অনিরাময়যোগ্য রোগী যারা, কেমন কাটবে তাদের ঈদ

কিছু মৃত্যু আসে নিঃশব্দে, গুটি গুটি পায়ে। সঙ্গে আনে জ্বর, ব্যথা, হাঁচি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, খাবার গ্রহণের অক্ষমতা। দিন গড়াতে গড়াতে শরীর ভেঙে পড়ে, মন হেরে যায় শরীরের আগেই। এমনই অনিরাময়যোগ্য ও জীবন সীমিতকারী এক রোগ ক্যান্সার। শুরু করি আয়ানের বাবাকে দিয়ে।
চার বছর বয়সি আয়ান বোঝে না, কেন তার বাবা সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকেন, কথা বলেন না, বাজারে যান না। হঠাৎ হঠাৎ বাবার বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বলে ওঠে—'আমাকে বাজারে নিয়ে যাও, মিমি কিনে দাও।' আয়ানের বাবা শরিফুল ইসলামের বয়স আটচল্লিশ। আড়াই মাস আগে তার শরীরে ধরা পড়ে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার। রোগ ধরা পড়ার পর থেকেই দ্রুত অবনতি ঘটছে। চিকিৎসকরা বলছেন, বেলা শেষের দিকে…
তিন ভাইবোনের মধ্যে শরিফুল সবার বড়। পড়াশোনায় ভালো ছিলেন, গণিতে লেটার মার্কসহ এসএসসিতে ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছিলেন। পরে নেত্রকোনার বারহাট্টা কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর আর পড়তে পারেননি। বারহাট্টা বাজারে একটি রেডিমেড গার্মেন্টসের দোকান চালান তিনি।
তাদের ভাইবোনদের সম্পর্ক খুবই ভালো, এখনো সবাই এক বাড়িতে থাকেন—প্রত্যেকের জন্য আলাদা ঘর। শরিফুলের বাবা মজিবুল বাশার খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলে ৪০ বছর চাকরি করেছেন। সত্তর ছুঁইছুঁই মানুষটি এখনও বেশ শক্তপোক্ত। শরিফুলও বেশ লম্বা-ছিপছিপে, পোক্ত গড়নের। কিন্তু গত আড়াই মাসে ওজন কমে গেছে প্রায় ২০ কেজি।
মজিবুল বাশারের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে হলেও সংসার পেতেছিলেন শ্বশুরবাড়ির এলাকা বারহাট্টায়। তার শ্বশুর ছিলেন এলাকার প্রভাবশালী ও সম্মানিত ব্যক্তি। নাতিদের ভীষণ ভালোবাসতেন, না দেখে থাকতে পারতেন না। শরিফুল ছিলেন তার প্রথম নাতি, তাই আদরও ছিল অন্য সবার চেয়ে বেশি। মজিবুল বাশার বলেন, 'শরিফুলের নানা বেঁচে থাকলে, নাতির এ অবস্থা দেখে হয়তো পাগলই হয়ে যেতেন।'
রোগ ধরা পড়ার পর থেকেই একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে শরিফুলকে। ছোটবেলায় তিনি ছিলেন চঞ্চল, খেলাধুলায় আগ্রহী, বিশেষ করে ফুটবলে। খাওয়াদাওয়াতেও ছিল আগ্রহ। বিয়ে করেছিলেন পাশের গ্রামে। তার বিয়েতে আমন্ত্রিত হয়েছিল ৪০০-৫০০ জন। বেশ ধুমধাম হয়েছিল।। নানাবাড়ির এলাকা বলে সবাই তাকে ভাগ্নে হিসেবে জানে। শরিফুলের অসুস্থতার খবরে তাই অনেকেই মুষড়ে পড়েছেন। মজিবুল বাশার বলেন, 'বাড়ি থেকে বের হলেই অন্তত একশজনকে উত্তর দিতে হয়—দুলাভাই কেমন আছে, ভাগ্নে কেমন আছে।'
গত কোরবানির ঈদেও নিজে হাটে গিয়ে এক লাখ ২০ হাজার টাকায় গরু কিনেছিলেন শরিফুল। চার-পাঁচ ঘণ্টা হেঁটে হেঁটে গরু বাছাই করেছিলেন। এবার তিনি বিছানা থেকেও উঠতে পারছেন না।
বাবা-মা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন নিয়ে ছিল তার এক প্রাণবন্ত জগত। আয়ান জন্ম নেওয়ার পর সেটি আরও রঙিন হয়ে ওঠে। ছেলেকে ছাড়া কিছুই ভাবতেন না তিনি, আয়ানও বাবাকে ছাড়া কিছুই বোঝে না। এখনো আয়ানকে চোখের আড়াল করতে চান না। বাবাকে বলেছেন, 'আমার যদি কিছু হয়ে যায়, আয়ানকে দেখে রেখো।'
কাঁদতে কাঁদতে মজিবুল বাশার বলেন, 'তুই কিচ্ছু চিন্তা করিস না, যতদিন আমরা আছি আয়ানের কোনো অসুবিধা হবে না।' হাসপাতালে শরিফুলের সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী, বাবা-মা, বোনসহ মোট আটজন। রাতে মা বা বোন থাকেন, অন্যরা কেউ নারায়ণগঞ্জ, কেউ নতুনবাজারে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে রাত কাটান। যাওয়া-আসায়ও খরচ অনেক। দুপুরের খাবার হোটেল থেকে কিনে খান।
আড়াই মাস ধরে কাঁদছে শরিফুলের পরিবার। সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা আয়ানকে নিয়ে। আয়ানের মা ভাবেন, একা হাতে সন্তানকে ভালোভাবে বড় করে তুলতে পারবেন তো?
