ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব নিয়ে এখনও বিরোধ মেটেনি

জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আসন্ন নতুন রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট নাম, প্রতীক, ঘোষণাপত্র, আদর্শ ও গঠনতন্ত্র এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এ কারণে দলটির আত্মপ্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে।
যদিও সংগঠন দুটির দাবি, চলতি মাসের মধ্যেই আত্মপ্রকাশ করবে নতুন রাজনৈতিক দল। তবে নতুন দলের শীর্ষ পদগুলো নিয়ে বিবদমান পক্ষগুলো এখনও সমঝোতায় আসতে পারেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, গত বুধবার প্রিপাটেরি কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
'সেখানে আত্মপ্রকাশ আয়োজন নিয়ে অনেকগুলো উপকমিটি গঠন হলেও দলের বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়নি। এজন্য আসন্ন দলটির ঘোষণাপত্র, সুনির্দিষ্ট আদর্শ কিংবা গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া আহ্বায়ক ছাড়া অন্যান্য পদগুলোতে কারা আসবেন, সেটিও এখনও চূড়ান্ত হয়নি,' বলেন তিনি।
নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমীন বিলম্বের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, 'সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক ক্রিটিক্যাল ও লেংদি বিষয়। সিদ্ধান্তগুলো যেন টেকসই হয়, সেজন্য দেরি হচ্ছে—এটা সত্য। জনগণের সাথে যে প্রজিম, সেটা রাখার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা আমাদের আছে। তবে যখনই দল আসুক, আমরা চাই জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে।'
তিনি আরও বলেন, জনমত জরিপের তথ্য সংগ্রহ হয়ে গেছে; এখন বিশ্লেষণের কাজ চলছে। আরও দু-কদিন লাগতে পারে।
নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারওয়ার চৌধুরী আশা প্রকাশ করেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই দল গঠন হবে।
'সবাই নিজের জায়গা থেকে দলের নাম, গঠনতন্ত্র, আদর্শ ও কাঠামো নিয়ে কাজ করছেন। এজন্য দলের ভেতরে ও বাইরে সবার সাথে আলোচনা করেই প্রক্রিয়া চলমান। সময়স্বল্পতার কারণে একটু দ্রুত করতে হচ্ছে,' বলেন তিনি।
নাহিদা বলেন, জনমতে জরিপে কিছু কমন শব্দ, যেমন 'বৈষম্যবিরোধী', 'নাগরিক', 'ছাত্র-জনতা' শব্দগুলো আসছে। আর প্রতীক হিসেবে 'কলম', 'রিকশা', 'বই' এগুলো বেশি এসেছে।
'অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া'
এদিকে কমিটির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জোনায়েদ নতুন দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের 'অগণতান্ত্রিক ও এক্সক্লুসিভ প্রক্রিয়া' নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
শনিবার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, 'দুঃখজনকভাবে, বর্তমানে যেভাবে এই রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব গঠন হচ্ছে তা গণতান্ত্রিক এবং ইনক্লুসিভ হচ্ছে না। এক্ষেত্রে কে কোন পদে আছে সে সংক্রান্ত আলোচনা অবান্তর। বরং যোগ্য যে কেউ যেন তার পছন্দের পদে যেতে পারে এবং এই যোগ্যতার পরিমাপক কী সেটা নিয়েই আমরা আলোচনা করে আসছি।'
নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার জন্য জোনায়েদ উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার আহ্বান জানান। 'আমি মনে করি, নাগরিক কমিটির সবাইকে সাথে নিয়ে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা উচিত। অন্যথায়, এই দল জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করা সকল তরুণদের দল হয়ে উঠতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হবে যা বাংলাদেশের মানুষের জন্য দুঃখজনক হবে।'
তিনি আরও বলেন, নেতৃস্থানীয় পদ-সংক্রান্ত কোনো ধরনের 'সমঝোতা' কোনো পক্ষের মাঝে হয়নি, কারণ এসব বিষয় নিয়ে 'নেগোসিয়েশন' করতে কমিটি আগ্রহী না।
'ট্রান্সপারেন্সি এবং প্রোপার সিস্টেম ডেভেলপ করে যেন প্রকৃত নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন করা যায়—সে সংক্রান্ত আলোচনায় আদতে "সমঝোতা" করা সম্ভব নয়,' বলেন জোনায়েদ।
তবে এসব উদ্বেগের বিষয়ে সামান্তা শারমীন টিবিএসকে বলেন, নেতৃত্বের সমস্যা নিরসনের দায়িত্ব সবার।
'এককভাবে কারও ওপর দায় দেওয়ার সুযোগ নেই। যদি কোনো ধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়ে থাকে, সেটা ইচ্ছাকৃত (ইনটেনশনাল) না। এজন্য যারা দূরত্ব তৈরির ক্ষেত্রে অভিযুক্ত এবং যারা মনে করছেন দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। এগুলো কোনো স্থায়ী সমস্যা না,' বলেন তিনি।
হেয়ার রোড না বাংলামটর
নতুন দল গঠনে হেয়ার রোডের মন্ত্রীপাড়ায় ছাত্র উপদেষ্টারা মূল ভুমিকা রাখছেন, নাকি বাংলামোটরে অবস্থিত দুটি প্ল্যাটফর্মের কার্যালয়ই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে সামান্তা শারমীন বলেন, 'আমরা যেখানে বলেছি যে আমাদের দল হবে গণমানুষের দল, এজন্য আমরা জনমত জরিপও করলাম। ৩ লাখ মানুষের কনসেন্ট নিলাম, আবার আমাদের ফোরাম আছে। এতগুলো মানুষকে এড়িয়ে গিয়ে শুধু একজন কিংবা দুজনের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত আসবে, আর আমরা বাস্তবায়ন করব—এটা যৌক্তিক না।'
তিনি বলেন, উপদেষ্টারা নিয়োগ পেয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের ভিত্তিতে। আবার অভ্যুত্থানের একটা রাজনৈতিক দল হচ্ছে, তাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়ায় ছাত্র উপদেষ্টারা এ বিষয়ে কথা বলতেই পারেন। বিশেষ করে সরকারের স্থিতিশীলতার মতো বিষয়ে তাদের মতামত দেওয়ার অধিকার রয়েছে।
তবে তাদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে উল্লেখ করেন সামান্তা। 'প্রয়োজন সাপেক্ষে আমরা তাদের মতামত শুনতে পারি, যেমন সরকারের স্থিতিশীলতা, দল গঠনের বিষয়ে তাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা কী ইত্যাদি।'
মতাদর্শ নিয়ে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টরা ছাড়া যেকোনো আদর্শের লোক নতুন দলে যোগ দিতে পারবেন।
'আমরা সার্ভিস ও অধিকারভিত্তিক রাজনীতি করব,' বলেন তিনি।