Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Saturday
September 20, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SATURDAY, SEPTEMBER 20, 2025
মুগলি নামের সাবু দস্তগির, রিমা নামের অড্রে হেপবার্ন

ইজেল

এম এ মোমেন
18 January, 2023, 04:55 pm
Last modified: 18 January, 2023, 04:55 pm

Related News

  • বদরুদ্দীন উমর: অমরত্বের সন্তান 
  • বদরুদ্দীন উমর: কেন তাঁকে আমাদের মনে রাখতে হবে
  • অরুন্ধতী রায়: কিছু সাহসী মানুষের কারণে এখনো অন্ধকারে জোনাকির আলো দেখতে পারি 
  • ‘আজাদী’
  • অরুন্ধতী রায়ের নিষিদ্ধ বই ‘আজাদী’: নীরবতাই সবচেয়ে জোরালো শব্দ

মুগলি নামের সাবু দস্তগির, রিমা নামের অড্রে হেপবার্ন

একজন ভারতীয় মুসলমান তরুণ হলিউডে পা রেখে যথেষ্ট নামধাম কামাই করেছেন, এটা আমাদের প্রায় অজানাই। গত শতকের তিরিশের দশকের শেষভাগ থেকে শুরু করে চল্লিশের প্রথম ভাগ পর্যন্ত হলিউডে সুপরিচিত ছিলেন সাবু দস্তগির। ১৯৪২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আলেকজান্ডার কোর্ডার জাঙ্গল বুক সিনেমায় আরণ্যক বালক মুগলি সেজে পূর্ব ও পশ্চিমের দর্শকদের অভিভূত করেছেন। হলিউডে তিনিই ভারতের প্রথম স্টার। ওম পুরি, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া কিংবা ইরফান খানের বহু বছর আগে তিনি মঞ্চ আলোকিত করেছেন। ১৯৬০ সালে সাবুকে হলিউড ওয়াক অব ফেইমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মুগলি চরিত্রে অভিনয়ের পর তিনি এক নামে সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন—মুগলি।
এম এ মোমেন
18 January, 2023, 04:55 pm
Last modified: 18 January, 2023, 04:55 pm

১.
একজন ভারতীয় মুসলমান তরুণ হলিউডে পা রেখে যথেষ্ট নামধাম কামাই করেছেন, এটা আমাদের প্রায় অজানাই, গত শতকের তিরিশের দশকের শেষভাগ থেকে শুরু করে চল্লিশের প্রথম ভাগ পর্যন্ত হলিউডে সুপরিচিত ছিলেন সাবু দস্তগির। ১৯৪২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আলেকজান্ডার কোর্ডার জাঙ্গল বুক সিনেমায় আরণ্যক বালক মুগলি সেজে পূর্ব ও পশ্চিমের দর্শকদের অভিভূত করেছেন। হলিউডে তিনিই ভারতের প্রথম স্টার। ওম পুরি, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া কিংবা ইরফান খানের বহু বছর আগে তিনি মঞ্চ আলোকিত করেছেন। ১৯৬০ সালে সাবুকে হলিউড ওয়াক অব ফেইমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

মুগলি চরিত্রে অভিনয়ের পর তিনি এক নামে সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন—মুগলি। ব্যক্তি ও অভিনীত চরিত্র এতটাই মিশে গিয়েছিল যে পরবর্তীকালে নির্মিত জাঙ্গল বুক সিনেমা সবার জন্য একটা আফসোসই রেখে গেছে, মুগলি ঠিক আসল মুগলির মতো হয়নি—অর্থাৎ সাবুর অভিনয়টাকে মনে করা হয়েছে আসল মুগলি।

