Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Saturday
June 07, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SATURDAY, JUNE 07, 2025
ঢাকার প্রতিভা ও বুদ্ধদেব

ইজেল

আন্দালিব রাশদী
26 September, 2021, 12:45 pm
Last modified: 26 September, 2021, 05:03 pm

Related News

  • অন্য জেলা থেকে ঢাকায় কাঁচা চামড়া পরিবহন ঈদের দিনসহ ১০ দিন নিষিদ্ধ
  • বৈরী আবহাওয়া: ঢাকামুখী চার ফ্লাইট শাহ আমানতে জরুরি অবতরণ
  • ছিনতাইকারী সন্দেহে রাজধানীর দারুসসালামে ২ যুবককে পিটিয়ে হত্যা
  • রাজধানীতে আজ একাধিক কর্মসূচি, এড়িয়ে চলবেন যেসব সড়ক 
  • ঢাকাসহ ৯ জেলায় বজ্রঝড়ের সতর্কবার্তা: বিএমডি

ঢাকার প্রতিভা ও বুদ্ধদেব

‘একবার এক ফুটফুটে জ্যোৎস্নারাতে আমি যেন ঠিক দেখতে পেয়েছিলাম, এক ফাঁক কাদা মূর্তি মাঠের মধ্যে ছুটোছুটি করছে। তখন আমার ভাবতে খুব ভালো লেগেছিল যে, আমি পরীর নাচ দেখতে পেলুম।’
আন্দালিব রাশদী
26 September, 2021, 12:45 pm
Last modified: 26 September, 2021, 05:03 pm
স্ত্রী প্রতিভা বসুর সঙ্গে কবি বুদ্ধদেব বসু। ছবি: সংগৃহীত

বুদ্ধদেব বসু

'ঢাকার বুদ্ধদেব বসু' লিখে বুদ্ধদেব বসুর ঢাকা নিয়ে লেখা অনেকটা সহজ করে দিয়েছেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। আর 'অস্তাচলের ধারে পৌঁছে পূর্বাচলের দিকে ফিরে তাকিয়ে স্মৃতিগ্রন্থ জীবনের জলছবিতে প্রতিভা বসু নিজেই তাঁর ঢাকা কেমন, জানিয়ে গেছেন। বুদ্ধদেব বসুর আমার ছেলেবেলা ও আমার যৌবন-এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশে ঢাকা চিত্রায়িত হয়েছে।

বুদ্ধদেব বসু যখন পুরানা পল্টনে আসেন, 'পাড়াটা তখন সবে গড়ে উঠেছে; শহরের এক প্রান্তে ফাঁকা মাঠের মধ্যে দু-একখানা বাড়ি: পাকা রাস্তা নেই, ইলেকট্রিসিটি নেই, সেই বড়ো রাস্তার মোড়ে একমাত্র জলের কল। ডাকবাংলোর পর থেকে রাস্তাতেও আলো ছিল না। অসুবিধা যত দূর হতে হয়- প্রথম কয়েক দিন খুব বিশ্রী লাগল; মনে হলো সভ্যতার এলাকার বাইরে নির্বাসিত হয়েছি।'

কিন্তু এই নির্বাসনের সময়টা দীর্ঘকালীন হয়। আমার ছেলেবেলাতে বুদ্ধদেব বসু আরও লিখেছেন : 'দেখতে দেখতে আমার চোখের উপর মস্ত মস্ত বাড়ি উঠে পাড়া ভরে গেল। কত গ্রীষ্মের দুপুর ছাদ পেটানো গানের একঘেয়ে সুরে উদাস হয়ে উঠল, পাকা রাস্তা তৈরি হলো, ইলেকট্রিসিটিতে আলো হয়ে গেল চারদিক, দশ গজ পরপর বসল জলের কল। শেষ পর্যন্ত পুরানা পল্টন ভদ্র হয়ে উঠল, ভদ্রলোকের বসবাসের যোগ্য হয়ে উঠল। সবাই আমরা আরামের নিঃশ্বাস ছাড়লুম।'

পুরানা পল্টনের বাড়িটাতে তিনি ছয় বছর কাটিয়েছেন-'সমস্ত কলেজ জীবন, সাহিত্য জীবনের প্রথম পর্যায়, যৌবনের উন্মেষ থেকে বিকাশ পর্যন্ত। এ সময়টা আত্মপ্রকাশের না হলেও আত্মপ্রস্তুতির দিক থেকে জীবনের সবচেয়ে প্রধান অংশ।' পুরানা পল্টন বদলে যাওয়ার পর তাঁর মনে হয়েছে, আগেকার সেসব দিনই ভালো ছিল- যখন ঘোড়ার গাড়ি থামত বড় রাস্তার মোড়ে আর জলকাদা ডিঙিয়ে বাড়ি পৌঁছাতে হতো এবং বন্ধুৃরা সাইকেল ঘাড়ে করে একহাটু কাঁদা ভেঙে বুদ্ধদেবদের টিনের ঘরে পৌঁছাতেন- 'তখন কৃষ্ণপক্ষের অন্ধকারে তারার আলোয় পথ দেখে মাঠ পেরিয়ে আমি বাড়ি ফিরতুম, আর শুক্লপক্ষের আকাশ ভরে আলোর বান ডাকতো তেমন জ্যোৎস্না আর দেখি না।' 

আর একটি জোৎস্নার বর্ণনা তিনি দিয়েছেন: 'একবার এক ফুটফুটে জ্যোৎস্নারাতে আমি যেন ঠিক দেখতে পেয়েছিলাম, এক ফাঁক কাদা মূর্তি মাঠের মধ্যে ছুটোছুটি করছে। তখন আমার ভাবতে খুব ভালো লেগেছিল যে, আমি পরীর নাচ দেখতে পেলুম।'

সৈয়দ আবুল মকসুদ দেখিয়েছেন ঢাকা কিংবা পূর্ববঙ্গ বুদ্ধদেব বসুকে খুব টেনেছে মনে করার কারণ নেই। ১৯৩১ সালে ঢাকা ছেড়ে চিরদিনের জন্যই কলকাতায় পাড়ি দেন। সেই যে প্রতিভা বসু, সে যুগের রানু সোম, দিলীপ কুমার রায় এবং কাজী নজরুলের গানের শিষ্য রানু, ঢাকায় থাকতে তাঁর সাথেও বুদ্ধদেবের দেখা হয়েছিল মাত্র একবারই। দিলীপ কুমার রায়ই রানুকে বলেছিলেন, 'দুর্দান্ত ছেলে', আলাপ করিয়ে দেবেন। রানু জানতেন, পুরানা পল্টনে টিনের ঘরে বুদ্ধদেব বসু থাকেন, সেখানে জমজমাট আড্ডায় অংশ নেন মন্মথ ঘোষ, অনিল ভট্টাচার্য, অজিত দত্ত, সুকুমার বসু প্রমুখ- 'এই বিশেষ দলটি ঢাকার যুবক যুবতীদের কাছে আলোচনার বিষয়। একখানা হাত কবিতাটি লিখে বুদ্ধদেব আমাদের মনে অনেক রোমাঞ্চ যুগিয়েছেন, রমাকে আমন্ত্রণের পত্র পড়ে সকলেরই রমা হবার সাধ হয়েছে।'

বুদ্ধদেব বসু ১৯৩১-এর পর এবং ১৯৪৭-এর আগে দুবার এবং ১৯৪৭-এর পর মাত্র একবার ১৯৫০ সালে দুই দিনের জন্য ঢাকায় এসেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশেও আসেননি। 

বুদ্ধদেব বসু কলেজিয়েট স্কুলে ক্লাস সেভেন থেকে টেন পর্যন্ত পড়েছেন। আমার ছেলেবেলাতে স্কুলটিকে নিয়ে গর্ব করেছেন- 'কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আমলে থেকেই মর্যাদাবান। দাঁড়িয়ে আছে ঢাকার প্রধান নাগরিক অঞ্চলে সগৌরবে, গোল মোটা রোমক থামওলা উন্নত শির অট্টালিকা-পূর্বযুগে এটাই ছিল ঢাকা কলেজ। ভূগোল, বিজ্ঞান, মেকানিকস, ড্রইং শেখাবার জন্য আলাদা ঘর, চমৎকার জিমনেসিয়াম, কাঠের কাজ শেখাবার জন্য একটা টিনে ছাওয়া লম্বা শেড। মাঝে মাঝে ঘর বদল করতে হয় কলেজের ছাত্রদের মতো, আমি আমরা খুবই গর্বিত রোধ করি।' স্কুলজীবনে তাঁর স্মরণীয় স্মৃতি রবীন্দ্রনাথ দর্শন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ ঢাকা এসেছিলেন। মেট্রিকুলেশনের পর তিনি কলেজিয়েট স্কুলের ঠিক পেছনে 'ধবলবর্ণ' জগন্নাথ কলেজে আইন পড়েছেন।

বৃত্তি পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। বুদ্ধদেব ওয়ারীতেও থেকেছেন। কিন্তু পল্টন নিয়ে লিখেছেন, 'আজ যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর কোন জায়গা। আমি অনায়াসে উত্তর দিই: পুরানা পল্টন।' পল্টন নিয়ে তাঁর একটি মজার কবিতার দুটি লাইন :

আমি আছি বেজায় সুখে আমাদের এই পল্টনে
এমন পাড়া কেউ পাবে না বার্লিনে কি লন্ডনে।

বুদ্ধদেব বসু ও প্রতিভা বসু। ছবি: সংগৃহীত

১৯২৮ সালে বুদ্ধদেব বসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। স্মৃতিময় রমনা এবং বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর তিনি গদ্যে ও কবিতায় ধরে রেখেছেন। ৪৩ বছর পর তিনি শুনলেন- 'আর আজ শুনছি বিধ্বস্ত সেই বিদ্যাপীঠ। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। বুদ্ধদেব বসু ১৯৭১-এ লিখছেন 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২৮'।

আর আজ শুনছি সে সব রাস্তায় সাঁজোয়া বাহিনী
আর বন্দুক আর ধ্বংস আর উন্মত্ততা গুঁড়িয়ে
যায় হাজার হাজার ভবিষ্যৎ, আগুন জ্বলে
রক্ত রঙা প্রচণ্ড।
সত্যি? একি সত্যি হতে পারে? 
লম্বা করিডোর গম্ভীর, ঠান্ডা স্নিগ্ধ বইয়ের
গন্ধে ভরা লাইব্রেরি, কমনরুম শব্দমুখর
ফেনিল। ক্লাসে বসে কখনো আসেনি ঝিমুনি
কখনো কোনো সহপাঠিনীর চোখ চঞ্চল, আর
কখনো এক বিশাল স্তব্ধতার ফাঁকে ফাঁকে
কর্ডেলিয়ার অতি কোমল কণ্ঠস্বর চুইয়ে পড়ে।...
আর আজ শুনছি বিধ্বস্ত সেই বিদ্যাপীঠ। সব 
মিনার লুটিয়ে পড়ল মাটিতে, সব বই ভষ্মীভূত হয়তো,
প্রান্তর গুলি কবরের মতো হা করে আছে-
যৌবন আর স্বাধীন মন আর সুন্দর মহান প্রাচীনতাকে
গ্রাস করার জন্য।
উনিশ বছর বয়সের সে সময় তাঁর কানে কানে বলে যায় 'অতীত কখনো লুপ্ত হবে না।'

বুদ্ধদেব বসুর সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আধুনিকতার আন্দোলনের তিনিই ছিলেন প্রধান গুরু। বয়স তখন উনিশ-কুড়ি-একুশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই অশোক মিত্র (১৯১৭-১৯৯৯) বিখ্যাত ভারতীয় অর্থনীতিবিদ বুদ্ধদেব বসুকে যেমন দেখেছেন : 

