Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
December 28, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, DECEMBER 28, 2025
কৃষ্ণগহ্বরের বুকের ভেতর

ইজেল

উচ্ছ্বাস তৌসিফ
19 October, 2021, 02:45 pm
Last modified: 19 October, 2021, 02:54 pm

Related News

  • শুরু হয়েছে নতুন প্রতিযোগিতা—শেষ পর্যন্ত কি শুধু বিলিয়নিয়ারদের দখলেই চলে যাবে গোটা মহাকাশ?
  • প্রথমবারের মতো হুইলচেয়ারে বসে মহাকাশ ঘুরে এলেন জার্মানির প্রকৌশলী
  • মহাকাশের সবচেয়ে পুরোনো স্যাটেলাইটগুলোকে কি বাঁচানো উচিত?
  • আমরা কি এক কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে বাস করছি?
  • মহাকাশে ডেটা সেন্টার? জেফ বেজোস বলছেন সম্ভব

কৃষ্ণগহ্বরের বুকের ভেতর

বিজ্ঞানীদের ধারণা, কৃষ্ণগহ্বরের কেন্দ্রে যে সিঙ্গুলারিটি বা অনন্যতা, একই রকম অনন্যতা ছিল বিগ ব্যাঙয়ের সময়েও। একটি বিন্দুতে ঘন হয়ে ছিল মহাবিশ্বের সব ভর-শক্তি-স্থান-কাল—সব। কী হয়েছিল তখন? এ রহস্য সমাধান করতে হলে লাগবে সবকিছুর তত্ত্ব।
উচ্ছ্বাস তৌসিফ
19 October, 2021, 02:45 pm
Last modified: 19 October, 2021, 02:54 pm

২০২০ সাল। পদার্থবিজ্ঞান নোবেল কমিটি ঘোষণা দিল, এ বছর পুরস্কার দেওয়া হলো কৃষ্ণগহ্বর যে সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের এক শক্তিশালী অনুমান, তা আবিষ্কারের জন্য। পুরো বিজ্ঞানদুনিয়ায় বয়ে গেল তীব্র আনন্দের ঢেউ। জলোচ্ছ্বাস আবারও ভাসিয়ে নিয়ে গেল বিজ্ঞানীদের।

আবারও—আগেরবার হয়েছে বছরখানেক আগে। প্রথমবারের মতো মানুষ কৃষ্ণগহ্বরের ছবি তুলে ফেলেছে। সত্যি সত্যি ছবি! যদিও ছবিটা ইভেন্ট হরাইজন বা ঘটনা দিগন্তের, কিন্তু ওই দিগন্ত পেরোলেই তো পদার্থবিজ্ঞানীদের সেই পরম আরাধ্য। কৃষ্ণগহ্বর। সিঙ্গুলারিটি বা অনন্যতা যার বুকের ভেতরে। তীব্র মহাকর্ষ যাকে পরিণত করেছে ভয়ংকর এক সর্বগ্রাসী দানবে। এই দানবের কেন্দ্রে, যেখানে অনন্যতা, সেখানে ভেঙে পড়ে মানবসভ্যতার জানা সব জ্ঞান। মুখ থুবড়ে পড়ে পদার্থবিজ্ঞানীদের দুই শ বছরের বিজ্ঞানচর্চা। খেই হারিয়ে ফেলে সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তত্ত্ব—সাধারণ আপেক্ষিকতা।

আরেকটু পেছনে ফিরে যান পৃথিবীর সব বিজ্ঞানী মনে মনে। এই তো, অল্প কিছুদিন আগে মারা গেছেন স্টিফেন হকিং। অন্যতম কৃষ্ণগহ্বর-সাধক বিজ্ঞানী। অনন্যতা বা সিঙ্গুলারিটি আবিষ্কারের পুরোধা। জীবিত থাকলে তিনি পেয়ে যেতেন নোবেল পুরষ্কার। তাঁর সঙ্গী রজার পেনরোজ পেয়ে গেলেন। অথচ হকিং পেলেন না!

