ফোরদো আগেই খালি করে ফেলা হয়েছে, আশপাশের বাসিন্দাদের কোনো ‘বিপদ নেই’: ইরান

মার্কিন হামলার পর ইরানের কুম প্রদেশের (যেখানে ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা অবস্থিত) ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট হেডকোয়ার্টার এক বিবৃতিতে বলেছে, 'কুম ও আশপাশের এলাকার মানুষের জন্য কোনো ধরনের বিপদের আশঙ্কা নেই।'
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন দাবি করেছেন, ফোরদোসহ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো 'সম্পূর্ণ ধ্বংস' করা হয়েছে, তখনই সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা-র মাধ্যমে এই বক্তব্য দিল কুম প্রদেশ কর্তৃপক্ষ।
এর আগে কুমের আরেক কর্মকর্তা বলেছিলেন, ফোরদো স্থাপনাটি 'অনেক আগেই খালি করে দেওয়া হয়েছে এবং স্থাপনাটির কোনো অপূরণীয় ক্ষতি হয়নি।'
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, মার্কিন বাহিনী ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করেছে।
ফোরদো তেহরানের দক্ষিণে এক পাহাড়ের গভীরে নির্মিত। মাটির এত নিচে অবস্থিত হওয়ায় ও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকায় ইসরায়েলের অস্ত্র দিয়ে ফোরদোতে হামলা কার্যত অসম্ভব ছিল।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই 'বাঙ্কার বাস্টার' বোমা রয়েছে—যা ফোরদোর মতো সুরক্ষিত স্থাপনা ধ্বংস করতে সক্ষম বলে মনে করা হয়।
এই মার্কিন বোমাটির নাম জিবিইউ-৫৭ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনেট্রেটর (এমওপি)। এর ওজন ১৩ হাজার কেজি (৩০ হাজার পাউন্ড)। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বোমা ১৮ মিটার কংক্রিট বা ৬১ মিটার মাটি ভেদ করে বিস্ফোরিত হতে পারে।
ফোরদোর টানেলগুলো মাটির ৮০ থেকে ৯০ মিটার গভীরে অবস্থিত বলে ধারণা করা হয়।
নিউইয়র্ক টাইমসকে একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ হামলায় ছয়টি বি-২ বোমারু বিমান অংশ নিয়েছে। বিমানগুলো থেকে ফোরদোর স্থাপনার ওপর এক ডজন ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের বাঙ্কার বাস্টার বোমা ফেলা হয়েছে।
তেজস্ক্রিয় দূষণের কোনো প্রমাণ মেলেনি: ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থা
ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থা বলেছে, তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপক ব্যবস্থার তথ্য এবং মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষায় ফোরদো, ইসফাহান ও নাতাঞ্জা স্থাপনার আশপাশের বাসিন্দাদের জন্য কোনো তেজস্ক্রিয়তা, দূষণ বা বিপদের লক্ষণ দেখা যায়নি।
সংস্থাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে বলে, 'পারমাণবিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেন্দ্রের ঘোষণা। ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ হামলার পর মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষা ও তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপক ব্যবস্থার তথ্যে দেখা গেছে, কোনো দূষণ রেকর্ড করা হয়নি।'
পোস্টে আরও বলা হয়, 'এই স্থাপনাগুলোর আশেপাশের বাসিন্দাদের কোনো বিপদ নেই। নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে।'
ফোরদোর 'গুরুতর ক্ষতি হয়নি': ইরানি এমপি
কুম অঞ্চলের পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি)—ফোরদো যেখানে অবস্থিত—মানান রাইসি বলেছেন, ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাটির ওপর হামলা ছিল 'ভাসা ভাসা'।
সংবাদ সংস্থা তাসনিম-এর প্রতিবেদন অনুসারে, রাইসি বলেন, 'নির্ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আমি জানাচ্ছি যে, মিথ্যাবাদী মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি যেমনটা দাবি করেছেন, ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনার তেমন গুরুতর কোনো ক্ষতি হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষতিই হয়েছে ভূপৃষ্ঠে, যা মেরামত করা সম্ভব।'
তিনিও দাবি করেন, মার্কিন হামলার পর কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়েনি।