'যত দিন ঢাকা ছিলাম, বুদ্ধদেব বিভোরতায়ই কেটেছে। উপরে যা বলেছি ঢাকা এবং বুদ্ধদেব উন্মাদনা, আমার স্মৃতিতে দুটো তাই একীভূত (এর আগের অনুচ্ছেদগুলোতে বুদ্ধদেব ও ঢাকা সম্পর্কে ঢের বন্দনা করেছেন তিনি তাঁর আপিলা-চাপিলা গ্রন্থে)। ভালো করে যখন জ্ঞান হলো, প্রগতি তত দিনে বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু উজ্জ্বলতার রেশটুকু পড়ে আছে ঢাকা শহরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে  প্রবিষ্ট হলাম সাহিত্যের বিশ্লেষণশৈলী শেখাতেন মন্মথ ঘোষ, অনলেন্দু বসু, ধনবিজ্ঞানকে প্রায় সাহিত্য করে নিয়ে বোঝাতেন পরিমল রায়। খুব ঘরোয়া পরিবেশ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মাস্টারমশাইয়ের সাথে সামাজিক সম্পর্কের এক অর্থে অদ্ভুত নিবিড়তা, সুতরাং ক্লাসের বাইরে সকাল-সন্ধ্যার ছুটির দিনজুড়ে আমাদের সম্মিলিত সাহিত্যলোচনা, যে আলোচনার অনেকটা জুড়ে বুদ্ধদেব বসু।'

নিজের কথা বুদ্ধদেব লিখলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখন ভর্তি হলাম, তখন থেকে আমার মধ্যে যেন নতুন জীবন এল।' তাঁদের প্রায় সম্পূর্ণ দলটি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং দুজন ছাড়া সকলে জগন্নাথ হলের সাথে সংযুক্ত। তাঁরা তখন হাতে লেখা প্রগতি বের করতেন। বুদ্ধদেবের আইএ পরীক্ষায় বৃত্তি নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর সিদ্ধান্ত হলো ছাপার হরফে প্রগতি বের হবে। ১০ টাকা করে ১০ জনের ১০০ টাকা চাঁদায় টায়েটুয়ে পত্রিকা বের করা সম্ভব- এত দিন বুদ্ধদেবের চাঁদা নিয়েই আশঙ্কা ছিল, কিন্তু বৃত্তি সে আশঙ্কা ঝেড়ে ফেলে দিল। 'দারুণ উত্তেজনা, জল্পনা, আলোচনা, কিছুদিনের পরম সুখকর পরিশ্রমের পর শেষটায় একদিন, আষাঢ়ের এক শুভদিনে পীত মলাটে ঊর্ধ্বমুখী নারীমুণ্ডের ছবি যুক্ত হয়ে সত্যি সত্যি একদিন ছাপার অক্ষরে প্রগতি বেরুলো।'

প্রগতির প্রকাশ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র হয়ে বুদ্ধদেব বসুর আত্মপ্রকাশ দুই-ই ঘটল একই সময়ে, একই মাসে-'আশ্চর্যরকম পরিপূর্ণ' হয়ে উঠল তাঁর জীবন। প্রগতির প্রথম সংখ্যার পরই ১০ জন উদারদাতা ছিটকে পড়লেন, রয়ে পেলেন কেবল দুজন। একসময় প্রগতি বের করার শখ মিটে গেল, মধ্যপথে প্রগতির গতি থেমে গেল। তত দিনে জীবনের চাকা মনের ওপর দাগ কাটতে শুরু করেছে।