এই আফসোস মনে পুষে রেখে বিজ্ঞানীরা সময়রেখায় পেছনে ফিরে যান। (বিজ্ঞানীদের কথা এমনভাবে বলছি, মনে হচ্ছে স্মৃতিচারণা ছাড়া তাঁদের আর কাজ নেই। আসল ঘটনা তা নয়। এটি শুধুই দৃশ্যকল্প।)

১৯১৫ সাল। আলবার্ট আইনস্টাইন প্রায় দশ বছর ধরে একরকম চুপচাপ আছেন। একজন রকস্টার হঠাৎ এমন চুপ হয়ে গেলে মানুষের অস্বস্তি হয়। একটু কষ্টও লাগে। আইনস্টাইনকে নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহল আরও বেশি। মুখরোচক সব গল্পের তুলিতে তাঁকে আঁকা হয়েছে ভুলোমনা এক বিজ্ঞানী হিসেবে। যিনি প্রায় দুই শ বছরের পুরোনো এক সমস্যার সমাধান করে ফেলেছেন। ব্রাউনীয় গতির ব্যাখ্যা দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন, পরমাণু শুধু তাত্ত্বিক ধারণা নয়। বাস্তবেই এর অস্তিত্ব আছে। 'বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব' নামে নতুন এক ধারণাও দিয়েছেন তিনি। সে ধারণাকে (অতি) সহজ ভাষায় মজা করে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, 'চুলার পাশে পাঁচ মিনিট বসলে মনে হয় পাঁচ ঘণ্টা। আর কোনো সুন্দরীর সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টা কাটালেও মনে হয় পাঁচ মিনিট।' ওখানেই শেষ না। ফটোতড়িৎক্রিয়ার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন আইনস্টাইন। এ ব্যাখ্যা তাঁকে পরে এনে দিয়েছে নোবেল পুরস্কার। সেই আলাভোলা বিজ্ঞানী চুপচাপ আছেন। ঝড়ের পূর্বাভাস। ঝড়টা এল ১৯১৫ সালের নভেম্বরে। আইনস্টাইন তাঁর ক্ষেত্র সমীকরণ প্রকাশ করলেন। জানা গেল সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের কথা।

সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রের পরিমার্জিত রূপ। নিউটন বলেছিলেন, মহাকর্ষ মানে দুটো বস্তু একে অন্যকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণের মান বস্তু দুটির ভরের গুণফলের সমানুপাতিক (মানে ভর বেশি হলে আকর্ষণ বেশি হবে) আর দূরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক (মানে, দূরত্ব বেশি হলে আকর্ষণ কম হবে)। আইনস্টাইন বললেন, মহাকর্ষ আসলে কোনো বলই না। মহাকর্ষ মানে ভরের জন্য স্থান-কালের বেঁকে যাওয়া। স্থানের বেঁকে যাওয়া আমরা বুঝি। কালের বেঁকে যাওয়ার বিষয়টা কল্পনা করা কঠিন। পদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেল বলে, মহাবিশ্বে মাত্রা চারটি। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা আর সময়। এই চারটিকে সহজে কল্পনা করার জন্য বলা হয়, স্থান-কালের চাদর। সেই চাদরের মাঝে একটা গোলক রেখে দিলাম। দেখা যাবে, গোলকের চারপাশে চাদরটা বেঁকে যাচ্ছে। ফলে, বাঁকা চাদরের মধ্য দিয়ে মাঝখানের গোলকটিকে কেন্দ্র করে যদি কোনো কিছু ছুটতে থাকে, জিনিসটা আসলে গোলাকার পথ ধরে ছুটবে। আর মাঝের গোলকটির দিকে টান অনুভব করবে। এটাই মহাকর্ষ। মানে, ভর স্থান-কালকে বলে দেয় কীভাবে বেঁকে যেতে হবে। আর স্থান-কাল সব বস্তুকে বলে দেয়, কীভাবে ছুটতে হবে। 

