উহানে করোনার সংক্রমণ ছিল ১০গুণ বেশি: গবেষণা

আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত সংখ্যার চাইতেও ১০গুণ বেশি ছিল চলতি বছরের শুরুতে চীনের উহান নগরে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব। সাম্প্রতিক এক গবেষণার বরাতে খোদ উহান নগর জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এমন তথ্য জানিয়েছেন।
একইসাথে, বিশ্বে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শহরটিতে সম্ভাব্য পুনঃসংক্রমণ দেখা দিলে তখন প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যে যথেষ্ট হবে না- সেই চিত্রও উঠে আসে।
ইতোপূর্বে, গত এপ্রিলে চায়না সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এক সেরিওলজিক্যাল জরিপ চালায়। সেখানে জানানো হয়, উহানে মাত্র ৪.৪% অধিবাসীর দেশে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সক্ষম বিশেষ ধরনের অ্যান্টিবডির সন্ধান মিলেছে। অর্থাৎ, অতীতে এসব ব্যক্তি অতীতে জীবাণুটিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্রায় ৩৪ হাজার ব্যক্তির মধ্যে পরিচালিত সমীক্ষার তথ্য গত সোমবার প্রকাশিত হয়।
গবেষণার আওতাধীনদের সঙ্গে উহানের মোট ১ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার অনুপাতে দেখা যায়, কমপক্ষে পাঁচলাখ অধিবাসী প্রাদুর্ভাব চলাকালে আক্রান্ত হন। মধ্য এপ্রিলে ৫০ হাজার কোভিড-১৯ শনাক্তের যে তথ্য নগর জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, এটা তার চাইতে ১০গুণ বেশি। ওই সময়েই অবশ্য নিজস্ব জরিপের উদ্যোগ নেয় চীনের রোগ প্রতিরোধ কেন্দ্রটি।
প্রাদুর্ভাবের প্রথম বিস্তার রোধে চীন সক্রিয় ভূমিকা রাখেনি, ফলে বিশ্বব্যাপী তা ছড়িয়ে পড়ে অতিমারীর কারণ হয়েছে; আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমন অভিযোগ আনে পশ্চিমা দেশ ও তাদের মিত্ররা। যুক্তরাষ্ট্রে বিষয়টি পরিণত হয় চীন বিদ্বেষী রাজনৈতিক ইস্যুতে। দেশটি উহানে প্রকৃতপক্ষে কতো মানুষ আক্রান্ত হয়েছে- তা নিয়ে চীনের দেওয়া প্রাথমিক তথ্যে সন্দেহ পোষণ করে। মার্কিন রাজনীতিকদের দাবি, চীনের লুকোচুরির কারণেই জীবাণুটি ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় এসে মারাত্মকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। এসময় চীন একাধিকবার মৃত্যু সংখ্যা এবং সংক্রমণ হার সম্পর্কিত তথ্য সংশোধন করলে দেশটির বিরুদ্ধে প্রকৃত চিত্র লুকানোর অভিযোগ তোলা হয়।
সেরিওলজিক্যাল সমীক্ষার সাম্প্রতিকতম তথ্য সেই বিতর্কের আগুন উস্কে দিতে পারে। তবে শক্তিশালী প্রাদুর্ভাব চলাকালে প্রাথমিক কেস রিপোর্টের সংখ্যা হেরফের হওয়াটা অপ্রচিলত ব্যাপার নয়। অনেক দেশেই প্রাথমিক তথ্য সংরক্ষিত হিসাবের আদলে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, সংক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় হাসপাতাল ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রে থাকে রোগীর তীব্র চাপ। ফলে সীমিত সক্ষমতায় ব্যাপক টেস্টিং চালু করাও যায় না। আর করোনাভাইরাস অনেক মানুষকে সংক্রমিত করলেও, দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তাদের অনেকেই থাকে উপসর্গহীন। ফলে তাদের চিহ্নিত করতে স্বাস্থ্য পরীক্ষাই একমাত্র উপায়।
একারণেই, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য খাতের পেশাজীবীরা প্রকৃত সংক্রমণ চিত্র জানতে সেরিওলজিক্যাল সমীক্ষার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে তারা চলমান অতিমারীর মাত্রা নির্ণয়ের চেষ্টাও করছেন। ইতোপূর্বে, এইডস এবং হেপাটাইটাস শনাক্তেও পদ্ধতিটি সফলভাবে অনেকবেশি রোগী শনাক্ত করতে পেরেছিল।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