রাশিয়ার হাতে ১১৩টি বিমান হারিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম উড়োজাহাজ ইজারাদার প্রতিষ্ঠান

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে ১১৩টি উড়োজাহাজ হারিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম উড়োজাহাজ ইজারাদার প্রতিষ্ঠান এয়ারক্যাপ হোল্ডিংস। পশ্চিমাদের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার জবাবে ডাবলিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির উড়োজাহাজগুলো জব্দ করেছে রাশিয়া।
এর পাশাপাশি এয়ারক্যাপ হোল্ডিংস এর ১১টি জেট ইঞ্জিনও জব্দ করেছে রাশিয়া। ফলে বছরের প্রথম তিন মাসে প্রতিষ্ঠানটির ২ বিলিয়ন ডলার নেট ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। রাশিয়া উড়োজাহাজ জব্দ না করলে বছরের প্রথম তিন মাসে প্রতিষ্ঠানটির ৫০০ মিলিয়ন ডলার আয় হতো বলে তারা জানায়।
তবে এয়ারক্যাপ হোল্ডিংসের নির্বাহী কর্মকর্তাদের ভাষ্যে, বছরের প্রথম তিন মাস তাদের ব্যবসা ভালোই চলেছে। সেই সাথে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বিশ্বব্যাপী বিমান ভ্রমণের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আগামীতে প্রতিষ্ঠানটির আরো বেশি আয়ের সুযোগ রয়েছে বলে তারা মনে করেন।
বিশ্লেষকদের কাছে এয়ারক্যাপ হোল্ডিংসের সিইও এংগাস কেলি বলেন, "কিন্তু রাশিয়া উড়োজাহাজগুলো জব্দ করায় বছরের শুরুর দিকেই মোটা অংকের ক্ষতি হয়েছে প্রতিষ্ঠানের। তবে বিশ্বজুড়ে প্রতিটি অঞ্চলেই আমাদের ব্যবসার উন্নতি হচ্ছে, আমাদের সম্পদের ব্যবহার বেড়েছে এবং আমাদের ক্রেতাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।"
এয়ারক্যাপের সাথে একমত হয়েছেন বিনিয়োগকারীরাও এবং এই প্রতিবেদন লেখার পরপরই বৈকালিক লেনদেনে এয়ারক্যাপের শেয়ার ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

রুশ কর্তৃপক্ষের হাতে জব্দ হওয়ার আগে ২২টি উড়োজাহাজ ও ৩টি ইঞ্জিন উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল এয়ারক্যাপ। জব্দকৃত উড়োজাহাজগুলো ফেরত পাওয়ার জন্য ইস্যুরেন্স দায়ের করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে রাশিয়ান ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলোই জড়িত, তবে নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে পশ্চিমা ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলো সাহায্য করছে এয়ারক্যাপকে। কিন্তু বিবৃতিতে এয়ারক্যাপ জানিয়েছে, "এসব নিয়মনীতির আওতায় কবে নাগাদ এবং কি পরিমাণ সম্পদ আমরা ফেরত পারবো, তা এখনো অনিশ্চিত।"
এয়ারক্যাপ হোল্ডিংসের অধীনে মোট উড়োজাহাজ রয়েছে ১৬২৪টি, যা অন্য যেকোনো একক এয়ারলাইনের চাইতে বেশি। রাশিয়ার জব্দকৃত উড়োজাহাজগুলো এয়ারক্যাপ এর বিমানবহরের মোট বাজারমূল্যের ৫ শতাংশ দখল করে আছে।
এদিকে অ্যারোডায়নামিক অ্যাডভাইসরি'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড আবদুলআফিয়ার মতে, এয়ারক্যাপ হোল্ডিংসের উচিত জব্দকৃত উড়োজাহাজের আশা ছেড়ে দেওয়া এবং এই আর্থিক ক্ষতি মেনে নেওয়া। কারণ যুদ্ধের সমাপ্তি বা নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতে যে সময় লাগবে, ততদিনে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রকদের আইন অনুযায়ী উড়োজাহাজগুলোর অপারেটিং সার্টিফিকেটই অকার্যকর হয়ে যাবে। কারণ দলিলপত্র একবার অন্য কারো হাতে চলে গেলে তা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
অ্যাভিয়েশন অ্যানালিটিকস ফার্ম সিরিয়াম-এর ডেটা অনুযায়ী, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের সময় রাশিয়ায় ৮৬১টি বাণিজ্যিক বিমান সক্রিয় ছিল। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি বিমানের মালিকানা ছিল রাশিয়া ব্যতীত ভিন্ন দেশের ইজারাদার কোম্পানিগুলোর হাতে।
কোম্পানিগুলোর হাতে মার্চ মাস পর্যন্ত সময় ছিল নিজেদের বিমান ফিরিয়ে আনার জন্য। এর মধ্যে ৭৯টি বিমান ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। কিন্তু রাশিয়া জানিয়েছে, তারা শত শত বিমান জাতীয়করণ করবে।
সূত্র: সিএনএন