বছর না পেরোতেই আরেক ঘটনা। কার্ল শোয়ার্জশিল্ড তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রণাঙ্গনে শুয়ে কাতরাচ্ছেন। 'পেমফিগাস ভালগারিস' নামের এক অদ্ভুত রোগে ভুগছেন তিনি। তাঁর নিজ দেহের কোষ নিজেরই ত্বকের কোষগুলোকে আক্রমণ করে মেরে ফেলছে। চিকিৎসকরোও ধরে নিয়েছেন, তাঁর সময় শেষ। সেই তরুণ কিনা অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলেছেন। আইনস্টাইনের ক্ষেত্র সমীকরণ সমাধান করতে গিয়ে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে প-িত বিজ্ঞানীদের। সে সমীকরণ সমাধান করে ফেলেছেন শোয়ার্জশিল্ড। কিন্তু এই সমাধান বলছে ভয়ংকর এক দানবের কথা। সে দানবকে চিহ্নিত করার উপায়ও বাতলে দিয়েছেন তিনি। কোনো বস্তুর ব্যাসার্ধ যদি শোয়ার্জশিল্ড ব্যাসার্ধের সমান হয়, তাহলেই হয়েছে। জিনিসটা পরিণত হবে অদ্ভুত এক নক্ষত্রে। আদৌ কি সে তখন নক্ষত্র থাকবে? কী বলা যায় আসলে একে? ১৭৮৩ সালে বিজ্ঞানী জন মিচেল এ রকম নক্ষত্রের কথা ভেবেছেন। এর নাম তিনি দিয়েছেন ডার্ক স্টার বা কৃষ্ণনক্ষত্র।

তারপর আতলান্তিকে বহু জল গড়িয়েছে। বিজ্ঞানীদের মন ওসব ঘুরে-ফিরে এসে থাকে ১৯৩৫ সালে। সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখর এক বিজ্ঞান সভায় বলেন, সূর্য থেকে ১.৪ গুণ বড় নক্ষত্রদের মৃত্যু বেশ বিচিত্র হবে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণের মাধ্যমে মারা যেতে পারে এরা। যাকে আজকের বিজ্ঞানীরা বলের সুপারনোভা বিস্ফোরণ। কিংবা চুপসে হয়ে যেতে পারে কৃষ্ণগহ্বর। আর্থার এডিংটন তখন বিজ্ঞান জগতের অন্যতম সুপারস্টার। কিছুদিন আগে তিনি সাধারণ আপেক্ষিকতার প্রমাণ পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁর পরীক্ষণের মাধ্যমে সাধারণ আপেক্ষিকতা বিজ্ঞানীদের কাছে প্রমাণিত। সেই সুপারস্টার তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন চন্দ্রশেখরের কথা। অপমান করলেন যা-তা বলে। অথচ পরে দেখা গেছে, চন্দ্রশেখরের সেই প্রস্তাব সত্যি। 'সূর্যের ১.৪ গুণ বড়'-এর নাম এখন চন্দ্রশেখর সীমা। এই সীমা পেরিয়ে গেলে নক্ষত্রটির কপালে খারাপি আছে!

চন্দ্রশেখর সীমার চেয়ে ভারী নক্ষত্ররা পরিণত হতে পারে কৃষ্ণগহ্বরে। তবে সে জন্য তার ব্যাসার্ধ ছোট হয়ে হয়ে হতে হবে অন্তত শোয়ার্জশিল্ড ব্যাসার্ধের সমান।