তার জন্ম ২৭ জানুয়ারি ১৯২৪ ব্রিটিশ ভারতের মহিশুর রাজ্যের (বর্তমান কর্ণাটক) কারাপুরে। তার বাবা ছিলেন মহারাজার হাতির মাহুত। তার প্রকৃত নাম সেলার সাবু। ভারতবর্ষ থেকে পাশ্চাত্যে গমনের সময় তার সফরসঙ্গী ছিলেন তার ভাই দস্তগির। ইমিগ্রেশন ফর্ম পূরণের সময় অথবা ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের বোঝার ভুলে সাবুর নামের সাথে যুক্ত হয়ে যায় ভাই দস্তগিরের নাম। তিনি হয়ে যান সাবু দস্তগির। দুই ভাই শৈশবে বাবাকে হারান। তখনকার বিধান অনুযায়ী মহারাজা তাদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন।

বাবার হাতি চালনার পেশা সাবুকে হাতিবান্ধব করে তুলেছিল। ১৯৩৭ সালে রুডিয়ার্ড কিপলিংয়ের 'দ্য জাঙ্গল বুক'-এর একটি কাহিনি 'এলিফ্যান্ট বয়' নিয়ে সিনেমা বানাতে চাইলেন রবার্ট ফ্লেহার্টি। প্রযোজক আলেকজান্ডার কোর্ডা। যেহেতু 'দ্য জাঙ্গল বুক'-এর প্রেক্ষাপট ভারত, শুটিং লোকেশনের খোঁজে তারা যখন ভারতবর্ষে এলেন, কারও কারও মতে বার্ট ফ্লেহাটির স্ত্রী ফ্রান্সেস হুবার্ড (অভিনয়ের জন্য অস্কারের নমিনেশন পেয়েছিলেন) সাবুকে শনাক্ত করেন। কারও মতে, তাদের ক্যামেরাম্যান ওসমন্ড বোরাডেইল তাকে নাম চরিত্রের জন্য যথার্থ মনে করেন। সাবুর বয়স তখন ১৩ বছর। সাবুর স্বাভাবিক অভিনয় তাদের মুগ্ধ করল। ১৮৯৪ সালে প্রকাশিত 'দ্য জাঙ্গল বুক'-এর 'তুমাই অব দ্য এলিফ্যান্টস'-এর চলচ্চিত্ররূপ এলিফ্যান্ট বয় সাবু। কাহিনিতে হাতির প্রধান মাহুত বড় তুমাই হাতি চালিয়ে আর আনন্দ পাচ্ছে না। তার দশ বছর বয়সী ছেলে ছোট তুমাই হাতির প্রতি অত্যন্ত আকৃষ্ট, হাতি ভালোবাসে, হাতিরাও তার ভালোবাসা বোঝে। সে শিকারে যেতে চায়, বাবা বলে তুই যেদিন হাতির নাচ দেখতে পাবি, সেদিন শিকারে যাবার উপযুক্ত হবি। কিন্তু নাচন কি কেউ কখনো দেখেছে? 'এলিফ্যান্ট বয়' সিনেমার একাংশের শুটিং হলো মহিশুরে আর বাকি অংশ লন্ডনের ডেনহাম স্টুডিওতে। ভারতের অংশ ক্যামেরায় ধারণ করলেন রবার্ট ফ্লেহার্টি এবং স্টুডিওর অংশ করলেন আলেকজান্ডার কোর্ডার ভাই জোলটান কোর্ডা। ভারতের অশিক্ষিত মাহুতপুত্র সাবু অভিনীত ছবিটি অনেক দিন হাউসফুল চলল, চিত্র সমালোচকেরা সাবুর স্বাভাবিক অভিনয়ের খুব প্রশংসা করলেন—যেন ছোট তুমাই হবার জন্যই তার জন্ম হয়েছিল। শুভানুধ্যায়ীরা তাকে লন্ডনের একটি স্কুলেও ভর্তি করে দিলেন।

তারপর উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের ফ্যান্টাসি কাহিনি নিয়ে নির্মিত 'দ্য ড্রাম' সিনেমায় সাবু হলেন প্রিন্স আজিম। প্রথম দিককার একটি রঙিন ছবি এটি।