প্রতিভা বসু

ঠিক শতবর্ষ আগে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা রানু সোমদের বনগ্রামের বাড়িটাকে যদি ঢাকা শহরের কেন্দ্র বিবেচনা করা যায় (সে বাড়িতে বৈজ্ঞানিক সত্যেন বসু যেমন গিয়েছেন, তেমনি তারুণ্য ডগমগ গানের কবি কাজী নজরুল ইসলামও নিত্য হাজিরা দিতেন, দিলীপ কুমার রায়ও; তাহলে এ বাড়িতে সংস্কৃতির কেন্দ্র তো বলা যায়ই), তাহলে সেখান থেকে পাঁচ মাইল দূরে মণিপুর ফার্মের চাকুরে ছিলেন রানুর বাবা আশুতোষ সোম। ঢাকাবাসী যাদের এখন বয়স ষাটের কোঠায়, ফার্মগেটের উত্তর থেকে তেজগাঁও এয়ারপোর্ট পর্যন্ত বিস্তৃত মণিপুর ফার্ম তারাও দেখেছেন। তখনকার দু-একটি ছবি নেহায়েতই বালিকা রানুর (রানুর জন্ম ১৫ মার্চ ১৯১৫; শতবর্ষ আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টির বছর তিনি ছয় ছুঁয়েছেন) স্মৃতিতে আটকে আছে: একটা হচ্ছে বুকের ওপর উঠিয়ে মণিপুরী শাড়ি পরা আর গলাবন্ধ পুরাহাত ব্লাউজ গায়ে একটি মেয়ে সকালবেলা এসে বাশের চোংয়ে মেপে মেপে আমাদের বাড়িতে দুধ দিচ্ছে; আর একটা হচ্ছে সারেং পানি নামের এক অফিসারের বাড়িতে জাল দিয়ে ঘেরা দারুচিনিগাছের ছাল বড় বড় ছেলেরা চুরি করে আনছে এবং রানুকেও দিচ্ছে। ইংরেজ সাহেবরা নিশ্চয়ই তাদের খামারে কাজ করার জন্য মণিপুর থেকে শ্রমিক এখানে নিয়ে এসেছে। বালিকা রানুর পরিণত বয়সের বর্ণনায় ঢাকার যে দৃশ্য পেয়েছি, এমনটা আর কারও লেখাতে আসেনি।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে মগ্ন ছাত্রী প্রতিভা বসু। ছবি: সংগৃহীত

কাজী নজরুল ইসলাম

রানুর জন্মও ঢাকার কাছাকাছি, বিক্রমপুরের হাসাড়া গ্রামে। তাঁর জন্মের পরপরই যখন তাঁর মা সরযুবালা মৃত্যুর ক্ষণ গুনছেন, স্বনামধন্য শ্রীশ কবিরাজ তখন গণিকালয়ে মৌজ করছেন, সেকালে বিশিষ্টজনদের অনেকটা সময় গণিকালয়েই কাটত। বিভিন্ন ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে কবিরাজকে খুঁজে বের করে আনা হলেও সদ্য সন্তান জন্ম দেওয়া নারীকে বাঁচানো যায়নি। ঢাকায় আমাদের সেই বাড়িটা সুন্দর ছিল। একতলা বাড়ি চার-পাঁচটা ঘরবারান্দা বাগান। বাগান মানে অনেকটা জমি, আমগাছ আছে, কাঁঠালগাছ আছে, লিচুগাছ আছে। আমি আর বাবা সামনের দিকে বাগান করেছিলাম, পিছনের দিকে মা খেত করেছিল।

রানু তাঁর মামাকে নিয়ে একটি দুর্দান্ত গল্প শুনিয়েছেন: তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাঁর এক প্রাণের বন্ধু জানতে পেরেছেন পরীক্ষক টার্নার সাহেবের কাছে তিনি ফেল করেছেন। তখন ঢাকা ও জগন্নাথ কলেজের বিশিষ্ট শিক্ষকেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াতেন। বন্ধুকে উদ্ধার করার জন্য তাঁর নাম, নম্বর নিয়ে টার্নার সাহেব বিশাল দোতলা বাড়ির কোন রুমে পরীক্ষার খাতা দেখেন, সব জেনে 'অধিক রাত্রে পাইপ বেয়ে দোতলায় উঠে যান, শিক ছাড়া জানালা দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে টর্চ দিয়ে খুঁজে খুঁজে খাতার বান্ডিল বের করে নম্বর মিলিয়ে ফেল করা নম্বরকে পাস নম্বর করে রেখে আসেন। বন্ধু পাস করে যায়। এফ সি টার্নার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ানের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিখ্যাত যত গানের ওস্তাদদের প্রিয় ছাত্রী রানু সোমকে হিম মাস্টার্স ভয়েসের জন্য গান রেকর্ড করতে কলকাতা যেতে হয়নি। টিকাটুলিতে সুশুংয়ের রাজার বাড়িতে রেকর্ডিংয়ের যন্ত্রপাতি ফিট করা হয়েছিল, মাইকহীন সেই দিনগুলোতে (ধুতরা ফুলের মতো দেখতে মস্ত বড় এক চুঙ্গির ভেতর মুখ দিয়ে গান গাইতে হতো) তিনি তিনটি গান রেকর্ড করেছিলেন।