ছোট হয়ে মানে কী! সে জন্য বুঝতে হবে নক্ষত্রের জীবনচক্র।

ছবি: সংগৃহীত

২

নক্ষত্রদের জন্ম নীহারিকার ভেতরে। একেকটা গ্যালাক্সির ভেতরে অনেকগুলো নক্ষত্র। নক্ষত্রকে ঘিরে ঘোরে গ্রহেরা। আর একেকটি নক্ষত্রের মাঝে অনেক অনেকটা দূরত্ব। সূর্যের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র আলফা সেন্টরি প্রায় ৪.২ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। এই মাঝের জায়গাটায় কী আছে? প্রায় ফাঁকা এ জায়গাগুলোর নাম আন্তনাক্ষত্রিক স্থান। এর ভেতরে অনেক ধুলোবালু, গ্যাসের মেঘ। এগুলো মহাকর্ষের টানে জমাট বাঁধে। একসময় ওর ভেতরে তৈরি হয় প্রচণ্ড উত্তাপ। স্বাভাবিক। এত ধুলোবালু, গ্যাসমেঘ সবকিছু একসঙ্গে ধাক্কা খাচ্ছে। ওগুলোর ভেতরের অণু-পরমাণু স্তরে চলছে মারামারি। অনেক গভীরে না গিয়ে সহজ করে যদি বলি, প্রচণ্ড উত্তাপে এসব ধুলোবালু, মেঘের ভেতরের দুটো করে হাইড্রোজেন ফিউজ হয়ে যাচ্ছে ফিউশন বিক্রিয়ায়। ফিউজ মানে, নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার মাধ্যমে দুটো প্রোটন মিলেমিশে একসঙ্গে হয়ে যাচ্ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে হিলিয়াম। কিন্তু এ সময় তৈরি হিলিয়ামটির ভর দুটো হাইড্রোজেনের মোট ভরের চেয়ে খানিকটা কম। এই ভরটুকু পরিণত হচ্ছে শক্তিতে। ভর আবার শক্তি কীভাবে হয়? এই রেসিপি বলে দিয়েছেন আইনস্টাইন তাঁর বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে। E = mc2। আলোর বেগের বর্গের সঙ্গে ভরকে গুণ করলে যা হয়, সে পরিমাণ শক্তি তৈরি হবে। এভাবে হালকা পরমাণু থেকে নক্ষত্রের বুকে তৈরি হচ্ছে ভারী পরমাণু। হাইড্রোজেন-হাইড্রোজেন মিলে হিলিয়াম, হিলিয়াম-হিলিয়াম মিলে কার্বন। এ রকম ভারী পরমাণু তৈরি হতে হতে লোহাও তৈরি হতে পারে। তবে সে জন্য নক্ষত্রের ভর হতে হয় অনেক বেশি। আর হালকা পরমাণুর পরিমাণ ততক্ষণে ফুরিয়ে যায়। ভারী পরমাণু তৈরি হয়ে নক্ষত্রের সব ভর জমা হয় কেন্দ্রে। ফলে নক্ষত্রটির ব্যাসার্ধ ছোট হতে থাকে। আর বাড়তে থাকে ঘনত্ব। ফলে বৃদ্ধি পাতে থাকে নক্ষত্রের ভেতরের পদার্থগুলোর ভেতরের পারস্পরিক আকর্ষণ। একসময় এ আকর্ষণ আর সামলাতে পারে না নক্ষত্রটি। ভেঙে পড়ে ভেতরের দিকে। (ভেঙে পড়া মানে কী? পৃথিবীতে কিছু যদি ওপর থেকে ফেলি, জিনিসটা ছুট দেয় পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে। নক্ষত্রও ভেঙে পড়ে সংকুচিত হয়ে যায় নিজের কেন্দ্রকে ঘিরে। ভেঙেচুরে গিয়ে প্রবল মহাকর্ষের টানে সব পদার্থ ছুটে যায় কেন্দ্রের দিকে। ততক্ষণে যদি এর ব্যাসার্ধ ছোট হতে হতে শোয়ার্জশিল্ড ব্যাসার্ধের সমান হয়ে যায়, নক্ষত্রটি পরিণত হয় কৃষ্ণগহ্বরে।

এ সময় কী হয়? নক্ষত্রটি যখন কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়, তার সব ভর জমা হয় কেন্দ্রের একটি বিন্দুতে। একটি বিন্দুতে সব ভর। কীভাবে সম্ভব? কল্পনা করা কঠিন। এই বিন্দু প্রবল আকর্ষণে টানছে চারপাশের সবকিছুকে। আবার স্পিন করছে। ফলে তৈরি হচ্ছে সুড়ঙ্গের মতো। সুড়ঙ্গের ও মাথায় সিঙ্গুলারিটি বা অনন্যতা। এর আকর্ষণ কত দূর পর্যন্ত কার্যকর মূলত? এই সীমানাটিকেই বলে ঘটনা দিগন্ত বা ইভেন্ট হরাইজন। বিজ্ঞানীরা এটারই ছবি তুলেছেন। কৃষ্ণগহ্বরের রাক্ষুসে টান ছিঁড়ে বেরোতে পারে না আলোও। আর মহাবিশ্বে আলোর চেয়ে দ্রুত ছুটতে পারে না কিছুই। সে জন্যই কৃষ্ণগহ্বর থেকে বেরোতে পারে না কোনোকিছু। আটকে পড়ে ওর রাক্ষুসে আকর্ষণের শেকলে।