চিকিৎসকের কাছ থেকে ১৩ দিনের ছুটি নিয়েছেন শরিফুল। আজ ১ জুন, বাড়ি যাচ্ছেন ঈদ করতে। সব ওষুধপত্র বুঝিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকরা, দিয়েছেন জরুরি ফোন নম্বর। বাড়ি যাওয়ার খবরে আয়ান খুশিতে আটখানা। মজিবুল বাশার বলেন, 'আমাদের বাড়িতে অনেক গাছপালা, একটি পুকুরও আছে, বিরাট টানা বারান্দা। আত্মীয়স্বজনরা আসবে-যাবে, আশা করি শরিফুলের মনটা একটু হলেও ভালো হবে।'
সাত হাজার টাকা ভাড়ায় অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করা হয়। রাতে ফোন করে মজিবুল বাশার জানালেন, ভালোয় ভালোয় তারা পৌঁছে গেছেন। শরিফুল নিজ হাতে ভাত খেয়েছেন। বাড়িতে গিয়ে তার ভালো লাগছে।

চলতি বছরের শুরুতে প্রকাশিত বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক বিএসএমএমইউ)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে প্রতি লাখে ক্যান্সারে আক্রান্ত ১০৬ জন এবং প্রতিবছর নতুন করে যুক্ত হন আরও ৫৩ জন। সে হিসাবে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১৩ থেকে ১৫ লাখের মধ্যে, আর প্রতি বছর নতুন করে যুক্ত হচ্ছে আরও দুই লাখ রোগী। দেশে মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশ ক্যান্সারে ঘটে। এ অবস্থায় কিছু হাসপাতালে শেষ বেলার যন্ত্রণার উপশমে কাজ করে এমন প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় একেবারেই নগণ্য। বর্তমানে প্রায় আট লাখ রোগী রয়েছেন, যারা শেষ বেলার প্রহর গুনছেন।
ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। এতে আক্রান্ত রোগীরা যেমন ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান, তেমনি পরিবারগুলো চিকিৎসা ব্যয়ের ভারে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। বলা যাক জাহিদুর রহমানের কথা।
টানা এক মাস ধরে হাসপাতালে রয়েছেন জাহিদুর রহমানের যমজ ভাই শহিদ। তারা ছয় ভাইবোন। শহিদ ও জাহিদ জমজ। শহিদ যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে, তখনই তাদের বাবা মারা যান। পড়াশোনায় মোটামুটি হলেও খেলাধুলায় তারা ভালো ছিল। বিলে ঠেলা জাল দিয়ে মাছ ধরত, চাঁদনি রাতে বসত গানের আসর, আর বিকেলে ফুটবল ছাড়া তাদের দেখা যেত না। মাকে সারাদিনের গল্প না শুনিয়ে ঘুমাত না তারা।
বাবা ছিলেন কৃষক। নিজের জমি ছিল না, অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করতেন। কোনো সঞ্চয় রেখে যেতে পারেননি। ঘরের ভিটেমাটিও ছিল কাঁচা। বাবার মৃত্যুর পর মা কষ্টেসৃষ্টে সন্তানদের বড় করতে থাকেন। একসময় বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা হয়ে যান, দুই বোনেরও বিয়ে হয়। তখন বাড়িতে থাকে শহিদ-জাহিদ ও তাদের ছোট বোন।