১৯৪০ কোর্ডা প্রোডাকশনসের বড় বাজেটের সিনেমা 'দ্য থিফ অব বাগদাদ'-এ আবু চরিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতাদের একজন হিসেবে চিহ্নিত হতে থাকলেন, তার বয়স তখন মাত্র ১৬ বছর। সিনেমাটোগ্রাফি, স্পেশাল এফেক্ট এবং আর্ট ডিরেকশন তিনটি শাখায় ছবিটি অস্কার লাভ করে। সাবুকেও অস্কার দেওয়া যেতে পারত বলে মনে করা হয়।

রিমার ভূমিকায় অড্রে হেপবার্ন ( বাঁয়ে) ও উইলিয়াম হেনরি হাডসনের উপন্যাস গ্রিন ম্যানসন

জোলটান কোর্ডার পরিচালনায় ১৯৪২ সালে মুক্তি পায় 'মুগলি'। এখানেও তার জয়জয়কার। ইউনিভার্সাল পিকচারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তিনি আরও তিনটি সিনেমায় অভিনয় করলেন। অ্যারাবিয়ান নাইটস (১৯৪২) হোয়াইট স্যাভেজ (১৯৪৩) এবং কোবরা ওমেন (১৯৪৪), অতঃপর তিনি আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় ১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর এভিয়েশনে উইংয়ে যোগ দেন এবং একটি বোম্বার্ডমেন্ট স্কোয়াডে সাফল্যের সাথে মেশিনগান চালানোর দায়িত্ব পালন করে 'ফ্লাইং ক্রস' লাভ করেন। যুদ্ধের পর তার কাজে ভাটা পড়ে। তবুও ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ চলচ্চিত্র ব্ল্যাক নার্সিসাস (১৯৪৭) তাকে আবার লাইমলাইটে নিয়ে আসে। এটি রুমার গোডেনের একটি উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। 

মুগলি কয়েকটি শাখায় অস্কার মনোনয়ন পেলেও শেষ পর্যন্ত পুরস্কৃত হয়নি। ইউনিভার্সালের সাথে সাবুর শেষ সিনেমা জিম করবেটের কাহিনি নিয়ে 'ম্যান ইটার অব কুমায়ুন'। 'সংগস অব ইন্ডিয়া' সিনেমার শুটিংয়ের সময় প্রিন্সেস তারার ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য আমন্ত্রিত অভিনেত্রী ম্যারিলিন কুপারের সাথে দেখা হয়ে যায়। দুজনেই দুজনার প্রেমে পড়েন এবং দ্রুত বিয়েও সেরে নেন।

'সংগস অব ইন্ডিয়া'তে বিরজু চরিত্রে অভিনয় করার জন্য পরিচালক মেহবুব খান সাবুকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বিদেশি নাগরিক, ভারত সরকার তাকে ওয়ার্ক পারমিট না দেওয়াতে তিনি বঞ্চিত হন এবং তার জায়গায় সুনীল দত্তকে নেওয়া হয়। ফলে সাবুর আর কখনো ভারতীয় সিনেমায় অভিনয় করা হয়ে ওঠেনি।

ম্যারেলিন কুপারের সাথে আমৃত্যু বিয়ে বহাল ছিল। তাদের ছেলে পল সাবু শিল্পী ও আশির দশকের রক ব্যান্ড সাবুর প্রতিষ্ঠা, কন্যা জেসমিন সাবু সিনেমার অ্যানিম্যাল ট্রেইনার।

সাবু দস্তগির 'জাঙ্গল হেল, সাবু অ্যান্ড দ্য ম্যাজিক রিং মিসট্রেস অব দ্য ওয়ার্ল্ড'-এ অভিনয় করেন। ২ ডিসেম্বর ১৯৬৩ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ম্যারেলিন কুপার জানিয়েছেন, মৃত্যুর দুদিন আগে স্বাভাবিক মেডিকেল চেকআপের সময় ডাক্তার তাকে বলেছিলেন, সবাই যদি আপনার মতো স্বাস্থ্যের অধিকারী থাকেন, তাহলে তো আমার চাকরি থাকবে না।