ছবি: সংগৃহীত

৩

কী আছে কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে? সত্যি বলতে, কেউ জানে না। তবে আন্দাজ করা যায়। এই আন্দাজ বা অনুমানগুলো করে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব—সাধারণ আপেক্ষিকতা। কিন্তু কেন কেউ জানে না, কী হচ্ছে কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে? কারণ, কৃষ্ণগহ্বর মানে একটি বিন্দু। সেই বিন্দুতে জমা নক্ষত্রটির সব ভর। তৈরি হয়েছে সিঙ্গুলারিটি বা অনন্যতা। প্রবল তার আকর্ষণ। কিন্তু এত ছোট কিছুর আচরণ ব্যাখ্যা করতে পারে না আপেক্ষিকতা তত্ত্ব। এ ধরনের অতিক্ষুদ্র, বিন্দুসম বস্তুদের আচরণ ব্যাখ্যা করে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা। আর বড় ও ভারী বস্তুদের আচরণ ব্যাখ্যা করে সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব। কৃষ্ণগহ্বরের আচরণ সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে হলে এই দুটো তত্ত্বকে গাঁথতে হবে একসুতোয়। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন সবকিছুর তত্ত্ব। দ্য থিওরি অব এভ্রিথিং। আজতক সেটা সম্ভব হয়নি। আইনস্টাইন থেকে হকিং—সবাই এ চেষ্টায় জীবন পার করে দিয়েছেন। কিন্তু মেলেনি সবকিছুর তত্ত্ব। মেলেনি সিঙ্গুলারিটির ব্যাখ্যা। তাই কৃষ্ণগহ্বরের সেই বিন্দুসম স্থান-কালের গোলমেলে জগতে ভেঙে পড়ে পদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেল। ভেঙে পড়ে আমাদের জানা সব নিয়মকানুন।

তাহলে, 'কী হয়' না বলে 'কী হতে পারে' ওর ভেতরে—এ প্রশ্ন নিয়ে ভাবব আমরা। কল্পবিজ্ঞান লেখকরাই শুধু না, বিজ্ঞানীরাও মনে করেন, কৃষ্ণগহ্বরের ওপাশে হয়তো অপেক্ষা করে থাকতে পারে ভিন্ন কোনো জগৎ। যদিও এটি কেবলই অনুমান। গা শিউরে ওঠার মতো। হয়তো কৃষ্ণগহ্বরের ভেতর দিয়ে যাওয়া যাবে অন্য কোনো মহাবিশ্বে। কৃষ্ণগহ্বর হয়তো অন্য মহাবিশ্বের দরজা। হয়তো এর ভেতর দিয়ে গেলে চার মাত্রার বাইরে অন্য কোনো মাত্রার দেখা পাওয়া যাবে। কে জানে? যে জানত, পদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেল এখানে নিশ্চুপ।

কল্পনায় ভর করে আসুন ভেবে নিই, আপনিও ক্রিস্টোফার নোলানের ইন্টারেস্টেলার মুভির সেই দুঃসাহসী নভোচারীর মতো মহাকাশযানে করে ছুটছেন কোনো কৃষ্ণগহ্বরের দিকে। ঘটনা দিগন্তের কাছাকাছি পৌঁছে গেলে প্রচণ্ড রাক্ষুসে টান আপনাকে আরও জোরে টানবে ভেতরের দিকে। যে মুহূর্তে আপনি পেরিয়ে যাবেন ঘটনা দিগন্ত, বাইরে থেকে যদি কেউ তাকিয়ে থাকেন, তাঁর মনে হবে আপনি ভেতরের দিকে পড়ছেন তো পড়ছেনই। সময় ধীর হয়ে যাবে তাঁর জন্য। আর আপনার মনে হবে, সবকিছু ঘটে গেছে মুহূর্তের ভেতরে। কী ঘটল?