এসএসসি পাস করে শহিদ ও জাহিদ ঢাকায় আসে। বাড়ি গাইবান্ধা সদরে। এলাকার এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে মহাখালির এক রেস্তোরাঁয় কাজ নেয় দুজনেই। প্রথমদিকে কয়েক মাস থাকা-খাওয়া চুক্তিতে কাজ করে, পরে দক্ষ হয়ে ওঠার পর দুজনের জন্য বেতন নির্ধারিত হয়। এতে সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা আসে। ছুটি খুব একটা পেত না, তবে যেদিন পেত, সেদিন ঘুরতে যেত সংসদ ভবন, হাতিরঝিল বা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। এভাবে কেটে যায় সাতটি বছর।
শহিদের তখন স্বপ্ন—একটি পাকা ভিটের ঘর হবে। কিন্তু টাকা জমে না সহজে। ঢাকায় নিজেদের খরচ, বাড়িতে মায়ের সংসার, পুরনো ধারদেনা শোধ—সব মিলিয়ে হাতে কিছুই থাকে না। তবু শহিদের স্বপ্ন দেখা চলতেই থাকে।
এরপর এল ২০২৪ সাল। শহিদের পেটে নানা সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। মাস পার হয়ে যায়, কিন্তু সমস্যা সারে না। ডাক্তার বেশ কিছু পরীক্ষার কথা বলেন। এক পর্যায়ে শহিদের কোলোরেক্টাল ক্যান্সার ধরা পড়ে। পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়ে।
এরপর শুরু হয় সিটিস্ক্যান, অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপির ধকল। কিন্তু উপসর্গগুলো বারবার ফিরে আসে। মাসের অধিকাংশ সময়ই হাসপাতালে থাকতে হয় তাকে। এবারও টানা এক মাস ধরে আছেন হাসপাতালে। তার সঙ্গে আছেন মা ও জাহিদসহ আরও দুজন। সবার মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। শহিদের ওজন ৭৫ কেজি থেকে নেমে এসেছে ৫২ কেজিতে। কথা বলতেও কষ্ট হয় তার, গলা দিয়ে কেবল পাখির মতো চিঁ-চিঁ শব্দ বের হয়।
জাহিদের কাছে জানলাম, এ পর্যন্ত চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে। ঢাকা থেকে বাড়ি পর্যন্ত শুধু অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াই ১৩ হাজার টাকা। ছোট বোন একা বাড়িতে থাকে, নিজে রান্না করে খায়। শহিদ অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তাদের বাড়িতে আর কোনো উৎসবের আমেজ নেই।
তবে এবার শহিদকে বাড়ি নিয়ে যেতে চান তার মা—হয়তো এটিই শহিদের শেষ ঈদ! মা চান, ছেলে তার 'শেষ সময়টা' কাটাক বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের মাঝে।
শহিদের মা কাঁদতেই থাকেন। সে কান্না সহ্য করা যায় না। যেই উঠতে যাই, অমনি শহিদ আমার হাত আরও শক্ত করে ধরে। আর খুব ক্ষীণ স্বরে বলে ওঠে—
'ভাই, আমি যে একটা ঘর তুলতে চাইছিলাম!'