রুমা গোডেনের 'ব্ল্যাক নার্সিসাস' উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়নের সময় ব্রেন্ডা মারিয়ান জুলিয়ান নামের একজন নৃত্যশিল্পীর সাথে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠার প্রচারণা ছিল। ১৯৪৮ সালে ব্রেন্ডার কন্যা সন্তান মিশেলা জন্মগ্রহণ করলে সাবু পিতৃত্ব অস্বীকার করেন। ১৯৫০ সালে ব্রেন্ডা অভিনেতা ফ্রাঙ্ক আর্নস্টকে বিয়ে করেন। মিশেলার জন্য পিতৃত্বের মামলায় জুরিদের মধ্যে ৯-৩ বিভাজন সাবু দস্তগিরের পক্ষে যায়। কিন্তু মামলা আপিলে গেলে সাবু আশঙ্কিত হয়ে পড়েন। শুনানির ২ দিন আগে ক্ষতিপূরণ এবং ২১ বছর পর্যন্ত মিশেলার ভরণপোষণের নিশ্চয়তায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে আপোষনামা দাখিল করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পিতৃত্ব স্বীকার করেননি।

এদিকে ১৯৬০ সালে ডাকাতের গুলিতে তার ভাইও নিহত হন। 

জাঙ্গল বয় সাবু হাতিদের পছন্দের মানুষ

'দ্য জাঙ্গল বুক' আরণ্যক গল্পের সিরিজ। বইটির প্রথম অর্ধাংশে মুগলির বর্ণনা এমন:

ঘুম থেকে উঠেই মা নেকড়ে ও বাবা নেকড়ে দেখে তাদের গুহায় একটি মানবছায়া ঘুরঘুর করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে শেরে খান নামের অতিকায় বাঘ নেকাড়ের গুহামুখে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেয়, মানবছানাটি তার শিকার, এখনই ফেরত চাই। কিন্তু মা ও বাবা নেকড়ে জানিয়ে দেয়, এটা তাদের নিজেদের ছানা, নাম মুগলি। মুগলি মানে ব্যাঙ। বাঘ রেগে যায় এবং নির্দেশ দেয় অবিলম্বে ছানাটাকে সিওন জঙ্গলের নেকড়ের পালে নিয়ে আসুক, অন্যরা যদি সাক্ষী দেয় এটা নেকড়ে ছানা, তাহলে মুগলির কোনো ক্ষতি করবে না। শেরে খান নেকড়েদের রাজি করাতে চেষ্টা করে। কিন্তু বুড়ো নেকড়ে নেতা আকেলা মুগলিকে বাঁচাতে অন্যদের সমর্থন চায়। বালু নামের ভালুক বলে, সে মুগলিকে প্রশিক্ষিত করে তুলবে আর কালো চিতাবাঘেরা শেরে খানকে সন্তুষ্ট করার জন্য মুগলির বদলে একটি ষাঁড় ধরে দেবার প্রস্তাব দেয়।

বালু ও বাঘিরা মুগলিকে অরণ্য আইন বা ল অব দ্য জাঙ্গল শেখাতে থাকে আর শেরে খান নেকড়েদের হুমকি দেয়: কতক্ষণ তারা চোখে চোখে রাখবে। বাঘিরা মুগলিকে বলল, একসময় তার শত্রু শেরে খানকে তারই হত্যা করতে হবে। একদিন নেকড়ে নেতা আকেলা কোনো শিকার না পেলে তাতে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং নেকড়েরা মুগলির বিরুদ্ধে চলে যায়। এবার মুগলি জানায়, গ্রাম থেকে যে লাল ফুল চুরি করে এনেছে, তা ব্যবহার করে আগুন লাগিয়ে দেবে বলে শেরে খানকে ভয় দেখায় এবং আবেলাকে নেকড়েদের হাতে মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা করে। চলে আসার সময় মুগলি নেকড়েদের কাছে প্রতিজ্ঞা করে, এরপর আসার সময় শেরে খানের চামড়া তার মাথায় তুলে নিয়ে আসবে।