যে মুহূর্তে ঘটনা দিগন্ত পেরিয়ে গেল আপনার মাথা, ঘাড়; কৃষ্ণগহ্বরের রাক্ষুসে টান ভয়ানকভাবে টানতে শুরু করল আপনার শরীরে প্রতিটা কণাকে। আপনার মাথার কণাগুলো থেকে ঘাড় বা বুকের কণাগুলোর যে দূরত্ব, এটুকু দূরত্বেই টানের পার্থক্য অনেক। মানে, মাথার কণাকে সে যে প্রচণ্ড বেগে টানছে, ঘাড়ের কণাগুলোকে প্রচণ্ডভাবে টানলেও দুটো টানের জোরে পার্থক্য অনেক। টানের এই পার্থক্য সামলাতে পারবে না আপনার নশ্বর কোমল দেহ। ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে কণায় কণায়। এই কণাগুলোকে তখন গিলে নেবে কৃষ্ণগহ্বর। তারপর? হতে পারে ওখানেই আপনার জীবন শেষ।

আবার হয়তো ওই কণাগুলো ভিন্ন কোনো জগতে গিয়ে এক হয় আপনার পরিণত হবে 'আপনি'তে। কীভাবে? হয়তো কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরের জগতে এনট্রপি ভিন্নভাবে কাজ করে। এনট্রপি মানে বিশৃঙ্খলার পরিমাণ। আমাদের মহাবিশ্বে সময় যত সামনে এগোচ্ছে, এনট্রপি বাড়ছে তত। সে জন্য গ্লাস একবার ভেঙে গেলে যত ভাবেই চেষ্টা করা হোক, সেটাকে আগের মতো নিখুঁত করে জোড়া দেওয়া সম্ভব না। কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে হয়তো তা হবে না, কণাগুলো জুড়ে গিয়ে 'আপনি' হয়ে যাবেন। সে 'আপনি' আর 'আগেকার আপনি' কি একই মানুষ হবেন?

একটা গ্লাসকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলে সেই টুকরোগুলো জুড়ে আবার গ্লাস বানালে সেটা কি একই হবে? গ্লাসের স্মৃতি নেই, মানুষের আছে। কিন্তু স্মৃতি এক হলেই কি হলো? একই মানুষ হবে আগের-পরের দুজন? কে দেবে এসব প্রশ্নের জবাব? বিজ্ঞান এখানে নীরব।

এই যে বলছি, আপনার দেহের কণাগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে, এই অনুমান করছি পদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেলের জ্ঞান ব্যবহার করে। কিন্তু সে জ্ঞান তো খাটে না ওর ভেতরে। তাহলে?

আগেই যে বললাম, কেউ জানে না। কৃষ্ণগহ্বর তাই আজও এক রহস্য। রজার পেনরোজের ধারণা, কৃষ্ণগহ্বরগুলো ধীরে ধীরে গিলে নেয় মহাবিশ্বের সব ভর। আর মহাবিশ্বজুড়ে বেড়ে চলে বিশৃঙ্খলা। এই বিশৃঙ্খলা সবচেয়ে বেশি হয় কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে। হকিংয়ের একটা ধারণা ছিল, একসময় উবে যাবে মহাবিশ্বের সব কৃষ্ণগহ্বর। হারিয়ে যাবে সব ভর। এভাবে মহাবিশ্বের সব ভর যদি হারিয়ে যায়, মহাবিশ্ব নিজেই ভুলে যাবে সে কে। তখন আবার জন্ম নেবে পরবর্তী নতুন মহাবিশ্ব। এই ধারণাটিকে সৃষ্টিতত্ত্ববিদেরা মেনে নেননি। কিন্তু রজার পেনরোজের ধারণা বলে কথা। আর কেউ যখন কৃষ্ণগহ্বরকে মেনে নেয়নি, তিনি তখন ওর পেছনে ছুটেছেন। তাঁর ধারণাকে তা-ই চট করে উড়িয়ে দেওয়াও যায় না। তবে এটি প্রমাণিত নয়। তাই কেউ মানুক বা না মানুক, এটি এখনো কোনো তত্ত্ব না। শুধুই ধারণা।  

বিজ্ঞানীদের ধারণা, কৃষ্ণগহ্বরের কেন্দ্রে যে সিঙ্গুলারিটি বা অনন্যতা, একই রকম অনন্যতা ছিল বিগ ব্যাঙয়ের সময়েও। একটি বিন্দুতে ঘন হয়ে ছিল মহাবিশ্বের সব ভর-শক্তি-স্থান-কাল—সব। কী হয়েছিল তখন? এ রহস্য সমাধান করতে হলে লাগবে সবকিছুর তত্ত্ব। দ্য থিওরি অব এভ্রিথিং।

