হুমকির চিঠি এসেছে আমেরিকা থেকে, দাবি ইমরানের

'যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি হুমকিমূলক চিঠি' এসেছে বলে দাবি করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সময় এমন মন্তব্য করেন তিনি।
তবে, ইমরান খানকে অপসারণের ষড়যন্ত্রে মার্কিন সরকারের জড়িত থাকার দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে হোয়াইট হাউস।
যথারীতি তার এ বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যা-ই ঘটুক না কেনো, তিনি পদত্যাগ করবেন না বলেও উল্লেখ করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যেই তিনি জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন।
ইমরান খান বলেন, তার সরকার উৎখাতের কথা উল্লেখ করা বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রমাণ সম্বলিত চিঠির কথা জাতিকে জানাতে চান তিনি।
প্রথমে ষড়যন্ত্রকারী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নাম নিলেও চিঠিটি অন্য কোনো দেশের বলে দ্রুত নিজেকে সংশোধন করেন ইমরান।
তিনি আরও বলেন, চিঠিটি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নয়, বরং একটি স্বাধীন দেশের জনগণের বিরুদ্ধে। ইমরান খান জানান, এটি বেশ স্পষ্ট যে তারা আগে থেকেই আসন্ন অনাস্থা ভোটের বিষয়ে জানতো। এটি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে বিরোধী দলের সাথে বাইরের দেশের যোগাযোগ রয়েছে, বলেন তিনি।
যদি তার (ইমরান খান) বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট সফল হয়, তবেই পাকিস্তানকে ক্ষমা করা হবে- চিঠিতে এমন শর্তের উল্লেখ রয়েছে বলে জানান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।
২২০ মিলিয়ন মানুষের দেশ পাকিস্তানকে অন্য একটি দেশ হুমকি দিচ্ছে এ বিষয়টিকে হাস্যকর উল্লেখ করে ইমরান বলেন, সংশ্লিষ্ট দেশের উপর এ কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এর তীব্র প্রতিবাদ করা হবে।
তার ওপর হুমকি জারি করার কারণ হিসেবে তিনি রাশিয়া সফরকে দায়ী করেন। ইমরান খান বলেন, তিনি নিজ থেকে রাশিয়া সফরে যান নি। সফরের আগে পররাষ্ট্র দপ্তর, সামরিক নেতা এবং এমনকি প্রাক্তন কূটনীতিকদের সাথে পরামর্শ করেছিলেন তিনি।
ইমরান বলেন, "আমাদের রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছিল যে ইমরান খান যতদিন থাকবেন ততদিন পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ভালো হবেনা। এর অর্থ, আমার পরিবর্তে যারা আসবে তাদেরকে নিয়ে ওই দেশের কোনো সমস্যা থাকবে না।"
তিনি বলেন, অনাস্থা ভোটে যাই ঘটুক না কেন তিনি আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরবেন। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী 'থ্রি স্টুজেস' এর কথা উল্লেখ করে ইমরান বলেন, সেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির মামলা রয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা তার সেনাপ্রধানকে গালি দিচ্ছেন তিনি তাদের সহ্য করবেন না। এসময় তিনি নওয়াজ শরিফের কথা উল্লেখ করে বলেন, "ভারত যখন পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, তখন তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। এর পরিবর্তে তিনি পর্দার আড়ালে থেকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে দেখা করছিলেন; এমনকি তাকে বিয়ের অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।"
তিনি বলেন, আফগানিস্তান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে অংশ নিয়ে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পরেও যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ত্যাগ স্বীকার করেনি।
এদিকে সূত্রমতে জানা গেছে, পাকিস্তানের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার এবং প্রধানমন্ত্রী খানকে অপসারণের কথিত প্রচেষ্টার প্রতিবাদ করার জন্য মার্কিন মিশনের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি চিফ রিচার্ড স্নেলসায়ারকে একটি ডিমার্চ হস্তান্তর করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর।
তবে এ বিষয়ে ইসলামাবাদে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে চান নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন, জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকের ফলোআপ হিসেবে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ডিমার্চ করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র বলেন, "তার এই অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।"
এর আগে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে যে কোনোভাবে জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং বলেছিল, "এই অভিযোগগুলোর সত্যতা নেই।"
'হুমকি পত্র' সম্পর্কে দ্য নিউজের একটি প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে কোনোভাবে জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানিয়েছে তারা।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বলেন, "আমরা পাকিস্তানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। তাদের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া এবং আইনের শাসনকে সম্মান এবং সমর্থন করি আমরা।"
- সূত্র: দ্য নিউজ