দিলীপ কুমার রায়

'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী বিপ্লবী লীলা নাগ ঢাকায় মেয়েদের জন্য স্কুল খুলেছেন, লাঠিখেলা, ছোরাখেলার আখড়া করেছেন, অনাথ নারীদের জন্য সমিতি বানিয়েছেন। একদিন সেই লীলাদি গাড়ি করে এসে আমাদের বাড়ির দরজায় থামলেন'- তিনি রানুক নিতে এসেছেন। এটা ছিল তাঁর জন্য কল্পনাতীত সৌভাগ্য, রানু তাঁর গাড়িতে গিয়ে উঠলেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলায় যাঁদের ফাঁসি হয়েছে, তা রদ করতে মামলা চালানোর জন্য গান শুনিয়ে টাকা তোলার দায়িত্ব লীলা নাগ নিয়েছেন। রানুকে নিয়ে নবাবদের কোনো মঞ্জিলে মেঝেতে পাতা মখমলের গদিতে বসানো হলো। তিনি তাঁর সাথে আনা হারমোনিয়াম বাজিয়ে একটার পর একটা গান গেয়ে ঘেমে উঠলেন। চোখ মুছে গান শুনতে শুনতে বেগমসাহেবা একসময় চোখ খুলে বললেন, 'কেয়াবাৎ কেয়াবাৎ'। তিনি লীনা নাগকে কত টাকা দিয়েছিলেন, তা রানুর জানার কথা নয়, তবে উপঢৌকন হিসেবে ঝুড়িভর্তি আম ও লিচু যে দিয়েছেন, তার ভাগ তিনি পেয়েছেন।

ঠুংরিতে বিশেষ পারদর্শী প্রতিবেশী ওস্তাদ মেহেদী হাসানের কথা তিনি লিখেছেন- 'সংগীতে শিল্পের এমন একটি স্তরে তিনি বিরাজ করতেন, সেখানে অর্থবিত্ত তাকে ছুঁতে পারত না। মেহেদীরাঙা দাড়ির ফাঁকে তার হাসিটি সব সময়েই অমলিন। আমাকে গান শেখানোটা বোধ হয় তিনি ধর্মজ্ঞান করতেন। যখনই সময় পেতেন হাজির এসে, বারান্দায় দাঁড়িয়ে মিষ্টি করে ডাকতেন "খোকিই" (রবীন্দ্রনাথের সেই কাবুলিওয়ালার খুকি ডাকের মতনই)।'

বলধার জমিদার বাড়ির কথা তিনি যা শুনেছেন, তাই উপস্থাপন করলেন- 'জমিদারকে কেউ চর্মচক্ষে দেখেনি, জেলখানার মতো উঁচু প্রাচীর ডিঙিয়ে ভেতরে কী হচ্ছে, তা দেখার সুযোগ তো নেই- তবুও সবাই জানে, জমিদার বাড়ির ভেতরেই দেহোপজীবীনীদের জন্য আলাদা আলাদা কটেজ করে দিয়েছেন তিনি। মাইনে দিয়ে রাখেন, যেদিন যার কাছে খুশি তার কাছে যান। বাড়ির ভেতরে নন্দন কাননের মতো কানন করেছেন, মধ্যে মধ্যে সেই কাননে উৎসবের বাজনা শোনা যায়, আলোর রোশনাই দেয়াল টপকিয়ে রাস্তায় নামে।' একদিন সত্যিই ওস্তাদ ভোলানাথ মহারাজের অনুরোধে আশুতোষ সোম রানুকে নিয়ে সেই রাজবাড়িতে গেলেন। রানু সাদামাটা চেহারার জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রীকে গান শোনালেন, অংশ নিলেন মিষ্টান্নের বিশাল ভোজে।