সেই তত্ত্ব মেলার আগপর্যন্ত কল্পনা আর তাত্ত্বিক অনুমানই আমাদের হাতিয়ার। কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে কী হচ্ছে, এ নিয়ে কল্পনা করে শিউরে ওঠা। অন্য কোনো জগৎ! অসীম সম্ভাবনা। বিজ্ঞানীদের ছুটে চলা সবকিছুর তত্ত্বের সন্ধানে। কিন্তু আসলে কী? ঠিক কী আছে কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে?

কেউ জানে না।


  • সূত্র: উইকিপিডিয়া; ব্ল্যাকহোল: বিবিসি রিথ লেকচার, লেখক : স্টিফেন হকিং, অনুবাদক : আবুল বাসার; কৃষ্ণগহ্বর : এক মহাজাগতিক রহস্যের উপাখ্যান, লেখক : আব্দুল গাফফার রনি

Related Topics

টপ নিউজ

কৃষ্ণগহ্বর / বিগ ব্যাং / মহাকাশ

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ছবি: সংগৃহীত
    নকলকারীদের কায়দাতেই নকল ঘড়ির দাপট কমাতে চাইছে রোলেক্স!
  • ছবি: রয়টার্স
    প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল
  • পূর্বে সনাক্ত করা সড়কটির একটি অংশ।। প্রত্নতাত্ত্বিকরা ধীরে ধীরে পুরো পথটি সংযুক্ত করার কাজ করছেন। ছবি: হ্যান্ডআউট
    চীনে ২ হাজার বছর পুরোনো অক্ষত চার লেনের মহাসড়কের খোঁজ পেলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা
  • ছবি: টিবিএস
    ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করলেন তারেক রহমান, আহত না থাকায় যাবেন না পঙ্গু হাসপাতালে
  • ইতালির গ্রামে ৩০ বছর পর প্রথম শিশুর জন্ম; উৎসবের আবহ
    ইতালির গ্রামে ৩০ বছর পর প্রথম শিশুর জন্ম; উৎসবের আবহ
  • আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত
    কুমিল্লা-৩ আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম কিনলেন আসিফ মাহমুদ

Related News

  • শুরু হয়েছে নতুন প্রতিযোগিতা—শেষ পর্যন্ত কি শুধু বিলিয়নিয়ারদের দখলেই চলে যাবে গোটা মহাকাশ?
  • প্রথমবারের মতো হুইলচেয়ারে বসে মহাকাশ ঘুরে এলেন জার্মানির প্রকৌশলী
  • মহাকাশের সবচেয়ে পুরোনো স্যাটেলাইটগুলোকে কি বাঁচানো উচিত?
  • আমরা কি এক কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে বাস করছি?
  • মহাকাশে ডেটা সেন্টার? জেফ বেজোস বলছেন সম্ভব

Most Read

1
ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক

নকলকারীদের কায়দাতেই নকল ঘড়ির দাপট কমাতে চাইছে রোলেক্স!

2
ছবি: রয়টার্স
আন্তর্জাতিক

প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

3
পূর্বে সনাক্ত করা সড়কটির একটি অংশ।। প্রত্নতাত্ত্বিকরা ধীরে ধীরে পুরো পথটি সংযুক্ত করার কাজ করছেন। ছবি: হ্যান্ডআউট
আন্তর্জাতিক

চীনে ২ হাজার বছর পুরোনো অক্ষত চার লেনের মহাসড়কের খোঁজ পেলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা

4
ছবি: টিবিএস
বাংলাদেশ

ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করলেন তারেক রহমান, আহত না থাকায় যাবেন না পঙ্গু হাসপাতালে

5
ইতালির গ্রামে ৩০ বছর পর প্রথম শিশুর জন্ম; উৎসবের আবহ
আন্তর্জাতিক

ইতালির গ্রামে ৩০ বছর পর প্রথম শিশুর জন্ম; উৎসবের আবহ

6
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

কুমিল্লা-৩ আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম কিনলেন আসিফ মাহমুদ

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net