এই হচ্ছে 'জাঙ্গল বুক'এর মুগলির কাহিনি। এমন ১৪টি অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে বইটি সম্পূর্ণ করেছেন রুডিয়ার্ড কিপলিং।

প্রথম অধ্যায়ে বলা হয়েছে: জীবিত প্রাণীর মধ্যে মানুষ হচ্ছে সবচেয়ে দুর্বল এবং প্রতিরক্ষাহীন প্রাণী, কাজেই তাদের আক্রমণ করা খেলোয়াড়সুলভ নয়।

অড্রে হেপবার্ন ও অ্যান্থনি পার্কিনস

২.

রুডিয়ার্ড কিপলিংয়ের 'দ্য জঙ্গল বুক' প্রকাশিত হলো ১৮৯৪ সালে। মূল চরিত্র জঙ্গল বয়ের নাম মুগলি। অরণ্যের প্রাণীর ভালোবাসা ও বৈরিতায় কাটতে থাকে মুগলির জীবন। 'দ্য জঙ্গল বুক'-এর লেখক রুডিয়ার্ড কিপলিং বিশ্বখ্যাত লেখকদের একজন। ১৯০৭ সালে মাত্র ৪১ বছর বয়সে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন, এত কম বয়সে সাহিত্যের নোবেল অবিশ্বাস্য এই রেকর্ড আর ভাঙার নয়। 

মুগলির আত্মপ্রকাশের ঠিক দশ বছর পর ১৯০৪ সালে সৃষ্টি হয় দ্য জঙ্গল গার্ল, তার নাম রিমা। যে বইতে রিমার আত্মপ্রকাশ, সেটি একটি উপন্যাস, নাম: 'গ্রিন ম্যানসন: আ রোমান্স অব দ্য ট্রপিক্যাল ফরেস্ট'। ঔপন্যাসিক ডব্লিউ এইচ হাডসন। ১৯৫৯ সালে হলিউডের সিনেমা 'গ্রিন ম্যানশন'-এ রিমার চরিত্রে অভিনয় করলেন অড্রে হেপবার্ন। এবং রিমা পেয়ে গেল অমরত্ব।

রিমার স্রষ্টা উইলিয়াম হেনরি হাডসনের জন্ম ৮ আগস্ট ১৮৪১ আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেস প্রদেশে। বাবা ড্যানিয়েল হাডসন ইংলিশ এবং মা ক্যাথেরিন আইরিশ উৎস থেকে উঠে আসা অভিবাসী আমেরিকান। হাডসনের শৈশব কাটে আরণ্যক পরিবেশে। হাডসন একজন প্রকৃতি ও পক্ষিবিশেষজ্ঞ ছিলেন। ফিকশন ও নন-ফিকশন দুটি শাখাতেই তিনি লিখে গেছেন। তিনি ডারউইনের অভ্যুদয় তত্ত্বের বিরোধিতা করে ফরাসি জীববিজ্ঞানী দ্য ব্যাপতিস্তে লামার্কের মতবাদকে সমর্থন করেছেন। 

লন্ডনের হাইড পার্কে হাডসন মেমোরিয়াল বার্ডস স্যাঙ্কুচুয়ারি দেখার সুযোগ আরও অনেকের মতো আমারও হয়েছে।

জাঙ্গল বয় সাবু হাতিদের পছন্দের মানুষ

দক্ষিণ-পূর্ব ভেনেজুয়েলার গায়ানা জঙ্গলের বিচিত্র রোমান্স নিয়ে লেখা উপন্যাস 'গ্রিন ম্যানসন: আ রোমান্স অব দ্য ট্রপিক্যাল ফরেস্ট'। কাহিনি সংক্ষেপে এমন:

একজন স্পেনিশ আমেরিকান কখনো নিজের অতীত নিয়ে কিছু বলেননি। তবে কাহিনি বর্ণনাকারী তার সাথে সখ্য গড়ে তুলে তার অতীতে প্রবেশ করেছেন। ১৮৭৫ সালে ভেনেজুয়েলায় বিপ্লবীরা অভ্যুত্থান ঘটালে একজন মন্ত্রী নিহত হন, তার পুত্র আবেল রাজধানী কারাকাস থেকে পালিয়ে গায়ানার জঙ্গলে আশ্রয় নেন। একবার অরণ্যে ভয়ংকর জ¦র থেকে প্রাণে বেঁচে যান। তার ভাগ্যান্বেষণের সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে তিনি একটি রেড ইন্ডিয়ান গ্রামে আশ্রয় নেন, গিটার বাজিয়ে শিশুদের গল্প শোনান এবং এভাবেই বাকি জীবন শেষ করে দেবার সিদ্ধান্ত নেন। একদিন তিনি অরণ্য থেকে ভেসে আসা পাখির মতো কণ্ঠের অদ্ভুত সুরেলা গান শোনেন। কিন্তু ইন্ডিয়ানরা সে অরণ্য এড়িয়ে চলে; কারণ, সেখানে অশুভ প্রেতাত্মার লালনকারী 'দিদির কন্যা' বাস করে। আবেল ঘরে বসে থাকার মানুষ নন। পাখির কণ্ঠ তাকে কেবল অরণ্যে টেনে নেয়। তিনি অরণ্যে অভিযান চালিয়ে পাখিকণ্ঠী রিমাকে খুঁজে বের করে। কালোচুলের সে তরুণীর কাছাকাছি হতেই একটি সাপের ছোবলে আবেল অজ্ঞান হয়ে যান।

যখন জ্ঞান ফেরে, আবেল ভিন্ন এক জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করে। তখন বুড়ো লুফলোর কুটিরে, সেখানে শুশ্রƒষায় তিনি সেরে ওঠেন। বুড়োর সাথে অনেক কথা হয়। তিনি তার নাতনি রিমাকে সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু রিমার উৎস সম্পর্কে তিনি মুখ খুলতে নারাজ। রিমা তাকে প্রত্যাবর্তনের পথ দেখায়।

আবেল ইন্ডিয়ানদের কাছে ফিরে আসে, কিন্তু ততক্ষণে তাদের সাথে আবেলের সম্পর্ক শীতল হয়ে আসে। যদি তারা হাতের কাছে পেত রিমাকে হত্যা করত। অথচ সাদা আগন্তুক আবেল ১৭ বছর বয়সী রিমার প্রেমে পড়ে যায়। অবশ্য মেয়েটির মুখের পাখির ভাষা তার কাছে দুর্বোধ্য। এ ভাষায় তার সাথে যোগাযোগের সাধ্য আবেলের নেই। 

হলিউডের বিখ্যাত মেট্রো গোল্ডউইন মেয়ার যখন গ্রিন ম্যানসন রুপালি পর্দায় আনার সিদ্ধান্ত নিল পরিচালক মেল ফেরার রিমা চরিত্রে বেছে নিলেন বিখ্যাত অড্রে হেপবার্নকে। অড্রে তারই স্ত্রী। নায়ক আবেল চরিত্রে এলেন অ্যান্থনি পার্কিনস। সিনেমা করতে গিয়ে হাডসনের মূল কাহিনিতে অনেক যোগ-বিয়োগের ঘটনা ঘটেছে। আবেল সাহসের অধিকারী হলেও আদিবাসী কুয়া-কোর দেওয়া আগুনে রিমার মৃত্যু ঘটে। শেষটা ট্রাজিক, উপন্যাসে ও সিনেমায়। রিমা একটি ফুলের কথা তাকে জানিয়েছে, একস্থানে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, অন্য স্থানে প্রস্ফুটিত হয়—এমন একটি নব প্রস্ফুটিত ফুলের দিকে আবেল হাত বাড়ায়, হয়তো সেই ফুলই হারিয়ে যাওয়া রিমা। 

নৃত্যশিল্পী ব্রেন্ডা ও তার সন্তান। সন্তানটি সাবু দস্তগিরের, যদিও সাবু স্বীকার করেননি।

অরণ্যে রিমার আগমনের কাহিনিটা একসময় প্রকাশিত হয়। তার কথিত দাদা লুফলো (চলচ্চিত্রে লি জে কব) ভয়ংকর ডাকাতদলের সদস্য ছিলেন। দস্যুবৃত্তির সময় আকস্মিকভাবে একজন গর্ভবতী আহত নারীকে সামনে পান। ধর্ষণ কিংবা হত্যার দিকে না গিয়ে লুফলো তাকে তার বাসস্থান ভোয়াতে নিয়ে আসেন, সেবাযত্ন করেন এবং এখানেই তার গর্ভে জন্ম নেয় কন্যা সন্তান—তার নাম রিমা। এই নারী ও তার সন্তান অদ্ভুত পাখির ভাষায় কথা বলত, যা লুফলোর কাছে দুর্বোধ্য। মায়ের মৃত্যু হলে রোগা-পাতলা রিমাকে নিয়ে বুড়ো অরণ্যের ভেতর গ্রিন ম্যানসনে নিয়ে আসেন। প্রকৃতি তাকে সুস্থ করে তোলে এবং তার সৌন্দর্য বিকশিত হতে থাকে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে রিমা আরণ্যক প্রাণীদের বাঁচাবার উদ্যোগ নেয়—ইন্ডিয়ানরা তার অপছন্দের; কারণ, তারা প্রণী শিকার করে। রিমা শক্তি ও কৌশল প্রয়োগ করে পাখি ও জীবজন্তু শিকার করা থেকে ইন্ডিয়ানদের বাধা দেয়। ফলে সে ইন্ডিয়ানদের কাছে অশুভ এক দেবী হিসেবে চিত্রিত হতে থাকে। কিন্তু একটা সময় যখন ইন্ডিয়ানরা বুঝতে পারে রিমার ওপর তাদের আরোপিত দেবত্বের বিষয়টি যথার্থ নয়, তারা একটি গাছের ফাঁদে রিমাকে ঘিরে চারদিক থেকে আগুন ধরিয়ে দেয়। আবেল একসময় অরণ্যে ফিরে এসে রিমার দেহাবশেষ আবিষ্কার করে এবং তা সভ্যতার কাছে ফিরিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। দীর্ঘ যাত্রার পর একসময় দুর্বল ও ভেঙে পড়া আবেল জর্জটাউন পৌঁছে। তার প্রত্যাশা রিমার দেহভস্মের সাথে একদিন সে-ও মিশে যাবে। 

অড্রে হেপবার্ন অভিনীত হলেও গ্রিন ম্যানসন সিনেমাটি ফ্লপ করে। লগ্নিকৃত অর্থ ছিল ৩.২৮ মিলিয়ন ডলার, উঠে আসে কেবল ২.৩৯ মিলিয়ন। তবে কমিক ও কার্টুনে রিমা বিশ্বখ্যাত হয়ে ওঠে।

১৯৫১ সালে গ্রিন ম্যানসন সিনেমা হলে প্রদর্শনের জন্য এলে প্রথম দিকে যথেষ্ট কৌতূহল থাকলেও ডরোথি কিংস্লের দুর্বল চিত্রনাট্য কাহিনিকে জমাট বাঁধাতে পারেনি বলে সমালোচিত হতে থাকে। তবে রিমা চরিত্রে অড্রে হেপবার্ন যতটা সম্ভব তার অভিনয়ের মান ধরে রাখতে পেরেছিলেন। 

গ্রিন ম্যানসন সিনেমার পোস্টার

আরণ্যক গ্রন্থটির প্রথম এপিসোড মুগলিস ব্রাদার। নেকড়ের গুহার কালো চিতার সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনে মুগলি বেড়ে উঠছে। বাঘের আক্রমণে এই শিশু একবার পরিবার থেকে ছিটকে পড়ে এবং নেকড়েদের ভালোবাসায় পরিপুষ্ট হয়। সিওনির জঙ্গলে ব্রিটিশ রেঞ্জার গিসবোর্ন অসাধারণ দক্ষ মুগলিকে পেয়ে বিস্মিত হন। বনবিভাগের প্রধান মুলার তাকে চাকরি দেন। মুগলি গিসবোর্নের বাটলার আবদুল গফুরের মেয়েকে বিয়ে করে এক পুত্র সন্তানের জনক হয়। কাহিনির শেষে আবার তার নেকড়ে ভাইদের কাছে ফিরে আসে। মুগলির মাথায় তখন নিহত শেরে খানের চামড়া। মুগলি চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন সাবু দস্তগির।

Related Topics

টপ নিউজ

মুগলি / জাঙ্গল বুক / রুডইয়ার্ড কিপলিং / ইজেল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম এবং স্টাইলিশ আবেদনের কারণে ই-বাইকের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন
    নীরব বিপ্লব: যে কারণে বাংলাদেশী যাত্রীদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ই-বাইক
  • ছবি: সংগৃহীত
    স্কুবা ডাইভিং দুর্ঘটনায় ‘ইয়া আলী’ গানের গায়ক জুবিন মারা গেছেন
  • প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
    মাঝ আকাশে টার্বুলেন্সের কবলে বিমান, হাত ভাঙল কেবিন ক্রুর
  • ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। ছবি: সংগৃহীত
    কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষায়িত পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের অনুরোধ মার্কিন দূতাবাসের, পুলিশের আপত্তি
  • আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় উপকমিটির সদস্য মো. কামরুজ্জামানকে শুনানি শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। ছবি: টিবিএস
    আ.লীগের ঝটিকা মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া তেজগাঁও কলেজের শিক্ষকসহ দুজন কারাগারে
  • মানিকচানের পোলাও—৭৮ বছর ধরে চলছে যে ঐতিহ্যবাহী খাবার
    মানিকচানের পোলাও—৭৮ বছর ধরে চলছে যে ঐতিহ্যবাহী খাবার

Related News

  • বদরুদ্দীন উমর: অমরত্বের সন্তান 
  • বদরুদ্দীন উমর: কেন তাঁকে আমাদের মনে রাখতে হবে
  • অরুন্ধতী রায়: কিছু সাহসী মানুষের কারণে এখনো অন্ধকারে জোনাকির আলো দেখতে পারি 
  • ‘আজাদী’
  • অরুন্ধতী রায়ের নিষিদ্ধ বই ‘আজাদী’: নীরবতাই সবচেয়ে জোরালো শব্দ

Most Read

1
রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম এবং স্টাইলিশ আবেদনের কারণে ই-বাইকের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন
ফিচার

নীরব বিপ্লব: যে কারণে বাংলাদেশী যাত্রীদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ই-বাইক

2
ছবি: সংগৃহীত
বিনোদন

স্কুবা ডাইভিং দুর্ঘটনায় ‘ইয়া আলী’ গানের গায়ক জুবিন মারা গেছেন

3
প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

মাঝ আকাশে টার্বুলেন্সের কবলে বিমান, হাত ভাঙল কেবিন ক্রুর

4
ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষায়িত পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের অনুরোধ মার্কিন দূতাবাসের, পুলিশের আপত্তি

5
আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় উপকমিটির সদস্য মো. কামরুজ্জামানকে শুনানি শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। ছবি: টিবিএস
বাংলাদেশ

আ.লীগের ঝটিকা মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া তেজগাঁও কলেজের শিক্ষকসহ দুজন কারাগারে

6
মানিকচানের পোলাও—৭৮ বছর ধরে চলছে যে ঐতিহ্যবাহী খাবার
ফিচার

মানিকচানের পোলাও—৭৮ বছর ধরে চলছে যে ঐতিহ্যবাহী খাবার

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net