জামিল আহমেদ কণ্ঠনালির ক্যান্সারে আক্রান্ত। শহিদের পাশের বেডে ভর্তি তিনি। পেশায় ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। দুই ছেলে, এক মেয়েকে নিয়ে মোটামুটি স্বচ্ছল সংসার ছিল তার। গ্রামের বাড়িতে পাকা ঘর আছে। ঢাকায় ও চাঁদপুরে ছেলেদের বাড়িতেও বছরজুড়ে মাসখানেক করে সময় কাটান।
অতিথি আপ্যায়ন পছন্দ করতেন, বাজার করা ছিল আরেকটি প্রিয় কাজ। চেষ্টার কমতি রাখতেন না ঘরে পর্যাপ্ত খাবার রাখতে। অফিসের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাটকে অভিনয় করতেন। বাসায় ফিরে টিভিতে সংবাদ দেখতেন নিয়মিত, আন্তর্জাতিক খবরে আগ্রহ ছিল তার বেশি। ফুটবলের বিশ্বকাপ খেলা মিস করতেন না কখনো; সমর্থন করতেন আর্জেন্টিনাকে।

তার বড় ছেলে আনিসুজ্জামান রোহান বললেন, 'প্রথম যখন অসুখের খবরটা শুনলাম, তখন মানতে সত্যিই কষ্ট হয়েছিল। আমার বাবা খুবই পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করেছেন, কোনো বদঅভ্যাস ছিল না। অফিসের বাইরের সময়টা পুরোপুরি পরিবারকে দিতেন।
'এ খবরটা জানার পর থেকেই আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি, বাবার দিকে তাকাতেও পর্যন্ত পারি না—ওনাকে খুব বিষণ্ণ দেখায়।'
গত বছর পুরো পরিবার মিলে ঈদ করেছিলেন চাঁদপুরে ছোট ভাইয়ের বাসায়। এবার সে সুযোগ নেই। রোহান এখন বাবাকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। শেষ একটা চেষ্টা করেই দেখতে চান।
উন্নত দেশগুলোতে ক্যান্সার চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীদের আরও চার ধরনের সহযোগিতার সঙ্গে যুক্ত রাখা হয়। প্রথমটি সামাজিক কর্মকাণ্ড—যেখানে তারা কোনো দলে যুক্ত হয়ে গল্প করেন, দিবসভিত্তিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেন কিংবা খেলাধুলায় অংশ নেন। এতে তাদের মানসিক অবস্থা সুসংহত হয়।
দ্বিতীয়টি শরীরচর্চা—যেমন হাঁটা, যোগব্যায়াম, সাঁতার ইত্যাদি। এসবের মাধ্যমে ব্যথা সহনশীলতা ও শক্তির মাত্রা বাড়ানো যায়। তৃতীয়টি আধ্যাত্মিক চর্চা—যার মাধ্যমে ধ্যান বা প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটিয়ে উদ্বেগ কমানো যায় এবং জীবনকে অর্থবোধক করে তোলার উপায় খুঁজে পাওয়া যায়।
চতুর্থটি মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা—যার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা রোগীকে নেতিবাচক জীবনবোধ থেকে বের করে আনে। উন্নত দেশে প্রতিটি বিষয়েই আলাদা বিশেষজ্ঞ থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে এ কাজগুলো ডাক্তাররাই করে থাকেন, নার্সরা তাদের সহায়তা করেন।
আমাদের দেশে 'কোয়ালিটি অব ডেথ' বা মৃত্যুর গুণমান নিয়ে তেমন কোনো চিন্তা-ভাবনা বা উদ্যোগ নেই। অথচ এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয়—যা রোগীকেই কেন্দ্র করে বিবেচনা করা উচিত।
একজন রোগী না চাইলে তার অঙ্গ স্পর্শ করা যাবে না, ওষুধ খেতে না চাইলে তাকে জোর করা যাবে না—চিকিৎসাবিজ্ঞানের নীতি এতটাই বিস্তৃত। কিন্তু আমাদের দেশে শেষ বেলার রোগীদের নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগই দেওয়া হয় না। পরিবারের সদস্য কিংবা চিকিৎসকরাই সিদ্ধান্ত নেন।
অনেক রোগীর আর্থিক সামর্থ্য নেই, তবু ব্যয়বহুল চিকিৎসাপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাকে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয়। এটি একটি গুরুতর নীতিগত লঙ্ঘন।
আলোচনার মাধ্যমে, পরিস্থিতি বুঝে নিয়ে, প্রয়োজনীয় ও সহনীয় সমন্বিত এক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণের মধ্য দিয়েই মৃত্যুর গুণমান নির্ধারিত হওয়া উচিত। ২০১৫ সালে দি ইকোনমিস্ট বিশ্বের ৮০টি দেশে জরিপ চালিয়ে 'কোয়ালিটি অব ডেথ ইনডেক্স' প্রকাশ করে। তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৯ নম্বরে।
এতদূর পর্যন্ত উল্লিখিত তথ্য থেকেই স্পষ্ট যে, আমাদের দেশে অনিরাময়যোগ্য রোগীর সংখ্যা অনেক। কিন্তু তাদের মৃত্যুর অভিজ্ঞতাকে সম্মানজনক ও কষ্টমুক্ত করতে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উদাসীনতা বিপজ্জনক পর্যায়ের।
ফলে, এ রোগীরা কষ্টদায়ক ও অসম্মানজনক মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান, পরিবার হয় নিঃস্ব, শিশুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, পরিবারটি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে, এখনই উদ্যোগ নিতে হবে—সরকারি ও বেসরকারি দুই ক্ষেত্র থেকেই পরিকল্পনা ও সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন।
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে হাসপাতাল ও রোগীর আসল নাম প্রকাশ করা হলো না।
ছবি: সালেহ শফিক