নজরুল সেদিন তাঁদের বাড়িতে এলেন, তাঁকে দেখে বাড়ির পরিচারিকা বলে ওঠে- 'ও মা! এ যে একেবারে কালো কৃষ্ণ গো', রানুর পিসিমা নজরুলকে বরাবরই কালো কৃষ্ণ বলে ডাকতেন।

লীলা নাগ

একবার রানুদের বাড়িতে গান আর আবৃত্তির আসর ভাঙতে একটু দেরিই হলো। সবাই চলে গেলে গৃহকর্ত্রী সরযুবালা সোম নজরুলকে খেতে দিলেন। তাতে রাত দশটা বেজে গেল। রানুর বাবা সাইকেলে চড়ে নজরুলের জন্য একটি ঘোড়ার গাড়ি ডেকে আনবেন ঠিক করলেন। নজরুল বললেন, তাই হয় নাকি, তার তো আর রানুর মতো ভূতের ভয় নেই যে নির্জন রাস্তায় এগোতে পারবেন না।

গানের সুর কণ্ঠে নিয়ে নজরুল বেরিয়ে গেলেন, কিন্তু সরযুবালার মনে আশঙ্কা- পাড়ার গুন্ডাপান্ডা ছেলেগুলো তাঁদের বাড়িটা দেখে গেছে এবং সারা দিন সলাপরামর্শ করেছে। নজরুল তাঁদের বাড়ি থেকে বেরোতেই পাশের এক বাড়ি থেকে কটা ছেলে বেরোল, তার আশঙ্কা নজরুলের একট ক্ষতি তারা করবেই।

বনগ্রামের মোড় পেরিয়ে সম্ভবত ঠাটারিবাজার মোড়ে পৌঁছাতেই সাত-আটজন যুবক লাঠি দিয়ে পেছন থেকে সজোরে আঘাত করতে করতে বলে, 'দিলীপ রায়ের টাক মাথাটা ফাটাতে পারিনি, এবার তোর বাবরিচুলের মাথাটা আর আস্ত রাখব না।'

নজরুল মার খেয়েছে, কিন্তু একাই লড়েছেন। যে লাঠি তাঁকে আঘাত করেছে, সে লাঠি হাতে নিয়েই এ সময় আশুতোষ সোম দৌড়ে এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরে বললেন, 'কোথায় যাচ্ছেন? আমার সাথে চলুন।'

এ অবস্থায় নজরুল হেসেই তাঁকে বললেন, 'আপনার বাড়ি যাই বলে ওরা আমাকে মেরেছে, রানুকে নিয়ে অনেক কুৎসিত কথা বলেছে, এখন যদি আবার ওখানে যাই, এই শূকর সন্তানগুলো তো বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেবে। আপনি কেন এলেন? কী সাহসে এলেন? ওরা কোথায় লুকিয়ে আছে ঠিক নেই, আপনাকে খুন করে ফেলবে ওরা। আমি ওদের সঙ্গে বুঝতে পারব, আপনি পারবেন না।'

তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধেই বনগ্রামের সেই বাসায় এনে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। 'মা লণ্ঠন কাছে নিয়ে কোথাও জখম হয়েছে কি না, দেখার জন্য ঝুঁকে পড়েই শিহরিত হলেন। হাতে, পায়ে, মাথায়, পিঠে সর্বত্র গভীর আঘাতের চিহ্ন মোটা হয়ে রক্ত জমে ফুলে উঠেছে। কী করে যে আমরা সে রাতটা কাটিয়েছিলাম, আমরাই জানি। মা ওকে একা হোমিওপ্যাথি ওষুধ খাইয়ে দিলেন, আমাদের পরিচালিকা পুনার মা, যে ওকে কালো কৃষ্ণ বলেছিল, সে চোখ মুছতে মুছতে সমস্ত আহত জায়গায় নারকেল তেল দিয়ে ভিজিয়ে দিল। মা বাতাস করতে লাগলেন, আমি আর বাবা প্রায় অচেতনের মতো মেঝেতে বসে রইলাম। হাসিঠাট্টা করে নজরুল তাদের মন হালকা করার অনেক চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তা  যে কেবল রানুর অশ্রুপাতেরই প্ররোচনা দিয়েছে।'

পাদটীকা

ঢাকার মঞ্চে নাটক করেছেন রানু সোম। ঐতিহ্য ভেঙে নারী চরিত্রে নারীকেই অভিনয়ে নামিয়েছেন। নিজে তো আছেনই। রক্ষণশীল গোষ্ঠী ভীষণ চটে গিয়ে গালমন্দ শুরু করল। কুৎসা রটনা চলল সমানে। জীবনের জলছবিতে সেকালে রানু, পরবর্তীকালে বুদ্ধদেব বসুর স্ত্রী প্রতিভা বসু লিখলেন :

'কৌতূহলে ফেটে পড়ল শহরের লোক, আশাতিরিক্তভাবে সমস্ত টিকেট বিক্রি হয়ে গেল। তারপর দুরু দুরু বক্ষে স্ত্রী-পুরুষে মিলে নাটক করার প্রথম সোপানটি অতিক্রম করলাম আমরা।' নিন্দার বাণ ডাকল রানু সোমের নামে। কলকাতায় যেমন একটা কেচ্ছার কাগজ বেরোত শনিবারের চিঠি, ঢাকায়ও একটা কাগজ বেরোত, যার নাম রবিবারের লাঠি। সেই রবিবারের লাঠির পাতায় পাতায় রানু সোম কত দুশ্চরিত্র, তা বিবরণ বেরিয়ে রাতারাতি কাগজের কাটতি বেড়ে গেল তিন গুণ।

Related Topics

টপ নিউজ

বুদ্ধদেব বসু / প্রতিভা বসু / ঢাকা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • মাস্ক ‘বদ্ধ উন্মাদ' হয়ে গেছেন: ট্রাম্প; 'আমাকে ছাড়া ট্রাম্প জিততে পারতেন না': মাস্ক
  • চীনের কাছ থেকে এবার স্টেলথ ফাইটার পাচ্ছে পাকিস্তান
  • পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বন্যার ফলে যেভাবে সৃষ্টি হয়েছিল ভূমধ্যসাগর
  • নির্বাচন আয়োজনের জন্য আগামী ঈদুল ফিতরের পর এক মাস সময় যথেষ্ট: বদিউল আলম মজুমদার
  • অনিরাময়যোগ্য রোগী যারা, কেমন কাটবে তাদের ঈদ
  • কোভিড-১৯: আবারও জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মাস্ক পরার পরামর্শ

Related News

  • অন্য জেলা থেকে ঢাকায় কাঁচা চামড়া পরিবহন ঈদের দিনসহ ১০ দিন নিষিদ্ধ
  • বৈরী আবহাওয়া: ঢাকামুখী চার ফ্লাইট শাহ আমানতে জরুরি অবতরণ
  • ছিনতাইকারী সন্দেহে রাজধানীর দারুসসালামে ২ যুবককে পিটিয়ে হত্যা
  • রাজধানীতে আজ একাধিক কর্মসূচি, এড়িয়ে চলবেন যেসব সড়ক 
  • ঢাকাসহ ৯ জেলায় বজ্রঝড়ের সতর্কবার্তা: বিএমডি

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

মাস্ক ‘বদ্ধ উন্মাদ' হয়ে গেছেন: ট্রাম্প; 'আমাকে ছাড়া ট্রাম্প জিততে পারতেন না': মাস্ক

2
আন্তর্জাতিক

চীনের কাছ থেকে এবার স্টেলথ ফাইটার পাচ্ছে পাকিস্তান

3
আন্তর্জাতিক

পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বন্যার ফলে যেভাবে সৃষ্টি হয়েছিল ভূমধ্যসাগর

4
বাংলাদেশ

নির্বাচন আয়োজনের জন্য আগামী ঈদুল ফিতরের পর এক মাস সময় যথেষ্ট: বদিউল আলম মজুমদার

5
ফিচার

অনিরাময়যোগ্য রোগী যারা, কেমন কাটবে তাদের ঈদ

6
বাংলাদেশ

কোভিড-১৯: আবারও জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মাস্ক পরার পরামর্শ

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net