয়ে পুরনো বইয়ের দোকানের নাম আসে, তবে বলতে হয় কারেন্ট বুক সেন্টারের কথা; মোহাম্মদ আমিনের কারেন্ট বুক সেন্টার।

Related Topics

টপ নিউজ

বই / বইয়ের দোকান / কারেন্ট বুক হাউজ / চট্টগ্রাম / বইপত্র / ম্যাগাজিন

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ‘নতুন প্রজন্মের সাথে আপনারা প্রতারণা করছেন, ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না’: ব্যারিস্টার সুমন
  • উত্তরার মাইলস্টোনে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত, শিশু ও পাইলটসহ নিহত অন্তত ২০, হাসপাতালে ১৭১
  • গলায় ভারী ধাতব চেইন, নিউইয়র্কে এমআরআই মেশিন টেনে নেওয়ায় আটকা পড়ে মৃত্যু
  • সারজিসের মন্তব্যের জেরে বান্দরবানে এনসিপিকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা 
  • যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক: বাণিজ্যিক শর্তে ছাড় দিতে চায় ঢাকা, অ-বাণিজ্যিক শর্ত প্রত্যাখান করবে
  • এত ধরনের ডাকাত পৃথিবীর আর কোথাও নেই: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

Related News

  • চট্টগ্রামে দ্রুত ছড়াচ্ছে চিকুনগুনিয়া, চিকিৎসা নিতে আসা প্রতি ১০ জনের ৭ জন আক্রান্ত
  • চট্টগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে আগুন
  • আমরা অনেক ডিফিকাল্টির মধ্যে আছি: নাহিদ ইসলাম
  • পার্বত্য চুক্তির সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • চট্টগ্রামে উড়ালসড়কের নিচ থেকে রেলিং চুরি: নির্বিকার কর্তৃপক্ষ

Most Read

1
বাংলাদেশ

‘নতুন প্রজন্মের সাথে আপনারা প্রতারণা করছেন, ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না’: ব্যারিস্টার সুমন

2
বাংলাদেশ

উত্তরার মাইলস্টোনে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত, শিশু ও পাইলটসহ নিহত অন্তত ২০, হাসপাতালে ১৭১

3
আন্তর্জাতিক

গলায় ভারী ধাতব চেইন, নিউইয়র্কে এমআরআই মেশিন টেনে নেওয়ায় আটকা পড়ে মৃত্যু

4
বাংলাদেশ

সারজিসের মন্তব্যের জেরে বান্দরবানে এনসিপিকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা 

5
অর্থনীতি

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক: বাণিজ্যিক শর্তে ছাড় দিতে চায় ঢাকা, অ-বাণিজ্যিক শর্ত প্রত্যাখান করবে

6
বাংলাদেশ

এত ধরনের ডাকাত পৃথিবীর আর কোথাও নেই: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab