চট্টগ্রামে আইসিডি বেইজড নতুন কাস্টম হাউস গঠন করা হবে: এনবিআর চেয়ারম্যান

চট্টগ্রামে আইসিডি বেইজড নতুন কাস্টম হাউস গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান (এনবিআর) মো. আব্দুর রহমান খান।
তিনি বলেন, 'চট্টগ্রামে আইসিডি বেইজড একটি নতুন কাস্টম হাউস গঠন করা হবে। আগামী আগস্ট মাসে এ বিষয়ে সরকারি আদেশ আসবে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের বর্তমান ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন করা হবে। এই সময়ে চট্টগ্রামে আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে কয়েক বছরের জন্য কাস্টম হাউসের কার্যক্রম স্থানান্তর করা হবে।'
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কাস্টম কর্মকর্তা এবং অংশীজনদের সঙ্গে এক বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
এসময় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'এ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের জটিলতার কারণে এর ব্র্যান্ড ভ্যালু কমে গেছে। তাই আমরা নতুন মডার্ন টেকনোলজি ডেভেলপ করব আগামী দুই বছরের মধ্যে।'
বৈঠকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের প্রধান স্টেক হোল্ডার সিএন্ডএফ এজেন্টরা বন্দর, আাইসিডি থেকে পণ্য খালাসে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এ সময় এনবিআর চেয়ারম্যান সৎ এবং ভালো ব্যবসায়ীদের সহায়তা করার আশ্বাস দেন।
শুল্কায়নে নতুন সফটওয়্যারের বিষয়ে এনবিআর চেয়ারসম্যান বলেন, 'বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যারা এ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম ব্যবহার না করে অন্যান্য যেসব সফটওয়্যার ব্যবহার করে শুল্কায়ন করে আমরা সেসব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করব।'
তিনি বলেন, 'সবচেয়ে মডার্ন টেকনোলজি এনে আমরা নতুন সফটওয়্যার তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে কোনো অবস্থাতেই সফটওয়্যার স্লো না হয়। কাজের ব্যাঘাত না ঘটে। শুরুতে কয়েকটি শুল্ক স্টেশনে পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রয়োগ করব। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে অন্তত দুই বছর সময় লাগবে।'
তিনি আরও বলেন, 'এ্যসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের ব্র্রান্ড ভ্যালু অনেক কমে গেছে। আমাদের ব্যবহারকারীরা এই সফটওয়্যার ব্যবহার করতে গিয়ে বারবার সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। যে সময় কাজের ব্যাঘাত হয়েছে সেটি সহনীয় সময় নয়।'
আব্দুর রহমান খান বলেন, 'চট্টগ্রামে আমরা তিনটি আইকনিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নতুন ভবন। এই ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'ভবন নির্মাণ শুরু হলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কার্যক্রম আগ্রবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে স্থানান্তর করা হবে। ভবন নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কার্যক্রম ওয়াল্ড ট্রেড সেন্টারে পরিচালনা করা হবে। সব ব্যবসায়ীর আগ্রাবাদ বেইজড অফিস। সুতরায় কাস্টম হাউসের কার্যক্রম কয়েক বছরের জন্য স্থানান্তর হলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'এছাড়া কাস্টম একাডেমিতে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা হবে। আগ্রাবাদে নির্মাণ করা হবে নতুন কর ভবন। শিগগিরই এই তিনটি ভবনের কাজ শুরু হবে।'
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'অফডককে জনপ্রিয় করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর চাচ্ছে বন্দর থেকে শতভাগ ডেলিভারি কার্যক্রম আইসিডি থেকে দেওয়ার জন্য। এটি নৌপরিবহন উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের চাওয়া। প্রায় ৭ হাজার এইচএস কোডের পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয়। এর মধ্যে মাত্র ৬৬ টি আইটেমের পণ্য ডিপো থেকে ডেলিভারি দেওয়া হয়।'
তিনি বলেন, 'কোভিডের সময় শতভাগ মালামাল আইসিডি থেকে ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে।'
এ সময় সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এস এম সাইফুল আলাম এবং সেক্রেটারি জেনারেল শওকত আলী বলেন, 'আইসিডিতে ক্যাপাসিটি সমস্যা রয়েছে। তারা বন্দর, এনবিআরকে আরও বেশি আমদানি পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার অনুমতি চেয়ে অ্যাপ্রোচ করলেও প্রকৃত পক্ষে সেই সক্ষমতা নেই। ফলে আমদানি পণ্য ডেলিভারি নিতে গিয়ে সময় নষ্ট হয়। তাই আমরা চট্টগ্রাম বন্দর থেকেও আইসিডিগামী আমদানি পণ্য ডেলিভারিতে ডুয়েল পারমিশানের অনুমোদন চাই।'
এর জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'আইসিডির ক্যাপাসিটি না থাকলে সেটি আইসিডি মালিকরা বলবে। বন্দরের আমদানি পণ্য হ্যান্ডিলিংয়ে আাইসিডির ক্যাপাসিটি কতটুকু, এ বিষয়ে তারা কতটুকু সক্ষম প্রয়োজনে আমরা আইসিডি মালিকদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করব।'
তিনি বলেন, 'সব ধরনের পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে নিয়ে আসার প্রয়োজন কী? মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর দিয়েও পণ্য আমদানি করা যায়। মোংলা বন্দরের সঙ্গে এখন কানেকটিভিটি অনেক ভালো। পদ্মা সেতুর কারণে মোংলা বন্দরের পণ্য সারা দেশে পৌঁছানের সুযোগ সহজ হয়েছে।'
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'অহেতুক ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা যাবে না। আমাদের মূল ফোকাস থাকবে ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন। যারা কর ফাকি দিয়ে জনগণকে ঠকাবে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব। ব্যবসায়ীরা যাবে বিড়ম্বনার শিকার না হয় সেটি হবে আমাদের মূল প্রতিপাদ্য।'
বন্দরের পণ্য নিলাম প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'বন্দরে নিলামযোগ্য পণ্য ইনভেন্টিপ্রর জন্য ১০০ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পণ্য নিলামে বিক্রি করতে হলে প্রয়োজনে চট্টগ্রাম শহরে মাইকিং করা হবে।'
এমপিদের আনা গাড়ির নিলাম প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'আমরা পানির দরে এসব গাড়ি বিক্রি করতে চাই না। নিলামে গাড়ির দাম না পেলে এর আরও ভালো ব্যবহার কীভাবে করা যায় সে ব্যাপারে আমরা চিন্তা ভাবনা করছি।'
মতবিনিময় সভায় এনবিআর সদস্য মোয়াজ্জম হোসেন, কাজী মোস্তাফিজুর রহমান, মুবিনুল কবির, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার শফি উদ্দিনসহ কাস্টম কর্মকর্তা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।