চট্টগ্রামে দ্রুত ছড়াচ্ছে চিকুনগুনিয়া, চিকিৎসা নিতে আসা প্রতি ১০ জনের ৭ জন আক্রান্ত

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর সাম্প্রতিক ঢেউয়ের পর এবার চিকুনগুনিয়া সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বেসরকারি তথ্য অনুযায়ী, জ্বরের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা প্রতি ১০ জনে প্রায় ৭ জনই মশাবাহিত এই ভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন।
গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রামের তিনটি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার তথ্য থেকে দেখা যায়, চিকুনগুনিয়ার পজিটিভিটির হার ৭১ শতাংশ।
এপিক হেলথকেয়ারে ১৮৫ জনের মধ্যে ১৫৩ জন, এভারকেয়ারে ১৩২ জনের মধ্যে ৬৫ জন এবং পার্কভিউ হাসপাতালে ৫৩ জনের মধ্যে ৪২ জন রোগীর দেহে ভাইরাসটির উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে।
চিকুনগুনিয়া এখনও সরকারিভাবে রোগ নজরদারি ও রিপোর্টিংয়ের আওতাভুক্ত নয়। ডেঙ্গু ও কোভিড-১৯ নিয়মিতভাবে সরকারি স্বাস্থ্য বুলেটিনে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও, চিকুনগুনিয়ার তথ্য উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত জাতীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় প্রশাসন কোনো লক্ষ্যভিত্তিক উদ্যোগ বা ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার এই অভাব চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, বিশেষত একই পরিবারের একাধিক সদস্য একসঙ্গে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বাড়ছে।
চিকিৎসকরা সতর্ক করে বলছেন, চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যুর হার খুব কম হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। ভাইরাস থেকে সেরে ওঠার পর রোগীদের দীর্ঘদিন ধরে জয়েন্টে ব্যথা, ক্লান্তি এবং ত্বকে ফুসকুড়ির মতো উপসর্গ থাকতে পারে, যা সপ্তাহ বা মাসব্যাপী স্থায়ী হতে পারে।
চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু ও কোভিড-১৯–এর তুলনায় চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণের সংখ্যা বেশি বলেও জানা যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল ফয়সাল মো. নুরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'এই মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ছড়াচ্ছে যাদের উপসর্গ প্রায় একই, তবে অধিকাংশ রোগীই শেষ পর্যন্ত চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন।'
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, 'বর্তমানে আমাদের কাছে যে জ্বরের রোগীরা আসছেন, তাদের প্রায় ৮০ শতাংশের উপসর্গ চিকুনগুনিয়ার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।'
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম মশাবাহিত রোগের এই ঊর্ধ্বগতি স্বীকার করে বলেন, 'আমরা শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছি। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ অপরিহার্য।'